ডেন্টিস্ট পেশা | পেশা পরিচিতি | পেশা পরামর্শ সভা

ডেন্টিস্ট পেশা | পেশা পরিচিতি | পেশা পরামর্শ সভা  : শুধু দাঁত তোলা আর দাঁত বাঁধানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই আজকের ডেন্টিস্ট। সুন্দর হাসি, মুখমন্ডলের ক্যানসার প্রতিরোধ ও প্রতিকার এবং ডেন্টাল ইমপ্ল্যান্টের মতো আরও কাজ করে যাচ্ছেন তারা। নতুন নতুন ম্যাটেরিয়াল ও চিকিৎসা পদ্ধতির সংযোজনের ফলে চিকিৎসার এ ক্ষেত্রটি এখন অনেক বেশি সমৃদ্ধ। ফলে বিশ্বের সম্মানজনক ও অর্থনৈতিকভাবে গতিশীল প্রথম ১০টি পেশার মধ্যে ডেন্টিস্ট অন্যতম। দক্ষতা ও পরিশ্রমের সমন্বয়ে অনেক ভালো করার সুযোগ রয়েছে এ পেশায়। এ ছাড়া সামাজিক মর্যাদার সঙ্গে রয়েছে অর্থনৈতিক সচ্ছলতার সুযোগ।

ডেন্টিস্ট পেশাজিবী হিসেবে কাজের সুযোগ :

বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যার তুলনায় ডেন্টিস্টদের সংখ্যা অপ্রতুল। তাই এই জন্য ক্যারিয়ারের সুযোগ এখন অনেকটাই উন্মুক্ত। বিডিএস কোর্স সমাপ্ত করার পর একজন চিকিৎসকের রয়েছে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ। পাস করার পরই নিজের চেম্বারে দক্ষতার সঙ্গে রোগী দেখে কেউ হচ্ছেন জনপ্রিয় প্র্যাকটিশনার; আবার চাকরি করতে চাইলে রয়েছে বিসিএস ও আর্মি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কোরে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ। সরকারি চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজেও রয়েছে শিক্ষকতার সুযোগ।

এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, কিনিকে ডেন্টাল সার্জন হিসেবে যোগদানের সুযোগ তো রয়েছেই। যে কোনো ওষুধ কোম্পানি অথবা টুথপেস্ট, মাউথওয়াশ, মাড়ির যত্ন নেওয়া পণ্য ইত্যাদি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষক ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা। আমাদের দেশে এই পেশার বিভিন্ন বিষয়ে রয়েছে এফসিপিএস, এমএস, ডিডিএস, এমসিপিএস ও এমপিএইচ পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করার সুযোগ। এ ছাড়া রয়েছে আরও উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ, যা এই পেশাজিবীকে করে তুলবে পারে আরও গ্রহণযোগ্য।

জব প্রোফাইল :

  • অর্থোডেন্টিস্ট : দাঁতের স্বাভাবিক বৃদ্ধির সময়কে কাজে লাগিয়ে এলোমেলো দাঁতগুলো ঠিক করেন। তারা এ কাজের জন্য বন্ধনী অথবা এ ধরনের অন্য কোনো যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন।
  • পেরিওডেন্টিস্ট : মাড়ি ও টিস্যুর রোগের চিকিৎসা করেন। তারা ওরাল ইমপ্লান্টের কাজ ও করে থাকেন।
  • ওরাল সার্জন : দাঁত ভেঙে যাওয়া, মুখের অস্বাভাবিক গঠন, জটিলতা দূর করা, মুখের মধ্যে এবং চোয়ালে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি যেমন টিউমার ইত্যাদি অপারেশন করে থাকেন।
  • পেডিয়াট্রিকডেন্টিস্ট : শিশুদের দাঁতের চিকিৎসাসেবায় বিশেষজ্ঞ।
  • প্রোসদোডেন্টিস্ট : কৃত্রিম দাঁত বসানোয় বিশেষজ্ঞ। তারা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী কৃত্রিম দাঁত সংযোজন করে থাকেন।
  • এন্ডোডেন্টিস্ট: দাঁতের ভেতরের স্ট্রাকচারের ওপর চিকিৎসা করে থাকেন। তারা নার্ভ ইনফামেশন চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ। তারা রুট ক্যানেলের চিকিৎসাও করে থাকেন।
 

পরিকল্পনা :

একজন সফল ডেন্টিস্ট বা ডেন্টাল সার্জন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে নবম শ্রেণিতেই পরিকল্পনা করা দরকার। আর সে অনুযায়ী এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ নিতে হবে। যারা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এরই মধ্যে পাস করেছেন, তারা এখনো চাইলে এ বিষয়ে পড়তে পারেন। তবে জীববিজ্ঞান বিষয়টি উভয় পরীক্ষায় থাকা বাধ্যতামূলক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট www.dghs.gov.bd থেকে ভর্তিসংক্রান্ত আরও তথ্য জানা যাবে।

শিক্ষা পদ্ধতি :
আপনি যদি ডেন্টাল সার্জন হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে চান, সে ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই চার বছর মেয়াদি বিডিএস কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। সঙ্গে শেষ করতে হবে এক বছর মেয়াদি ইন্টার্নশিপ। সবচেয়ে ভালো হয় কোর্স সম্পন্ন করার পর একজন অভিজ্ঞ সার্জনের তত্ত্বাবধানে দু-তিন বছর চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা।
তা ছাড়া বাংলাদেশে বিডিএসের পাশাপাশি বিডিএ (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট) হিসেবে এক বছরের কোর্স করার সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে আপনি এসএসসি পাস করে এ কোর্স করতে পারবেন। কোর্স সম্পন্ন করলে আপনি পাবেন একজন দক্ষ ডেন্টিস্টের সহযোগী হয়ে কাজ করার সুবিধা।

ডেন্টিস্ট [ Dentist ]
ডেন্টিস্ট [ Dentist ]
পড়াশোনা :
বাংলাদেশে সরকারি ডেন্টাল কলেজগুলোর পাশাপাশি এখন বেসরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ডেন্টিস্ট্রিতে পড়ালেখা করিয়ে আসছে। যারা সরকারিভাবে পড়ার সুযোগ পান না তারা বেসরকারি ডেন্টাল কলেজগুলোয় পড়তে পারেন। বর্তমানে দেশের সরকারি ডেন্টাল কলেজের মধ্যে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট, শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বেসরকারির মধ্যে সিটি ডেন্টাল কলেজ, পাওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ, ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল কলেজ, সাপ্পারো ডেন্টাল কলেজ, বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজ, রংপুর ডেন্টাল কলেজ, আপডেট ডেন্টাল কলেজ, মার্কস ডেন্টাল কলেজ, এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে ব্যাচেলর অব ডেন্টালে সার্জারি পরিচালিত হয়।

কোর্সের বিষয়গুলো :
ডেন্টাল সার্জন হিসেবে যোগদানের প্রথম শর্ত তাকে অবশ্যই চার বছরের বিডিএস ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। এর পর এক বছরের ইন্টার্নশিপ। ইন্টার্নশিপের পর যে কেউ একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে কাজ করতে পারে।

উচ্চতর প্রশিক্ষণ :
বিডিএস পাস করার পর একজন ডেন্টাল সার্জন বাংলাদেশেই উচ্চতর প্রশিক্ষণ পিজিটি অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশে ছয় মাস ও এক বছর মেয়াদি পিজিটি কোর্স করানো হয়। সেই সঙ্গে অধিকতর প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে উন্নত বিশ্বের যে কোনো দেশে সুযোগ পেয়ে থাকেন।

আয়-রোজগার :
একজন ডেন্টিস্টের মাসে আয় বেশ ভালো। অর্থ উপার্জনের সঙ্গে মানুষকে সেবা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে এ পেশায়। সরকারি হাসপাতালে প্রথম অবস্থায় আয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরা ২০ হাজার টাকা থেকে তাদের আয় শুরু করতে পারেন। প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোয় বেতন শুরু হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজারে। এ ছাড়া চেম্বার স্থাপনের মাধ্যমে আরও ভালো উপার্জনও সম্ভব।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment