রাধাগ্রাম গ্রাম কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম।
রাধাগ্রাম গ্রাম
কয়া ইউনিয়নের রাধাগ্রামে নারীদের সচেতন করতে সুফি ফারুকের পরামর্শ সভার উদ্যোগ:
কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের রাধাগ্রামে নারীদের সচেতন করতে সুফি ফারুকের পরামর্শ সভার উদ্যোগ। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা সম্পর্কে কুমারখালীর রাধাগ্রামের নারীদের সচেতন করতে উঠান বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছে সুফি ফারুকের পরামর্শ সভা। সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য কর্মী আলেফা খাতুন ও পেশাদার নার্স গুলশান আফরোজ জুঁইয়ের পরিচালনায় এই উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেছে, উঠান বৈঠকে গ্রামের নারীদের স্বাস্থ্যশিক্ষা, ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে নারী ও শিশুদের সচেতন করা হয়।
সুফি ফারুক জানান, একজন গ্রামের খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষ যদি কোনো কারণে বছরে একবার ৭ দিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়, তবে তার বাৎসরিক সঞ্চয়ের প্রায় অর্ধেক খরচ হয়ে যায়। বড় টাউটের হাতে পড়লে পুরো সঞ্চয় খরচ হয়, কখনো দেনা হয়ে যায়।

তিনি বলেন, যেসব রোগ/বালাইয়ের শেষ পরিণতি হিসেবে তারা ভর্তি হয়, তার একটা বড় অংশ এড়ানো যায় ‘সচেতনতা’ দিয়ে। খরচটাও অনেকখানি বাঁচানো যায় সামান্য কিছু খরচ আর পরিকল্পনা দিয়ে।
তিনি আরো বলেন, বড় বাজেট লাগবে না, বিরাট প্রকল্প লাগবে না। লাগবে আন্তরিকতা, একটু বোধ আর একটু স্বেচ্ছা শ্রমের মানসিকতা। স্থানীয় সকল জনপ্রতিনিধিগণ, রাজনীতিকগণ, বিশিষ্ট জন (বিশেষকরে শিক্ষক সমাজ) একত্রে চাইলে এই কাজটির সিংহভাগই করে ফেলতে পারেন।
আফরোজ জুঁই বলেন, আমাদের দেশের নারীরা নিজের বিষয়ে মোটেও সচেতন নন। ক্যালসিয়াম ঘাটতি, হরমোন সমস্যাসহ নানা রোগ মেয়েদের হয়ে থাকে। প্রায় প্রত্যেক নারীরই রয়েছে এ ধরনের সমস্যা। কিন্তু তারা এর কোন চিকিৎসা করান না।
তিনি বলেন, অপরিষ্কার থাকার কারণে মহিলাদের জরায়ুতে ক্ষতের (ইনফেকশন) সৃষ্টি হয়। পানি কম খেলেও প্রস্রাবের রাস্তায় সমস্যা দেখা দেয়। ময়লা কাপড় ব্যবহারের কারণে হাত-পায়ে চুলকানি হয়; যা শিশুকেও আক্রান্ত করতে পারে। অথচ এসব ব্যাপারে আমাদের দেশের মহিলারা যথেষ্ট সচেতন নন।

তিনি জানান, সন্তানকে ঠিকভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো শুধু শিশুর জন্য নয়; মায়েদের জন্যও মঙ্গলজনক। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। তার মতে, প্রত্যেক মেয়েরই বিয়ের পর ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে পরিবার পরিকল্পনার বিষয়টি ঠিক করা উচিত। নইলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়। সময়মতো খাওয়া, সঠিক পুষ্টি, পরিচ্ছন্নতা এবং কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চললে অনেক রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
স্বাস্থ্য কর্মী আলেফা খাতুন বলেন, আমাদের দেশের মানুষের পুষ্টি বিষয়ে তেমন ধারণা নেই। আর নারীরা সাধারণত স্বামী-সন্তানকে খাওয়ানোর পরে নিজের খাওয়ার কথা ভাবেন। গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিকের চেয়ে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সাধারণত তা হয় না। এক্ষেত্রে পরিবারের অন্য সদস্যদের বিশেষ করে স্বামীকে যত্নশীল হতে হয়। পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য গণমাধ্যমের আরো বেশি সহায়তা নেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
কুমারখালী মহিলা কলেজের প্রভাষক আব্দুস সালাম বলেন, সুফি ফরুক সাহেব গ্রামীণ সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য তার ব্যক্তিগত উদ্যোগের অনেকগুলো কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। যা এসব সুবিধা বঞ্চিত মানুষের উপকারে আসবে। এসব উদ্যোগের কারণে গ্রামের মা ও বোনেরা আর্থিকভাবে স্বালম্বী হওয়ার পাশাপাশি নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্বচেতন হতে পারবেন। এমন উদ্যোগ গ্রহণে সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর ভাইকে ধন্যবাদ জানাই। আরো আগে থেকে স্থানীয় পর্যায়ে অন্যরা এই উদ্যোগ গ্রহণ করলে কুষ্টিয়া আজ দেশের মডেল জেলায় পরিণত হত।
আরও পড়ুন:
- কুমারখালী-খোকসায় সুফি ফারুক এর কার্যক্রম
- কুমারখালীতে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ বিতরণ