বাংলার স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবী নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য শক্তি প্রয়োগ করা হলে তা বরদাস্ত করা হবে না। প্রয়োজনে বাঙ্গালী আরো রক্ত দেবে, জীবন দেবে, কিন্তু স্বাধিকারের দাবীর প্রশ্নে কোন আপস করবে না।
বাংলার মানুষ যাতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে, বরকত-সালাম-রফিক-শফিকরা নিজেদের জীবন দিয়ে সেই পথ দেখিয়ে গেছেন। বাহান্ন সালের রক্তদানের পর বাষট্টি, ছেষট্টি, উনসত্তরে-বারবার বাঙ্গালীকে রক্ত দিতে হয়েছে। কিন্তু আজও সেই স্বাধীকার আদায় হয়নি। আজও আমাদের স্বাধীকারের দাবী বানচাল করে দেবার ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার জন্য বাংলার ঘরে ঘরে প্রস্তুত হতে হবে-এবার চূড়ান্ত সংগ্রাম। আর এই সংগ্রামের আমরা গাজী হয়ে ফিরে আসতে চাই। চরম ত্যাগের এবং প্রস্তুতির বাণী নিয়ে আপনারা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েন, বাংলার প্রতিটি ঘরকে স্বাধিকারের এক একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করে দেখিয়ে দিন, বাঙ্গালীকে পায়ের নীচে দাবিয়ে রাখার শক্তি পৃথিবীতে কারো নেই।
স্বাধিকার আদায়ের জন্য প্রস্তুত হবার আহবান – বঙ্গবন্ধু
ষড়যন্ত্রকারী শোষকগণ দুষমণের দল বারবার বাঙ্গালীর রক্তে বাঙলার মাটি রঞ্জিত করেছে। যারা নির্মম শোষণে লুণ্ঠনে বাংলার মানুষকে ভিখিরিতে পরিণত করেছে, তারা আজও নিজেদের কুমতলব হাসিল করার চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
ষড়যন্ত্রকারীরা জেনে রাখুন, বাহান্ন সাল আর একাত্তর সাল এক নয়-ষড়যন্ত্রকারীদের বিষঁদাত কি করে ভাঙ্গতে হয় এখন আমরা তা জানি। কারো প্রতি আমাদের বিদ্ধেষ নেই, আক্রোষ নেই। আমরা চাই স্বাধিকার। আমরা চাই আমাদের মতই পাঞ্জাবী, সিন্ধি, বালুচ এবং পাঠানেরাও নিজ নিজ অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকুন। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, কেউ আমাদের উপর প্রভূত্ব করবে। ভাতৃত্বের অর্থ দাসত্ব নয়। সম্প্রীতি আর সংহতির নামে বাংলাদেশকে আর কলোনী বা বাজার হিসেবে ব্যবহার করতে দিব না। যারা সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর স্বাধীকারের দাবী বানচালের জন্য বাঙ্গালীকে ভিখিরি বানিয়ে ক্রীতদাস করে রাখছে তাদের উদ্দেশ্যে যে কোন মূল্যে ব্যর্থ করে দেওয়া হবে।
ভাইয়েরা আমার, বোনেরা আমার-
সামনে আমাদের কঠিন দিন। আমি হয়ত আপনাদের মাঝে নাও থাকতে পারি। মানুষকে মরতেই হয়। জানিনা, আবার কবে আপনাদের সামনে এসে দাড়াতে পারব। তাই আজ আমি আপনাদের এবং বাংলার সকল মানুষকে ডেকে বলছি, চরম ত্যাগের জন্য প্রস্তুত হন-বাংলার মানুষ যেন শোষিত না হয়, বঞ্চিত না হয়, বাঙ্গালী যেন আর অপমানিত লাঞ্চিত না হয়। দেখবেন, শহীদের রক্ত যেন বৃথা না যায়।
যতদিন বাংলার আকাশ-বাতাস, মাঠ-নদী থাকবে, ততদিন শহীদরা অমর হয়ে থাকবে। বীর শহীদদের অতৃপ্ত আত্মা আজ দুয়ারে দুয়ারে ফরিয়াদ করে ফিরছে বাঙ্গালী তোমরা কাপুরুষ হইওনা, চরম ত্যাগের বিনিময়ে হলেও স্বাধীকার আদায় কর। বাংলার মানুষের প্রতি আমার আহ্বান-প্রস্তুত হোন। স্বাধীকার আমরা আদায় করবই।
সংগ্রহ-মুজিবুরের রচনা সংগ্রহ
আরও দেখুন: