বিমল মিত্র মশাই রাগ করবেন না জানি। ‘নফর সংকীর্তন’ আর সফর সংকীর্তনে অনেক তফাত। যতটা তফাত বিবেকানন্দ আর দেব আনন্দে। যতটা তফাত ধর্ম ও ধর্মেন্দরে। তাঁর লেখা নফর সংবাদ পাঠক-পাঠিকদের আনন্দদান করেছে আর আমার এইা সফর সংবাদ পাঠক-পাঠিকাদের নির্মম দণ্ডদান। আমার যেটা সফরের ব্যাপার,পাঠক-পাঠিকাদের কাছে সেটা suffer-এর ব্যাপার ছাড়া আর কিছু নয়। সহ্য করার জন্যে রেডি তো আপনার? বেশ, তৈরি হোন। নাইন, এইট, সেভেন, সিক্স, ফাইভ, ফোর থ্রি, টু, ওয়ান, গো।
ফলে দু’মাসের জন্যে ইউরোপ ও আমেরিকার ট্রিপ হয়ে গেল। ইউরোপ আমার আরও তিনবার দেখা ছিল। সুতরাং ইফেল টাওয়ার, লুভর মিউজিয়াম, মাদাম টুসা, পিকাডিলি,কলোসিয়াম, টিভলি–এসব কিছুরই প্রবেশ নিষেধ ছিল আমার তালিকায়। আমার মেজাজ ছিল মার্কিন পর্যটকের মত, যে বলেছিল, I have not come here to see the old ruins, have come to see the young ruins.
পরিচালক প্রমোদ চক্রবর্তী সেখানে ফ্রান্সের বিখ্যাত মোটর স্টাণ্টম্যানদের সঙ্গে নায়ক হৃষী কাপুরকে নিয়ে হাইওয়েতে ভয়াবহ শুর্টিং করছিলেন তার ‘বারুদ’ ছবির জন্যে। হৃষী বলল,চল দাদা,লোকেশনে যাব। গাড়িতে দূর দূর জায়গা ঘুরে বিখ্যাত ফরাসী ওয়াইন খেয়ে স্বভাবতই একসময় দুজনেরই ব্লাডারে চাপ পড়ল। গাড়ি থেকে নেমে কাঁচা একটা রাস্তার মোড়ে দুজনে ঘাসের উপর যখন ভারতীয় কিডনির সফল কর্ম-কুশলতার নিদর্শন জলধারায় বিগলিত করছিলাম তখন হঠাৎ একটা বোর্ড চোখ পড়ে ব্লাডার সাডার করে উঠল।
লজ্জায় প্যান্ট বন্ধ করে বললাম,চিণ্টু,লুক্ হিয়ার। চিণ্টুও দেখল। নার্গিস। হ্যাঁ মশাই নার্গিস আমাদের এই অপকর্ম দেখছিল পিপিং টমের মত। বুঝলেন না? বোর্ডটা হল রাস্তার চিহ্ন। লেখা ছিল বড় বড় অক্ষরে NARGIS-4KM. মানে নার্গিস মাত্র চার কিলোমিটার দূর। অবাক কাণ্ড নয় কি? ফ্রান্সের অভ্যন্তরে কোথায় এক ছোট গ্রাম তার নাম নার্গিস। ক্যামেরা ছিল চিণ্টুর। সে বোর্ডের ছবিটা তুলে নিল। বলল, দাদা,বোম্বে গিয়ে নার্গিসজীকে দিলে খুব খুশি হবে। মজার ব্যাপার নয়?
আরেকদিনের ঘটনা বলি। আমি সাবান কিনতে বেরিয়েছি। শহরটার নাম মারযাই। ভাষা বিভ্রাটে কিছুতেই বিরাট এক ডিপার্টমেণ্টাল স্টোরের সেল্স-গার্ল মেয়েটিকে বোঝাতে পারছি না যে আমি টয়লেট সাবান কিনতে এসেছি। আমি সোপ সোপ বলে ইঙ্গিতে গায়ে মাখার ভঙ্গী করে ব্যর্থ হলাম। মেয়েটা ‘উই’ ‘উই’ (মানে yes yes ) করছে। কিন্তু কখনো পারফিউম দেখাচ্ছে, কখনো বডি-লোশন, কখনো সানট্যান অয়েল। বিরক্ত হয়ে সাদা বাংলায় বললাম –
সুন্দরী, সাবান বোঝ? সাবান?
সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটার মুখ হাসিতে উজ্জ্বল হল বলল, সাবুঁ মসিঁয়ে? উই।
বলে সাবানের কাউণ্টারে নিয়ে সাবান দেখাল সে। কাণ্ড আর কি?
ইংরেজী বলে বলে হদ্দ হচ্ছিলাম অথচ আমি কি ছাই জানতাম বাংলা ‘সাবান’ ফরাসী ভাষায় Savon-প্রায় একই শব্দ? উচ্চারণও কাছাকাছি। ওরা ‘সাবু’ বলে। দেখলেন তো ব্যাপার স্যাপার।
ফ্রান্সে খাদ্যসমস্যা দূর করেছিলাম দুটো শব্দ শিখে। সেটা হল ‘গাম্বাস’ আর ‘রিস’। গলদা চিংড়িকে ওরা ‘গাম্বাস’ বলে, ‘রিস’ বলে রাইস মানে ভাতকে। সুতরাং গলদা চিংড়ি আর গরম ভাত দিয়ে চুটিয়ে খেয়ে গেছি,কোন অসুবিধে হয় নি।
প্যারিসে যদি যান পিগেলন্ডএ যেতে চাইবেন আপনার যদি নারী শরীরে লোভ থাকে। গে ব্যাচেলারদের এখানে বলে রাখি পিগেল থেকে অনেক ভাল জিনিস পাবেন রু দ্য টিস্লিনে। এই অঞ্চলে বারবনিতারা সাদা গাড়ি করে ঘোরে ও কাস্টমার তুলে ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়।
লন্ডনের সোহো, নিউ ইয়র্কের ফরটিসেকেন্ড ষ্ট্রীটের মেয়েদের চেয়ে অনেক বেশি ভাল এই রু দ্য টিসলিনের উর্বশী কন্যারা।
ফরাসী দেশটা আমি এ ট্রিপে খুবই দেখে নিয়েছি। ইতালী, সুইজারল্যান্ড, অষ্ট্রিয়া, জার্মেনি ও স্পেন ঘুরেছি। তারপর বলা বাহুল্য,মোল্লার দৌড় লন্ডন পর্যন্ত। মানে লন্ডন শহর তো আছেই।
বিদেশে গেলে লন্ডনের বুড়ি ছুঁয়ে না আসলে যাত্রা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
লন্ডনে ভাষা সমস্যা হয় না বলে নাটক, সিনেমা দেখা,স্রেফ অক্সফোর্ড ষ্ট্রীট ধরে শুধু হাঁটা, পিকাডিলি সার্কাস আর মার্বল আর্চের চক্কর,’সেজান’ রেস্তোরাঁ আর ‘গেলার্ডে’ ভারতীয় খাবার খাওয়া, লন্ডণের ‘পাবক্রলিং,’মানে এক মদিরালয় থেকে অন্য সুরামন্দির প্রদক্ষিণ করা আর সোহোতে গিয়ে ব্লু ফিল্ম আর নেকেড শো দেখা,এতেই দশদিন কেটে যায়। কি করে কাটল টেরই পাই নি।
অকপটে এখানে স্বীকার করি পৃথিবীতে যে দুটো শহর আমার সবচেয়ে প্রিয় যে দুটো হল কলকাতা আর লন্ডন। তারপর লন্ডন থেকে এলাম নিউ ইয়র্কে। আমেরিকায় এটা আমার প্রথম পদক্ষেপ। সুতরাং বলতে পারেন মার্কিন দেশে আমি ১৯৭৫ সালের কলম্বাস।
আমেরিকা সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা সংক্ষেপে বলছি। চিত্র সম্পর্কে বিশ্লেষণে আমি কিঞ্চিৎ বিস্তারিত হব। কেননা সেটা হল আমার Forte. শুনন আমার ডিসকভারী অফ ইউ এস এ। আমার মনে হয় আমেরিকা দীর্ঘতম প্রাসাদাবলী আর গভীর তম কণ্ঠনলীর জন্যে বিখ্যাত। বুঝলেন না?
শুনন তাহলে অশ্লীল ছায়াছবির জগতে আলোড়ন তুলছে যে ছবি সেটার নাম হল ‘ডিপ থোট্’। লেস ভেগাস শহরে আমি ও রাজকাপুর (রাজকাপুরও তখন সেখানে বেড়াচ্ছিলেন) সে ছবিটি দেখেছি। ছবিটির প্রতিপাদ্য বিষয় হল ‘ফেলাসিও’ বা লিঙ্গলেহন। নায়িকা লিন্ডা লাভলেস্ তার কাম-বিদ্যার যে পরিচয় দিয়েছেন তাতে সেও আমেরিকার এক অবিস্মরণীয় দ্রষ্টব্য বলে উল্লেখযোগ্য থাকবে। সেজন্যেই বলেছি আমেরিকা উচ্চতম প্রাসাদাবলী ও গভীর কণ্ঠনলীর জন্যে বিখ্যাত। ‘ডিপ থ্রোট্’ আমেরিকার পর্নো-গ্রাফীর জগতে সবচেয়ে বড় হিট্ ছবি। লিণ্ডা লাবলেস্ হলেন র্যাকুয়েল ওয়েলচ্ অফ পর্নোমুভি। মানে উনি একজন সেলিব্রিটি।
একটা কথা মানতেই হবে আমেরিকানরা খুবই বন্ধুবৎসল,সরল,আনন্দপ্রিয় খোলামেলা মনের মানুষ। বৃটিশ বা ইউরোপীয়ানদের মত ইণ্ট্রোভার্ট জাত নয়,ওরা এক্সট্রোভার্ট জাতের লোক। প্রতিটি ট্যাক্সি ড্রাইভার এক একটা বিশ্বকোষ বিশেষ। আমার মনে হয় আমেরিকার সেজন্যে এনসাইক্লোপিডিয়ার বিক্রি কমে গেছে। হার্লেম থেকে গ্রীনউইচ ভিলেজে গিয়ে দেখলাম হিপি আন্দোলন এখন আর জনপ্রিয় নয়। তাদের সংখ্যাল্পতায় আমার বিশ্বাস এ কাল্ট এখন মুমুর্ষু। সারা ইওরোপে যা দেখেছি আমেরিকায়ও তাই। মানে পোশাকে ছেলেমেয়েদের সর্বপ্রিয় পোশাক হল নীল রঙের জীন্স। ছেঁড়া হলে সেটা বেশি ফ্যাশনেবল,তালি থাকলে সে তো কুলীন জাতের।
আমেরিকার জনপ্রিয় পোশাক হল জীন্স আর জনপ্রিয় খেলা হল জীন্স খুলে ফেলা। বুঝেছেন। নিগ্রো ও শ্বেতকায়দের মধ্যে আজকাল ‘বার’ উঠেই গেছে। নো, কালার বার। অন্তত নর্থে নেইই। শুধু কালার কেন,কোন ‘বার’-এই ওরা বিশ্বাস করে না আজকাল। সম্ভবত সেজন্যে মেয়েরা ব্রা আর আণ্ডার-ওয়ার পরা বন্ধ করে দিয়েছে। বাধা মুক্ত থাকাটাই মুক্তির সোপান বোধ হয়। মুক্ত আর যুক্ততে সম্ভবত দূরত্ব কম। এতে সময়ের অপচয়ও কম হয়ে থাকে। নিউইয়র্ক, বাফেলো, ওয়াশিংটন, সল্ট লেক সিটি, ডালাস, ডেট্রিয়ট, লেস ভেগাস, লস এঞ্জেল্স, সান ফ্রান্সিসকো, চিকাগো, মায়ামী ওর্লেণ্ডোর ডিসনিল্যাণ্ড-যত শহরেই প্রকৃতিও এক। শুধু ভৌগোলিক পরিবেশের জন্যে জায়গাগুলোর চেহারা আলাদা। সব শহরেই আমি চুটিয়ে সিনেমা থিয়েটার দেখেছি, নাইট শো দেখেছি,রেড লাইট এরিয়ার খোঁজ নিয়েছি, আর কৃতিমান বাঙালীদের সঙ্গে দেখাশোনা করেছি।
সমীক্ষার ফলাফলটা বলি আপনাদের। মুদ্রাস্ফীতির জন্য দ্রব্যমূল্য ইউরোপীয় দেশগুলোর (বিশেষত সুইজারল্যান্ড। সুইজারল্যান্ড আর জাপান এখন কস্টলিয়েস্ট ইন্ দা ওয়ার্লড) চাইতে বেশ কম। সবচেয়ে চোখে পড়েছে হলিউডের অবনতি। এককালে বিশ্ব চিত্রজগতের রাজা হলিউড এখন ধুঁকছে। দুদিক দিয়ে মার খাচ্ছে। পর্নো ছবির জগৎ থেকে আর টি ভি থেকে। আমেরিকার সাধারণ জীবনে চার অক্ষরের সেই আ্যংলো স্যাক্সন শব্দটির, যার মানে ‘মৈথুন’,এত বেশি প্রচলিত যে আমার মনে হয় ওখানে শিশুর মুখের শব্দ ‘মাম্মা’ বা ‘পাপা নয়, বরং সেই পাপী শব্দটা। সাহিত্য,সিনেমা,থিয়েটারেও সে শব্দটার যথেচ্ছ ব্যবহার দেখলাম।
(নিক্সনের টেপ-এ যে সে-সব শব্দের অঢেল ব্যবহার ছিল যা ‘এক্সপ্লিসিট ডিলিটেড’বলে বার বার শোনা গেছে। প্রেসিডেণ্টও ঐ ভাষায় কথা বলত। ভাবুন!) চিত্র সমালোচনা পরে করছি তার আগে আমেরিকার সবচেয়ে প্রশংসনীয় যে বস্তু তার একটু তারিফ করে নিই। সেটা হল ব্যক্তি স্বাধীনতা। প্রেসের ও বক্তার এত বেশি স্বাধীনতা কোন দেশে নেই। ফ্রি স্পীচ এবং ফ্রি প্রেসের দেশ আমেরিকা। ভুললে চলবে না যে,দুজন সাংবাদিকই ওয়াটারগেটের ব্যাপারটা ফাস করে ও নিক্সনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। এখনও সিয়া (CIA) কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামী। প্রচুর অপকর্মের তালিকা প্রকাশিত হচ্ছে ও সিয়ার কর্তাব্যক্তি কল্বি সাহেব বিপদগ্রস্ত।
তারপরের লাইনটা শুনুন Expert in french and Greek Love বুড়বাক হয়ে ভাবছেন ‘ফ্রেঞ্চ’ আর ‘গ্রীক লাভ’আবার কি? লেহন ও পায়ুমৈথুনের নামান্তর হল এই দুটো ‘লাভ’-এর মানে। বিকারের জন্যেও বিজ্ঞাপন! সত্যি কলম্বাস, কি বিচিত্র এই দেশ। লেস ভেগাস হল মরুময় নেভেদা স্টেটে। জুয়া ও নাইট লাইফ ছাড়া এখানে বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদের খুব দ্রুত ব্যবস্থা আছে। ফলে কুইক্ ম্যারেজ ও ডিভোর্সের জন্যে প্রচুর আমেরিকান অন্যান্য অঞ্চল থেকে লেস ভেগাস ও রিও শহবে এসে থাকে। সুতরাং এখানে যত ক্যাসিনো আছে তার চেয়ে বেশি চ্যাপেল রয়েছে। পয়সা ও জীবনের দু’রকম জুয়ারই তীর্থক্ষেত্র আর কি?
এবার চলচ্চিত্র আলোচনায় আসি। পর্নোগ্রাফী আইনসিদ্ধ করার পর ডেনমার্কের মত যৌন-অপরাধের সংখ্যা সমাজজীবনে নাকি কমে গেছে। তবে আজকাল যৌনচিত্রগুলির জনপ্রিয়তাও একেবারেই কমে গেছে। আমি Deep Throat. Behind The Green Door, The Devil In Miss Jones এসব সুপারইিট পর্নোছবিগুলো দেখেছি। এ জাতের অন্যান্য আরও ৬-৭টি ছবি দেখেছি। কোথাও দশজনের বেশী দর্শক বসে থাকতে দেখি নি। তদুপরি কোথাও একজনও মহিলা দর্শক দেখি নি। অথচ বাইরে প্রত্যেক X মার্কা অশ্লীল ছবিঘরের সামনে বোর্ড টাঙানো আছে, Ladies Free। বুঝুন, মেয়েদের বিনি পয়সায় দেখাচ্ছে তবু একটিও মেয়ে আসছে না।
মনোবৈজ্ঞানিকরা বলেন যে ভিসুয়াল মেয়েদের মোটেই উত্তেজিত করে না,এছাড়া যৌনচিত্র মেয়েদের বড্ড ডিগ্রেডিড লাগে তাই ওরা দেখতে রাজী নয়। মেয়ে তো বাদ ছেলেদের ভিড়ও তো নেই। মানে পর্নোগ্রাফীর মৃত্যু আসন্ন এতে সন্দেহ নেই। শরীরের সার্কাসের আয়ু নেহাতই কম। কিন্তু এসব ছবির নায়িকারা সব এখন এক একজন তারকা বিশেষ। যে কোন আমেরিকান লিণ্ডা লাভলেস, মেরিলিন চেম্বারস্, জেভিয়েরা হলাণ্ডার বা মিস স্পিলভিন্কে এক ডাকে চেনে! এ তো গেল পর্নোছবির পাঁচালী। এছাড়া ফীচার ফিল্ম বা সামাজিক চিত্র দেখেছি অনেক।
যেমন Earth quake, Jaws, Towering Inferno, Tommy, Mandingo, God father2, French connection 2 all Capone, The Happy Hooker, Shampoo, Four Masketeers, Breakout, Funny Lady, Magnum Force, The Great Waldo pepper, At Long Last Love ও আরও গাদা গাদা হংকং তৈরি অধুনা জনপ্রিয় স্বর্গীয় ব্রুস লি’র কুংফু মার্কা ছবি। এত ছবি দেখে নিশ্চয়ই আমার বিশ্লেষণ করার অধিকার জন্মেছে। কি বিশ্লেষণ বলছি। চিন্তার দিক থেকে ওরা দেউলে হয়ে গেছে।
Earthquake, Jaws, Towering, Inferno আর Tommy সুপরহিট ছবি। এগুলো বিষয়বস্তুর জন্যে নয়, যান্ত্রিক কলানৈপুণ্যের জণ্যে জনপ্রিয় হয়েছে। যাকে ইংরেজীতে বলা হয়Technical Jugglary এসব বড়জাতের স্টান্ট ছবি ছাড়া কিছু নয়। Earthquake ছবিটির অপূর্ব Qudraphonic আবহ সঙ্গীতই মাথা খারাপ করে দেয়। মনে হয় যেন চিত্রগৃহের অভ্যন্তরে ভূমিকম্প হচ্ছে। কিন্তু এসব ওদের যন্ত্রশিল্পের উন্নতির পরিচয় দেয়। চারুকলার ক্ষেত্রে অগ্রসরের বিন্দুমাত্র পরিচয় দেয় না। বাকি ছবিগুলোর মূল মসলা হল সেক্স ও হিংসা।
নগ্নতা তো পুরনো টুপি, এখন দেহসঙ্গম ও রক্তপাতের, খুনখারাপীর বন্যা প্রতিটি ছবিতে।Mandingo তে শ্বেতরমণী নিগ্রো ক্রীতদাসের কাছে দেহদান করেছেন,Shambooতে মা ও মেয়ে দুজন একই পুরুষের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করছে, French Connection 2ও তে নায়ক হেকমেন কথায় কথায় খিস্তি করে যাচ্ছে, এ ছাড়া সব ছবিতে মারপিটের তো অন্তই নেই! গণ্ডগোলের কারণটা হল এই। ভদ্র,হৃদয়দ্রাবী ছবি দিয়ে টেলিভিশন চলচ্চিত্রের বাজার খারাপ করে দিয়েছে। চিত্রশিল্প এখন বাধ্য হয়ে অশ্লীল চিত্রজগতের ক্ষেত্রে ঢুকে পড়েছে।
![Las Vegas Billboards সফর সংকীর্তন [ ইউরোপ - আমেরিকা ] শচীন ভৌমিক 6 Las Vegas Billboards](https://sufifaruq.com/wp-content/uploads/2010/06/Las-Vegas-Billboards-1024x296.jpg)
বাঁচবার জন্যে সেক্সকে প্রচুর নগ্নরূপে দেখাতে লেগে গেছে। হিংসা-দ্বেষের স্টাণ্টে ভরে দিয়েছে বক্স অফিস সাফল্যের লোভে। সফল স্টাররা আজকাল নগ্ন ছবিতে নেমে তাদের কৌলিন্য প্রদান করেছেন। এ ধারার সুত্রপাত করেছেন মার্লন ব্রাণ্ডো। বার্নাডো বার্টু লুসী The Last Tango In paris ছবি করে প্রথম ১৯৭৩ সালে বাজার মাৎ করেন। তারপর এল Ex-orcistছবি। তারপর সবারই এখন চেষ্টা দুঃসাহসিক। ইদানীং যাস্ট জেকিন বলে এক ফরাসী ভদ্রলোকEmmanuelle ছবি করে পুরনো ট্যাঙ্গো-ফ্যাঙ্গোকে কাৎ করে দিয়েছেন।
‘ইমানুয়েল’ যৌনস্বাধীনতার কুতব মিনার। শুধু ফ্রান্সে ষাট লক্ষ ডলারের ওপর ব্যবসা করেছে এ ছবি। (কত টাকা হয় জানতে হলে ষাট লক্ষকে নয় দিয়ে গুণ করুন তাহলেই বুঝতে পারবেন!) God-father-এর ব্যবসা এর কাছে কিছু নয়। খুব সম্ভব Emmanuelle হল পৃথিবীর biggest hit নায়িকা সিলভিয়া কৃস্টাল তো এখন ওয়ার্লড সেক্স সিম্বল হয়ে গিয়েছে। মেরিলিন মনরোর পর এ স্থান ছিল র্যাকুয়েল ওয়েল্চের কবলে। তাকে সিলভিয়া সিংহাসনচ্যুত করেছে নিঃসন্দেহে।
যাই হোক,পশ্চিমী চলচ্চিত্র শিল্পের গতি ও প্রগতি কোন্দিকে তা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। হিংসা হচ্ছে ওদের সবচেয়ে শক্তিশালী অবলম্বন। তারপরই তালিকায় আসে যৌনস্বাধীন দৃশ্যাবলী। হিংসা যে থাকবে না সে কথা আমি বলছি না। যারা স্ট্যানলি কুবরিকের Clockwork Orange ছবি দেখছেন তারা জানেন যে মানুষের সক্রিয়া যে ক’টা রিপুর প্রয়োজন তার মধ্যে হিংসা অন্যতম। হিংসা যদি সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করে দেওয়া যায় তবে মানুষ তখন আর মানুষ থাকে না। সে তখন উদ্ভিদ মাত্র। আত্মরক্ষা বা আত্মজনরক্ষার ক্ষমতা লোপ পায় তার। সে সম্পূর্ণ মানুষের সংজ্ঞা নয়।
কথাটা খুবই যুক্তিসঙ্গত। সেজন্যে জাপানে অহিংসার পূজারী বৌদ্ধসন্ন্যাসীরা ‘ক্যারাটে’ (অস্ত্রহীন আত্মরক্ষা-মূলক যুদ্ধপ্রণালী) নামের যুদ্ধশাস্ত্রের জন্ম দিয়েছে। চলচ্চিত্রে হিংসার প্রাচুর্যের কারণ এর জনপ্রিয়তা। শিশুকালে থেকে পশ্চিমী মানুষরা ‘সুপারম্যান’ ‘টার্জানে’র ভক্ত হয়ে ওঠে। জেম্স বণ্ড,যা বক্স অফিস সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে তার এত জনপ্রিয়তার কারণও তাই। প্রতিটি মানুষ তার সহজাত রিপুর তাড়নায় বহু শত্রুনিধন ও বহুনারী সঙ্গমে ইচ্ছুক হয়ে থাকে। সংস্কার ও বিবেকের দংশনে সে নিজেকে নিবৃত্ত করে। কিন্তু জেম্স বণ্ড অনায়াসে দুমদাম শত্রুনিধন করে যায় আর যখন তখন মেয়ে নিয়ে বিছানায় গড়াগড়ি যায়। এ চরিত্র জনপ্রিয় হবে না?
কেন হবে? কেননা জেম্স বণ্ডসের এই সব হিংসাত্মক কার্য-কলাপের ও যৌন স্বাধীনতার কোন অপরাধবোধ মানে guilty complex নেই। কারণ এ সব কিছু সে করছে দেশকে বাঁচাবার জন্যে। দেশপ্রেমের এই গঙ্গায় তার অপরাধগুলো সব ধোয়া তুলসীপাতা হয়ে ওঠে। ফলে জেম্স বণ্ড সব মানুষের কাছে এক Utopian God বা বলতে পারেন ‘মহাগুরু’ লোক। জেম্স বণ্ডের সাফল্য দেখেই পশ্চিমী চিত্রজগতে আজ এত হিংসাত্মক ছবির হিড়িক।
য়েক বুদ্ধিমান পরিচালকের ওপর। তাঁরা হলেন -মাইক নিকল্স্, জন ফ্র্যাঙ্কমহাইমার, পিটার বোগডানোভীচ্, ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলো, জর্জ রয় হিল, কুবরিক। দেখা যাক, মুমুর্ষূ চিত্রজগৎকে এঁরা বাঁচাতে পারেন কি না।
চিত্রকলার আলোচনার ইতি টানি এবার। সফর সংকীর্তনেরই ইতি টানা উচিত জানি। আপনারা সবাই ‘বোর’ হচ্ছেন খুব। তবে মার্কিন জন-সাধারণের সেন্স অফ হিউমার মানে কৌতুকপ্রিয়তার উল্লেখ না করলে ওদের অপমান করা হবে। হাসতে ও হাসাতে পৃথিবীর কম জাতই ওদের মত নিপুণ। উদাহরণ দিচ্ছি। সানফ্রান্সিসকোর একটা সেক্স শপে ঢুকে দেখি মেয়েদের জন্যে ভাইব্রেটার সাজানো রয়েছে যার মাথায় চার্লস ব্রনসনের মাথা আঁকা,রবারের পূর্ণ সাইজের ডল আছে যার মূখ জেকলীন ওনাসিসিন মত,ছেলেদের প্রফেলেকটিক্ পাওয়া যায় যার মাথায় নিক্সনের মুণ্ড আঁকা।
লেস ভেগাসের দোকানে ছেলেদের টি শার্ট পাওয়া যায় যার সামনে লেখা Up YOURS, একটার পিছনে লেখা I LOST MY ASS AT LES VEGAS (মানে এখানের জুয়োতে আমার পাছার প্যাণ্টটাও গেছে।) ছেলেদের আণ্ডারওয়্যার পাওয়া যায় যার সামনে লেখা Ladies only বা Sleeping Tiger-রসিকতার নমুনা দেখছেন তো। আপনারা অনেকে হয়তো জানতে চাইবেন মেয়েদের আণ্ডারওয়্যারের সামনে কি লেখা থাকে। দোকান কিছু চোখে পড়ে নি। একটি মেয়েকে সাহস করে জিজ্ঞেস করে বসেছিলাম। সে কি জবাব দিয়েছিল জানেন? সে বলল-I would not know. I never wear any. তবেই বুঝুন। সত্যি কলম্বাস, বড়ই বিচিত্র দ্যাস এই আমেরিকা!
সফর সংকীর্তন [ ইউরোপ – আমেরিকা ] শচীন ভৌমিক
শচীন ভৌমিক কে আরও পড়ুন:
- ফর অ্যাডাল্টস ওন্লি – শচীন ভৌমিক (ভূমিকা) [ Sachin Bhowmick – For Adults Only ]
- কৌতুকী সংগ্রহ– শচীন ভৌমিক
- রুস্তমচাচা– শচীন ভৌমিক
- বেঞ্জী সাহেব– শচীন ভৌমিক
- পটের বিবি– শচীন ভৌমিক
- কর্নেল ব্রাগাঞ্জা– শচীন ভৌমিক
- ঝিনুক– শচীন ভৌমিক
- একটি আটপৌরে গল্প– শচীন ভৌমিক
- উর্দু শের– শচীন ভৌমিক
- গুজব– শচীন ভৌমিক
- পটের বিবি থেকে POT এর বিবি– শচীন ভৌমিক
- এনার্জি– শচীন ভৌমিক
- সফর সংকীর্তন– শচীন ভৌমিক
- কাগজ – শচীন ভৌমিক
- কুড়েমি – শচীন ভৌমিক
- স্ট্রিকিং– শচীন ভৌমিক
- বচন ফকিরের কল্কে – শচীন ভৌমিক
- একটি ডেড্ লেটারের ইতিহাস – শচীন ভৌমিক