মধ্যপন্থী ইসলামি দেশ হবে সৌদি আরব: সৌদি প্রিন্স !
সৌদি আরবে ‘মধ্যপন্থী, উন্মুক্ত’ ইসলাম ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশটির প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ২৪ অক্টোবর দেশটির রাজধানী রিয়াদে এক অর্থনৈতিক ফোরামে দেওয়া ভাষণে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন। এসময় বিশ্বের সব দেশের সব ধর্মের মানুষের জন্য সৌদি আরবকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।
ভাষণে সৌদি প্রিন্স বলেন, আমরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চাই। এমন ধরনের জীবনযাত্রা যেখানে আমাদের ধর্ম এবং এবং ঐতিহ্য সহিষ্ণুতায় রূপান্তরিত হবে যাতে করে আমরা বিশ্বের অন্যদের সঙ্গে সহাবস্থানে আসতে পারি এবং বৈশ্বিক উন্নয়নের অংশীদার হতে পারি। সৌদি আরব কট্টরপন্থী সব চিন্তাভাবনাকে দূরে ঠেলে দেবে। সৌদি আরব অতীতে এমন ছিল না। আমরা আগে যা ছিলাম সেখানেই ফিরে যাব। অর্থাৎ, মধ্যপন্থী ইসলাম ধর্মের দেশ হব। বিশ্বের সব ধর্মের মানুষের জন্য আমাদের দরজা খোলা থাকবে।
খুব ভালো কথা। কিন্তু কয়েকটি সম্পূরক প্রসঙ্গের কি হবে?
১. বর্তমান সৌদিতে যে ইসলামিক (!) জীবন ব্যবস্থা তা কি স্বাভাবিক নয়? স্বাভাবিক যদি নাই হয়, তবে এতদিন ইসলামের নামে মুসলিমদের প্রতারণা করার দায়ে আপনার পূর্ব পুরুষদের কি বিচার হবে?
২. আপনারা না হয় আপনাদের ঐতিহ্য ফেরালেন, ধর্ম এবং ঐতিহ্যকে পাশাপাশি রাখলেন। কিন্তু আপনারা বিশ্বব্যাপী আপনাদের ওহাবী মতবাদের প্রচারকদের দিয়ে অন্য দেশের/সমাজের ঐতিহ্যে-সংস্কৃতির যে সর্বনাশ করেছেন, তার বিচার কি হবে?
৩. আপনাদের ওহাবী ফ্যাক্টরিতে তৈরি করে রপ্তানি করা “কট্টর রাজনৈতিক ইসলাম” নামের এক অদ্ভুত জিনিসের কারণে বিশ্বব্যাপী কোটির অধিক মুসলিম আহত-নিহত-ঘরছাড়া হয়েছে, সামাজিক ভাবে নিপীড়িত হয়েছে-হচ্ছে, কোটি মুসলিম র্যাডিকাল হয়ে গেছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মুল স্রোত থেকে পিছিয়ে পড়েছে, বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের ইমেজ ধূলিসাৎ হয়ে গেছে, তার কি বিচার হবে?
আফসোস।
রসুল (সা:) ওফাতের পর থেকে ইসলামের নামে মুসলিমদের মধ্যে হানাহানি, হত্যা আর ষড়যন্ত্রকারীদের যুগে যুগে আমরা বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছি। ক্ষমতার লোভে ইসলামের মূলনীতিকে কলুষিত করা মতবাদকে আমরা মূলধারার ইসলাম বলে প্রচার হতে দিয়েছি। আমাদের বিশ্বব্যাপী আজকের দুরবস্থার এটাই মুল কারণ।
ইসলামের নামে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের মতবাদ প্রচারকারীরা আজও সংখ্যালঘু, কিন্তু সংগঠিত এবং শক্তিশালী। আমরা সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা আজও তাদের ভয়ে ভিতু, আত্মকলহে বিভক্ত, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তাদের সমর্থকও।
বহুবার বলেছি। আজ ইসলামের নামে যা হয়, তার অনেক কিছুই রসুলুল্লাহ (সা:) এর প্রচার করা ইসলামের অংশ নয়। এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বিদআতটি হল- ইসলাম একজন মুসলিমকে অন্য মুসলিম বা অমুসলিমের উপরে ইসলামের নামে কোন ধরনের (শারিরিক বা মানসিক) চাপ প্রয়োগের অধিকার রাখে। যেটি কোরআনের আদর্শ বিরোধী। যে বিদআতের পেটের মধ্যে থেকেই তৈরি হয়েছে বর্তমান প্রচলিত শরিয়া সিস্টেম। এই বিদআত আমাদের অতীতে শেষ করেছে, বর্তমানে করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
[ মধ্যপন্থী ইসলামি দেশ হবে সৌদি আরব: সৌদি প্রিন্স ]
আরও পড়ুন: