অন্নপূর্ণা বঙ্গমাতা অতিথিশালা

একটা সময় ছিল, বাড়িতে অতিথি হাঁক দিলেই, আমাদের মা-চাচিরা তাদের কাচারিতে বসতে বলতেন। আমাদের বলতেন পানির জগ আর গ্লাস দিতে। এরপর খাবার বেড়ে আমাদের দিয়ে পাঠাতেন। এমনকি শেষ খাবারটুকু হলেও। হয়ত তখনও তাদের নিজেদের খাওয়াও হয়নি। অতিথিকে খাইয়ে হয়ত নতুন করে চুলায় চাল চড়াতেন।

সে সময় দেখেছি, কোন ঘরের বৌয়ের যদি লোকের পাতে ভাত দেবার অভ্যাস না থাকত, তবে সেই ঘরের দুর্নাম হতো।

দেখতে দেখেতে সব কেমন যেন বদলে গেল। আজ বাড়ির দরজায় অতিথি এসে হাঁক দেয়না। আমরাও হয়ে গেছি- ছোট্ট ঘর আর আমি-তুমি।

আমরা ভুলেই গেছি- সবচেয়ে বড় ভাগ্যের একটি হল ক্ষুধার্ত অতিথিকে অন্ন নিবেদন। সকল পরমানন্দের একটি হল আহারে তৃপ্ত অতিথির মুখ দর্শন।

আমি সেই সময়টাকে দারুণ মিস করি। সেজন্য আমাদের আমাদের সুফি ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে কুমারখালি ট্রেন স্টেশনে শুরু করেছিলাম “অন্নপূর্ণা বঙ্গমাতা অতিথিশালা”। অন্ন নিবেদনের কারণে অন্নপূর্ণা নামটি এসেছে। পাশাপাশি বঙ্গমাতা নামটি এলো আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর এর স্ত্রী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসার নাম থেকে। ওনার একটা চেহারা আমার চোখে আসতো আমার বড় মামির সাথে, খালার সাথে, মায়ের সাথে মিলিয়ে। বিশেষকরে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রান্না-খাওয়ানোর বিষয় নিয়ে।

এই উদ্যোগটির আওতায় আমরা অসহায়, অনাথ, ছিন্নমূল, ভবঘুরেদের এক বেলা আপ্যায়নের চেষ্টা করি। উপস্থিত আয়োজকরাও একই খাদ্য গ্রহণ করেন।

এই আয়োজনটি নিয়মিত চলছে। আমি কখনও উপস্থিত থাকলে নিজে হাতে অন্ন নিবেদনের চেষ্টা করি।