আমাদের সংগ্রাম – অভিজাত শাসকশ্রেণী বনাম বাংলার সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার সংগ্রাম

ব্রিটিশ আমল থেকেই মুসলিম অভিজাত শাসকশ্রেণীর মধ্যে একটা ধারণা বদ্ধমূল ছিল সেটা হল, ব্রিটিশ চলে গেলে তারা অর্থাৎ ‘মুসলিম অভিজাত’রা শাসন করবে ভারতবর্ষে। এখানে প্রলেতারিয়াদের কোন স্থান নাই। বিলেতের উচ্চশিক্ষিত-খেতাবধারীরা নিয়ন্ত্রণ করবে সব কিছু।

 

SufiFaruq.com Logo 252x68 2 আমাদের সংগ্রাম - অভিজাত শাসকশ্রেণী বনাম বাংলার সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার সংগ্রাম

 

এই ধরনাকে আরও পাকাপোক্ত করে গেছেন কোলকাতা হাইকোর্টের প্রথম মুসলিম বিচারপতি ‘পার্সোনাল ল অব মোহামেডান’ লেখক এবং শিক্ষক সৈয়দ আমীর আলী। জানা যায় আমির আলীর প্রপিতামহ ১৭৩৯ সালে নাদির শাহের সৈন্য বাহিনীর সাথে ভারতবর্ষে আসেন।

ক্যামব্রিজ স্কলার চৌধুরী রহমত আলি ভারতবর্ষের উত্তরের পাঁচটি রাজ্যকে পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ (আফগান প্রদেশ), কাশ্মীর, সিন্ধু ও বেলুচিস্তানকে নিয়ে ‘পাকিস্তান’, বাংলার মুসলিমদের জন্য ‘বাং-ই-ইসলাম’ ও দাক্ষিণাত্যের মুসলিমদের জন্য “উসমানিস্তান” নামের আবাসভূমির প্রস্তাব করেন। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় না আফগানিস্তান পর্যন্ত সোভিয়েত রেডশার্টদের চলে আসায়। ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত যা ছিল স্বায়ত্তশাসন, ১৯৪৭ সালে এসে তা হয়ে গেল স্বাধীন দেশ। হাজার বছরের সিভিলাইজেশন এমন ভাবে ভাগ করা হয় যেন দুই দিক থেকে আক্রমণ করে লাল কেল্লায় ‘মুসলিম অভিজাত’দের ঝাণ্ডা উড়ানো যায়।

 

SufiFaruq.com Logo 252x68 3 আমাদের সংগ্রাম - অভিজাত শাসকশ্রেণী বনাম বাংলার সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার সংগ্রাম

 

এই অভিজাত শ্রেণীর শাসনের চেইন্ড অফ কমান্ড যেন নষ্ট না হয় তার জন্য পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী করা হয় ভোপালের নবাব লিয়াকত আলি খানকে। কিন্তু এই পদের হকদার ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী। মুসলিম পরিবারের সন্তান হলেও সোহ্‌রাওয়ার্দীর পাসপোর্ট বাতিল করে পাকিস্তানে ঢুকতে দেয়া হয় না কারণ সে বাংলার খেটে খাওয়া গরীবের নেতা হয়ে গেছিল। ‘আভিজাত্য’ নষ্ট করেছে বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে।

 

SufiFaruq.com Logo 252x68 1 আমাদের সংগ্রাম - অভিজাত শাসকশ্রেণী বনাম বাংলার সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার সংগ্রাম

 

পশ্চিম পাকিস্তানে আভিজাত্যের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে গেলেও বাঁধা আসের বাংলায় (পৃর্ব বাংলা, পৃর্ব পাকিস্তানে বা বাং-ই-ইসলামে)। এ দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া গরিব মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। মুসলিম এলিট শাসদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠে সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। ন্যায্যতার লড়ায়ে এলিটেরা যখন মুসলিম লীগ হয়ে হেরেছে, তখন ফিরেছে উর্দি গায়ে। জলপাই রঙে পরাজিত হয়ে, ফিরেছে বিএনপি নামে। সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এলিটদের ‘বিএনপি’ প্রজেক্টও আজ ব্যর্থ। আগামীতে তারা ফিরবে নতুন নামে। আর বাংলার সাধারণ তাঁদের ন্যায্যতার সংগ্রাম চালিয়ে যাবে তাঁদের সেই একমাত্র দল আওয়ামী লীগের হয়।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment