বাংলাদেশে চলমান নাশকতার নেপথ্যে আসলে কারা? [বাংলাদেশের রাজনীতি]

এই প্রশ্নটার উত্তর একেক জনের কাছে একেক রকম। যেটা অনেকেরই নির্ভর করে মূলত রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং দৃষ্টিভঙ্গির উপর। নিজে স্বীকার হবার আগে সেই বিশ্বাস না বদলানোরই কথা।

এরকম বিশ্বাসের বাইরে অনেক আছেন। যারা সত্যকে জানার চেষ্টা করেন। অনুসন্ধান করেন। তথ্য-উপাত্ত-ইতিহাস-যুক্তি মিলিয়ে নিজের মতো একটা সিদ্ধান্ত দাড় করান। তাদের চিন্তার কিছু উপকরণ পৌঁছে দেবার জন্য এই পোস্ট।

অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় একটা কথা আছে – প্রায় সব ক্ষেত্রেই কোন ঘটনার মাস্টার-মাইন্ড তারাই হয়, যারা সেই ঘটনা থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়।

তাহলে ককটেল এবং পেট্রোল বোমা মেরে, সাধারণ মানুষ মেরে, এই মুহূর্তে কার লাভ কোথায়? গাড়ি ভাংচুর, তাতে আগুন দেওয়ার কারণটা কি?

BNP-Jamaat Atrocityউত্তর একটাই, ভীতির সঞ্চার করা। যাতে হরতাল বা অবরোধের সময় কেউ রাস্তায় বাহির না হয় , দোকানপাট বন্ধ রাখে। কারণ আগের আমলে মানুষ আন্দোলনের সাথে একত্ততা জানিয়ে নিজেরাই সবকিছু বন্ধ রাখতো কিন্তু এখন রাজনীতি থেকে আদর্শের বিচ্যুতি ঘটার কারণে জনগণ আর তাদের ডাকে সাড়া দেয় না। তাই আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদের ভয় দেখানো হয়। কারণ তারা জানেই যে , ভয় না দেখালে কেউ তাদের কথা শুনবে না।

ঠিক এই কারণেই বিষ দলীয় জোট এই আন্দোলনকে সফল করতে বেছে নিয়েছে জ্বালাও-পোড়াও আর আতংক সৃষ্টির পথ। যাতে তারা জনগণকে চাপে রেখে সরকারকে তাদের দাবি মানিয়ে নিতে বাধ্য করে। আবার একই সাথে জনগণ আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় না বাহির হলে তারা যাতে বুক ফুলিয়ে মিডিয়াতে/ বাশেরকেল্লাতে বলতে পারে আমাদের আন্দোলন সফল। আপনার হয়ত বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু নিচের প্রমাণগুলো দেখার পরে কি ভাববেন?
১. একটু পিছন থেকে দেখি: ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের সময় যে তাণ্ডব হয়েছিল, আপনাদের কি মনে হয় আওয়ামী লীগ নিজে নির্বাচন বানচাল করে দেওয়ার জন্য নিজেরাই ৫৩১টি বিদ্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছিল? প্রমাণ: http://i.imgur.com/URgrSMX.jpg
২. বি.এন.পি নেত্রী, আমান উল্লাহ আমান, গয়েশ্বর চন্দ্র সহ অন্যান্য নেত্রীবৃন্দের ফাঁস হওয়া, ঠাণ্ডা মাথায় সরাসরি নাশকতার নির্দেশ দেওয়ার ফোনালাপের রেকর্ড গুলোও কি মিথ্যা? প্রমাণ: http://goo.gl/Y0Fb0N
৩. মির্জা ফখরুল যখন নিজের মুখেই জনসভায় টিভির সামনে বলেন ” দুই একটা গাড়ি ভেঙে বা পুড়িয়ে কাজ হবে না ” তাও কি মিথ্যা। প্রমাণ: http://goo.gl/tz3yMA
৪. বি.এন.পির যেসব নেতা কর্মী নাশকতার সময় হাতেনাতে ধরা পরছে, তাহলে এরা কারা? প্রমাণ: http://goo.gl/sNkGFF

এতো গেল বি.এন.পির সামান্য আমলনামা। কিন্তু আসল কালপ্রিট হোলো জামাত আর শিবির। এরা খুব ধূর্ত। তারপরেও প্রতিটি অপরাধীর মতো এরাও একটা সাইন রেখে যায়। সেই সাইনটা এক ধরনের প্যাটার্ন। ধরুন যখন এরা বিক্ষোভ মিছিল করে, তখন এরা বলে সাধারণ জনগণ করছে, যখন পুলিশের থেকে জামাতের আসামি ছিনিয়ে নেয় বা পুলিশদের উপর আক্রমণ করে, তখন এরা বলে উত্তেজিত জনতা, আবার যখন আওয়ামী লীগের কোন অফিস পুড়িয়ে দেয়, তখন এরা নাম দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, এইসব ঘটনার কোনটাতেই কেউ মারা গেলে, সাথে সাথে সে হয়ে যায় শিবিরের শহীদ সাথী বা নেতা। তখন আর জনতা টাইটেলটা থাকে না।

Petrol Bombবাশেরকেল্লাতে খুব চিল্লা-ফাল্লা করছে যে এইসব নাশকতা নাকি আওয়ামী লীগ করতেছে। তাহলে চলুন তাদের ভাষাতেই দেখি এইসব অপকর্ম কারা জড়িত:
১. নিজেদের পেজে নিজেরাই বলছে আগুন দিয়েছে বি.এন.পির কর্মীরা: প্রমাণ: http://i.imgur.com/OT3ETsQ.jpg
২. নিজেরাই বলছে ককটেল ফাটাচ্ছে ছাত্রদল। প্রমাণ: http://i.imgur.com/n8s6qpm.png
৩. নিজেরাই স্বীকার করছে যে তারা পুলিশের দিকে ককটেল ছুঁড়ে মারে। প্রমাণ: http://i.imgur.com/sW7dQiS.jpg
৪. নিজেরাই বলছে যে অবরোধকারীরা ট্রাকে আগুন দিচ্ছে, ভাংচুর করছে। প্রমাণ: http://i.imgur.com/ctHxuU9.png
৫. তাদের ছবি, ব্যানার সহ প্রমাণ যে আসলে কারা আগুন দিচ্ছে। প্রমাণ: http://i.imgur.com/dGIQwZp.jpg এবং http://i.imgur.com/cqX6vTD.jpg
৬. নিজেরাই বুক ফুলিয়ে আগুন দেওয়ার কথা প্রচার করছে। প্রমাণ: http://goo.gl/btqXMf
৭. নিজেরাই ত্যানা পেঁচিয়ে স্বীকার করছে যে এইসব চোরাগোপ্তা হামলায় তারা জড়িত। প্রমাণ: http://i.imgur.com/cLVsSag.png
৮. তাদের আন্ডারগ্রাউন্ড পেজগুলোতে কিভাবে বোমা বানাতে হবে, কাদের মারতে হবে তা সগর্বে প্রচার করছে: প্রমাণ: http://i.imgur.com/stEmSgu.jpg এবং http://i.imgur.com/X1hAbLd.jpg
৯. নিজেরাই একবার বলে যে আগুন দিতে লীগের কর্মী ধরা খেয়েছে আবার তার পরের পোস্টেই বলে যে অবরোধকারীরা ককটেল -আগুন দিয়েছে: http://i.imgur.com/HyPZqSE.png

জানি এই সব তথ্য প্রমাণের পরও অনেকেই আসবেন ত্যানা পেঁচাইতে। তারা বলবে এইসবে আওয়ামীলীগ জড়িত, কারণ তাদের কাছেও প্রমাণ আছে: http://prntscr.com/5vk2j9 ।।

লীগের অনেক কর্মীকেও পেট্রোল বোমা, ককটেল নিয়ে ধরা পরেছে। পুরনো কয়েকটি হাতেগোনা সংবাদ নিয়ে এরকম আওয়াজ অনেকেই দেন।
ভাইরে কিছু বিচার-বিবেচনা আমাদেরও আছে। আওয়ামী লীগ, বি.এন.পি, জাতীয় পার্টি সহ সব দলেই এমন হাজারো লোক আছে যাদের কিছু টাকা দিলে শুধু পেট্রোল বোমা কেন, মন্দির ভাঙ্গা সহ শেখ হাসিনা আর খালেদাকে জানে মারতেও দ্বিধা করবে না। আবার একই সাথে জামাতে থেকে যেইসব নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দেয়, আপনাদের কি মনে হয় তারা কি আসলেই পবিত্র মনে দল বদল করে? তারচেয়ে বড় কথা কোন দলের নামে থাকা দু একজন সন্ত্রাসী অন্য দলের হয়ে নাশকতার ভাড়া খাটছে, আর কোন দলের নীতিনির্ধারকরা পরিকল্পিত ভাবে নাশকতা করছে।

এইটা অনেক আগেকার একটা স্ট্রাটেজি। যদি তুমি প্রতিপক্ষকে শক্তি দিয়ে, আদর্শ দিয়ে হারাতে না পারো তাহলে তাদের আন্দোলনকে কলুষিত করে দাও। আর জামাত-শিবির তাদের পাকি আব্বাদের থেকে এই স্ট্রাটেজিটা খুব ভালো ভাবেই রপ্ত করে নিয়েছে। কারণ ২৫শে মার্চের রাতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যার পর হবু-পাকিরা বলেছিল যে ইন্ডিয়ান আর্মি নাকি এসব করেছে! আবার ৭১ এর যুদ্ধের সময়ও তারা এলাকার লোকদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে, হিন্দু বাড়ি লুট করতে দিয়ে, তা ভিডিও করতো। যাতে তারা অন্যদেশকে বুঝাতে পারে, পূর্ব পাকিস্তানের শান্তি বজায় রাখার জন্যই আর্মিকে আসতে হয়েছে! ঠিক একই কাজই জামাত-শিবির করেছে শাহবাগের আন্দোলনের সময়। বিরিয়ানি, গাঁজা, মদ, মেয়ে ইত্যাদির অপবাদ দিয়েও যখন কাজ হয়নি, তখন হেফাজতকে নিয়ে সামনে এনেছে নাস্তিকতাকে। আপনি নিশ্চিত থাকেন যে, খোদ মক্কা শরীফের ইমামও যদি জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে থাকে তাহলে তাকেও তারা অপবাদ দিয়ে ধ্বংস করতে পিছপা হবে না। কারণ এরা নিজের আসল পিতার নাম বলার সময়ও মিথ্যা কথাই বলে: http://goo.gl/k2nFw7 । অবশ্য যারা সাইদিকে প্রতিনিয়ত চাঁদে দেখে, তাদেরকে সত্য শব্দটাও বুঝানো আসলেই কষ্টকর।

তারপরও এইসব আগুন, ককটেল, ভাংচুর কারা করছে তার প্রমাণ চাইলে ফেসবুকে যে কোন বিষ দলীয় জোটের সমর্থনকারী পেজগুলোতে যেয়ে তাদের সমর্থকদের নাশকতার খবরের পোস্টের কমেন্টগুলো পড়ে দেখেন। দেখবেন তাদের সমর্থকেরা নিজের দেশের মানুষের জানমালের ক্ষতি হলেও বলছে – ঠিক হয়েছে, আরও চাই, Good, Alhamdulillah বলে শুকরিয়া আদায় করছে। তাহলেই বোঝেন এইসব কর্মকাণ্ডের সমর্থক কারা।
কিছু উদাহরণ দিলাম: http://goo.gl/voTD31 http://goo.gl/7oDbj2 http://goo.gl/hCxWex
এখন যেন বলতে আসবেন না যে বাশেরকেল্লাও নাস্তিক, লীগ আর ভারতের দালাল, ইন্ডিয়ার স্পাই বা র – য়ের টাকা খেয়ে মিথ্যা খবর ছাপায়।

আপনাদের হয়তো অনেকেরই মনে নাই যে ২০১৩তে এই শিবিরকেই পৃথিবীর তৃতীয় Top non-state armed group in the world হিসেবে খেতাব দিয়েছিল IHS Jane’s Terrorism and Insurgency Centre।
লিঙ্ক: Link1 এবং Link2 ।

তো আপনাদের কি মনে হয়, সুবোধ বালক, নিষ্পাপ থাকার জন্য তাদেরকে এই লিস্টে ঢুকানো হয়েছে? এতোসব তথ্যপ্রমাণের পরও কি আপনাদের চোখ খুলবে না? এই নাশকতা-কারী এবং সন্ত্রাসী কারা এটা নিয়ে বিভ্রান্ত থাকবেন? নাকি গুড়িয়ে দিবেন এইসব মীর জাফর, ইয়াহিয়া , টিক্কা খান, গো আযমদের আস্তানা?
মনে রাখবেন নিরপেক্ষ থাকা ভালো। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সীমার পর নিরপেক্ষ থাকা শুধুই কাপুরুষতা ছাড়া আর কিছুই না।

একটু হিসেব করে দেখুন – এই নিরপেক্ষতা দেখাতে গিয়ে আলটিমেটলি নিজের এবং দেশের ভবিষ্যৎ কোথায় ঠেলে দিচ্ছেন?
আজ যদি কোনও সন্ত্রাসীর বোমাবাজির ভয়ে, তাকে ক্ষমতায় বসিয়ে ঠাণ্ডা করার পক্ষে মত দেন, তবে কাল যারা বিরোধী দলে যাবে, তারা রাজনীতির চেয়ে বেশি করে বোমা মারার উৎসাহ পাবে। আর সেদিন সেই উৎসাহ দেবার দায় আপনি এড়াতে পারবেন না।
শুধু আজকের এই মুহূর্তের কথা নয়, আগামীর কথা ভাবুন। আজকে এই মুহূর্তে, সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য, বোমাবাজ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।

Leave a Comment