আধুনিক পেশাজীবী ও উদ্যোক্তা তৈরির সামাজিক আন্দোলন: অন্যরকম সময়ের প্রয়োজন

আধুনিক পেশাজীবী ও উদ্যোক্তা তৈরির সামাজিক আন্দোলন: অন্যরকম সময়ের প্রয়োজন : আমরা একেবারে অন্যরকম সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি । এমন সময়, যা হঠাৎ করে ভাবতে বসলে মাথা কাজ করতে চায় না। গত শতকে বিশ্বব্যাপী মানুষের ব্যক্তি জীবন, কর্ম, সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি সহ সার্বিক জীবনযাত্রায় যতখানি পরিবর্তন হয়েছে তার কয়েকগুণ বেশি পরিবর্তন হয়ে গেছে গত ১০ বছরে।

আর এই সব কিছুর মুলেই রয়েছে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ। তথ্য ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যাবহার এ পরিবর্তনকে সবচেয়ে বেশি ত্বরান্বিত করেছে। ভাবতে অবাক লাগে, ফেসবুক একটি রাষ্ট্র হলে জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে বর্তমানে তা পৃথিবীর ৩য় বৃহত্তম রাষ্ট্র হতো, যা আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে হতে পারে সর্ববৃহৎ। গুগুল বলে, ২০১১ সালের শেষে যে পরিমাণ নতুন তথ্য ইন্টারনেটে আসবে, বিগত ৫০০ বছরে সেই পরিমাণ তথ্য তৈরি হয়নি।

আধুনিক পেশাজীবী ও উদ্যোক্তা তৈরির সামাজিক আন্দোলন: অন্যরকম সময়ের প্রয়োজন
আধুনিক পেশাজীবী ও উদ্যোক্তা তৈরির সামাজিক আন্দোলন: অন্যরকম সময়ের প্রয়োজন

বাংলাদেশের মত যায়গায় বর্তমানে যেকোনো জাতীয় দৈনিকের মাধ্যমে একমাসে একজন ব্যক্তি যে পরিমাণ তথ্য পায়, গত শতকের শুরুর দিকে আধুনিক বিশ্বে একজন মানুষ সারা জীবনে সেই পরিমাণ তথ্য পেত না। প্রবণতা দেখলে মনে হতে পারে মানুষ তথ্য খুঁজতে যেটুকু সময় দিচ্ছে, তথ্য তার চেয়ে বেশি সময় ধরে মানুষকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

এই সময় টিকার ও কাছে মনে হতে পারে সভ্যতার উৎকর্ষের শ্রেষ্ঠ সময়, কেউ বা বলবেন অত্যন্ত অস্থির সময়। কিন্তু সব কিছু মিলিয়ে এটাই বাস্তবতা এবং এই গতির সাথে এগিয়ে চলাই অস্তিত্ব নিশ্চিত করার একমাত্র উপায়।

বিশ্বব্যাপী খবর বাড়ছে প্রতিদিন, বাড়ছে খবরের পরিবেশক প্রতিষ্ঠান এবং তা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে। খবরের প্রতিযোগিতার পাশাপাশি প্রযুক্তির কারণে প্রচার মাধ্যমের প্রতিযোগিতা বেড়েছে একই গতিতে। একটিকে ফেলে নতুন প্রযুক্তির অন্নটি এগিয়ে যাচ্ছে চিন্তার গতিকে ডিঙিয়ে। এক সময়ের খবর পৌঁছোবার একমাত্র মাধ্যম “মুদ্রণ শিল্পকে” ক্রমশ পেছনে ফেলে যায়গা করে নিচ্ছে অনলাইন।

বছর দশেক আগে সিএনএন এর মত টেলিভিশন “সংবাদপত্রের কল্যাণে মুদ্রণ শিল্পের ক্রমশ অগ্রগতি” নিয়ে আলোচনা করে ঘণ্টা খানেক কাটিয়ে দিয়েছে, সেই সিএনএন আজ মুদ্রিত সংবাদপত্র শিল্পের ক্রমশ ধ্বস দেখে আলোচনা করছে “মুদ্রিত সংবাদ শিল্প কি আদতেও বাঁচতে পরবে?” । এ দৌড়ে অনেক ঐতিহ্যবাহী সংবাদ পরিবেশক প্রতিষ্ঠান হারিয়ে যাচ্ছে, আবার অনেক নবীন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে গেছে প্রচার মাধ্যমের সব হিসাব কে ছাড়িয়ে।

এমনই একটি সময়ে দৈনিক “বণিক বার্তা” বাংলা ভাষায় ব্যবসা-বাণিজ্যের খবর নিয়ে সম্পৃক্ত জনগণের কাছে যাবার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করছে। দেশের শত কাগজের ভিড়ে পরিবর্তিত সময়ের ধাক্কায় টিকে থাকার মত চ্যালেঞ্জ নেবার জন্য উদ্যোক্তাদের শুভেচ্ছা।

SufiFaruq.com Logo 252x68 1 আধুনিক পেশাজীবী ও উদ্যোক্তা তৈরির সামাজিক আন্দোলন: অন্যরকম সময়ের প্রয়োজন

যে বিষয়গুলো তাদেরকে সবার চেয়ে আলাদা হয়ে লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে বলে আমার ধারনা সেগুলো হল “কঠিন কথা সহজ করে বলার প্রত্যয়, একমাত্র ব্যবসা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফোকাস, বাংলা ভাষা, নবীন কর্মী বাহিনী এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহারে আগ্রহ”। তাই তাদের কাগজের প্রসারের পাশাপাশি ব্যবসার-প্রাণ উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আশা কারি।

ব্যবসা পরিচালনায় এবং প্রসারে ভোক্তার পাশাপাশি উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীরা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বর্তমান সময়ে এখন একই ধরনের গুরুত্ব নিয়ে যোগ হয়েছে “প্রযুক্তি” ও “প্রযুক্তি নির্ভর সেরা কর্মকৌশল” । সব প্রযুক্তির প্রধান হিসেবে যায়গা করে নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। তাই একজন প্রযুক্তি পেশাদারী হিসাবে আশা করবো “বণিক বার্তা” তৎসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা, পেশাজীবী, প্রযুক্তি ও প্রযুক্তি নির্ভর সেরা কর্মকৌশল -বিষয়গুলির উপরে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দেবে। জেনে ভাল লেগেছে যে তারা এ বিষয়ে নিয়মিত একটি পূর্ণ পাতা প্রকাশ করবে।

তথ্য প্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের মত এদেশেও মুল অবদান বেসরকারি খাতের। সেভাবেই হাজার প্রতিকূলতার মধ্যে অনেকখানি এগিয়ে এসেছে এ খাত এবং রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এর প্রভাব ক্রমশ চোখে পড়ার মত বাড়ছে। এখন ব্যবসায়ী, কর্মী ও ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ করে একটি সুষ্ঠু ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ তৈরিতে রাষ্ট্রের প্রয়োজনমত অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করতে পারলে এই ট্রেনটিও ফেল করার সম্ভাবনা রয়েছে।

সাবমেরিন কেবল, তথ্য প্রযুক্তি নীতিমালা, ইলেকট্রনিক লেনদেন, সাইবার সিকিউরিটি নীতিমালা, ইত্যাদির ইতিহাস আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় অংশগ্রহণের খুব নেতিবাচক উদাহরণ। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ শ্লোগান ও তদসংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের আংশিক বাস্তবায়নে কিছুটা গতি এনেছে বটে, কিন্তু তা সময়ের প্রয়োজনের কাছে অগতির গতির মতই।

SufiFaruq.com Logo 252x68 2 আধুনিক পেশাজীবী ও উদ্যোক্তা তৈরির সামাজিক আন্দোলন: অন্যরকম সময়ের প্রয়োজন

বড় দাগে বলতে গেলে তথ্য প্রযুক্তি নীতিমালা ২০০৯ এর বাস্তবায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির নিরাপত্তা আইনকে যুগোপযোগী করন, উদ্যোক্তা ও জনশক্তি তৈরি তে যুগোপযোগী ও কার্যকরী কর্মসূচি, দেশের সর্বত্র দ্রুত গতির সহজলভ্য ইন্টারনেট পৌঁছে দেবার অবকাঠামো, ইলেকট্রনিক অর্থ লেনদেনের নীতিমালা ও অবকাঠামো, নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো কে কার্যকরী করন, দীর্ঘমেয়াদী ট্যাক্স নীতিমালা, বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতিমালা, আমাদের অর্থনীতির উপযোগী করে মেধাস্বত্ব আইন সংশোধন – সহ-সংশ্লিষ্ট অনেক গুলো বিষয়ের দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেখানে উদ্যোক্তা উৎসাহিত হবে, বিনিয়োগ কারী অকারণ ঝুঁকির আশঙ্কা মুক্ত হবেন, কর্মীরা কাজের নিরাপত্তা পাবে এবং ভোক্তা পূর্ণ উপযোগিতা পাবেন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অর্থ বিনিয়োগের যতটুকু প্রয়োজন, তারচেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন সদিচ্ছা, যার প্রতিফলন নীতি মালায় আসতে হবে।

ব্যবসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ব্যবসা ক্ষেত্রে কাজকরা পেশাজীবী । তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ভিত্তিক অর্থনীতি জোরদার করতে প্রথম যেখানে জোর দেয়া দরকার তা হচ্ছে পেশাদারী জনশক্তি তৈরি । আজ বিশ্বব্যাপী এমন সব পেশাদারী মানুষ তৈরির প্রয়োজন পড়ছে যে পেশাগুলোই এখনো তৈরি হয়নি।

আমরা ২০০৪ সালে যে কাজগুলোকে পেশা হিসাবে ভাবতে পারিনি, ২০১০ সালে চাকুরী দাতারা সেসব পেশায় সর্বাধিক বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রযুক্তির কারণেই পৃথিবী ব্যাপী গড়ে প্রতি ৫ বছরে মানুষের কর্মকৌশল সম্পূর্ণ পাল্টে যাচ্ছে। আর সেই সাথে পাল্টে যাচ্ছে সম্পৃক্ত সব কিছু। প্রতিদিন আমাদের সেই সব প্রযুক্তি ব্যাবহারের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে যা এখনো আবিষ্কার হয়নি। সেই ধারায় আমাদের আগত পেশাজীবীদের তৈরিতে যুগোপযোগী ও কার্যকরী কর্মসূচি নিতে হবে।

SufiFaruq.com Logo 252x68 3 আধুনিক পেশাজীবী ও উদ্যোক্তা তৈরির সামাজিক আন্দোলন: অন্যরকম সময়ের প্রয়োজন

প্রযুক্তি ভিত্তিক পেশাজীবী তৈরির প্রথম ধাপ হচ্ছে নতুন প্রযুক্তি ও সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি। সেটি সরকারী ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা যেতে পারে। তবে নিশ্চিত করতে হবে সেই প্রচার/প্রচারণা যেন দেশের প্রতিটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে পৌঁছে যায়। এবং খুব বেশি আয়োজন না করে কর্মীরা কাজটির প্রথম ধাপ শুরু করতে পারে। ফ্রি ল্যান্স আউটসোর্সিং এরকম একটি ক্ষেত্র যেখানে আমাদের মফস্বল শহরের কর্মীরা সফলতা দেখাতে শুরু করেছে।

এটির সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে খুব সাধারণ প্রশিক্ষণেই কাজ শুরু করা যায়। প্রায় সব ধরনের দক্ষতার পেশাজীবীদের জন্য কাজ পাওয়া যায় এবং দক্ষতা উন্নয়নের সাথে সাথে আয়ও বাড়তে থাকে। সরকার, বেসরকারি সংস্থা, প্রচারমাধ্যম ইত্যাদি মিলিয়ে এই যায়গাটিতে আমরা যদি কাজ করতে পারি তবে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং এর মাধ্যমেই নতুন প্রজন্মের একটি বড় অংশের কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব।

সাধারণ তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান নিয়ে শুরু করা কর্মীরা যথেষ্ট কাজ পাবে, করতে থাকতে পারবে এবং তাতে হয়ত অভাব মোচন হবে। তবে ক্রমশ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য তাদের দক্ষতাও বাড়াতে হবে। এ জন্য একই সময়ে সাধারণ কাজের পাশাপাশি বিশেষ দক্ষতার বা বেশি মূল্যের কাজগুলো করবার জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা দরকার। সে কারণেই সব ধরনের মেধাবীদের জন্য ও সবগুলো শিক্ষা মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আধুনিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা দরকার।

গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায়, বিশ্বব্যাপী প্রতি দুই বছরে নতুন কারিগরি তথ্যের পরিমাণ আগের সকল তথ্যের চেয়ে ২ গুন হয়েছে। সেই সূত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ বছরের অনার্স পড়া শিক্ষার্থী ৩য় বছরে পা দিতে দিতেই অন্তত ১ বছরের সেকেলে হয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের মাধ্যমিক, কারিগরি ও বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে তৈরি জনশক্তির যুগোপযোগীটা সহজেই অনুমেয়।

সেই সাথে সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দ্রুত জনশক্তি তৈরি করার যে সকল কর্মসূচি রয়েছে সেগুলোর পাঠ্যক্রম, প্রশিক্ষক ও পাঠদান পদ্ধতিও তথৈবচ। বর্তমান কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা বহুলাংশে বেসরকারি খাত নির্ভর হলেও পাঠ্যক্রম নিয়ন্ত্রণ এখনো প্রায় পুরোপুরি রাষ্ট্রায়ত্ত। একটি সুষ্ঠু গণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থাকার দরকার আছে বটে। তবে যারা সেই কর্তৃত্ব সংরক্ষণ করবেন, এটিকে যুগোপযোগীরা খার দায়িত্ব ও তাদেরই।

সেটি নিশ্চিত করারা জন্য কোন কমিশন, কমিটি ইত্যাদির মাধ্যমে এককালীন কার্যক্রম গ্রহণ সমাধান নয়। আবার এটার জন্য নতুন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ তৈরি করলে জটিলতা বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি। বরং প্রতিটি পাঠ্যক্রম কর্তৃপক্ষের আভ্যন্তরীণ কর্মকৌশল পরিবর্তনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোর ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি, বিশ্বব্যাপী নির্দিষ্ট শিল্পের জন্য গৃহীত সেরা কর্মকৌশল গুলোর পরিবর্তনের ধারা, ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে শিক্ষা ক্রম সংশোধন করতে হবে।

সেই শিক্ষা ক্রম অনূর্ধ্ব ছয়মাস পর পর পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করতে হবে। মুল বিষয়টি হল পাঠ্যক্রম শিল্প মুখি হতে হবে। যেসকল দেশের কারিগরি শিক্ষাকে উদাহরণ হিসাবে আনা যায়, সেসকল দেশে কারিগরি শিক্ষাক্রমের প্রায় পুরোটাই আসে শিল্পের মানবসম্পদ উন্নয়ন উদ্যোগের মাধ্যমে। শিক্ষাবিদরা সেগুলোকে পাঠদানের উপযোগী করার ভূমিকা পালন করেন।

আমাদের নতুন আবিষ্কার বা শিল্প গুলোর সাথে সম্পৃক্তা না থাকার কারণে আমরা লক্ষ লক্ষ বিষয় ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ তৈরি করে চলেছি, পেশাজীবী নয়। নতুন প্রযুক্তি ও পেশাগুলোকে পরিচয় করিয়ে দিতে গণমাধ্যমের সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজন।এসকল সফলতার গল্প এবং তার পিছনের গল্পগুলোকে সামনে নিয়ে এসে ইতিবাচক চাপ তৈরি করতে পারে।

এরপর আসা যাক উদ্যোক্তাদের কথায়। কর্মীদের কাজে লাগাবার মত কাজ তৈরি বা কাজ করার ক্ষেত্র তৈরির জন্য নতুন অনেক উদ্যোক্তা দরকার। যারা নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি করবে। যে কাজটি আমরা আশা করছি আমাদের দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের কাছে। বা কোন কোন কর্মীর কাছে যারা ক্রমশ উদ্যোক্তা হয়ে উঠবেন।

এটা ঠিক যে বিশ্বজুড়ে কোন দেশের ব্যবসার স্কুল নির্দিষ্ট হারে উদ্যোক্তা তৈরির গ্যারান্টি দিতে পারে না। সরকারী/বেসরকারি ইনকিউবেশন সেন্টারগুলোও উদাহরণ দেবার মত সাফল্যের দাবীদার হতে পারেনি। তাই বলে তারা উদ্যোক্তা তৈরির জন্য উদ্যোগগুলোকে বন্ধ করে দেয় নি।

এখন বিশ্বব্যাপী সবাই কমবেশি একমত যে – উদ্যোক্তা তৈরির কোন ফরমুলা নেই, এই বিষয়ে বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে গবেষণা বা খেলাধুলা করতে করতেই হঠাৎ একটি ফুল ফুটে যায়। তাই উদ্যোক্তা তৈরির সরকারী/বেসরকারি সকল উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে এবং নতুন নতুন উদ্যোগ বাড়াতে হবে।

ক্ষুদ্র বা মাঝারী উদ্যোক্তা তৈরির সরকারী বেসরকারি অনেকগুলো কার্যক্রম রয়েছে। কিন্তু সকল কার্যক্রমের আশানুরূপ সফলতা আসছে না। এর প্রধান কারণ হল উদ্যোক্তার অর্থনৈতিক সহায়তাকে আমরা একমাত্র সহায়তা হিসাবে ভাবছি। উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে আমরা খুব বেশি চিন্তিত নই। যে কারণে আমরা যা তৈরি করছি তার বেশিরভাগই ট্রেডার, সৃষ্টিশীল কোন উদ্যোক্তা তেমন একটা তৈরি হচ্ছে না।

অর্থনৈতিক সহায়তা অন্যতম প্রধান বিষয় হলেও একমাত্র বিষয় নয়। হবু উদ্যোক্তাদের নতুন প্রযুক্তি ও সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি কারিগরি ও বাণিজ্যিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নিতে হবে প্রথমে। এরপর উদ্যোক্তা বান্ধব নীতিমালা, প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহের ইত্যাদি বিষয় তো থাকবেই।

উদ্যোক্তা তৈরির প্রশিক্ষণ স্বভাবতই একটু আলাদা হবে। কারিগরি প্রশিক্ষণ সাধারণ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে দেয়া হলেও বাণিজ্যিক প্রশিক্ষণের সাথে সফল উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের উপস্থিতি যদি সর্বক্ষেত্রে সম্ভব না হয় তবে তাদের অভিজ্ঞতার সার নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেবার কাজটি করতে হবে।

উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের প্রযুক্তি ব্যাবহারের সফলতার গল্পগুলো অন্যদের জানার ব্যবস্থা করতে গণমাধ্যম একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সফল পেশা ও উদ্যোগের নায়কদের জনসমক্ষে পরিচিত করে সামাজিক আইকন তৈরি করতে পারে যা অন্যদের উৎসাহিত করতে পারবে।

এরপর আসা যাক প্রযুক্তির কথায়। আমাদের আশা থাকবে গণমাধ্যম হিসাবে বণিক বার্তা প্রযুক্তি নির্ভর পণ্যের পাশাপাশি প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক অগ্রগতির বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করবে। সেই সাথে প্রযুক্তির সঠিক ও সর্বোচ্চ ব্যবহারের খবরগুলো জনসমক্ষে নিয়ে আসবে।

যেকোনো প্রযুক্তির সঠিক ব্যাবহার যেমন সম্পদ বাড়ায়, ব্যাবহার করতে না পারালে তা মূল্যহীন বিনিয়োগ ছাড়া কিছু নয়। ব্যবসার প্রয়োজন অনুযায়ী প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দিয়ে উদ্যোক্তাদের সাহায্য করবে। প্রযুক্তির উন্নয়ন সহায়ক দিকগুলোর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভোক্তাদের সচেতন করা গন মাধ্যমের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। প্রযুক্তি উন্নয়নের ইতিহাসে গণমুখী আদর্শ যেমন “ওপেন সোর্স মুভমেন্ট” ইত্যাদি বিষয়ে পাঠকদের অবগত করা দরকার।

প্রযুক্তির ব্যাবহারের পাশাপাশি “প্রযুক্তি নির্ভর সেরা কর্মকৌশল” অনুসরণ করা বিশ্বব্যাপী একই রকম গুরুত্ব পাচ্ছে। কিছুক্ষেত্রে দেখা যায় কিছু প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তির পিছনে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করছে তার প্রায় শতকরা ষাট বাগ বিনিয়োগ করছে “সেরা কর্মকৌশল” রপ্ত ও বাস্তবায়ন করতে। প্রযুক্তির বিনিয়োগের সর্বোচ্চ ফলাফল পাবার জন্যই সেরা কর্মকৌশল অনুসরণ করা দরকার।

এ খাতে বিশ্বব্যাপী অনেকগুলো মানদণ্ড নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। তাদের তৈরি কর্মকৌশল গুলোকে পৌঁছে দেবার জন্য প্রশিক্ষণ, বাস্তবায়ন ও নিরীক্ষণের জন্য তৈরি হয়েছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে বিষয়টি এখন নিজেই একটি বৃহৎ খাত হয়ে গেছে।

আমরাদের দেশে এ বিষয়ে জনসচেতনতা বা সংশ্লিষ্ট জনশক্তি কোনটিই তৈরি হয়নি । কিন্তু প্রতিযোগিতায় টিকতে, প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করতে এবং এক ধরনের নতুন কর্মসংস্থান করতে এই বিষয়টি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে বণিক বার্তার মত কাগজের কাজ করা দরকার।

[ আধুনিক পেশাজীবী ও উদ্যোক্তা তৈরির সামাজিক আন্দোলন: অন্যরকম সময়ের প্রয়োজন ]

আরও পড়ুন:

Leave a Comment