শ্রোতা সহায়িকা নোট সিরিজে আজকের রাগ – রাগ আড়ানা বা আডানা। এই আর্টিকেলটির উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। আপডেট পেতে আবারো আসার আমন্ত্রণ রইলো।
রাগ বাগেশ্রী
বাগেশ্রী রাগটা আমার কানে লেগেছিলো নজরুলের “হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে” গানটা থেকে। সে সময়ে জানতাম না রাগের নাম, প্রকার, চাল-চলন। সেই যুগের গান হিসেবে গানটির বাণীর কিছু অংশ একটু অনাধুনিক মনে হলেও গানের সুরটা আমাকে অসম্ভব টানতো। কিছু অংশের সুর আবার বিশেষ করে ছুঁয়ে যেতো।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ভূত চাপার পরে যখন আবারও শুনলাম, তখন বুঝলাম ভালো লাগার কারণ হচ্ছে বাগেশ্রীর জাদু। রাগ বাগেশ্রীর সিগনেচার চলনগুলো দিয়ে যে অংশগুলোর সুর করা হয়েছে, সেই অংশগুলোই আমার বিশেষভাবে ভালো লাগার জায়গা।
“রাগ বাগেশ্রী” হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জনপ্রিয় রাগগুলোর মধ্যে একটি। কেউ কেউ বলেন, আদিতে এর নাম ছিলো “বাগেশ্বরী”।
রাগ বাগেশ্রী রাগ মধ্যরাত্রির। কোলকাতার সঙ্গীত রিসার্চ একাডেমীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই রাগ শোনার সময় রাত ১০টা থেকে ১২টা। এই রাগের প্রকৃতি শৃঙ্গার-রসাত্মক। ভীষণ রোমান্টিক রাগ। প্রেয়সীর জন্য প্রতীক্ষার আবেগ মূর্ত হয়ে ওঠে এর আলাপে। এর সুরে আছে বিরহ, অনুযোগ, অভিমান, ভীষণ তৃষ্ণার্ত অপেক্ষা, প্রতিদানপ্রত্যাশাহীন ভালোবাসা, আবার না-পাওয়ার বেদনা। চাঁদনী রাত আর বাগেশ্রী, দুজন দুজনকে পূর্ণতা দেয়।
রাগ বাগেশ্রীর অবয়ব খুব স্পষ্ট। মোটামুটি মাপের একজন শিল্পীও খুব কম সময়ে রাগটা দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারেন। অর্থাৎ, খুব কম সময়ের মধ্যে এই রাগের অবয়ব ফুটিয়ে তোলা যায়। তাই এই রাগটি চেনার জন্য খুব উচ্চমার্গের শ্রোতা হবার প্রয়োজন পড়ে না।
আমি মিউজিক থেরাপি বা সুরচিকিৎসা এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। তবে শুনেছি যাদের অনিদ্রারোগ আছে, তাদের জন্য এই রাগটি উপকারী। শোবার আগে বিলম্বিত লয়ে রাগ বাগেশ্রীর আলাপ শুনতে থাকলে উপকার হয় বলে শুনেছি।
রাগ বাগেশ্রী বেশ বড়ো রাগ। অনেক সময় নিয়ে বিস্তার করে গাওয়া/বাজানো যায়। এই রাগটি মন্দ্র ও মধ্যসপ্তকে সবচেয়ে বেশি বিকশিত হয়। ধ্রুপদ, খেয়াল ও গজলে এই রাগটি বহু ব্যবহৃত হয়েছে। বলিউডের প্লেব্যাকেও অনেকবার ব্যবহার করা হয়েছে হয়েছে এই রাগ। কণ্ঠশিল্পীদের পাশাপাশি যন্ত্রশিল্পীদের মধ্যেও রাগটি জনপ্রিয়। সেতার, সুরবাহার, বাঁশিতে এই রাগের অসংখ্য মনোহর কম্পোজিশন আছে।
রাগ বাগেশ্রী অনেক প্রাচীন হবার কারণে কালের বিবর্তনে স্বরব্যবহার ও চলনে অনেক পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়েছে। এখন মূল রূপটি ঠিক রেখে তিন-চার রকমের বাগেশ্রী প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত রূপটি নিয়ে আমরা এই সেশনে আলোচনা করবো। তবে নীরস আলোচনার আগে কিছু গান শুনে আসা যাক।
শুরু করা যেতে পারে কাজী নজরুল ইসলামের গান দিয়ে
কাজী নজরুল ইসলামের গানে রাগ বাগেশ্রী:
নজরুলের অনেক গান রাগাশ্রয়ী। নির্দিষ্ট রাগের আশ্রয়ে যে গানগুলোতে সুর করা হয়েছে, সেগুলোর পুরো সুরে রাগের অবয়ব বজায় রাখার চেষ্টা থেকেছে; খুব বেশি রাগভ্রষ্ট হয়নি। তাই নজরুলের গানগুলো কান তৈরিতে বেশি উপযোগী বলে আমার কাছে মনে হয়।
১. হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে (সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়)
২. আর লুকাবি কোথায় মা কালী (শ্যামাসঙ্গীত: পান্নালাল ভট্টাচার্য)
৩. চাঁদের পেয়ালাতে আজি (মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়; বাগেশ্রীর বাইরেও মাঝে মধ্যে একটু উঁকি দিয়েছেন)
৪. সংসারেরই দোলনাতে মা (অনলাইন লিংক পেলে যুক্ত করা হবে)
৫. চাঁদ হেরিছে চাঁদমুখ তার সরসীর আরশিতে (অনুপ ঘোষাল)
৭. আবার শ্রাবণ এলো ফিরে তেমনি ময়ূরডাকে (অনলাইন লিংক পেলে যুক্ত করা হবে)
রবীন্দ্রসঙ্গীতে রাগ বাগেশ্রী:
কবিগুরু তার অনেক কম্পোজিশনে প্রচলিত রাগের আশ্রয় নিলেও অনেক সময় রাগের কাঠামোতে তিনি আটকে থাকতে চাননি। তাঁর সুরের পথ রাগের বাইরে চলে গেছে প্রায়শই। আমার কাঁচা কান যা বলে, তাতে বিশুদ্ধ রাগাশ্রয়ী গান হিসেবে তাঁর গান অনেক ক্ষেত্রেই খুব ভালো উদাহরণ নয়।
১. নিশীথ শয়নে ভেবে রাখি মনে (কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়)
২. যে রাতে মোর দুয়ারগুলি (ইন্দ্রনী সেন)
৩. দুঃখ দিয়ে মেটাব দুঃখ তোমার
৪. সঘন গহন রাত্রি (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়)
গজলে রাগ বাগেশ্রী:
বাগেশ্রী গজলের জন্য দারুণ রাগ। কিছু গজলের লিংক দেয়া হলো। শুনে দেখা যেতে পারে।
১.মেহদি হাসানের গজল :
১.১ Kaise kaise log hamare jee ko jalane
১.২ Dilki baat labope – Ust. Mehdi Hassan
২. গুলাম আলির গাওয়া:
৩.ফরিদা খানমের গাওয়া:
৩.১ মীর্জা গালিব এর গজল – Yeh Na Thi Hamari
৪. আবিদা পারভিন এর গাওয়া
৪.১ শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর এর গজল – Yar tha gulzar tha bad-e-saba thi main na tha
৫. Dil Mein Ab -by Basavi Mukherji (বাসবী মুখোপাধ্যায়)
রাগ বাগেশ্রী নিয়ে প্লেব্যাক:
বাগেশ্রী রাগে অনেক হিট ফিল্মের গান হয়েছে। সেসব গানের থেকে কিছু গান এর রেফারেন্স যুক্ত করা হল।
১. Aaja re pardesi (Taal: Keharva) – Madhumati (1958) – Vidushi Lata Mangeshkar
২. Jao jao nand ke lala – Rangoli (1962) – Vidushi Lata Mangeshkar (1929- ), India (Vocal)
৩. Na bole radha na bole – Azaad (1955) – Vidushi Lata Mangeshkar
৪. Bedardi dagabaaz jaa jaa re ja – Bluffmaster (1963) Film- Vidushi Lata Mangeshkar
৫. Humse aaya na gaya – Dekh Kabir Roya (1957)- Talat Mahmood
৬. Jaa re beimaan tujhe -by Manna Dey, M.D_D.DILIP- Private Secretary (1962)
৭. Jaag dard-e-ishq jaag (Raga: Bageshri, Taala: Dadra) -Anarkali (1953) film – Hemant Kumar ৮. Mukharjee & Vid. Lata Mangeshkar
৮. Kaise kate rajani – Kshudito Pashan (1960) – Ust. Amir Khan
**** ইচ্ছে আছে বাগেশ্রীতে যেসব আধুনিক, টাপ্পা, হরি, কাজরি, চৈতি আছে সেগুলোর লিংক যুক্ত করবো। কেউ এরকম লিংক পেলে কমেন্টে যুক্ত করে সহায়তা করলে কৃতজ্ঞ থাকব।
যন্ত্রে রাগ বাগেশ্রী:
আমরা কণ্ঠে আরও ভারি গানে যাবার আগে একটু শুনে আসব যন্ত্রসঙ্গীতে বাগেশ্রী। বিভিন্ন শিল্পী বিভিন্ন যন্ত্রে বাজিয়েছেন এ রাগ। তার কিছু লিংক যুক্ত করলাম।
সুরবাহারে রাগ বাগেশ্রী:
১. ওস্তাদ ইমরাত খান (ইমদাদখানি এবং ইটাওয়াহ ঘরানার ) সাহেব এর ১৪ মিনিট এর সুরবাহার বাজনা (এই মুহুর্তে ইউটিউবে কোন লিংক পাওয়া যাচ্ছে না। দ্রুত যুক্ত করা হবে)।
২. ওস্তাদ এনায়েত খান (১৮৯৪-১৯৩৮) সাহেব (ইমদাদখানি এবং ইটাওয়াহ ঘরানার ) এর ৩:২৪ মিনিটের সুরবাহারে আলাপ। তিনি আফতাব এ সিতার ওস্তাদ বিলায়েত খান এবং ওস্তাদ এনায়েত খানের বাবা।
৩. Ramprapanna Bhattacharya (Imdadkhani-Etawah Gharana) Surbahar Alap.
4. Rajeev Janardan (Imdadkhani-Etawah Gharana) Surbahar Alap.
ইউটিউবে অন্য ঘরানার সুরবাহারে বাগেশ্রী পেলাম না বলে শুধু ইমদাদখানি এবং ইটাওয়াহ ঘরের গুলোই যুক্ত করলাম। এই তালিকা দেখে মনে হতে পারে শুধুমাত্র ঘরের লোকজনই বোধহয় সুরবাহার বাজায়। এটা ঠিক না, আবার খুব বেঠিকও না 😉 কারণ এই ঘরের বাইরে অনেকেই সুরবাহার বাজালেও এখন পর্যন্ত সুরবাহারে এই ঘরটি সবচেয়ে প্রমিনেন্ট।
সিতারে রাগ বাগেশ্রী :
১. Ustad Imrat Khan (1935-), India (Sitar /Imdadkhani Gharana, Etawah Gharana) এর ৬:৩১ মিনিটের সিতার।
২. পণ্ডিত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় (মাইহার ঘরানা) এর বাগেশ্রী (১৯৭১ জার্মানিতে লাইভ অনুষ্ঠানে)। ৫৪ মিনিটের এই ট্র্যাকের প্রথম ১৭ মিনিট আলাপ। এর পরে ২ আড়াই মিনিটের জোড় দিয়ে রুপক তালে মিনিট বিশেকের বিলম্বিত গত। তারপর ৭/৮ মিনিট তিন তালে দ্রুত লয়ে গাত। এরপর প্রায় ১৫ মিনিট ঝালা। তবলায় ছিলেন ফইয়াজ আহমেদ খান।
৩. ওস্তাদ শাহিদ পারভেজ (ইমদাদখানি এবং ইটাওয়াহ ঘরানা) খাঁ সাহেবের সিতারে বাগেশ্রী (সুজাত খানের উপস্থাপনায় )।
৪. ওস্তাদ শরিফ খান পুঁছওয়ালে (১৯২৬-১৯৮০) এর সিতারে বাগেশ্রী। উনি সিতারের পাশাপাশি বিচিত্র বীণা ও রেজা বীণা (রুদ্র বীণা) বাদক ছিলেন। এই রেকর্ডটিতে তার নিজের কণ্ঠে রাগের পরিচিতি দিয়ে শুরু করেছেন।
৫. পণ্ডিত কার্তিক কুমার এর সিতারে বাগেশ্রী।
৬. নিলাদ্রি কুমার এর সিতারে বাগেশ্রী।
সারোদে রাগ বাগেশ্রী :
১. ওস্তাদ আলি আকবর খান এর সরোদ এ বাগেশ্রী।
২. ওস্তাদ আমজাদ আলি খান এর সরোদে বাগেশ্রী।
৩. ওস্তাদ আমজাদ আলি খান এর বাগেশ্রী।
বীণায় রাগ বাগেশ্রী :
১. মহান বীণা -পণ্ডিত বিশ্ব মহান ভাট এর মহান বীণায় বাগেশ্রী মহান বীণায় বাগেশ্রী।
২. রুদ্র বীনা – ওস্তাদ আশিক আলি খানের রুদ্র বীণায় রাগ বাগেশ্রী। চৌতালে বাজানো ধ্রুপদ বান্দিশ।
৩. চন্দ্র বীণা – Shri. S. Balachander এর চন্দ্র বীণায় রাগ বাগেশ্রী। আলাপ ও ধামার।
৪. ওস্তাদ দাবির খান (রামপুর ঘরানার ওয়াজির খানের পৌত্র) এর রুদ্র বীনায় বাগেশ্রী।
সারেঙ্গীতে রাগ বাগেশ্রী :
১.ওস্তাদ সুলতান খাঁ সাহেব এর সারেঙ্গীতে বাগেশ্রী।
২. Ustad Bundoo Khan (1881-1955) (Delhi Gharana) – এর সারাঙ্গীতে ৯.৩৮ মিনিটের বাগেশ্রী (ওয়েবে পাবার পরে যুক্ত করা হবে)।
৩. ওস্তাদ লিয়াকত আলি খান এর সারেঙ্গীতে বাগেশ্রী। বিলম্বিত গত এক তালে এবং তিনতালে দ্রুত গাত। তবলায় বিশ্বনাথ শিরোদকার।
.
বাঁশিতে রাগ বাগেশ্রী :
১. পণ্ডিত পান্না লাল (মাইহার ঘরানা) এর বাঁশিতে বাগেশ্রী।
২. পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া (মাইহার ঘরানা) এর বাঁশিতে বাগেশ্রী।
৩. পণ্ডিত রণু মজুমদার এর বাঁশিতে বাগেশ্রী।
৪. Music For Meditation – Indian Music – Indian Bansuri – Flute – Raga bAgeshri
রাগ বাগেশ্রীতে যুগলবন্দী:
১. পণ্ডিত রবি শঙ্কর এবং ওস্তাদ আলি আকবার খান এর সেতার ও সরোদে বাগেশ্রী যুগলবন্দী। তবলায় ওস্তাদ আল্লারাখা খান।
2. ওস্তাদ শহিদ পারভেজ খান এবং ওস্তাদ রসিদ খান এর সেতার ও ভোকালে বাগেশ্রী যুগলবন্দী।
রাগ বাগেশ্রীর খেয়াল:
১. ওস্তাদ আমির খান (কিরানা ঘরানা- ইন্দোর ঘরানার প্রতিষ্ঠাতা) সাহেবের বাগেশ্রী ( প্রায় ৩০ মিনিট)।
২. পাতিয়ালা ঘরানার ওস্তাদ বড় গোলাম আলি খাঁ (১৯০২-১৯৬৮) সাহেব এর বাগেশ্রী। “প্রীত না জানে” বান্দিশ সহ তারানা। প্রায় ২২ মিনিট। বিলম্বিত থেকে শুরু করে দ্রুত এ গিয়ে তানের বর্ষন শেষে তার বিখ্যাত তারান। সাথে সম্ভবত সাহায্য করছে খাঁ সাহেবের সন্তান মুনাওয়ার আলি খাঁ।
৩. ওস্তাদ রসিদ খাঁন এর বাগেশ্রী লাইভ।
৪. পণ্ডিত জসরাজ (মেওয়াতি ঘারানা) এর বাগেশ্রী ১ (প্রায় ৭ মিনিট), বাগেশ্রী ২ (প্রায় ৩০ মিনিট)
৫. পন্ডিত কুমার গান্ধর্বের বাগেশ্রী লাইভ (প্রায় ১৮ মিনিট)। ওনার পুত্র মুকুল শিবপুত্রের গাওয়া বাগেশ্রী (প্রায় ৬ মিনিট)।
৬. কৌষিকী চক্রবর্তীর বাগেশ্রীতে মাতা সরস্বতী বন্দনা (দেড় মিনিটের দ্রুত)।
৭. আগ্রা ঘরানার শ্রীকৃষ্ণ নারায়ণ রজনকার (১৯০০-১৯৭৪) এর বাগেশ্রী – লিংক পরে যুক্ত করা হবে।
৮. Koun karat tori binti – বিষ্ণুপুর ঘরানার পণ্ডিত জ্ঞানেন্দ্র প্রসাদ গোস্বামী (১৯০২-১৯৪৫)
৯. রামপুর সাহাসওয়ান ঘরানার ওস্তাদ মোস্তাক হুসেইন খান (১৮৮০-১৯৬৪) এর বাগেশ্রী ।
১০. কিরানা ঘরানার হিরাবাঈ বরদেকার (১৯০৫-১৯৮৯) এর বাগেশ্রী ।
১১. কিরানা ঘরানার পণ্ডিত ভীমসেন যোশি (১৯২২-২০১১) এর কণ্ঠে বাগেশ্রী।
১২. মেওয়াতি ঘরানার পণ্ডিত জশরাজ (১৯৩০-) এর কণ্ঠে বাগেশ্রী।
১৩. পাটিয়ালা ঘরানার ওস্তাদ আমানত আলি খান এবং ফাতেহ আলী খানের গাওয়া বাগেশ্রী ।
১৪. কিরানা ঘরানার গাঙ্গুবাঈ হাঙ্গাল (১৯১৩-২০০৯) এর কণ্ঠে বাগেশ্রী ।
১৫. পাটিয়ালা ঘরানার বেগম ফরিদা খানুম এর কান্ঠে বাগেশ্রী ।
১৬. কসুর-পাটিয়ালা ঘরানার বেগম পারভীন সুলতানার কন্ঠে বাগেশ্রী।
১৭. গোয়ালিয়র ঘরানার পণ্ডিত মুকুল শিব পুত্র (পণ্ডিত কুমার গন্ধর্ব সন্তান) এর গাওয়া বাগেশ্রী।
১৮. পণ্ডিত সত্য-শীল দেশপান্ডের কণ্ঠে বাগেশ্রী।
রাগ বাগেশ্রী ও নাট্যসঙ্গীত:
১. Pandharinath Kolhapure & Poorna Seth এর বাগেশ্রী- লিংক পরে যুক্ত করা হবে।
২. Master Krishnarao (Phulambrikar) (1898-1974), India (Vocal)
রাগ বাগেশ্রীতে তারানা:
১. ওস্তাদ ফৈয়ার খাঁ সাহেব এর বাগেশ্রী তারানা।
২. ওস্তাদ বড়ো গোলাম আলি খান এর বাগেশ্রী তারানা।
৩. পণ্ডিত কুমার গান্ধর্বের বাগেশ্রী তারানা (প্রায় ৭ মিনিট)।
৪. মালিনী রাজুরকার এর বাগেশ্রী তারানা।
রাগ বাগেশ্রীতে ধ্রুপদ/ধামার:
বাগেশ্রিতে অসাধারন সব ধ্রুপদের কম্পজিশন আছে। এই লেখায় কয়েকটি যুক্ত করা হল।
১. বিখ্যাত ডাগর পরিবারের সিনিয়র ডাগর ভাইদের বা উদয়পুরের ডাগর ভ্রাতাদের (খাঁ সাহেব ওস্দাত নাসির মইনুদ্দিন ডাগর এবং খাঁ সাহেব ওস্তাদ নাসির আমিনুদ্দিন ডাগর) এর বাগেশ্রী আলাপ এবং তারানার একটি অসাধারন এ্যলবাম ছিল। এ্যলবামের নাম The Royal Collection of Mewar. আলাপের ইউটিউব লিংক।
৩. ডাগর ঘরানার শিষ্য আশিষ সাংকৃত্যায়নের বাগেশ্রী আলাপ এবং ধামার শুনতে পারেন।
২. পন্ডিত সিয়া রাম তিউয়ারির (দরভাগা ঘরানা) মিনিট দুয়েকের আলাপ সহ প্রায় ১১ মিনিটের একটা ধামার কম্পজিশন আছে (ECSD 2771)। এই মুহুর্তে অনলাইনে লিংকটা পাচ্ছি না। পেলে যোগ করে দেব।
* ওস্তাদ বা কোন ঘরের নানের কোন ধরনের ক্রম অনুসরণ করা হয়নি। সুতরাং আগে বা পরে লেখায় ছোড় বড় বোঝাবে না।
রাগ বাগেশ্রীর শাস্ত্র /নিয়ম কানুন:
=========================
এবার চলেন নজর দেই এই রাগের টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর দিকে।
যখন শোনা শেখা শুরু করি তখন বিভিন্ন পণ্ডিত/ওস্তাদের বাগেশ্রীর বিশ্লেষণ শোনার-পড়ার চেষ্টা করেছি। সবচেয়ে বেশি সাহায্য পেয়েছি পণ্ডিত রামাশ্রেয় ঝাঁর বিশ্লেষণ থেকে। এছাড়া খাজা খুরশিদ আনোয়ারের রাগমালা সহ বহু রিসোর্স থেকে সাহায্য পেয়েছি। সেসবের আলোকে কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
প্রথমেই চলুন বেসিক কিছু পরিচয় জানি (এখন মনে না রাখলেও চলবে): (ঠাট: কাফি, জাতি: ঔড়ব-সম্পূর্ণ (বিভিন্ন গায়কির কখনও ভিন্ন জাতি দেখা যায়), বাদী স্বর: মধ্যম (ম), সমবাদী: ষড়জ, অঙ্গ: পূর্বাঙ্গ, গাইবার সময়: রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর)
রাগটি অনেক পুরনো হবার কারণে, কালের বিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন ঘরানার গায়কীতে – স্বর ব্যবহারে ভিন্নতা দেখা যায়। আরোহ-আবরোহ তে রিশব(রা) এবং পঞ্চমের(পা) ব্যাবহার নিয়েই মুল পার্থক্য। এই দুটো স্বরের পার্থক্য করে – কেউ ঔড়ব গায়, কেউ সাড়ব, আবার কেউবা এটাকে সম্পূর্ণ জাতির রাগ হিসাবে গেয়ে থাকেন।
আদি বাগেশ্রী রাগের – আরোহণে ঋষভ(রা) ও পঞ্চম(পা) বর্জিত, আর অবরোহণ শুধুমাত্র পঞ্চম(পা) বর্জিত। সেক্ষেত্রে জাতি হয় ঔড়ব-সাড়ব।
বাগেশ্রীতে পঞ্চম(পা) বাদ দেবার কারণে অন্য মধ্যম(মা) বাদীর রাগগুলোর থেকে আলাদা। তাই আদি বাগেশ্রীর আরোহ-আবরোহ হবে:
আরোহ: সা জ্ঞা মা ধা ণা র্সা
আবরোহ: র্সা ণা ধা মা জ্ঞা রা সা
নিচের উদাহরণ মতো গেয়ে দেখলে, বাগেশ্রীর আদি রূপের খানিকটা দেখা যাবে:
আরোহ: সা ণা্ ধা্ ণা্, সা জ্ঞা মা, ধা ণা র্সা
আবরোহ: র্সা ণা ধা, মা গা রা সা
তবে যে ধরনের বাগেশ্রী আজকাল সবচেয় জনপ্রিয়, সেই বাগেশ্রীতে, আরেহক্রমে ছোট করে পঞ্চমও(পা) লাগানো হয়। সেক্ষেত্রে রাগের জাতি বদলে হয়ে যাবে “সাড়ব-সম্পূর্ণ”। সেই পঞ্চমের রূপ হয় দুর্বল এবং বাঁকা। সচরাচর আবরোহনকালে পঞ্চমকে সামান্য ছুঁয়ে যাবার মতো করে গাওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ গায়কীতে, অবরোহণ কালে পঞ্চমটা লাগানোও হয় অরোহ গতিতে। তার মানে নামার সময়, পঞ্চম(পা) কে বাদ দিয়ে, মধ্যম(মা) এর উপরে নেমে এসে, আবার ফিরে গিয়ে পঞ্চম(পা) লাগিয়ে, ধৈবতের(ধা) উপরে দাঁড়ানো হয়। এরপর আবার পঞ্চম বাদ দিয়ে মধ্যমের উপর দিয়ে অবরোহণ করা হয়।
নিচের উদাহরণ মতো গাইলে/বাজালে সেই রূপটা দেখা দিতে পারে:
আরোহ: ধা্ ণা্ সা্, গা মা ধা ণা র্সা।
আবরোহ: র্সা ণা ধা, মা পা ধা মা, মা জ্ঞা রা সা
কেউ সরাসরি আরোহনকালেও খুব সামান্য পঞ্চম লাগান। ডাগর ভাইদের গায়কীতে এর অসাধারণ উদাহরণ পাওয়া যায়।
এছাড়াও কেউ কেউ বাগেশ্রীতে আরোহণে রিশব(রা) লাগান। সেক্ষেত্রে রাগের জাতি হয় সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ। তবে এখানেও লাগনো হয় প্রায় পঞ্চমের মতো করেই। যেমন:
সা ণা্ ধা ণা্ সা মা গা, রা গা মা গা রা সা।
বাগেশ্রী রাগে ধৈবত (ধা) স্বরের বহুত্ব আছে। মানে – বাদী সমবাদীর পরপরই, ধৈবত স্বরের বহু ব্যাবহার হয়। ধৈবত স্বরকে বারবার, বিভিন্ন ভাবে ঘুরেফিরে দেখানো হয়। যেমন:
মা জ্ঞা মা ধা ণা ধা, মা জ্ঞা মা ধা ণা সা্ ণা ধা, মা ধা ণা ধা, মা পা ধা, মা জ্ঞা, মা জ্ঞা রা সা
এই রাগে আরোহণের সময় গান্ধার(গা) কে একটু বাঁকা করে লাগানো হয়। ধৈবতের পাশাপাশি গান্ধারের বহুত্ব লক্ষ করা যায়। তাছাড়া অনেকবার – মধ্যম(মা) কোমল গান্ধার(জ্ঞা) – এই দুটি স্বরের পুনরাবৃত্তি দেখা যাবে। আবার ষড়জ(সা) এবং মধ্যম(মা) এর পাশাপাশি ব্যাবহার অনেকবার দেখা যাবে। যেমন:
সা না ধা না, সা মা
অনেকেই বাগেশ্রীর বিভিন্ন রাং দেখানোর জন্য সব ধরনের বাগেশ্রী মিশিয়ে গেয়ে থাকে। তার পরেও আপনি রাগের মুল চরিত্র বুঝতে পারলে, সবগুলো রংই উপভোগ করতে পারবেন।
সেক্ষেত্রে আরোহ-আবরোহ:
আরোহণ: স জ্ঞ ম ধ ণ র্স (ঋষভ ও পঞ্চম বর্জিত)
অবরোহণ : র্স ণ ধ প ধ ম জ্ঞ র স (সম্পুর্ন)
পাকাড় /পকড়:
অনেকগুলো টুকরাতেই বাগ্রেশীর স্পষ্ট রুপ ধরা যায়। তাই পকড় নিদ্রিষ্ট করে একটি বলা কষ্টকর। প্রচলিত কয়েকটি পকড় নিচে দেয়া হলো:
ধা্ ণা্ সা, মা জ্ঞা রা সা, মা পা ধা মা, সা না ধা, ধপ ধ মজ্ঞ
এছাড়া – মা পা ধা জ্ঞা (পা খুব সামান্য) গাইলেই বাগেশ্রী পরিস্কার দেখা যাবে।
আরও কিছু চলন:
র স, মা পা ধা মা, সা না ধা, মা জ্ঞা রা সা, ধ্ ণ্ স ম, ধপ ধ মজ্ঞ
টিউটোরিয়াল:
যেকোন রাগের স্বরের চলেফেরা বোঝার জন্য ২/৫ টি স্বরমালিকা বা সারগাম-গীত শোনা দরকার। স্বর মলালিকার পাশাপাশি দু একটি লক্ষনগীত (বা ছোট খেয়াল) শুনলে সহজ হতে পারে। লক্ষনগীতের মাধ্যমে খুব সহজে রাগের লক্ষনগুলো ফুটিয়ে তোলা যায়। লক্ষনগীত ছোট খেয়াল প্রায় একই কাজ করে। অনলাইনে অনেক গুলো আছে। একটু খোঁজাখুজি করলে পেয়ে যাবেন। স্যাম্পল হিসেবে নিচের দুটো লিংক দেয়া হল।
১. গন্ধর্ব মহাবিদ্যালয়ের বাগেশ্রী রাগের স্বর-মল্লিকা ।
২. From Raga to Reel-Part 6 (Raag Bageshri)
৩. Sarita Pathak Yajurvedi এর বাগেশ্রী টিউটোরিয়াল এবং বান্দিশ
৪. শাফকাত আলি খানের বাগেশ্রী টিউটোরিয়াল
৫. Ashish Kulkarni র গাওয়া বাগেশ্রীর আলাপ ও সারগম গীত
বাগেশ্রী রাগ বিষয়ে আরও জানার সোর্স:
২. Short Takes: Bageshree by Rajan P. Parrikar
Declaimer:
শিল্পীদের নাম উল্লেখের ক্ষেত্রে আগে জ্যৈষ্ঠ-কনিষ্ঠ বা অন্য কোন ধরনের ক্রম অনুসরণ করা হয়নি। শিল্পীদের সেরা রেকর্ডটি নয়, বরং ইউটিউবে যেটি খুঁজে পাওয়া গেছে সেই ট্রাকটি যুক্ত করা হল। লেখায় উল্লেখিত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যেসব সোর্স থেকে সংগৃহীত সেগুলোর রেফারেন্স ব্লগের বিভিন্ন যায়গায় দেয়া আছে। শোনার/পড়ার সোর্সের কারণে তথ্যের কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে। আর টাইপ করার ভুল হয়ত কিছু আছে। পাঠক এসব বিষয়ে উল্লেখে করে সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
*** এই আর্টিকেলটির উন্নয়ন কাজ চলমান ……। আবারো আসার আমন্ত্রণ রইলো।
আরও দেখুন: