
ওস্তাদ নুসরাত ফাতেহ আলী খান-এর পিতা ফাতেহ আলী খাঁর ধারনা ছিল তার ছেলেকে দিয়ে সঙ্গীত হবে না।
এজন্য তিনি ছেলেকে ডাক্তার বানাতে চাইতেন। এজন্য লেখাপড়া লাইনের সব বন্ধুদের সাথে নিয়মিত কথা বলতেন, বুদ্ধি পরামর্শ চাইতেন, শঙ্কা প্রকাশ করতেন।
নুসরাত ফাতেহ আলী খান লেখাপড়ায় এভারেজ ছিলেন। একবার একাডেমিক ফল ভালো না হওয়ায় এক বন্ধুর কাছে ফাতেহ আলী খান ছেলেকে নিয়ে তার হতাশার কথা বলছিলেন।
বন্ধু বললেন তোমরা যেটাতে সবচেয়ে ভালো (মানে সঙ্গীত), সেটাই তাকে ঠিকমতো শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করোনা কেন?
বাবা ফাতেহ আলী সাহেব হতাশ গলায় বললেন – আমি নাহয় ওকে সব কিছু শেখালাম, কিন্তু আল্লাহ তো ওকে আওয়াজ দেন নি! অর্থাৎ সুরেলা কণ্ঠ দেন নি!
৬০০ বছর ধরে কাওয়ালী গেয়ে আসা পরিবারের খলিফা, ফাতেহ আলী খাঁর নিজের প্রিয় সন্তানের বেলায় সিদ্ধান্ত ছিল এরকম!
মেট্রিক পাশ করার বাবা হঠাৎ নুসরাত ফাতেহ আলী খান-এর বাবা মারা যান। তাৎক্ষনিক আয়ের উৎস হিসেবে বাধ্য হয়ে নুসরাতকে গানটাকেই আঁকড়ে ধরতে হয়। যখন বুঝতে পরলেন গান করা ছাড়া পরিবার চালানোর আর কোন রাস্তা নাই, তখন গাওয়ার পাশাপাশি রেওয়াজ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন কয়েক গুন। অমানুষিক পরিশ্রম করতে লাগলেন নিজেকে তৈরি করতে, নিজের কণ্ঠ ভালো না জেনে অন্যদের চেয়ে আরও কয়েক গুন বেশি শ্রম দিয়ে। পাশাপাশি চেষ্টা করতে লাগলেন নিজের সঙ্গীতে আরও কতরকম রং যুক্ত করে মানুষের কাছে আরও আকর্ষণীয় করা যায়।
পরের ইতিহাস কি?
নুসরাত ফাতেহ আলী খান শুধু এই উপমহাদেশ জয় করেই ছাড়েন নি। তিনি জয় করেছিলেন সমগ্র বিশ্ব। এই উপমহাদেশের শিল্পীদের মধ্যে বিশ্ব সভায় সবচেয়ে জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী হয়েছিলেন তিনি। সেই ভাঙ্গা কণ্ঠেই তিনি ৬ সপ্তকের গাইয়ে হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন যা বিশ্বে একেবারে হাতে গোনা। জন্মগত ভাবে সুললিত কণ্ঠের বহু শিল্পীদের অনেক গুন এগিয়ে।
গল্পের সারমর্ম কি?
আপনি কি বিষয়ে অযোগ্য, সেই সিদ্ধান্ত খুব সহজে নেবেন না। আগে ভালো ভাবে খতিয়ে দেখুন।
আপনার আপাতদৃষ্টিতে অযোগ্যতা আপনার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হতে পারে।
নিজেকে নিয়ে পরিশ্রম করুন, নিজেকে তৈরি করতে পরিশ্রম করুন। শুধুমাত্র মেধা দিয়ে কাজ হবে না।
আজ ১৬ আগস্ট। সেই মহান শিল্পী কাওয়াল বাচ্চা নুসরাত ফাতেহ আলী খান সাহেবের মৃত্যুবার্ষিকী। তার প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
নুসরাত ফাতেহ আলী খান সম্পর্কে উইকিপিডিয়ার আর্টিকেল।