উদ্যোক্তা ক্যাম্পেইনের তিক্ত অভিজ্ঞতা

উদ্যোক্তা ক্যাম্পেইনের তিক্ত অভিজ্ঞতা : প্রথম হ্যাকাথনে প্রতিযোগীদের যোগাড় করার দায়িত্ব নিয়েছিল প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ (Projuktite Bangladesh) । সভাপতি হিসেবে দেশর বিভিন্ন যায়গায় ঘুরেছিলাম। বলেছিলাম, লিখেছিলাম। প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করেছিলাম।

পাঁচতারা হোটেলে বেশ দারুণ এক ইভেন্ট হল। দারুণ সব প্রকল্প আর সমাধানও বেরিয়ে এলো। আমি ভীষণ আশাবাদী ছিলাম। কারণ এত বড় বড় প্রতিষ্ঠানের, এমন একটা আয়োজনের মাধ্যমে বেরিয়ে আসা প্রকল্পগুলো নিশ্চয় বড় স্পন্সর পাবে। এই তরুণ উদ্যোক্তারা তাদের কনসেপ্টগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবার সুযোগ পাবে।

কিন্তু দু বছর পরে এক সমন্বয় মিটিং এ গিয়ে জানতে পারলাম সেসব প্রকল্পের একটিও স্পন্সর পায়নি। এই প্রকল্পটিও উন্নয়ন সংস্থার (!) আর সবগুলো প্রকল্পের মতোই – স্বপ্নময়, অন্তঃসারশূন্য এবং লক্ষ্যভ্রষ্ট। মাঝখান থেকে কিছু টাউর্ট এর সামান্য আয় রোজগার হয়েছে বলে শুনেছি। এদিকে আমি আর Nahidul Islam Rumel – ছোটভাই-বোন, বিভিন্ন চ্যাপ্টারের নেতা-কর্মীদের কাছে এই প্রকল্পে সাহায্য করার জন্য গালমন্দ শুনলাম।

একসময় ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং নিয়ে অনেক হৈচৈ করেছি। বিষয়টি জনপ্রিয় করার কাজে নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে সারা দেশে ঘুরেছি। কিন্তু কনসেপ্টটি জনপ্রিয় হতে না হতেই দেখলাম – একদল টাউর্ট পুরো কনসেপ্টটি ভাঙ্গিয়ে ময়লার দামে বেচা শুরু করে দিয়েছে। ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং এর নামে মাল্টি লেভেল ক্লিক মার্কেটিঙের ঠগ-বাজির ব্যবসা শুরু হয়ে গেল। নিজেদের ক্রেডিবিলিটির দায়ে এটার বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করতে বাধ্য হলাম। এ অভিজ্ঞতা নিজের ফেলা থুথু চেটে খাবার মতোই তিক্ত

২০০৮ সাল থেকে উদ্যোক্তা ক্যাম্পেইন নিয়ে হৈচৈ করছি। সারা দেশে উদ্যোক্তা সমাবেশ, উদ্যোক্তা কর্মশালা, উদ্যোক্তা উৎসব, উদ্যোক্তা সম্মাননা সহ বিভিন্ন আয়োজন করলাম। সবই প্রায় আমাদের কর্মীদের নিজেদের পকেটের পয়সায়। নতুন উদ্যোক্তাদের ট্রেড লাইসেন্স করা নিয়ে মারামারি করলাম, যুব উন্নয়নের ম্যানেজারকে গালাগালি করলাম, আরও কত কি। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখলাম, উদ্যোক্তা উন্নয়ন কনসেপ্টটাও ঠিক ওই আউটসোর্সিং খাতের মতই ফানুসের দোকান হতে শুরু করলো। উদ্যোক্তা উন্নয়ন নিয়ে সভা-সেমিনার, কর্মশালা, প্রতিযোগিতা আয়োজনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠল অলিতে গলিতে।

ভাল জিনিস যত বেশি হয় তত ভাল ভেবেই চুপ ছিলাম। কিন্তু দেখলাম হল তার উল্টো। দেখলাম উদ্যোক্তা উন্নয়নে নেটওয়ার্ক তৈরি হচ্ছে কিন্তু তার দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না। কনসেপ্ট প্রতিযোগিতা হচ্ছে কিন্তু সেই কনসেপ্ট কেউ স্পন্সর করে না। প্রতিযোগিতার আয়োজনে লাখ টাকা খরচ হয় কিন্তু ১০ টাকার বিনিয়োগ সহযোগিতা দেয়া হয় না।

সভা, সেমিনার মালা বদলের বিরাট বহার কিন্তু কর্মশালায় কোন অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ বক্তা নেই। তরুণরা ছুটছে নতুন উদ্যোক্তা হবার স্বপ্নে। আর তাদের স্বপ্ন আর হাজিরাকে বিক্রি করে কামাই করছে সব উদ্যোক্তা বিশেষজ্ঞ (!) বা উদ্যোক্তাজিবীরা (যাদের নিজেদের জীবনে একটিও সফল উদ্যোগের উদাহরণ নেই)।

এসব নেগেটিভ কথা বলতে ইচ্ছে করে না। আর বিশেষকরে নিজে যেই কনসেপ্টে বিশ্বাস করি সেগুলো নিয়ে তো নয়ই। কিন্তু এরকম সময়গুলোতে মুখ বন্ধ করে বসে থাকলে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। তাই তরুণ ভাই/বোনদের বলব – উদ্যোক্তা নিয়ে যেকোনো উদ্যোগে অংশগ্রহণের আগে, সেই উদ্যোগের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, উদ্যোগের ব্যাকগ্রাউন্ড এবং উদ্যোগের সাথে জড়িত লোকগুলোর সম্পর্কে ঠিকমতো জেনে নিতে সময় দিন। তা না হলে মূল্যবান সময় নষ্ট হবে।

শুনতে খুব খারাপ লাগবে তার পরেও বলি – যিনি নিজে জীবনে একটিও কমার্শিয়াল উদ্যোগ নেন নি, তিনি আপনাকে উদ্যোক্তা হিসেবে কি শেখাবেন? যার একটিও সফল উদ্যোগ নেই, তিনি আপনাকে সফলতার চাবিকাঠি কি বলবেন? যারা জীবনে ব্যর্থ উদ্যোগ শেষে উঠে আসা নেই, তিনি আপনাকে ঘুরে দাঁড়ানোর কোন ফর্মুলা শেখাবেন? যিনি জীবনে এক টাকা অন্যের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেন নি, তিনি আপনাকে ভেণ্চার ক্যাপিটাল বা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের কি শেখাবেন?

Leave a Comment