ইন্টারনেটের দামের ন্যায্যতা প্রসঙ্গে – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতি

ইন্টারনেটের দামের ন্যায্যতা প্রসঙ্গে – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতি

ইন্টারনেটের দামের ন্যায্যতা প্রসঙ্গে - মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতি
ইন্টারনেটের দামের ন্যায্যতা প্রসঙ্গে – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতি

মাননীয় উপদেষ্টা,
গত ইয়াং বাংলার অনুষ্ঠানে আপনি নিজেকে তরুণ কোটা থেকে সরিয়ে যুব কোটায় নিয়ে গেলেন। তার পরেও আপনাকে যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শন পূর্ব ভাই হিসেবেই সম্বোধন করতে চাই। কারণ ওই সম্বোধনের মধ্যে যে আন্তরিকতা আছে, যে অধিকার আছে তা মাননীয় উপদেষ্টা সম্বোধনের মধ্যে নেই।

প্রিয় জয় ভাই,
আওয়ামীলীগ সরকারকে আমরা প্রযুক্তি-বান্ধব সরকার বলি। কারণ ৯৬ টার্মের থেকে শুরু করে কম্পিউটার সহ তথ্য প্রযুক্তি শিল্প শুল্ক মুক্ত করন, মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রিকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সম্প্রসারণের জন্য মনোপলি ভেঙ্গে দেয়া সহ বহু ইতিবাচক পলিসি নিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যেরকম উদ্যোগ আমরা অন্য কোন সরকারের কাছ থেকে পাইনি। এই কারণে তথ্য প্রযুক্তি পেশাজীবী হিসেবে আমি ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতা জানাই।

২০০৮ এর টার্মে আপনার “ডিজিটাল বাংলাদেশে” ক্যাম্পেইনের ডাক তরুণদের মধ্যে দারুণ উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল। সরকারের ডাকে অভূতপূর্ব সাড়াও দিয়েছিল জনগণ। আজ বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি খাত এতটাই প্রযুক্তি সুবিধা পাচ্ছে, যে অন্য যেকোনো সরকার আওয়ামীলীগের বিরোধী নীতি নিলেও, তথ্য প্রযুক্তির জোয়ারকে আটকাতে পারবে না।

[ ইন্টারনেটের দামের ন্যায্যতা প্রসঙ্গে – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতি ]

সেসময় আমি সহ বহু তরুণ এতটাই উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম যে, তথ্য-প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য মাঠে ঘাটে বেরিয়ে পড়েছিলাম। নতুন করে দেশ গড়ার চেতনায়, দিন বদলের প্রতিজ্ঞা নিয়ে, স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে, দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রামের হাটে গিয়েছিলাম তথ্য প্রযুক্তির কথা নিয়ে। ফ্রি-ল্যান্স আউটসোর্সিং, নতুন যুগের তথ্য প্রযুক্তি পেশা সহ বিভিন্ন বিষয়ে – অসংখ্য সভা, সেমিনার, মেলা এবং হাট বৈঠক করেছিলাম।

বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলেছিলাম এক ঝাঁক নতুন তথ্য প্রযুক্তি পেশাজীবী। আমাদের স্বপ্ন ছিল, তারা সবাই নিজ নিজ গ্রামে/শহরে বসে কাজ করবে, মফস্বলে বসে ঢাকার মতোই আয় করবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল স্রোতে অংশগ্রহণের জন্য তাকে ঢাকা আসতে হবে না। মায়ের রান্না ঘরের গরম ভাত খেয়ে তারা তারা দেশ বিদেশ থেকে আয় করে আনতে পারবে। খরচ কমের কারণে ঢাকার চেয়ে অনেক সচ্ছল জীবন যাপন করবে।

[ ইন্টারনেটের দামের ন্যায্যতা প্রসঙ্গে – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতি ]

নতুন পেশাজীবীদের অনেকেই মানসম্মত ভাবে তৈরি হয়েছিল, কাজ শুরু করেছিল, কাজ পেয়েছিল, আয়ও শুরু হয়েছিল। কিন্তু বড় বেদনার সাথে লক্ষ্য করলাম, দু এক বছরের মাথায় তারা প্রায় সবাই ঢাকায় চলে এলো। বলা সঠিক হবে – তারা ঢাকায় আসতে বাধ্য হল।

এর কারণ একটাই। ইন্টারনেটের ন্যায্যতার অভাব! অর্থাৎ ইন্টারনেটের দাম এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেটের অভাব তাদের ঢাকা আসতে বাধ্য করেছে। যারা ঢাকা এসে খুঁটি গাড়তে পেরেছে, তারা হয়ত মূল স্রোতে আছে, কিন্তু বাঁকিরা ঝরে গেছে।

তথ্য প্রযুক্তিবিদ হিসেবে আপনি জানেন – এই খাতের প্রাণ হল ইন্টারনেট। আপনার সরকার তথ্য প্রযুক্তির বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, ভবিষ্যৎ নলেজ সোসাইটির লক্ষ্যে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা ভাল মানের ইন্টারনেট ছাড়া অসম্ভব। সে লক্ষ্যে সরকার ইন্টারনেট নামের প্রাণ-ভোমরার দামও অনেক গুন কমিয়ে আনলেও, সেই সুবিধা ভোগ করার সুযোগ পাচ্ছে শুধু মাত্র ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো বড় শহরের বাসিন্দারা। ছোট শহরের বাসিন্দাদের আজও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কিনতে হচ্ছে ঢাকার তুলনায় ৫/৬ গুন দামে। গ্রামের কথা না হয় বাদই দিলাম। আর এই দামের কারণে গ্রামের মানুষগুলো মূল-স্রোতে অংশ নেয়ার লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড পাচ্ছে না।

[ ইন্টারনেটের দামের ন্যায্যতা প্রসঙ্গে – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতি ]

আজ গ্রাম গঞ্জের প্রান্তিক মানুষের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে মোবাইল কোম্পানির অগ্নিমূল্যের মিটারড ইন্টারনেট। আপনি জানেন – মোবাইল ইন্টারনেটকে পৃথিবীর কোথাও মূল-স্রোতের ব্রডব্যান্ড হিসেবে ধরা হয় না। এধরনের ইন্টারনেট মূলত ঠেকা কাজ চালানোর জন্য। পেশাদারী কাজের জন্য কেবল ব্রডব্যান্ডের কোন বিকল্প নেই।

প্রশ্ন হচ্ছে সরকার দাম কমাবার পরেও কেন মফস্বলের মানুষকে বেশি দাম দিয়ে ইন্টারনেট কিনতে হচ্ছে? কেন তারা বঞ্চিত হচ্ছে মূল-স্রোতের ব্রডব্যান্ড থেকে? আমরা সবাই জানি – ছোটোখাটো অনেক কারণ আছে। কিন্তু মূল কারণ হলো ঢাকা থেকে ইন্টারনেট বয়ে নিয়ে মফস্বলে যাবার তারের ভাড়া। যেটাকে আমরা ব্যাকবন খরচ বলি।

[ ইন্টারনেটের দামের ন্যায্যতা প্রসঙ্গে – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতি ]

ঢাকায় ১,১০০ টাকার ইন্টারনেট কুষ্টিয়া জেলার, কুমারখালি উপজেলার, বাগুলাট ইউনিয়নের, বাঁশগ্রামে পৌঁছানের জন্য ব্যাকবোন ভাড়া লাগছে প্রায় ৭০০০ টাকা। যার ফলে ১ হাজার টাকা দামের ইন্টারনেট এক ধাক্কায় হয়ে যাচ্ছে ৮ হাজার টাকা। আর বাঁশগ্রামে যেহেতু আগে থেকে গ্রাহক নেই, তাই সংযোগের জন্য এককালীন একটা বিরাট খরচ পড়ে যাচ্ছে। এর পেছনে দায়ী আমাদের NTTN policy।

এসব লাইসেন্সিদের যে বড় অঙ্কের কেবল ভাড়া দিতে হচ্ছে, সেট ভাড়া পরিশোধ করে, IIG গুলো ঢাকার দামে মফস্বল শহরে ব্যান্ডউইথ দিতে রাজি হচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারের ব্যাকবোন হলেও (রেল বা সরকারের অন্যান্য বিভাগের) আমাদেরকে অগ্নিমূল্য দিতে হচ্ছে।

এই পলিসি এবং সংযুক্ত আইন, নীতিমালা, প্রবিধানমালা সংশোধন করে এমন একটি গ্রাউন্ড তৈরি করা দরকার, যেখানে ঢাকার একটি ISP যে দামে IIG থেকে ব্যান্ডউইথ কিনতে পারে, কুমারখালির একটি ISP সেই একই দামে ব্যান্ডউইথ কিনতে পারবে। এমনকি ইউনিয়নের একটা ISP ঢাকার দামে ব্যান্ডউইথ কিনতে পারবে।

সাথে সাথে সরকারের তথ্য প্রযুক্তি অবকাঠামো তৈরির পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে, ইন্টারনেটের দামের ন্যায্যতার কথা মাথায় রেখে, বর্তমান পলিসি সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের প্রস্তাব থাকবে সব বিষয়ের সমন্বয়ে একটি ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড স্ট্র্যাটেজি তৈরি। সেটির আলোকে একটি ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড পরিকল্পনা তৈরি।

[ ইন্টারনেটের দামের ন্যায্যতা প্রসঙ্গে – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতি ]

আপনি লক্ষ্য করবেন – আওয়ামী লীগ সরকার উপজেলা পর্যন্ত ফাইবার নিয়ে যেতে সরকারি বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু এর ন্যায্য সুবিধা এখনও সেখানকার মানুষ পাচ্ছে না। সরকার ইউনিয়ন পর্যন্ত ফাইবার নিয়ে যাবার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যদি ওই পলিসি যদি পরিবর্তন না করা হয়, তবে ইউনিয়ন ফাইবারের সুবিধাও প্রান্তিক মানুষ পাবে না। সরকার সব ধরনের আন্তরিকতা দেখালেও এর স্থায়ী কোন সমাধান হবে না।

আমরা জানি আওয়ামী লীগ সরকার প্রান্তিক মানুষের সরকার। গ্রাম আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শক্তির উৎস। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন পলিসির প্রধান ফোকাস থাকেও রুরাল জনগোষ্ঠী। তাই এই বিষয়টি সেই প্রায়োরিটির বাইরে যেন না যায়, এই আবেদন আপনার মাধ্যমে জানাতে চাই।

বঙ্গবন্ধুর স্বহস্তে স্বাক্ষরিত বাংলাদেশের সংবিধান আমাদের সকল বাংলাদেশির জন্য সমতা এবং ন্যায্যতার ওয়াদা। তাই পরিশেষে আবারও বলব –
ইন্টারনেটের দামের ন্যায্যতা চাই।
আমার গ্রামে, ঢাকার দামে, ব্যান্ডউইথ চাই।

প্রান্তিক তথ্য প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সারদের পক্ষে,
সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর

[ ইন্টারনেটের দামের ন্যায্যতা প্রসঙ্গে – মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতি ]

Leave a Comment