মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ১০টি বিশেষ উদ্যোগ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার অঙ্গীকার নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।
তৃতীয় মেয়াদে ২০১৪ সালে সরকার গঠনের পর দেশের সকল মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্তি, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়কে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়। একই সাথে জনগণের দোরগোড়ায় ডিজিটাল সেবা পৌঁছানো, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো, পরিবেশ সুরক্ষা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোট দশটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ১০টি বিশেষ উদ্যোগ

কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাবকালে বিশ্বজনীন নানামুখী অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সরকারের নিরন্তর প্রচেষ্টায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.২৪%, যা এশিয়ায় সর্বোচ্চ। একই সময়ে মাথাপিছু আয় ২০৬৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, “আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে- এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন।” বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দশটি বিশেষ উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন। এই উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ ও ২০৪১-এর মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
উদ্যোগ-১ : আমার বাড়ি আমার খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক
♦ গ্রামের দরিদ্র মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প আজ একটি বিপ্লবে পরিণত হয়েছে।
♦ এ প্রকল্পের ভিশন হলো নিজস্ব পুঁজি গঠন ও বিনিয়োগে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও জীবিকায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসন ও টেকসই উন্নয়ন।
♦ “আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পটির ১ জুলাই ২০১৬ পর্যন্ত অংশ ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’ নামে যাত্রা শুরু করেছে এবং বর্তমান চলমান অংশ সমাপ্তির পরও প্রকল্পের বাকি অংশের সদস্য ও সম্পদ বর্ণিত ব্যাংকে স্থানান্তরিত হবে। এ ব্যাংকের ৪৯% অংশের মালিক প্রকল্পের উপকারভোগীগণ।
♦ এ উদ্যোগের ফলে প্রকল্পভুক্ত পরিবারের বার্ষিক আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রকল্প এলাকায় নিম্ন আয়ের পরিবারের সংখ্যা ১৫% থেকে হ্রাস পেয়ে ৩% হয়েছে।
উদ্যোগ-২ : আশ্রয়ণ প্রকল্প

♦ ঘূর্ণিঝড় ও নদী ভাঙনে ছিন্নমূল অসহায় পরিবারের পুনর্বাসন আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য।
♦ # জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘূর্ণিদুর্গত মানুষের জন্য নোয়াখালীতে (বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার অংশ) “গুচ্ছগ্রাম গড়েছিলেন। একই দৃষ্টান্ত সামনে রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭-এর কক্সবাজার সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে গৃহহীন মানুষের জন্য আশ্রয়ণ (প্রকল্প) গড়ে তোলেন।
♦ স্থানীয় প্রশাসন এবং সশস্ত্র বাহিনীর যৌথ সহায়তায় গড়ে উঠেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামো।
♦ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ ও প্রশিক্ষণদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তোলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ।
উদ্যোগ-৩: ডিজিটাল বাংলাদেশ
♦ # জনগণের দোরগোড়ায় অনলাইনে রাষ্ট্রীয় সেবা পৌঁছানো এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য- যাতে ভোগান্তিবিহীন, দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছতার সাথে স্বল্পতম সময়ে জনগণের কাছে সেবা পৌঁছানো যায়।

♦ মোবাইল সেবা, ইন্টারনেট সেবা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে পৌঁছানো এবং সরকারি যাবতীয় তথ্য ও সেবাকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জনগণের কাছে তুলে ধরা এ উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য।
উদ্যোগ-৪: শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি
♦ বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। তাঁর উদ্যোগে যুদ্ধবিধ্বন্ধ স্বাধীন বাংলাদেশে ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। এই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যার সুফল লাভ করছে শিক্ষার্থীরা।

♦ এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য হচ্ছে স্কুলগামী শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়ে আনয়ন মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠান মেয়েদের বিনাবেতনে অধ্যয়নের সুযোগ প্রদান, মেয়েদের শিক্ষা সহায়তা উপবৃত্তি প্রদান, সকল শ্রেণির মেধাবী হামহাত্রীদের শিক্ষা সহায় বৃত্ত প্রদান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয়করণ করা। ইতোমধ্যে আইটি নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনসহ শ্রেণিকক্ষসমূহে মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিতকরণ করা হয়েছে।
♦ প্রতিবছর ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে এবং এর ফলে দেশে শিক্ষার হার ৭৩.৯১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাস্তবায়নাধীন “বিশেষ এলাক সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত)” শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি ও উপকরণ বাবদ এ পর্যন্ত ৫৪.৮৩ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
উদ্যোগ-৫: নারীর ক্ষমতায়ন
♦ সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দুর করে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি, পারিবারিক ও সামাজিক সিদ্ধান গ্রহনে নারীর সম্পৃক্ততা, মেয়েদের বিনাবেতনে অধ্যয়নের সুযোগ প্রদান, মেয়েদের শিক্ষা সহায়তা উপবৃত্তি প্রদান, সকল শ্রেণির মেধাবী হামহাত্রীদের শিক্ষা সহায় বৃত্ত প্রদান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয়করণ করা। ইতোমধ্যে আইটি নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনসহ শ্রেণিকক্ষসমূহে মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিতকরণ করা হয়েছে।
♦ নারীর সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১’, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা-২০১৩, ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) আইন-২০১৪, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ ইত্যাদি ।
♦ দেশব্যাপী ১২ হাজার ৯৫৬টি পল্লী মাতৃস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মা ও শিশুর যত্নসহ যাবতীয় বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ ও সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করা হচ্ছে।

♦ বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে ৬ মাসে উন্নীত করা হয়েছে।
♦ জনজীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে জেন্ডার রেসপনসিভ বাজেট প্রণয়ন শুরু করে।
উদ্যোগ-৬: ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ
♦ জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং দেশের আর্থ-সামাজিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো এ কর্মসূচির লক্ষ্য।

♦ ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বে এসেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধন করেন। তার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলে দেশের সর্বত্রই এখন বিদ্যুতের আলো পৌঁছে গেছে।
♦ প্রচলিত পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সৌরবিদ্যুৎ, উইন্ডমিল ও বায়োগ্যাস থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।
♦ দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হতে যাচ্ছে পরমাণু বিদ্যুতের উৎপাদন
উদ্যোগ-৭ : কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য
♦ গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই এ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য।
♦ সন্তানসম্ভবা মায়েদের মাতৃত্বকালীন যাবতীয় সেবা নিশ্চিত করা, প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার সকল ধরনের সেবা প্রদান করা, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন এবং নতুন বিবাহিত দম্পতি ও সন্তানসম্ভবা মায়েদের নিবন্ধিত করা, মা ও শিশুর খাদ্য ও পুষ্টির বিষয়ে পরামর্শ প্রদান এবং জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা বিষয়ে পরামর্শ প্রদান এবং উন্নততর চিকিৎসার জন্য উপজেলা ও জেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
♦ গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে সারা দেশে ১৩০০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করে প্রতি ৬০০০ মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।
♦ মাতৃমৃত্যুর অনুপাত প্রতি লক্ষে ১৯৪ থেকে ১৬৯-এ হ্রাস পেয়েছে এবং গড় আয়ু ৭২.৩ বছরে উন্নীত হয়েছে ।

উদ্যোগ-৮: সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি
♦ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পরিচালিত বর্তমান সরকারের সবধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মূল লক্ষ্যই হলো দারিদ্র্য বিমোচন। ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের নীতি- কৌশল গ্রহণ করায় বিগত দশকে দেশের অর্থনীতির গতি ত্বরান্বিত হওয়ার পাশাপাশি ক্রমাগতভাবে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে।
♦ খানা জরিপ অনুযায়ী ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সময়কালে দারিদ্র্যের হার শতকরা ৩১.৫ ভাগ থেকে হ্রাস পেয়ে শতকরা ২৪.৩ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হার শতকরা ১৭.৬ ভাগ থেকে কমে হয়েছে শতকরা ১২.৯ ভাগ। সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাংলাদেশ অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২০ অনুযায়ী দারিদ্র্য হ্রাসের এই ধারা অব্যাহত থাকায় ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশে এবং অতি দারিদ্র্যের হার ১০.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
♦ উন্নয়নশীল অর্থনীতি থেকে উত্তরণের পর্যায়ে পুঁজি গঠনের কারণে সচরাচর ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকে। উন্নয়নের এ পর্যায়ে সমাজের মূল স্রোতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা যে-কোনো দেশের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে তাঁর দশটি অগ্রাধিকার কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে দেশের আপামর জনগণের প্রতি তিনি অপরিসীম দায়িত্ববোধ এবং যথার্থ প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছেন। এক হিসেবে দেখা গেছে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ না করলে দারিদ্র্যের হার অন্তত শতকরা ১.৫ ভাগ বেশি হতো।
♦ ২০০৯ সাল থেকে সরকার ক্রমাগতভাবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। বর্তমান অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে পরিচালিত ১১৯টি কার্যক্রমে জিডিপির শতকরা ৩.০১ ভাগ অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এ কর্মসূচিগুলোতে দারিদ্র্য বিমোচনকে একদিকে যেমন প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে তেমন

ভাতা প্রাপ্তদের কর্মবিমুখতা এড়াতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কর্মসূজনকে। এছাড়াও এসব কর্মসূচিতে আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাসের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক সমতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। সর্বোপরি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংক্রান্ত সকল কর্মকাণ্ডের কার্যকর সমন্বয় এবং এর মাধ্যমে দ্রুততার সাথে দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার ২০১৫ সালে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা নীতি-কৌশল (National Social Security Strategy, NSSS) করেছে।
জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা নীতি-কৌশলে জীবনচক্রভিত্তিক সামাজিক নিরপত্তা কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে শুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, জীবনচক্রভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ করা হলে দারিদ্র্যের হার আরও শতকরা ৪.৭ ভাগ কমানো সম্ভব। এ কারণে সরকার ক্রমান্বয়ে জীবনচক্র ভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
উদ্যোগ-৯: বিনিয়োগ বিকাশ
♦ বাংলাদেশ এক বিপুল সম্ভাবনার দেশ। অতীতে এ দেশের সৌন্দর্য এবং সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আরব ও ইউরোপ থেকে বণিকেরা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এ দেশে আসত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নিয়েই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বেশকিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
♦ বিদ্যুৎ, আইসিটি এবং যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন বিনিয়োগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, তৃতীয় সমুদ্রবন্দরসহ ছোট-বড় অসংখ্য অবকাঠামো। নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
♦ মহেশখালীতে দেশের প্রথম ২টি (প্রতিটি ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন) ভাসমান LNG টার্মিনাল স্থাপন কার্যক্রম ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে।

♦ মহাসড়কসমূহ চার লেনে উন্নীত হয়েছে।
♦ ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
♦ গত ১০ বছরে ৩৩০ কি.মি. নতুন রেললাইন নির্মাণ ও ১১৩৫ কি.মি. সংস্কার / পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।
♦ বাংলাদেশের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে দেশের অভ্যন্তরে এবং আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহণের ব্যবস্থা সহজতর হয়েছে।
♦ চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর অত্যাধুনিক সমুদ্রবন্দর হিসেবে গড়ে উঠেছে।
♦ দেশের ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ১৩টিতে শিল্প উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং আরও ১৫টি নির্মাণাধীন রয়েছে।
♦ বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে ২০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে।
♦ স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক বিনিয়োগ ১০০ কোটি মার্কিন ডলার অতিক্রম করে, ২০১৫ সালে তা ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায় এবং
♦ বর্তমানে তা ৩৮৯ কোটি মার্কিন ডলার।
উদ্যোগ-১০: পরিবেশ সুরক্ষা
♦ প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, গবেষণা, উদ্ভিজ্জ জরিপ এবং বনজ সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে টেকসই পরিবেশ ও বন নিশ্চিতকরণ এ উদ্যোগের লক্ষ্য।

♦ বিজ্ঞানভিত্তিক ও লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জনগোষ্ঠীর বসবাস উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে মোট বনভূমির পরিমাণ সম্প্রসারণ, বন ও বনজ সম্পদের উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও শনাক্তকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবেশদূষণ রোধ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং টেকসই পরিবেশ উন্নয়নই এ কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
♦ বন অধিদপ্তর থেকে ২০২০ সালে প্রকাশিত তথ্য কণিকা অনুসারে ২০০৫-০৬ সালের শতকরা ৭-৮ ভাগ থেকে সরকার নিয়ন্ত্রিত বনভূমির বিস্তার দেশের মোট আয়তনের ১৫.৫৮% এ উন্নীত হয়েছে।
♦ সামাজিক বনায়ন, সড়ক পার্শ্ববর্তী গৃহস্থালি বৃক্ষরাজি হিসেবে নিয়ে দেশের মোট আয়তনের ২২.৩৭% বৃক্ষাচ্ছাদন রয়েছে।
♦ পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক প্রোগ্রাম (UNEP) হতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৫ সালে Champions of the earth’ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
উল্লিখিত উদ্যোগসমূহ একদিকে জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করছে, অন্যদিকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবাসমূহ সহজীকরণপূর্বক জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরে বৈষম্য দূরীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়া বিনিয়োগবান্ধব সেবাসমূহের মাধ্যমে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মধ্য দিয়ে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও দারিদ্র্যের হার হ্রাস পাচ্ছে। উপরন্তু, জলবায়ু ও পরিবেশ উন্নয়ন এবং প্রতিবেশ সংরক্ষণ বর্ণিত উদ্যোগে প্রাধান্য পেয়েছে, যা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে উত্তীর্ণের লক্ষ্যে এ সকল উদ্যোগ চালকের ভূমিকা পালন করছে।
আরও দেখুনঃ