আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা [ ৬ দফা ] দিবস

ঐতিহাসিক ছয় দফা [ ৬ দফা , Historic Six Point Day] : বাঙালীর মুক্তির সনদ ঘোষিত হয়েছিল এইদিন। ১৯৬৫ সালে সেপ্টেম্বরে ১৭ দিন ব্যাপী ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান ছিল একেবারেই অরক্ষিত। আবার এই যুদ্ধের পরে পাকিস্তানে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠে। তাই ১৯৬৬ সালের এই দিনে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান লাহোরে পাকিস্তানের সর্ব দলীয় এক বৈঠক ডাকে।

বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব এবং তার একান্ত বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সহযোগী তাজউদ্দীন আহমদকে সঙ্গে নিয়ে চললেন লাহোরে। সেখানে তিনি ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে করলেন আর একটি ঐতিহাসিক প্রস্তাব। সেই ছয় দফা [৬ দফা], পাকিস্তানিরা যেটাকে বলে “ছে নুকাত”। যেটা মানলে পাকিস্তান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে ভেঙ্গে যায়, না মানলেও ভাঙ্গে সহিংসতার মধ্য দিয়ে!

তিনি ছয় দফা [৬ দফা] পেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই প্রবল বিরোধীটার মুখে পড়লেন। শুধু যে পাকিস্তানীদের কাছ থেকে তিনি বিরোধিতার মুখে পড়লেন তাই নয় নিজ দল আওয়ামী লীগেরও কিছু কর্নার থেকে বিরোধিতার আসে। সংকটের যায়গা হচ্ছে, তখনও এটা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটি অফিসিয়ালি পাশ করেনি। ঢাকায় ফিরে তার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ ছিল বাঙালীর মুক্তির সনদ এই ৬ দফাকে নিজ দল আওয়ামী লীগের নিজস্ব এজেন্ডায় পরিণত করা।

আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা [ ৬ দফা ] দিবস - Six Pints of Bongobondhu Sheikh Mujibur Rahman | বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৬ দফা।
Six Pints of Bongobondhu Sheikh Mujibur Rahman | বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৬ দফা।
লাহোর থেকে ফিরেই তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে দলের বিশেষ তলবি সভা ডাকেন। যুক্তি তর্ক দিয়ে ৬ দফা উপস্থাপন করে সবাইকে এনডোর্স করার আহবান জানান। কিন্তু তৎকালীন দলের অনেক সিনিয়র নেতা বিভিন্ন ধরনের মত দেখিয়ে প্রস্তাবটিকে মুলতবি করার চেষ্টা করেন। এই নেতারা অনেকেই ছাত্র জীবনে পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন এবং তাদের গড়া পাকিস্তান কনসেপ্টটির বুকের উপরে এরকম ছুরি চালাতে ইতস্তত বোধ করছিলেন।

এদিকে বঙ্গবন্ধু বাঙালীর মুক্তির স্বপ্নে বিভোর। তিনি যেকোনো মূল্যে এই প্রস্তাবটি পাশ করাতে চান। প্রস্তাব আওয়ামীলীগের কাছ থেকে অফিশিয়ালি পাশ করানোর জন্য সময়ও খুব বেশি নেই। তাই তিনি ভিন্ন রাস্তা ভাবতে লাগলেন। ডাক পড়ল ছাত্রলীগের।

বাঙালীর মুক্তির সংগ্রামে সব সময়ই আপোষহীন ছিল ছাত্রলীগ। স্বাধীনতার স্বপ্ন তিনি ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত এবং সহজে বুনতে পেরেছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের নেতাদের ডেকে তাদের সামনে বিষয়টি তুলে ধরলেন এবং তাদের জনমত তৈরি করতে নির্দেশ দিলেন। আর এই প্রথম যখন মুক্তির এত স্পষ্ট সনদ হাতে পেয়ে ছাত্রলীগ উত্তেজিত। তাই সে সম্পর্কে জনমত গঠনের জন্য উঠে পড়ে লাগল। ছাত্রলীগ সেসময় শুধু জনমত গঠনে সভা সমিতিই করেই ক্ষান্ত দেয়নি, লাঠি হাতে ৬ দফার দাবী নিয়ে মিছিল করেছে, যারা বিরোধিতা করে তাদের চ্যালেঞ্জ করেছে। একসময় ইতস্তত আওয়ামীলীগের নেতারা দেখল মেনে না নিয়ে কোন উপায় নেই।

পাকিস্তান ৬ দফা মানেনি। ফলস্ কনসেপ্টে তৈরি পাকিস্তান ৭১ সালেই ভেঙ্গে গেছে। তবে ১৯৬৬ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু যে পথ দেখিয়েছিলেন, আজও সেই পথে হাঁটছে পাকিস্তানের প্রতিটি স্বাধীনতাকামী মানুষ! আজও বেলুচিস্তানের স্বাধীনতাকামী নেতারা বলছেন, বেলুচের মুখ্য মন্ত্রী বলছেন – আমাদের ছে নুকাফ (৬ দফা) শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা মনে করো। না মানার পরিণাম তোমরা বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে দেখ!

৬ দফা বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করেছে। বাকিদেরও একদিন আলাদা করে দেবে। আর এজন্যই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম শুধু বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তার নাম থাকবে পাকিস্তান ভাঙ্গা প্রতিটি স্বাধীন দেশের ইতিহাসের পাতায়।

আজ ছয় দফা দিবসে বালুচ-সিন্ধের মুক্তিসংগ্রামীদের সফলতা কামনা করি।

আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা [ ৬ দফা ] দিবস সম্পর্কে আরও পড়ুন:

1 thought on “আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা [ ৬ দফা ] দিবস”

Leave a Comment