বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস [ Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Year 1969, March ]

বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস – সংগ্রহ

বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস

১৯৬৯ সালের ১০ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ

এক চরম সঙ্কটের প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে সমগ্র জাতির ভিত্তিমূল আজ প্রকম্পিত। দেশবাসীকে আমরা যাহারা ভালবাসি, আর পাকিস্তানপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অপরিসীম মাশুল যোগানোর সে কাহিনী যাঁহাদের স্মৃতি পথে আজও ভাস্বর, জাতীয় সংকটের মুখোমুখি দাঁড়াইয়া তাঁহাদের সকলেই আজ উদ্বেগাকুল। এ সংকটের নিরসন করিতে হইলে আজ সর্বাগ্রে প্রয়োজন ইহার প্রকৃতি অনুধারনের, তাহার মূল কারণ অনুসন্ধানের।

কোন সব মৌলিক সমস্যাকে কেন্দ্র করিয়া দেশে আজ গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়া গেল, তাহা নির্ণয় করিয়া অবিলম্বে তাহার প্রতিকারের ব্যবস্থা করিতে যদি আমরা ব্যর্থ হই, তবে তাহার চাইতে বিপর্যয়কর আর কিছু হইতে পারে না। বিগত ২১টি বছর যাবৎ এসব সমস্যাকে এড়াইয়া আসা হইয়াছে। আজ সময় আসিয়াছে যখন এসব সমস্যার যথাযথ মোকাবিলা আমাদিগকে করিতে হইবে।

১৯৬৯ সালের ১০ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান | Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman

জাতীয় জীবনের এইসব সমস্যার প্রশ্নে বিস্তারিত একটি সমাধান আমাদিগকে খুঁজিয়া বাহির করিতেই হইবে। ইহা আমার স্থিও বিশ্বাস। কেননা, পরিস্থিতি আজ সুস্পষ্ট রকমে অতীব গুরুতর। তাই আপাতমধুর বা আধাবাধি কোন ব্যবস্থার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান কোনক্রমেই সম্ভব নহে। এই প্রতীকিই আমাকে আজ জাতীয় জীবনের মূল সমস্যাগুলির বিস্তারিত একটি সমাধান নির্দেশের তাগিদ দিতেছে।

[ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস [ Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Year 1969, March ] ]

জাতীয় জীবনের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কণ্ঠে যেসব দাবি-দাওয়া আজ ধ্বনিত হইতেছে, যত্ন সহকারে সেগুলি পরীক্ষা করিলে দেখা যাইবে যে, উহার মূলে মাত্র তিনটি মৌল প্রশ্ন অবলুপ্তি।

দ্বিতীয়টি, সীমাহীন অর্থনৈতিক অন্যায় অবিচার-যাহার ধকল পোহাইতে হইতেছে এদেশের শ্রমিক, কৃষক, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ, মোটকথা আপামর জনসাধারণকে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে বেধড়ক ব্যয়জনিত ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মাশুল যোগাইতে হইতেছে যেখানে এদেশের কোটি কোটি নিরন্ন নিঃসম্বল মানুষকে, সেক্ষেত্রে যে উন্নয়নের সুফল ক্রমবর্ধমান হারে কেন্দ্রীভূত হইতেছে মাত্র গুটিকয় ভাগ্যবান পরিবারের হাতে-যাঁহারা আবার দেশের একই অঞ্চলের বাসিন্দা। তৃতীয় কারণটি হইল, পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধাণের প্রতি সমানে অবিচার করা হইতেছে, এই উপলদ্ধি।

বর্তমান শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ কার্যকর রাজনৈতিক ক্ষমতার অনুপস্থিতির দরুণ বরাবরই তাদের মৌলিক স্বার্থ ক্ষুন্ন হইতে দেখিয়াছে। বর্তমান শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে পশ্চিম পাকিস্তানের সাবেক সংখ্যালঘু প্রদেশগুলিরও এই একই অবস্থা।

[ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস [ Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Year 1969, March ] ]

জনসাধারণের রাজনৈতিক অধিকার বিলুপ্তির প্রশ্নটি আজ কয়েক দফা সুস্পষ্ট দাবির আকারে পাইয়াছে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজের ১১-দফা ও আওয়ামী লীগের ৬-দফা কর্মসূচীতে। আইন পরিষদের সার্বভৌমত্বের নীতিভিত্তিক পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের যে দাবি তারা উত্থাপন করিয়াছে, তাহাতে আইন পরিষদে জনসংখ্যার ভিত্তিতে সকল ইউনিটের প্রতিনিধিত্ব এবং সার্বজনীন বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সরাসরিভাবে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুপারিশ স্থান পাইয়াছে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের অবিচারের প্রশ্নটিরও প্রতিফলন ঘটিয়াছে ছাত্র সমাজের রচিত ১১-দফা কর্মসূচীতে। এ প্রশ্নে তাহারা দেশের অর্থনৈতিক ও শিক্ষা পদ্ধতির পুনর্গঠনের জন্যও সুস্পষ্ট দাবী উত্থাপন করিয়াছে। আমার দলের ৬-দফা কর্মসূচীতেও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার সুস্পষ্ঠ স্বীকৃতি রহিয়াছে। আমার দলের ৬-দফা কর্মসূচীতে আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের যে রূপরেখা নির্দেশ করা হইয়াছে তাহা লইয়া আমাদের এত চাপাচাপির কারণ হইল এই যে, আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনকে আমরা অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও ফলপ্রসু অর্থনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত বলিয়া মনে করি।

[ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস [ Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Year 1969, March ] ]

৬-দফা ও ১১-দফা কর্মসূচীতে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের বিধান রাখিয়া ফেডারেশন গঠনের যে দাবী রাখা হইয়াছে, পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল ও ইউনিটের প্রতি সুবিচারের প্রশ্নই তাহার ভিত্তি। পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিটের বিলুপ্তি ও সাব-ফেডারেশন গঠনের দাবির ভিত্তিও এই একই।

জাতীয় জীবনের এইসব মারাত্মক সমস্যার প্রশ্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করিয়াছে। শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পরিবর্তন সাধনের অতি আবশ্যক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ বরাবরই একমত ঃ

ক. ফেডারেল পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।

খ. সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার ভিত্তিক প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা।

নিম্নলিখিত প্রশ্নসমূহেও সংগ্রাম পরিষদের সদস্যদের মধ্যে মোটামুটি মতৈক্য পরিলক্ষিত হইয়াছে ঃ

ক. পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট ভাঙ্গিয়া দিয়া একটি সাব ফেডারেল গঠন।

খ. দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে পুর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের অধিকার মঞ্জুর। সংগ্রাম পরিষদ একমত হইয়া ইহাও স্থির করিয়াছে যে, বর্তমান সংকটের মূল কারণ সমূহ নিরসনের ফলপ্রসু ও স্থায়ী ব্যবস্থার জন্য ভিন্ন কোন মত ও পথের সন্ধান দিতে পারেন বলিয়া মনে করিলে পরিষদের সদস্য বর্গ তাহার গোলটেবিল বৈঠকে উত্থাপন করিতে পারিবেন।

[ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস [ Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Year 1969, March ] ]

যেহেতু জাতীয় জীবনের এইসব সদস্যার একটি পাকাপাকি সমাধান খুঁজিয়া বাহির করিবার জন্য আমরা এখানে সমবেত হইয়াছি, সেইহেতু আমি পূর্ণ আন্তরিকতার সহিত বিশ্বাস করি যে, পাকিস্তানকে সত্যিকার শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ ও বলিষ্ট রাষ্ট্রে পরিণত করিতে হইলে ৬দফা কর্মসূচিতে বর্ণিত রূপরেখা অনুযায়ী ফেডারেল আইন পরিষদে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচন ও পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন মঞ্জুর করিয়া শাসনতন্ত্রের প্রয়োজনীয় সংশোধন হওয়া যে দরকার, এই বৈঠকে সমাগত প্রতিনিধিবৃন্দকে তাহা হৃদয়ঙ্গম করাইবার জন্য বিষয়টির এখানে অবতারণা করা আমি আমার আবশ্যক কর্তব্য বলিয়া মনে করি।

এখানে আমি বলিয়া রাখিতে চাই যে, পাকিস্তানের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামে যাঁহারা শরীক ছিলেন, আওয়ামী লীগ তাঁহাদেরই দল। ইহার প্রতিষ্ঠাতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানপ্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। কিছুটা গর্বে সহিতই আমি আজ বলিব যে, এই মনিষীরই সুযোগ্য নেতৃত্ব আমি ও আমার সহকর্মীগণ পাকিস্তানসংগ্রামের পুরোভাগে থাকিয়া সংগ্রাম করিয়াছি। আজ আমি এখানে যেসব প্রস্তাব উত্থাপন করিতেছি, পাকিস্তানকে রক্ষা করা ও আরো শক্তিশালী করিয়া গড়ে তুলিবার জন্য একান্ত করিয়াই তাহা গ্রহণ করার প্রয়োজন রহিয়াছে বলিয়া আমি বিশ্বাস করি। এই বিশ্বাসই আমার এ প্রস্তাবের মূল উৎস।

[ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস [ Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Year 1969, March ] ]

‘এক ব্যক্তি এক ভোট’- গণতন্ত্রের এই আদ্য নীতি হইতেই জন্ম লইয়াছে ফেডারেল আইন পরিষদে জনসংখ্যার ভিত্তিতে আমাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের দাবিটি। জাতীয় এই সংস্থাটিতে ৬-দফা কর্মসূচীতে বর্ণিত বিধান মতে কেবলমাত্র জাতীয় সমস্যাবলীই বিবেচনার জন্য উপস্থিত হইবে। সেই কারণে, জাতীয় পরিষদের সদস্যবর্গের দায়িত্ব হইবে সবকিছু জাতীয় দৃষ্টিকোন হইতে বিচারের। সেইহেতু আঞ্চলিক ভিত্তিতে সেখানে কোন নির্বাচন হইবে না। তদুপরি, আইন পরিষদে জাতীয় দলগুলির প্রতিনিধিত্ব থাকিবে বিধায় সেখানে দলগতভাবে ভোটা-ভোটি সুনিশ্চিৎ হইবে-আঞ্চলিক ভিত্তিতে নয়।

বিগত একুশ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে বিচার করিলে এই সত্যই প্রতিভাত হয় যে, জাতীয় পরিষদে সব সময় দল ভিত্তিতেই ভোটাভোটি হইয়া আসিয়াছে, আঞ্চলিক ভিত্তিতে নয়। দেশের দুই অংশের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে সংখ্যা-সাম্যের নীতিটিই বরং এই ভ্রান্ত ধারণাকে ভিত্তি করিয়া গড়িয়া উঠিয়াছে যে, ফেডারেল আইন পরিষদের প্রতিনিধিগণ আঞ্চলিক ভিত্তিতে ভোট দিতে পারেন। এদিক দিয়া বিচার করিলে দেখা যাইবে যে, সংখ্যা -সাম্য নীতিটিই জাতীয় রাজনীতিতে আঞ্চলিকতাবাদকে একটি গুরুতর কার্যকরণ হিসেবে অহেতুক গুরুত্ব দিয়া আসিতেছে।

[ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস [ Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Year 1969, March ] ]

বিগত একুশ বছরের ইতিহাসের অভিজ্ঞতাই হইল এই যে, বড় রকমের জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নের জনসংখ্যার দিক দিয়া সংখ্যাগরিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও পূর্ব পাকিস্তানসব সময়ই তাহার আঞ্চলিক স্বার্থকে চাপা দিয়া গিয়াছে। একথা কাহাকেও স্মরণ করানোর প্রয়োজন পরেনা যে, পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি ছিলেন ৪৪জন আর পশ্চিম পাকিস্তানের মাত্র ২৮ জন। এতদসত্ত্বেও  তাহাদের এই সংখ্যাধিক্যকে তারা কখনও তাহাদের কোন আঞ্চলিক স্বার্থে কাজে লাগায় নাই। পক্ষান্তরে পূর্ব পাকিস্তানহইতেই ছয়জন পশ্চিম পাকিস্তানীকে গণ-পরিষদের সদস্য নির্বাচিত করা হইয়াছিল। সংখ্যাগুরু হইয়াও পূর্ব পাকিস্তানকেবল আইন পরিষদেই নহে বরং জীবনের সর্বক্ষেত্রেই সংখ্যাসাম্য নীতি মানিয়া লইয়াছিল।

আজ দুঃখের সঙ্গে বলিতে হইতেছে যে, জাতীয় পরিষদে প্রতিনিধিত্বের বেলায় এই সংখ্যাসাম্য নীতি বাস্তবায়িত করিতে কালমাত্র বিলম্ব না হইলেও বে-সামরিক, বৈদেশিক ও সামরিক চাকরী-বাকরীসহ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অন্য কোন ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত হওয়ায় ফেডারেল রাজধানী ও সামরিক হেড কোয়ার্টারসমূহের কোথাও পূর্ব পাকিস্তানের কোন পাত্তাই নাই বলা চলে। ইহার অর্থ দেশরক্ষা ও বে-সামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা বাবদ প্রতি বছর যে ২৭০ কোটি টাকা অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরারের সমগ্র বাজেটের শতকরা যে ৭০ ভাগ ব্যয় হইতেছে তাহার প্রায় গোটাটাই ভোগ করিতেছে পশ্চিম পাকিস্তান।

এতদসত্ত্বেও আমাদের পশ্চিম পাকিস্তানী ভাইরা যদি আইন পরিষদে জনসংখ্যার ভিত্তিতে আমাদের আসন দিতে গররাজী হন, তাহা হইলে পূর্ব পাকিস্তানীগণ ফেডারেল রাজধানী ও সামরিক হেড কোয়ার্টারসমূহ পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তরের জন্য জিদ ধরিতে বাধ্য হইবে।

[ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস [ Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Year 1969, March ] ]

কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচনের দাবীতে আপত্তি না করিয়া আমাদের পশ্চিম পাকিস্তানী ভাইা যদি তাহাদের পূর্ব পাকিস্তানী ভাইদের প্রতি তাহাদের আস্থার পরাকাষ্ঠা দেখাইতে পারেন, তাহা হইলে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে সম্পর্ক দূরীভূত করার ব্যাপারে তাহাই হইবে একটি সত্যিকারের পদক্ষেপ। এ পদক্ষেপের সূবর্ণ ফসল হিসাবে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণের মধ্যে গড়িয়া উঠিবে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের সুগভীর যোগসূত্র।

দেশের যাবতীয় সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান খুঁজিয়া পাইতে হইলে ৬-দফার প্রতিপাদ্যমতে ফেডারেল পরিকল্পনা লওয়ার ব্যাপারটি একটি আবশ্যক পূর্বশর্ত হিসেবে গণ্য করিতে হইবে। দৃঢ়তার সহিত পুনরায় আমি বলিতে চাহি যে, ৬-দফা কর্মসূচীর মর্মবাণীই হইল এই যে, পাকিস্তানকে ১২ কোটি মানুষ অধ্যুষিত একটি একক, ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসাবে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপিত করিতে হইবে। এই লক্ষ্য হাসিল করা সম্ভব তখনই যখন কেন্দ্রের হাতে কেবল দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা-এই তিনটি বিষয় রাখার ব্যবস্থা করা হইবে।

একটি শক্তিশালী ও বলিষ্ঠ পাকিস্তানগড়িয়া তুলিবার একই কারণে ভৌগলিক অবস্থানের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া দেশের দুই অঞ্চলকে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনাধিকার মঞ্জুর করিতে হইবে, যাহাতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সর্বব্যাপারে তাহাদের পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকে।

[ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস [ Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Year 1969, March ] ]

সমাজ-ব্যবস্থাকে সুষম খাতে ঢালিয়া সাজাইতে হইলে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রটিকে অবিচার অনাচার মুক্ত করার অনিবর্যতা ফুটাইয়া তুলিবার মত জোরাল ভাষা আমার নাই। ছাত্রদেও যে ১১-দফা কর্মসূচীর প্রতি আমি সমর্থন জানাইয়াছি, তাহাতে দেশের অর্থনৈতিক ও শিক্ষা পদ্ধতি পুনর্বিন্যাসের যথোপযুক্ত প্রস্তাব রহিয়াছে। এ দাবী তাহারা তুলিয়াছে অর্থনৈতিক সুবিচারের নিশ্চয়তা বিধানেরই মানসে।

মানুষে মানুষে অঞ্চলে অর্থনৈতিক সুবিচারের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য যেসব শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তণ প্রয়োজন, আমি অবশ্য এক্ষণে তাহার মধ্যেই আমার বক্তব্য সীমাবদ্ধ রাখিব।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রীভূত হওয়ায় দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবিচারজনিত অবস্থার অতি দ্রুত অবনতি ঘটিতে ঘটিতে আজ এক সংকটজনক পর্যায়ে উপনীত হইয়াছে। এদেশের বহুকথিত বাইশ পরিবারের কাহিনীর চর্বিত চর্বণের আর প্রয়োজন আছে বলিয়া আমি মনে করি না। ক্ষমতার অলিন্দে অবাধ প্রবেশের যে ছাড়পত্রের তাঁহারা অধিকারী, তাহাতে দেশের সম্পদ কুক্ষিগত করিয়া দেশ বিদেশে তাঁরা প্রচুর খ্যাতি অর্জন করিয়াছেন।

একচেটিয়া কার্টেলবাদ সৃষ্টি করিয়া দেশের বুকে তাঁহারা এমনই এক পুজিবাদী ব্যবস্থা পত্তন করিয়াছেন যাহাতে সুবিধাভোগী মুষ্টিমেয় ও শ্রমিক কৃষক শ্রেণীর অগণিত মানুষের মধ্যে সীমাহীন ব্যবধানের দুর্লংঘ্য প্রাচীর গড়িয়া উঠিয়াছে। পূর্ব পাকিস্তানও পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যালঘু প্রদেশ সমূহের প্রতি চরম অবিচার করা হইয়াছে।

[ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস [ Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Year 1969, March ] ]

পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে মাথা পিছু আয়ের বৈষম্যের কথা সুবিদিত। ১৯৫৯-৬০ সালেই প্লানিং কমিশনের প্রধান অর্থনীতিবিদদের হিসাবে বলা হয় যে, উভয় অঞ্চলের মাথাপিছু আয়ে প্রকৃত বৈষম্যের পরিমান শতকার ৬০ ভাগ। প্লানিং কমিশনের পরিকল্পনার মধ্যে পর্যালোচনা এবং অন্যান্য সাম্প্রতিক দলিলে দেখা যায় যে, মাথা পিছু প্রকৃত আয়ে বৈষম্য দ্রুত বৃদ্ধি পাইতেছে বলিয়া বর্তমানে তাহা শতকা ৬০ ভাগেরও অধিক। এছাড়া, উভয় অঞ্চলে সাধারণ অর্থনৈতিক কাঠামো ও বহিঃ কাঠামো, কর্মসংস্থানের হার, শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা এবং চিকিৎসা ও কল্যাণ সার্ভিসের বৈষম্য রহিয়াছে। এখানে কয়েকটি নজির দেখানো যাইতে পারে ঃ

১.            পূর্ব পাকিস্তানের চাইতে পশ্চিম পাকিস্তানের বিজলী উৎপাদন ক্ষমতা ৫/৬ গুন বেশী।

২.            ১৯৬৬ সালে হাসপাতালের বেড সংখ্যা পূর্ব পাকিস্তানে ছিল যেখানে ৬৯০০ সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল ২৬,২০০। ১৯৬১-১৯৬৬, এই সময়কালে পশ্চিম পাকিস্তানে ৪৮টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপন করা হয়। পক্ষান্তরে পূর্ব পাকিস্তানে মাত্র ১৮ টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপিত হয়। এছাড়া প্রাপ্ত সম্পদের বৈষম্য আরো বেশী।

পূর্ব পাকিস্তানের সহিত বৈদেশিক মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানের পাচার করা ছাড়াও বৈদেশিক ঋণের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশী পশ্চিম পাকিস্তানে বিনিয়োগ করা হইয়াছে। ইহার ফলে গত ২০ বৎসরে পশ্চিম পাকিস্তানের রফতানি লব্দ আয় মাত্র ১ হাজার ৩ শত ৩৭ কোটি টাকা হইলেও পশ্চিম পাকিস্তান৩ হাজার ১ শত ৯ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য আমদানী করিতে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে এই সময়কালে পূর্ব পাকিস্তানের রফতানিলব্দ আয় ১ হাজার ৬ শত ৫০ কোটি টাকা হইলেও পূর্ব পাকিস্তানে মাত্র ১ হাজার ১ শত ১০ কোটি টাকার পণ্য আমদানী করিতে সক্ষম হয়।

উপরোক্ত তথ্য প্রমানে দেখা যায় যে, পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি চরম অর্থনৈতিক অবিচার করা হইয়াছে। যত শীঘ্র সম্ভব উভয় প্রদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার জন্য শাসনতন্ত্রে যে বিধান রাখা হইয়াছিল, উহা ব্যর্থ হইয়াছে। জাতীয় পরিষদে পেশকৃত ১৯৬৮ সালের অর্থনৈতিক বৈষম্য সম্পর্কিত বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয় যে, বৈষম্য বৃদ্ধি অব্যাহত রহিয়াছে।

[ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস [ Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Year 1969, March ] ]

কাজেই দেখা যায় যে, কেন্দ্রীভূত অর্থনৈতিক পরিচালনা ব্যবস্থা অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হইয়াছে। এই ব্যবস্থার ফলেই আঞ্চলিক বৈষম্য অবসানের শাসনতান্ত্রিক দায়িত্ব পূরণ সম্ভব হয় নাই। কেন্দ্রীভূত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ফলপ্রসূ হইতে পারে নাই বিধায় এক্ষেত্রে এই বিরাট সমস্যার একটি বলিষ্ট ও সুপরিকল্পিত সমাধান গ্রহণ করা উচিৎ। আমার মতে ৬-দফার ফেডারেশনের যে পরিকল্পনা করা হইয়াছে, তাহা একটি বলিষ্ঠ ও সুকল্পিত সমাধান।

৬-দফা আসলে অঞ্চলসমূহের হাতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণেরই একটি পরিকল্পনা। একমাত্র ইহাই (৬-দফা) সমস্যার সমাধান করিতে পারে। এই দৃঢ় বিশ্বাসের ফলেই ৬-দফা প্রণয়ন করা হয়। দেশের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের দরুণ শ্রমিকেরা কর্ম সংস্থানের জন্য এক অঞ্চল হইতে আরেক অঞ্চলে যাইতে পারে না। এই বৈশিষ্ট্যের জন্যই দেশে দুই অঞ্চলে উন্নয়নের মাত্রা এক নয়। কাজেই এই ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের কারণেও অর্থনৈতিক পরিচালনা ব্যবস্থা কেন্দ্রীভূত করা উচিৎ নয়।

আঞ্চলিক সরকারের হাতে অর্থনৈতিক পরিচালনা ব্যবস্থার পূর্ণ দায়িত্ব ন্যস্ত করার জন্যই ৬ দফা কর্মসূচীতে মুদ্রা (কারেন্সি), বৈদেশিক বাণিজ্য বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং কর ধার্যের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রাখা হইয়াছে। ৬-দফায় মুদ্রা সংক্রান্ত প্রস্তাবের উদ্দেশ্যে এক অঞ্চল হইতে অন্য অঞ্চলে পুঁজি পাচার বন্ধ ও মুদ্রানীতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা!

বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাপারে ৬-দফায় যে সকল প্রস্তাব করা হইয়াছে, উহার উদ্দেশ্য এক অঞ্চলের সম্পদ উক্ত অঞ্চলেই রাখা এবং উন্নয়নের জন্য সর্বাধিক পরিমান বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবস্থা। ফেডারেল সরকারকে প্রয়োজনীয় রাজস্ব হইতে বঞ্চিত না করিয়া আর্থিক নীতির উপর আঞ্চলিক সরকারের কর্তৃত্ব সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই কর ধার্য সংক্রান্ত উপরোক্ত প্রস্তাব দেওয়া হইয়াছে।

[ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস [ Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Year 1969, March ] ]

এইসব প্রস্তাবের সারমর্ম  নিম্নে দেওয়া হইল ঃ

ক. মুদ্রার ব্যাপারে এক অঞ্চল হইতে অন্য অঞ্চলে পুঁজি পাচার বন্ধ এবং মুদ্রানীতির উপর আঞ্চলিক সরকারের কর্তৃত্ব স্থাপনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। দুইটি পৃথক মুদ্রা ব্যবস্থা গ্রহণ অথবা প্রত্যেক অঞ্চলে একটি করিয়া পৃথক রির্জাভ ব্যাংকসহ একই মুদ্রা ব্যবস্থার মাধ্যমে ইহা কার্যকরী করা যাইতে পারে। এই রির্জাভ ব্যাংকে দুইটি মুদ্রানীতি নিয়ন্ত্রণ করিবে, তবে স্টেট ব্যাংক সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কর্তৃত্ব বজায় রাখিবে। এই ব্যবস্থা সাপেক্ষ মুদ্রা (কারেন্সী) একটি ফেডারেল বিষয় হইবে।

খ. বৈদেশিক বাণিজ্য ও সাহায্যের ব্যাপারে আঞ্চলিক সরকার দেশের পররাষ্ট্রনীতির আওতায় বাণিজ্য ও সাহায্য সম্পর্কে আলোচনা চালানোর ক্ষমতার অধিকারী হইবে। পররাষ্ট্রনীতি অবশ্য ফেডারেল পররাষ্ট্র দফতরের দায়িত্ব হইবে।

গ. প্রত্যেক আঞ্চলিক রির্জাভ ব্যাংকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বৈদেশিক মুদ্রা রাখা হইবে এবং উহা আঞ্চলিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকিবে। একটি সর্বসম্মত হারে ফেডারেল সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন মিটানো হইবে।

ঘ. আঞ্চলিক সরকারের হাতেই কর ধার্য ও আদায় করার ক্ষমতা থাকিবে। তবে ফেডারেল সরকারকে আঞ্চলিক সরকারের নিকট হইতে রাজস্বের প্রয়োজন মিটানোর ক্ষমতা প্রদান করিতে হইবে। এখানে ইহা সুষ্পষ্টভাবে মনে রাখা উচিৎ যে, ফেডারেল সরকারকে কখনও আঞ্চলিক সরকারের করুণার উপর ছাড়িয়া দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয় নাই।

[ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস [ Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Year 1969, March ] ]

আমি জোরের সঙ্গেই বলিতে চাই যে আর্থিক অবস্থার উপর আঞ্চলিক সরকারগুলির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরও এমন সব শাসনতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা করা যাইতে পারে যাহার ফলে ফেডারেল সরকারের আর্থিক প্রয়োজন মিটাইতে কোন অসুবিধা হইবে না। আমার পরিকল্পনায় দেশরক্ষা বিভাগে চাকুরীতে পাকিস্তানের প্রতিটি অঞ্চলের জনসংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বেরও প্রস্তাব রহিয়াছে।

এই সকল দূর্ণীতি অনুমোদন করা হইলে উভয় পক্ষের মনোনীত বিশেষজ্ঞ সমবায়ে একটি কমিটি গঠণ করিয়া বিস্তারিত বিধি ব্যবস্থার উদ্ভাবন করা যাইতে পারে। গত কয়েক বৎসরের রাজনৈকি কার্যকলাপের ফলে অর্থনৈতিক কেন্দ্রীভূত করা হইয়াছে। ফলে জনসাধারণের মধ্যে হতাশা ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হইয়াছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে এই সকল সমস্যা দূরীকরণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রহিয়াছে। আমি বিশ্বাস করি পশ্চিম পাকিস্তানী জনগণ এই স্কীমের প্রতি ঐকান্তি সমর্থন দান করিবেন।

অর্থনৈতিক সুবিচারের খাতিরে এবং দেশব্যাপী যে সমস্যার সৃষ্টি হইয়াছে তাহার সমাধানকল্পে আমি উপরোক্ত ফেডারেল পদ্ধতির স্কীম গ্রহণ করার জন্য জাতীয় সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের মনোভাব লইয়া খোলা মনে সম্মেলনে অংশ গ্রহণকারীদের আগাইয়া আসার আবেদন জানাইতেছি। অর্থনৈতিক অবিচারই মূলতঃ এই সঙ্কটের মূলে সর্বাধিক শক্তি সঞ্চার করিয়াছে, অন্যকিছু নয়। আসুন, আমরা তাহার সমাধান করি। আসুন, সমস্যার গভীরতা ও উৎসমূল কোথায় তাহা আমরা অনুধাবন করি। এই সকল মৌলিক সমস্যা পাশ কাটাইয়া যাওয়ার যে-কোনরূপ প্রচেষ্টা আমাদের অস্তিত্বকেই সঙ্কটাপন্ন করিয়া তুলিবে।

[ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস [ Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Year 1969, March ] ]

যদি আমরা বাস্তব উপলদ্ধি করিতে ব্যর্থ হই এবং যাহার ফলে দেশব্যাপী চরম সংকটের সৃষ্টি হইয়াছে তাহার সমাধান করিতে না পারি তাহা হইলে সর্ব-শক্তিমান আল্লাহ এবং ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করিবে না। ইহা একটি মহোত্তম সুযোগ। হয়তো এমনিভাবে মিলিত হওয়া অনেকের পক্ষেই আর সম্ভব নাও হইতে পারে। সুতরাং অবশ্যই আমাদের সমস্যা সমাধানের উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করা কর্তব্য।

আসুন, আমাদের প্রিয় পাকিস্তানের যে সঙ্কটের আবর্তে নিক্ষিপ্ত হইয়াছে তাহা আমরা সমাধান করি এবং এমন একটি শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতির ভিত্তি স্থাপন করি, যাহা হইবে সত্যিকার ফেডারেল পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র, যাহা পাকিস্তানী জনসাধারণের জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচারের নিশ্চয়তা বিধান করিবে। কেবলমাত্র এই পথেই শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানআশা ও আস্থার সহিত ভবিষ্যতের মোকাবিলা করিতে পারে।

আও পড়ুন:

Leave a Comment