সত্যিই কি ম্যাজিশিয়ানের সাথে ম্যাজিকও চলে গেল?

আইওএস ৬ নিয়ে ৬ষ্ঠ প্রজন্মের আইফোন ৫ বাজারে এসেছে সেপ্টেম্বরে ২১ তারিখে। অ্যাপল বলেছে – এটাই বাজারে সবচেয়ে হালকা-পাতলা আর দ্রুতগতির ফোন। নতুন অপারেটিং সিস্টেম, দ্রুতগতির প্রসেসর, আরও বড় (৪ ইঞ্চি) স্ক্রিন, এলটিই ডাটা, অ্যাপলের নিজস্ব ম্যাপ আরও অনেক কিছু। বাদও কিছু পড়েছে। তার মধ্যে গুগল ম্যাপ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

অ্যাপলের পণ্য আসার আগে-পরে সবসময় বেশ হৈ চৈ হয়। তবে এবার তা একটু অন্য মাত্রা পেয়েছে। রিলিজের পরে সেটা আরও বেশি বেড়েছে। এটা একদিক যেমন স্টিভ জবস এর চলে যাবার পর প্রথম আইফোনের রিলিজ। অন্যদিকের টিম কুকের নেতৃত্বে রান্না প্রথম আইফোন।

অ্যাপলের প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে ক্রেতাদের উপরে স্টিভের বিরাট প্রভাব ছিল। নির্ভরতার আইকন হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বেশিরভাগ ক্রেতাই বিশ্বাস করত – স্টিভ কোন বাজে জিনিস বাজারে ছাড়বে না। পারফেকশন নিয়ে তার খুঁতখুঁতানির বিষয়টির খুব পজিটিভ মার্কেটিং হয়েছিল। অ্যাপলের ডুবন্ত নৌকার হাল ধরে আই সিরিজ শুরু করায় সেই প্রভাব বহুগুণে বেড়েছিল। অবস্থা এমন দাঁড়াল যেন – গ্রাহকের টপ অব মাইন্ডে অ্যাপলের লোগোর সাথে স্টিভের চেহারা চলে আসে। পণ্য এবং নির্মাতা মিলিয়েই যেন গ্রাহকের পূর্ণ নিশ্চয়তা। একটি বাদে অন্যটি অচল।

সেই স্টিভ বাদে অ্যাপলের নতুন পণ্য। তার নেতৃত্বে তৈরি করা জিনিসের নতুন সংস্করণ। তার অভিনয়ে অসমাপ্ত চলচ্চিত্র অন্য নায়ক দিয়ে শেষ করা বা সেই চলচ্চিত্রের পুনর্নির্মাণ। শেষটুকু অভিনয় করা অভিনেতা যত ভালই হোক বা নতুন নির্মাণ যত উন্নতই হোক – দর্শক সহজে নেবে কেন? আলোচনা নতুন পণ্যটির গুনাগুণ নিয়ে যা, তারচেয়ে অনেকগুণ বেশি স্টিভের থাকা-না থাকা নিয়ে।

সেজন্য রিলিজের পরের প্রশ্নগুলোর ধরণ পাল্টে গেছে। স্টিভ থাকলে এত ভুল ভ্রান্তি সহ অ্যাপল ম্যাপ রিলিজ করা হত কি না? অ্যাপল ম্যাপ পূর্ণ হবার আগে কি তিনি গুগল ম্যাপ বাদ দিতেন? বাজারের অন্য স্মার্ট ফোনগুলোর মত বড় স্ক্রিন নিতেন কি না? সব প্রশ্নের সাথে ঘুরে ফিরে যেন স্টিভের নামে। সকল ভুলের একমাত্র কারণ যেন তার অনুপস্থিতি।

এসব কারণে এবার গ্রাহকের প্রত্যাশা পূরণ তো দূর, প্রত্যাশার পরিমাণ মাপাই অ্যাপলের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। এ নিয়ে তাদের বাড়তি চিন্তাও ছিল। এমনকি প্রশ্ন এসেছিল – তারা নতুন সিরিজ তৈরি করবে, নাকি পুরানো সিরিজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত – স্টিভের সময়ের পণ্য সিরিগুলো চালিয়ে নিয়ে যাবার পক্ষে গিয়েছে।

অ্যাপল প্রেমীদের সমালোচনার আর একটি কারণ, মাঝারি হয়ে যাবার ভয়। স্টিভ অ্যাপল প্রেমীদের এক ধরনের আভিজাত্যের অনুভব দিতে পেরেছিলেন। তারা ভাবতে পারত – তারা একটু আলাদা, তাদের ফ্যাশন অন্যরা ফলো করে। এই কারণেই তারা একটু বেশি দাম দিয়ে অ্যাপল কিনে সন্তুষ্ট থাকতেন। হঠাৎ অন্য স্মার্টফোনগুলোর মত বড় স্ক্রিনে চলে যাওয়া বা এধরনের অন্য পরিবর্তনগুলো তারা ভাল ভাবে নিতে পারছেন না। ভাবছেন – স্টিভ ছাড়া অ্যাপল তার নিজস্ব চরিত্র হারিয়ে ফেলছে। চিরাচরিত উদ্ভাবন শক্তির উপর ভরসা হারিয়ে বাজারেরে অন্যদের ফলো করা শুরু করেছে।

এটা হয়ত শুনতে ভাল লাগবে না। তবে সত্যি বলতে গেলে – আজকের দিনে স্টিভের জনপ্রিয়তা অ্যাপল এর জন্য বিরাট ঝামেলার কারণ। বেচা বিক্রিতে খুব বেশি প্রভাব না ফেললেও অকারণ অনেক বিতর্কের মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাদের। অকারণ অর্থ এবং সময় ব্যয় হচ্ছে তাতে।

বাস্তবতা হল – নতুন পরিবর্তনগুলো বেশিরভাগ স্টিভ বেঁচে থাকার সময়ের সিদ্ধান্ত। সবাই জানে স্টিভ নিজের জগতে অন্যদের আগ্রাসন সহ্য করতে পারতেন না। সে কারণেই গুগল ম্যাপ এবং গুগলের বিজ্ঞাপন নিয়ে খুশি ছিলেন না। তাছাড়া অ্যাপল ম্যাপ প্রকল্প তার সময়েই নেয়া। আমরা ভুলে গেছি – তবে অ্যাপল ম্যাপের মত এরকম বাগি পণ্য স্টিভ এর সময়েও রিলিজ হয়েছে। তখন বাক বিতণ্ডা হলেও এতটা হয়নি। তবে এবার এত কিছু কেন? এটা কি – স্টিভ জবস এর প্রতি আনুগত্য, নাকি টিম কুক এর প্রতি রাগ? জানি না।

সবাই যেন ভাবছেন – জাদুকরের সাথে জাদুও চলে গেছে। আর তার জন্য দায়ী নতুন যিনি এসেছেন। টিম কুকের জন্য সমবেদনা, অ্যাপলের জন্য শুভেচ্ছা।

 

 

এডিট- এসএস

Leave a Comment