শ্রোতা সহায়িকা নোট সিরিজে আজকের রাগ – রাগ কেদার [ Raga Kedar, Kedara]। এই আর্টিকেলটির উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। আপডেট পেতে আবারো আসার আমন্ত্রণ রইলো।
রাগ কেদার [ Raga Kedar, Kedara]
রাগ কেদার বা কেদারা। আমাদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যান্য পরিচিত রাগগুলোর মধ্যে বিশিষ্ট, শক্তিশালী এবং ভীষণভাবে জাগ্রত একটি রাগ। প্রায় সব বড় সঙ্গীতকার এই রাগের রেকর্ড করেছেন। যন্ত্র, ধ্রুপদ, ধামার, খেয়াল এর পাশাপাশি ঠুমরী, ভজন, গজল, কাওয়ালী ও ফিল্মের প্লেব্যাকে কেদারের ব্যবহার হয়েছে।
আরোহ: S M ~P, m P D n ~D P, m P S’
অবরোহ: S’ N D P, m P D P M~ , S R S
পাকাড়: S M, M P, m P m P, D P M, R S
আরোহ-আবরোহ এই লিঙ্ক গুলোতে গিয়ে শুনে নিতে পারেন । লিংক ১ ।
কেদারে রাগে দুটি মধ্যম, পঞ্চম ও ধৈবতের প্রয়োগে একটা অদ্ভুত যাদু তৈরি হয়। আবার ষড়জ থেকে খাড়া মধ্যম লাগানোতেও কখনও গাড়ে কাঁটা দেবে।
কেদার আড়ব-সম্পূর্ণ রাগ। এরা আরোহতে রিশব ও গান্ধার বর্জিত। দুটি মধ্যমই লাগানো হয়। শুদ্ধ মধ্যম বেশি, তীব্র মধ্যম অপেক্ষাকৃত কম। বাদী সুর শুদ্ধ মধ্যম আর সমবাদী সুর ষড়জ। গাওয়া হয় সচরাচর রাতের প্রথম প্রহরে। কেদারে আরোহ করতে গিয়ে একবারে ষড়জ থেকে মধ্যমে যায়। অনেকেই মধ্যমের উপরে যাবার আগে গান্ধারের কান হালকা করে ছুঁয়ে যায়। অবরোহণে কখনও কখনও দুটি মধ্যমই পাশাপাশি/উপরনিচে লাগানো হয়। কেউ কেউ অবরোহণে ধৈবতের সাথে কোমল নিষাদও ব্যবহার করেন।
কেদার কল্যাণ ঠাটের সেসব রাগের মধ্যে পড়ে, যেসব রাগে দুটি মধ্যম ব্যবহার হয়েছে। এসব রাগে তীব্র মধ্যমের চেয়ে শুদ্ধ মাধ্যম বেশি ব্যবহার হয়। তীব্র মাধ্যম সব সময় আরোহতে পঞ্চম এর সাথে মিলিয়ে লাগানো হয়। এজন্য এসব রাগে “ক্ষা পা ধা পা” টুকরা কমন পড়বে। এসব রাগের আরহতে নিখাদ, অবরোহণে গান্ধার দুর্বল এবং নিজেদের জায়গা থেকে একটু সরিয়ে মানে বক্র রূপে লাগানো হয়। এজন্য কখনও কখনও এসব রাগের ছোট ছোট টুকরোয় স্পষ্ট প্রতিচ্ছায়া পাওয়া যায়। এদের পার্থক্য মূলত আরোহতেই দেখা যায়। কেদারের দুর্বল বা কিছুটা লুকানো গান্ধার দিয়ে গায়কদের মধ্যে দ্বিমত আছে।
কাজী নজরুল ইসলামের গানে কেদার:
নজরুলের অনেক গান রাগাশ্রয়ী। নির্দিষ্ট রাগের আশ্রয়ে যে গানগুলোতে সুর করা হয়েছে, সেগুলোর পুরো সুরে রাগের অবয়ব বজায় রাখার চেষ্টা থেকেছে; খুব বেশি রাগভ্রষ্ট হয়নি। তাই নজরুলের গানগুলো কান তৈরিতে বেশি উপযোগী বলে আমার কাছে মনে হয়।
১. পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কণ্ঠে- আজো কাঁদে কাননে কোয়েলীয়া
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গানে কেদার:
কবিগুরু তার অনেক কম্পোজিশনে প্রচলিত রাগের আশ্রয় নিলেও অনেক সময় রাগের কাঠামোতে তিনি আটকে থাকতে চাননি। তাঁর সুরের পথ রাগের বাইরে চলে গেছে প্রায়শই। আমার কাঁচা কান যা বলে, তাতে বিশুদ্ধ রাগাশ্রয়ী গান হিসেবে তাঁর গান অনেক ক্ষেত্রেই খুব ভালো উদাহরণ নয়।
১. একি গভীর বানী এলো ঘন – (স্বরলিপিতে লেখা হয়েছে রাগ: মিশ্র কেদারা, তাল: দাদরা)। “ঘন মেঘে” বলার সময়টা খেয়াল করে শুনতে হবে। দেবব্রত বিশ্বাসের গাওয়া। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া । রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গাওয়া । চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের গাওয়া।
২. রাখো রাখো রে জীবনে জীবনবল্লভে– স্বরলিপিতে বলা আছে এই রাগের নাম হবে শ্যাম-কল্যাণ। তবে বিষ্ণুপুর ঘরানায় “শ্যাম” নামে একটি রাগ এর বেশি কাছে, যেটার সাথে কেদারের অনেক মিল। মুল সুরের থেকে একটু সরে মূল কেদার ঘেঁষে গেয়েছেন ওস্তাদ রশিদ খান।
আধুনিক গানে রাগ কেদার:
১. অখিলবন্ধু ঘোষের – আজ চাঁদনী রাতে গো
2. জ্ঞানেন্দ্র প্রসাদ গোস্বামীর – জোছনা বিছানো ধরাতল
ভজনে কেদার:
১. পণ্ডিত যশরাজের অসাধারণ একটি ভক্তি গীতি – গোকুল মে বাজাত
অন্যান্য:
অমিতাভ ঘোষের কোদারের উপরে বাঁধা বাংলা ঘরানার “ঝরিয়ে ঝর ঝর আলোর ধারা”
যন্দ্রে কেদার:
সেতার:
১. ইমদাদখানী ঘরানার শহীদ পারভেজ খানের সেতারে – কেদার।
সরদ:
১.মাইহার ঘরানার খলিফা ওস্তাদ আলী আকবর খানের সরদে কেদার।
২. পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সরদে কেদার।
খেয়াল:
১. রামপুর সহসওয়ান ঘরানার ওস্তাদ রশিদ খানের – কানহা রে নান্দ নন্দন
২. আমীর খান সাহেব এর কেদার।
৩. পণ্ডিত কুমার গান্ধর্বের কেদার – সাখি নিকেত নিরাতি।
৪. জয়পুর ঘরানার শিল্পী কিশোরী আমনকারের গলায় – চাতুর সুঘার বালমা
৫. পণ্ডিত মুকুল শিবপুত্রের কেদার।
৬. বিদুষী শোভা মুডগালের কেদার।
টিউটোরিয়াল:
যেকোনো রাগের স্বরের চলাফেরা বোঝার জন্য ২/৫ টি স্বর-মালিকা বা সারগম-গীত শোনা দরকার। স্বর মল্লিকার পাশাপাশি দু একটি লক্ষণ গীত (বা ছোট খেয়াল) শুনলে সহজ হতে পারে। লক্ষণ গীত মূলত শেখানো হয় রাগের লক্ষণগুলো সহজে ধরতে। লক্ষণ গীত ছোট খেয়াল প্রায় একই কাজ করে। অনলাইনে অনেকগুলো আছে। একটু খোঁজাখুঁজি করলে পেয়ে যাবেন। স্যাম্পল হিসেবে নিচের দুটো লিংক দেয়া হল।
১. রাগ কেদারের স্বরমল্লিকা।
২. এনিসিআরটির টিউটোরিয়াল।
3. আলাপ মিউজিক একাডেমীর পণ্ডিত কুলদীপ সাগর এর টিউটোরিয়াল।
রিলেটেড রাগ:
বসন্ত-কেদার, চাঁদনি-কেদার, কেদার-মালহার
কেদার সম্পর্কে আরও জানার জন্য:
২. অটোমেটেড ট্রান্সক্রিপশন প্রজেক্ট এর কেদার
Declaimer:
শিল্পীদের নাম উল্লেখের ক্ষেত্রে আগে জ্যৈষ্ঠ-কনিষ্ঠ বা অন্য কোন ধরনের ক্রম অনুসরণ করা হয়নি। শিল্পীদের সেরা রেকর্ডটি নয়, বরং ইউটিউবে যেটি খুঁজে পাওয়া গেছে সেই ট্রাকটি যুক্ত করা হল। লেখায় উল্লেখিত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যেসব সোর্স থেকে সংগৃহীত সেগুলোর রেফারেন্স ব্লগের বিভিন্ন যায়গায় দেয়া আছে। শোনার/পড়ার সোর্সের কারণে তথ্যের কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে। আর টাইপ করার ভুল হয়ত কিছু আছে। পাঠক এসব বিষয়ে উল্লেখে করে সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
*** এই আর্টিকেলটির উন্নয়ন কাজ চলমান ……। আবারো আসার আমন্ত্রণ রইলো।
আরও দেখুন: