আমার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের অফিস যেসব এলাকায়, সেসব এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছানের পর থেকে, সবকিছু ইমেইলের মাধ্যমে করতে চেয়েছি।
আর বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় কাজ করার কারণে ইমেইল মানেই বুঝতাম ইংরেজি।
একসময় দেখলাম- যতই উৎসাহ দেই না কেন, কোন ভাবেই লোকজন ইমেইলে করতে উৎসাহী হচ্ছে না। যে দু-একজন কর্মী চেষ্টা করছে, তারও খুব একটা আগাতে পারছে না। কারণ বেশিরভাগ সময় ইংরেজিতে লেখার ভয়ে তারা লেখে না। আবার যা বুঝিয়ে বলার সেটার বদলে উল্টোটা বোঝা যায়। টেলিফোন বা মুখোমুখি যোগাযোগে অনেক দক্ষ কর্মী ইমেইলে বসে বোবা হয়ে যায়।
এসব দেখে শুনে- বাংলায় ভাষায় আভ্যন্তরীণ ইমেইল যোগাযোগ প্রচলন করার সিদ্ধান্ত নিলাম। যে দু-চারজন চলনসহই ইংরেজি জানতো, তাদেরকেও বাংলাতে লিখতে শুরু করতে বললাম।
শুরু দিকে একটু এ্যসকি-ইউনিকোড নিয়ে সংকট ছিল। তবে দেখা গেল ৬ মাসে সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে নিয়মিত প্রত্যেকটি বিষয়ে ইমেইল লিখছে। সেই ইমেইলে বিতর্ক হচ্ছে। সবাই সবার বুদ্ধি-বিবেচনা আর অভিজ্ঞতার যায়গা থেকে যুক্তি তুলে ধরতে পারছে। তর্কে বিতর্কে দারুণ সব সিদ্ধান্ত আসছে।
এভাবে চলছে প্রায় ৫ বছর। ভাল চলছে।
আজকে আমাদের অফিস সহকারীর থেকে শুরু করে যেকোনো ধাপের কর্মী তার সব কথা দারুণ ভাবে গুছিয়ে ইমেইলে লিখছে। এমন সব লোক আজ নিয়মিত ইমেইলে প্রতিদিনের কাজ করছে, যাদের ইংরেজি জ্ঞান কষ্ট করে রোমান হরফে নিজের নাম লেখা পর্যন্ত।
তাই এখন আমি বিশ্বাস করে নিয়েছি- কি দরকার ইংরেজি নিয়ে অকারণে কুস্তি লড়া?
প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য তো কাজ করা, মুনাফা করা। কাজ করা প্রতিষ্ঠান কোন ভাষা শিক্ষার স্কুল নয় (ভাষা শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ছাড়া)। আর ইংরেজিতে আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ করলে তো প্রতিষ্ঠানের- রেভিনিউ/ভ্যাল্যুতে বাড়তি কিছু যোগ হবে না।
একজন কর্মীকে যতটা সক্ষম করা যায়, প্রতিষ্ঠানের জন্য ততটা মঙ্গল। তাই শুধুমাত্র একটা ভাষার চাপ দিয়ে, একজন সক্ষম মানুষের অথর্ব করে দেয়ার তো কেন মানে হয় না।
আমাদের আজ বোঝা দরকার- একটি দেশের ১৬ কোটি মানুষের একটি ভাষা আমাদের বিরাট সম্পদ, শক্তি। সেই ভাষায় কাজ করলে সব লোক তার সক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে পারবে। সেটাকে দুরে সরিয়ে কোন আমরা স্বেচ্ছায় অক্ষমতাকে বেছে নিতে উৎসাহ দেই?