এবারের মা দিবস – আমার দুজন জননী এবং আমার স্ত্রী

আমার বাবার যখন প্রয়াণের সময় (রাজনৈতিক হত্যা) আমরা ছটি ভাইবোনই ছোট। আমার বড় বোনের সদ্য বিয়ে হয়েছে, তুলে দেয়াও হয়নি। চাচারা সবাই ফুলবাবু (কেউ তখন পর্যন্ত নিজের অর্থনৈতিক দায়িত্ব নিতে শেখেননি)। বাবার চলে যাওয়ায় দাদু সংসারের প্রায় সবকিছু ছেড়ে ধর্মাচারে আরও নিবিষ্ট হয়ে পড়েন। দিদার বেঁচে থাকার ইচ্ছা কমে যাওয়ায় ক্রমশ অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলেন।

বাবার অনুপস্থিতিতে তার প্রায় সকল ব্যবসায়ী বিনিয়োগ নষ্ট হয়েছে, জমি জমার আয় ঘরে তোলাও মায়ের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। খুব কাছের বরগা-চাষিরাই কিছু আকর-ফসল দিত, দুরের বর্গা-চাষিরা ধানাইপানাই করে কাটিয়ে দিতে চাইতো।

তার উপরে ছিল আমাদের জীবনের ঝুঁকি। শত্রুপক্ষ যেকোনো সময় আমাদের যে কোন ধরনের ক্ষতি সাধন করতে পারত। আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গ্রামের মানুষদের অনেক বাড়তি শ্রম দিতে হয়েছে।

এরকম সময়ের মধ্যে দিয়ে মা আমাদের বড় করে তুলেছেন, শিক্ষা দিয়েছেন, প্রয়োজনে ছোটোখাটো পুঁজির যোগান দিয়েছেন, আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি যতখানি সম্ভব আগলে রেখেছেন। এখনও মাঝে মধ্যে জিজ্ঞেস করেন আমাদের কিছু লাগবে কি না 🙂 । মা আমাদের মা বা একত্রে ছিলেন।

যখন বড় হলাম, তখন পেছনে তাকিয়ে মায়ের এই যুদ্ধকে মাঝেমধ্যে অসম্ভব মনে হতো। আমি জানি বাংলাদেশের অনেক মাকেই এরকম যুদ্ধের মধ্যে পড়তে হয়। যারা যুদ্ধ চালিয়ে গিয়ে টিকে থাকার মনোবল আছে, তাদেরকে মা দিবসে আমার প্রণাম।

যখন আমার স্ত্রীর সাথে আমার পরিচয় হয়, তখন আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছিল একই রকম বৈরিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মানসিকতা। মনে হয়েছিল আমার জননীর আধুনিক সংস্করণ। এরপর যখন আমার শাশুড়ির সাথে দেখা হয়, তখন বুঝতে পেরেছি যে আমার স্ত্রী যুদ্ধ শিখল কোথা থেকে। আমি আজ গর্বিত আমার দুজন মাকে নিয়ে। গর্বিত আমার স্ত্রীকে নিয়ে।

Leave a Comment