রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও জাদুঘর | দর্শনিয় স্থান | কুমারখালী উপজেলা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও জাদুঘর : কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের খোরেশদপুর গ্রামে অবস্থিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক বাড়িটিই শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি (Rabindranath Tagore’s Shilaidaha Kuthibari) নামে পরিচিত। কুষ্টিয়া শহর থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ির দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার। প্রায় ৩৩ বিঘা আয়তনের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির মূল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে আড়াই বিঘা জমিতে। ৩ তলা বিশিষ্ট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়িতে সর্বমোট ১৮ টি কক্ষ আছে। ভবনের তৃতীয় তলায় ছিল কবির লেখার ঘর। আর এই কুটিবাড়ির ছাদ থেকে কবি সুর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং জ্যোৎস্না উপভোগ করতেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও জাদুঘর
শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি

কুমারখালি উপজেলার শিলাইদহে অবস্থিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পারিবারিক বাসভবনটি দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানীখ্যাত কুষ্টিয়া জেলাকে মহিমান্বিত করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলী নামে যে কাব্যগ্রন্থের জন্য ‘নোবেল’ পুরস্কার পান, তার অনেক কাব্যই তিনি এ-বাড়িতে বসেই লিখেছেন। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত ‘শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য কর্ম’ শীর্ষক পরিচিতিমূলক পুস্তিকা অনুযায়ী এ-বাড়িতে অবস্থানকালে রবীন্দ্রনাথ ৩৮টি কবিতা, ১০টি নাটক, ২টি প্রবন্ধ ও গীতাঞ্জলীর ৯টি গান রচনা করেছেন।

১৮০৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এ অঞ্চলের জমিদারি লাভ করেন। পরবর্তিতে ১৮৮৯ সাল থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনিয়মিত বিরতিতে এখানে আসতেন এবং সেই সময় তিনি জমিদারীর কাজ পরিচালনা করতেন। সে সময় এই কুঠিবাড়ি থেকেই তিনি সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী গ্রন্থ লিখেন এবং গীতাঞ্জলী কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন।

পুরো ভবনটি এখন জাদুঘর হিসেবে দর্শকদের জন্যে উম্মুক্ত । জাদুঘরের নীচ ও দ্বিতীয় তলায় ১৬টি কক্ষেই কবি রবীন্দ্রনাথ, শিল্পী রবীন্দ্রনাথ, জমিদার রবীন্দ্রনাথ, কৃষক বন্ধু রবীন্দ্রনাথ অর্থাৎ নানা বয়সের বিচিত্র ভঙ্গির রবীন্দ্রনাথের ছবি । বাল্যকাল থেকে মৃতু্শয্যার ছবি পর্যন্ত সংরক্ষিত আছে । তাছাড়াও রয়েছে শিল্পকর্ম এবং তাঁর ব্যবহার্য আসবাবপত্র দিয়ে পরিপাটি দিয়ে সাজানো ।

কবি ভবনে ব্যবহার্য জিনিসপত্রগুলোর মধ্যে আরো আছে চঞ্চলা ও চপলা নামের দুটো স্পিডবোট, পল্টুন, ৮বেহারা পালকি, কাঠের চেয়ার, টি টেবিল, সোফাসেট, আরাম চেয়ার, পালংক ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস ।

কবির যখন ভরা যৌবন এবং কাব্য সৃষ্টির প্রকৃষ্ট সময়,তখনই তিনি বিচরণ করেছেন শিলাইদহে। কখনও একাকী, কখনও স্ত্রী, পুত্র-কন্যা নিয়ে এসেছেন শিলাইদহে,পেতেছেন ক্ষণিকের সংসার;ঘুরে বেড়িয়েছেন বোটে, পালকিতে। যে লেখার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ বিশ্ব দরবারে পরিচিত হন; নোবেল পুরস্কার পান, সেই লেখার স্থান শিলাইদহ হওয়ায় কুষ্টিয়াবাসী তথা দেশবাসী গর্বিত।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও জাদুঘর | দর্শনিয় স্থান | কুমারখালী উপজেলা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি থেকে কিছু দুরে শিলাইদহে পদ্মা নদীতে সূর্যাস্তের সৌন্দর্য

শিলাইদহে বসে রবীন্দ্রনাথ যেসব গান-কবিতা লিখেছেন, তার মধ্যে কুঠিবাড়ির পাশে বকুলতলার ঘাটে বসে লেখা “যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে” গড়াই নদীতে বোটে বসে লেখা “সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর” “শিলাইদহে বসে লেখা “আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ”, “কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি” প্রভৃতি। কবিগুরু শিলাইদহে ছিলেন ১৯২২ সাল পর্যন্ত। এই সুদীর্ঘ ৩০ বছর এখানে অবস্থানকালে তিনি সৃষ্টি করেছেন সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

রবীন্দ্রনাথের বিশাল সাহিত্যসৃষ্টির অর্ধেকাংশের বেশি জন্মলাভ করে শিলাইদহের বোটে পদ্মাবক্ষে, এই কুঠিবাড়িতে, গোরাইয়ের বক্ষে (গড়াই নদীতে : লেখক) ও পদ্মার চরে। তাঁর প্রথম যৌবনের ছোট গল্পের জন্মস্থান শিলাইদহে। তাঁর পৌঢ়কাল পর্যন্ত প্রকাশিত অধিকাংশ রচনাই শিলাইদহের পটভূমিকায় রচিত।” নগর জীবনে বেড়ে ওঠা কবির মানসহৃদয়ে শিলাইদহের অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ গভীর রেখাপাত করেছিলো- যে কারণে মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে তিনি লিখেছেন:

“আমার যৌবন ও পৌঢ় বয়সের সাহিত্যরস-সাধনার তীর্থস্থান ছিল পদ্মা প্রবাহচুম্বিত শিলাইদহ পল্লীতে। সেখানে আমার যাত্রাপথ আজ সহজগম্য নয়, কিন্তু যেই পল্লীর স্নিগ্ধ আমন্ত্রণ সরস হয়ে আছে আজও আমার নিভৃত স্মৃতিলোকে, সেই আমন্ত্রণের প্রত্যুত্তর অশ্রুতিগম্য করুণ ধ্বনিতে আজও আমার মনে গুঞ্জরিত হয়ে উঠছে, সেই কথা এই উপলক্ষে পল্লীবাসীদের আজ জানিয়ে দিলুম”

(১৩৪৬, ১লা চৈত্রের চিঠি, শিলাইদহ পল্লী-সাহিত্য সম্মেলন সম্পাদককে লেখা)।

শিলাইদহ প্রসঙ্গে অপর এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন “আগে পদ্মা কাছে ছিল- এখন নদী বহুদূরে সরে গেছে। … একদিন এই নদীর সঙ্গে আমার কত ভাব ছিল। শিলাইদহে যখন আসতুম, তখন দিনরাত্তির ঐ নদীর সঙ্গে আমার আলাপ চলতো। … ছাদের উপর দাঁড়িয়ে যতদূর দৃষ্টি চলে তাকিয়ে দেখি- মাঝখানে কত মাঠ, কত গ্রামের আড়াল, সবশেষে উত্তর দিগন্তে আকাশের নীলাঞ্চলের নীলতল পাড়ের মতো ঐ যে একটি ঝাপসা বাষ্পরেখাটির মত দেখতে পাচ্ছি, জানি ঐ আমার পদ্মা” (২২ চৈত্র ১৩২৮, ভানুসিংহের পত্রাবলী)।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও জাদুঘর
শিলাইদহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ির ভিতরে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও জাদুঘর:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ির বর্ণনা :

শিলাইদহ গ্রামের উত্তর প্রান্তে এক সবুজ শ্যামল পরিবেশে ৩৩ বিঘা জমির মধ্যে আড়াই বিঘা জমির উপর নয়ন জুড়ানো স্থাপত্য রীতিতে গড়া কবির তিনতলা বাড়ি। কার্ণিশে প্রাচীরের মতই পদ্মার ঢেউ খেলানো বাউন্ডারী প্রাচীর। কুঠি বাড়িতে রুম সংখ্যা আঠারো, দরজা সংখ্যা সতেরোটি, জানালার সংখ্যা ত্রিশটি। কুঠিবাড়ির তিন তলার কামরাটা ছিল কবি গুরুর লেখার ঘর। কবি এই ছাদের উপর বসে সুর্যোদয়, সূর্য্যাস্ত ও জ্যোৎস্না প্লাবিত প্রকৃতির শোভায় মুগ্ধ হতেন।

এই বাড়িতে বসে কবির দু’চক্ষুকে যে সমস্ত দৃশ্য তন্ময় হতো। তা তিনি নিজেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ করেছেন। এই ঘরের জানালা দিয়ে এখন শুধু পদ্মাকে দেখা যায়। আগে পদ্মা গড়াই দুটো নদীকে দেখা যেত। কবি রবীন্দ্রনাথ তখন ঘরে বসেই শুনতে পেতেন নদীর ডাক। নদী যেন কলকল ছলছল করে কবিকে ডাকতো। কবিও সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন পদ্মার বুকে,গড়াইয়ের বুকে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ির আশপাশ :

শিলাইদহ কুঠি বাড়ির চারদিকে ঝাউ,শিশু ও শাল বীথিকায় ঘেরা। কবি গুরুর এই পল্লী ভবনের অপরূপ মনোরম শোভা বহুদূরের পথিক কেও আকর্ষণ করে। কুঠি বাড়ির চারিদিকে ঢেউ আকৃতির প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রাচীরের পূর্ব দিকে আম কাঁঠাল লিচু নারকেল প্রভৃতি ফলবান বৃক্ষের বৃহৎ বাগান ও পূর্ব-পশ্চিম লম্বা দীঘি। কুঠি বাড়ি ভবনের পশ্চিমে আর একটি বড় পুকুর। এই পুকুরটি শান বাঁধানো। ঘাটের প্রবেশ পথের দুধারে কবির স্বহস্তে দুটি বকুল বৃক্ষ রোপন করেন। ঐ গাছ দুটির মৃদমন্দ গন্ধ বিস্তারী নিবিড় ছায়ায় বসে কবি আপন মনে গান গাইতেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি তৈরীর উপাদান :

কুঠিবাড়ির ছাদ জাপান থেকে উন্নতমানের টালি এনে তৈরি করা হয়েছিল। তিনতলার সিঁড়িটি কাঠ দিয়ে গড়ানো। রবীন্দ্রনাথের দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ জার্মানি থেকে মিস্ত্রি এনে এক বিশেষ কায়দায় সিঁড়িটি তৎকালীন সময়ে তৈরি করেন কিন্তু এ সিঁড়ির প্রতিরোধ মূলক কোন বীম নেই। তিন তলা কুঠি বাড়িতে উঠার জন্যে বাহির দিয়ে আরো একটি বিশেষ কায়দায় গোল করে প্যাঁচানো লোহার একটি সিড়ি রয়েছে।

কি কি আছে বীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ভিতর :

কুঠিবাড়িতে কবির নানা বয়সের বিচিত্র ভঙ্গির ছবি রয়েছে। বাল্যকাল থেকে শুরু করে মৃত্যু শয্যার ছবি পর্যন্ত সংরক্ষিত রয়েছে। আরো আছে মহাত্মাগান্ধী এন্ডুজ কবি ইয়েটসসহ বহু মূল্যবান ছবি। কবির নিজ হাতের লেখা কবিতা, নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পর প্রকাশিত কবির ছবি ও সনদপত্র। এমন কি কবি যেসব নাটকে অভিনয় করেছেন সেসব নাম ভূমিকার ছবি রক্ষিত। দ্বিতীয় তলাতে কবির শয়ন কক্ষে একটি পালং, ছোট একটা গোল টেবিল, কাঠের আলনা, আলমারী, কবির ব্যবহৃত চঞ্চল ও চপলা নামের দুটো স্পিডবোর্ট।

পল্টুন একটি, আট বিহারা ও ১৬ বিহারা পালকি। কাঠের চেয়ার একটি, আরাম চেয়ার একটি, হাত পালকি একটি, গদি চেয়ার দুটি, সোফাসেট দুটি, টেবিল দুটি, ঘাস কাটার মেশিন একটি, চীনা মাটির তৈরি একটি ওয়াটার ফিল্টার। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ও বিভিন্ন মনীষী গ্রুপ ছবি এবং রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতে আঁকা বিভিন্ন ছবি ও কবিতা লেখা। এ সমস্ত জিনিসগুলো কুঠিবাড়ির একতলা থেকে দ্বিতীয় তলা ৯টি রুমে সংরক্ষিত আছে।

বীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি সেই বকুল তলা:

কুঠি বাড়ির চারপাশে রয়েছে ফুলের বাগান। উত্তর পাশে প্রাচীন সব আমগাছ। কুঠি বাড়ির পশ্চিম পাশে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বকুল তলার ঘাট। এ ঘাটেই তিনি গোসল করতেন। কবি রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে বসে যেসব গান কবিতা লিখেছেন,তাহলো বকুল তলার ঘাটে বসে। যেমন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে। কয়াতে বসে কবির লেখা বিখ্যাত কবিতা হেমোর দুর্ভাগা দেশ,যাদের করেছ অপমান,অপমান হতে হবে তাদের সবার সমান,গড়াই নদীতে বোটে বসে লেখা সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর।

শিলাদইদহে বসে লেখা আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ, কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, হে নিরূপমা, হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মত নাচেরে, নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাই আর নাহিরে, গায়ে আমার পুলক লাগে ইত্যাদি গান কবিতা রচনা করেছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি থেকে একটু আগালেই শিলাইদহ নৌকাঘাট :

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও জাদুঘর | দর্শনিয় স্থান | কুমারখালী উপজেলা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ির গীতাঞ্জলি ভবন, শিলাইদহ

শিলাইদহ নৌকাঘাট এই গ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান, এই নৌকা ঘাটের মাধ্যমে কুষ্টিয়া শহর থেকে পাবনা শহরের যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। এই নৌকাঘাটটি গ্রামটি একটি বানিজ্যিক এলাকায় পরিণত করেছে। এছাড়াও নানা পর্যটক ও দর্শনার্থী এখানে পদ্মা নদীতে ঘুরতে আসেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও জাদুঘরে ঢোকার সময়সূচী ও প্রবেশ টিকেটের মূল্য :

গ্রীষ্মকালীন সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি জাদুঘর প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর শীতকালীন সময়ে প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে প্রতিদিন বেলা ১ টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত জাদুঘর সাময়িক বিরতিতে বন্ধ থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি জাদুঘরটি সপ্তাহের প্রতি রবিবার পূর্ণ দিন বন্ধ থাকে এবং সোমবার বেলা ২টা থেকে খোলা থাকে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি জাদুঘর প্রবেশ টিকেটের মূল্য জনপ্রতি ১৫ টাকা এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রবেশ টিকেটের মূল্যে ৫ টাকা। সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীদের ৫০ টাকা এবং অন্যান্য সকল বিদেশী পর্যটদের জন্য টিকেটের মূল্য ১০০ টাকা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়িতে মেলা:

২৫ বৈশাখ কবি গুরুর জন্ম দিন। প্রতি বছর এই দিনটি এলেই বদলে যায় কুঠিবাড়ির দৃশ্য। কুঠিবাড়িকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে উৎসব, বসে বিরাট গ্রামীণ মেলা। নামে মানুষের ঢল। আগমন ঘটে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য কবি,সাহিত্যিক ও গুণীজনসহ হাজার হাজার দর্শনার্থীর। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর হয়ে ওঠে স্থায়ীভাবে তৈরি দু’টি মঞ্চ। এসব আয়োজনকে ঘিরে পুরো কুঠিবাড়ী চত্বর হয়ে ওঠে আলোক ঝলমল। ফ্যাকাসে হয়ে পড়া দেয়ালে পড়ে চুনের আচড়। জন্মবার্ষিকীকে ঘিরে তিনদিন ধরে চলে অনুষ্ঠানমালা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি যাওয়ার উপায় :

কুষ্টিয়া থেকে অটো রিক্সা, সিএনজি, ইজি বাইক কিংবা অন্যান্য পরিবহনে সহজেই শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে যাওয়া যায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও জাদুঘর নিয়ে গুরুকুল লাইভ এর প্রতিবেদন:

 

ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া :

ঢাকা থেকে যেতে চাইলে বাস বা ট্রেনে দুইভাবেই যেতে পারবেন। বাস এ গেলে কল্যানপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে নিউ এসবি সুপার ডিলাঙ্ক, শ্যামলী, হানিফ বাসে কুষ্টিয়ার মজমপুর গেট এ নেমে যেতে হবে। বাসের ভাড়া নন এসি ৪৫০-৫০০ টাকা, এসি ৬০০-৬৫০ টাকা।

ট্রেন এ যেতে চাইলে সুন্দরবন এক্সপ্রেস অথবা চিত্রা এক্সপ্রেসে যেতে পারবেন। সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকালে ছেড়ে যায় অ্যান্ড চিত্রা এক্সপ্রেস সন্ধ্যায় কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। ট্রেনে গেলে আপনাকে পোড়াদহ বা ভেড়ামারা স্টেশনে নামতে হবে। ভেড়ামারা বা পোড়াদহ থেকে বাস বা সিএনজি তে করে কুষ্টিয়া শহরে আসতে হবে। কুষ্টিয়া থেকে অটো রিক্সা বা সিএনজিতে চড়ে সহজেই শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে যেতে পারবেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ির ইতিহাস :

রবীন্দ্রনাথের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ভারতের উড়িষ্যায় তিনটি এবং তৎকালীন পূর্ববাংলায় তিনটি জমিদারী রেখে মৃত্যুবরণ করেন। এগুলো হলো- নদিয়া (বর্তমান কুষ্টিয়া) জেলার বিরাহিমপুর (সদর শিলাইদহ), পাবনা জেলার শাহজাদপুর পরগণা (সদর শাহজাদপুর; বর্তমান সিরাজগঞ্জের অন্তর্গত) এবং রাজশাহী জেলার কালীগ্রাম পরগনা (সদর পতিসর; বর্তমান নওগাঁর অন্তর্গত)। দ্বারকানাথ ঠাকুর বিরাহিমপুর পরগনার জমিদারী নাটোরের রাজার কাছ থেকে ১৮৩৩ সালে কিনে নেন। বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জমিদারী সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য পরিবারের সদস্যবৃন্দের মধ্যে দায়িত্বভার অর্পণ করেন।

এ প্রসঙ্গে কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, “আমার পিতার উপর আদেশ হল যে তাঁকেই জমিদারী পরিচালনা করতে হবে এবং কলকাতা ছেড়ে বিরাহিমপুরের কাছারি শিলাইদহে গিয়ে বাস করতে হবে”।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও জাদুঘর | দর্শনিয় স্থান | কুমারখালী উপজেলা
শিলাইদহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি প্রাঙ্গনে সরোবর

রবীন্দ্রনাথ কিশোর বয়সে পিতামহের সাথে প্রথমবারের মত শিলাইদহে আসেন। তিনি জমিদারীর তদারকীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন ১৮৮৯ সালে। জোড়াসাঁকোর সদর কাছারির হিসাবপত্রে জ.ঞ. স্বাক্ষর দিয়ে রবীন্দ্রনাথ কাজ শুরু করলেন ২ আষাঢ় ১২৯৬ সাল থেকে, ইংরেজি মতে সেদিন ছিল ১৫ জুন ১৮৮৯ খিস্টাব্দ, শনিবার।

এর কয়েকমাস পরে অগ্রহায়ণ মাসে তাঁর ওপর জমিদারী পরিদর্শনের ভারও অর্পিত হলো। এই সময়ই ঘটে তাঁর তৃতীয়বার শিলাইদহ ভ্রমণ। “রবীন্দ্রনাথের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে ১৮৯৬ খৃষ্টাব্দের ৮ আগস্ট পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে সমগ্র সম্পত্তির সর্বময় কর্তৃত্ব দেবেন্দ্রনাথ ছেড়ে দেন রবীন্দ্রনাথের উপর”।৬ শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে জমিদার হিসাবে রবীন্দ্রনাথের অভিষেক হয় ১৮৮৯ সালে। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সপরিবারে কুঠিবাড়ি ছেড়ে যান।

ঠাকুর পরিবারের জমিদারী ভাগাভাগি হলে বিরাহিমপুর পরগনার (শিলাইদহসহ) জমিদারী পান রবীন্দ্রনাথের ভাতুষ্পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর। “তিনি শেষবারের মত জমিদারীর তৎকালীন মালিক, তাঁর ভাতুষ্পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুরোধে ১৯২৩ সালে শিলাইদহে আসেন”।

দ্বারকানাথ যখন শিলাইদহের জমিদারী কেনেন তখন বাংলায় চলছে ইংরেজ নীলকরদের দৌরাত্ম্য। নীলকরেরা ঔপনিবেশিক শক্তিবলে চাষীদের দিয়ে ধান ও পাট চাষের পরিবর্তে নীলচাষ করতে বাধ্য করে। শিলাইদহে বাস করতেন মিষ্টার শেলী নামে এক নীলকর। শেলী ও তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর পরে তাদের বাসভবন দ্বারকানাথ এর অধিকারে চলে আসে। নীলকুঠি তথা শেলীর বাসভবন প্রসঙ্গে কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ লিখেছেন, “বাবা যখন আমাদের নিয়ে শিলাইদহে গেলেন তখন এই নীলকুঠি নেই- তার ধ্বংসবিশিষ্টই দেখতুম, নদীর ধারে বেড়াতে গেলে।

বাংলাদেশে এসে পদ্মানদী খুব খামখেয়ালী হয়ে গেছে…। পদ্মার ধারে যারা বাস করে তারা এজন্য সর্বদাই আতঙ্কে থাকে। নীলকুঠির প্রতি অনেকদিন পর্যন্ত পদ্মায় নজর যায় নি, হঠাৎ খেয়াল গেল, সেই দিকের পাড় ভাঙতে শুরু করল। বাড়ীসুদ্ধ নদীগর্ভে যাবে এই ভয়ে বাড়ীটা আগে থেকেই ভেঙে ফেলা হল। তার মালমশলা নিয়ে নদী থেকে খানিকটা দূরে আর একটা কাছারি ও কুঠিবাড়ি তৈরী করা হয়। … কিন্তু আশ্চর্য, পুরনো কুঠিটা ভাঙা হল বটে, কিন্তু নদী বাগানের গেট পর্যন্ত এসে আবার ফিরে গেল। যতদিন আমরা শিলাইদহে ছিলুম সেই নীলকুঠির ভগ্নাবশেষ অটুট ছিল।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও জাদুঘর | দর্শনিয় স্থান | কুমারখালী উপজেলা - কুঠিবাড়ির সামনের সড়কে পর্যটকদের জন্য উপহারের দোকান
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ির সামনের সড়কে পর্যটকদের জন্য উপহারের দোকান

বর্তমান কুঠিবাড়ি নির্মিত হয় আরো পরে ১৮৯২ সালে। “এই বাড়ি তৈরির ভার ছিল কবির জ্যৈষ্ঠভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথের তৃতীয় পুত্র নীতীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর (চিঠিপত্র ১ম খণ্ড)। পরে পুত্র রথীন্দ্রনাথ বর্তমানরূপে পরিণত করেন এই কবি-ভবনকে। ভবনের মালিক জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহে অবস্থানকালে বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন পদ্মাবক্ষে তাঁর প্রিয় বজরায় এবং সেখানেই তিনি সাহিত্য সাধনা করতেন। কুঠিবাড়িতে “দোতলায় পূর্বদিকের বড় কামরায় রবীন্দ্রনাথ নিজে শয়ন করতেন। স্ত্রীবিয়োগের পর তেতলায় একখানা প্রকোষ্ঠ ও স্নানের ঘর তৈরি হল। রবীন্দ্রনাথ ঐ ঘরটিতেই পরবর্তীকালে সাহিত্য সাধনা করতেন এবং এখানেই ইংরেজি গীতাঞ্জলীর জন্ম হয়।”

কবি যে কুঠিবাড়ি থেকে জমিদারী পরিচালনা পরিচালনা সাহিত্য-সাধনা করতেন তাই নয়। এই ভবনের সাথে জড়িয়ে রয়েছে কবির নানা কর্মযজ্ঞের স্মৃতি। নীলচাষের আগুনে তৎকালীন কুষ্টিয়া সুপ্রসিদ্ধ রেশম চাষ ও বয়নশিল্প ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। রাজশাহীর অক্ষয়কুমার মৈত্রের সহযোগিতায় কবি শিলাইদহে রেশমচাষ পুনঃপ্রবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এমনকি কুঠিবাড়ির একটি ঘরে রেশম গুটির চাষ অনুমোদন করেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি রসিকতা করে লিখেছেন:

“শ্রীযুক্ত অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় মহাশয় কুক্ষণে ২০টি রেশমের গুটি আমার ঘরে ফেলিয়া গিয়াছিলেন। আজ দুই লক্ষ ক্ষুধিত কীটকে দিবারাত্রি আহার এবং আশ্রয় দিতে ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছি- দশ বারোজন লোক অহর্নিশি তাহাদের ডালা সাফ করা ও গ্রাম-গ্রামান্তর হইতে পাতা আনার কার্যে নিযুক্ত রহিয়াছে- লরেন্স জ্ঞান-আহার-নিদ্রা পরিত্যাগ করিয়া কীট সেবায় নিযুক্ত। আমাকে সে দিনের মধ্যে দশবার করিয়া টানাটানি করিয়া প্রায় পাগল করিয়া তুলিল”

শিলাইদহের কুঠিবাড়ীকে কেন্দ্র করে তিনি অত্র এলাকায় প্রথমবারের মত আলু চাষেরও প্রবর্তন করেন। তিনি উন্নত জাতের ধান চাষেরও প্রবর্তন করেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে আশা ও হতাশা মিলিয়ে নানা জায়গায় লেখালেখি করেছেন। তিনি লিখেছেন:

“আমার চাষ-বাসের কাজও মন্দ চলিতেছে না। আমেরিকান ভুট্টার বীঝ আনাইয়াছিলাম- তাহার গাছপালা দ্রুত বাড়িয়া উঠিতেছে। মাদ্রাজী সরু ধান রোপন করাইয়াছি তাহাতেও কোনো অংশে নিরাশ হইবার কারণ দেখিতেছি না”

(চিঠিপত্র ৫ম খণ্ড)।

শিলাইদহের কুঠিবাড়ী আরো এক বিশেষ কারণে কবি প্রতিষ্ঠিত শান্তি নিকেতনের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে গেছে। শান্তি নিকেতনের অধ্যাপক সে-কালের মরণব্যাধি বসন্ত রোগে মৃত্যুবরণ করলে আবাসিক ছাত্রদেরকে সেখানে রাখা কবি নিরাপদ বোধ করেননি। শান্তি নিকেতনের শিক্ষা কার্যক্রম স্বল্প সময়ের জন্য শিলাইদহের কুঠিবাড়ীতে স্থানান্তরিত করেন। সেখানকার ছাত্রদেরকে তিনি এখানে নিয়ে আসেন। সেটি বাংলা ১৩১০ সালের কথা। ১৩১১ সালের বৈশাখ পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ের কাজ শিলাইদহে হয়েছিল।

কুঠিবাড়ির সরোবরে রক্ষিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক ব্যবহৃত বজরার অনুকৃতি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ির সরোবরে রক্ষিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক ব্যবহৃত বজরার অনুকৃতি

রবীন্দ্রনাথ প্রজা-হিতৈষী জমিদার ছিলেন। তিনি তাঁর জমিদারীর প্রজাদের শিক্ষা, চিকিৎসা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়েও চিন্তা ও কাজ করতেন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহ জমিদারীর প্রজা-সাধারণের চিকিৎসার জন্য কাচারি বাড়িতে আটচালা বিশিষ্ট একটি দাতব্য কবিরাজি চিকিৎসালয় স্থাপন করেন। বরিশালের খোসালে চন্দ্র মজুমদার ছিল চিকিৎসালয়ের প্রথম কবিরাজ। পরবর্তীতে এটি হোমিও চিকিসালয় হিসেবে প্রজা-সাধারণকে চিকিৎসা দিতে থাকে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরে ১৯০৮ সালে প্রজা-সাধারণকে আরও উন্নত আধুনিক চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে চিকিৎসালয়টি কাচারি বাড়ি থেকে স্থানান্তর করেন। তিনি পাকা ভবনে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে কুঠিবাড়ির অদূরে (কুঠিবাড়ি থেকে কাচারি বাড়ির পথে আধা কিলোমিটার এগোলেই) ‘দি মহর্ষি চ্যারিটেবল ডিসপেন্সারী’ নাম দিয়ে নতুন চিকিৎসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।১৩ এটি প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ অর্থ-সংকটে পড়েন। তিনি প্রজা-সাধারণের কাছ থেকে চাঁদাও সংগ্রহ করেন, তবে তা বাধ্যতামূলক ছিল না। যে প্রজা ২৫ টাকা চাঁদা প্রদান করে তার বার্ষিক খাজনা থেকে তা মুওকুফ করা হয়।

সে-যুগে এমবিবিএস পাশ অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক পাওয়া ছিল কষ্টসাধ্য। মফস্বল জেলা সদরেও এলএমএফ (অ্যলোপ্যাথি চিকিৎসা বিদ্যায় ডিপ্লোমা) চিকিৎসকরাই চিকিৎসা করতেন। ডাক্তার আগর লাল মজুমদারকে (এলএমএফ) চ্যারিটি ডিসপেন্সারিতে চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। হাসপাতাল প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন:

“এই ডাক্তারখানা আমাদের জমিদারি এবং তার চতুর্পাশ্বের লোকের বিশেষ উপকার হয়েছে। এই কথা যখন শুনতে পাই তখন সকল অভাবের দুঃখের উপর ঐ সুখটাই বড়ো হয়ে ওঠে। বিরাহিমপুর প্রজাহিতের এই একটিমাত্র কার্যে সফল হয়েছি। … আমাদের যা কিছু দেনা হয়েছে তা যদি আমাদের জমিদারির এইরকম কাজের জন্য হতো, আমি এক মুহূর্তের জন্য শোক করতুম না।”

 

আরও দেখুন: