শ্রোতা সহায়িকা নোট সিরিজে আজকের রাগ – রাগ পিলু। এই আর্টিকেলটির উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। আপডেট পেতে আবারো আসার আমন্ত্রণ রইলো।
রাগ পিলু
পিলা ছোট্ট মিষ্টি রাগ। ছোট হলেও এই রাগটি ভীষণ হৃদয়কাড়া প্রেম-বিরহ-ভক্তির রাগ। আর আমাদের প্রিয় গানগুলো পিলুর ছায়াতে সুর করা। পিলু শাস্ত্রের ধরাবাধা নিয়ম খুব একটা মানে না। বরং বিরহী ক্ষত হৃদয়কে অনুসরণ করে। শাস্ত্রের পন্ডিতদের কাছে এটি ইতরজনের প্রিয় সুর। এর শরীরী আবেদন প্রচ্ছন্ন থাকেনা। মানসিক স্থিরতার চাইতে চঞ্চল শৃঙ্গারমুখর আবেগ একে অধিক সার্থক করে তোলে। নওয়াবরা ঠুমরি নামক শৈলীটিকে বিকশিত করার আগে শাস্ত্রদেবতার দরবারে পিলু ছিলো একেবারে অন্ত্যজ অস্তিত্ব। মজার ব্যাপার হলো, নিধুবাবু বহু জনপ্রিয় রাগে টপ্পাসহ নানা ধরনের গান বাঁধা সত্ত্বেও পিলুতে কোনও গান বাঁধেননি।
পিলু রাগের এই জনপ্রিয়তার কারণ বোধ হয় কাফি ঠাট। কাফিই যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ঠাট। রাগের সংখ্যাও এতে অন্যান্য ঠাটের চেয়ে অনেক। এর অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য রাগরাগিণী যেমন মিয়া কি মল্লার, ভীমপলশ্রী, শিবরঞ্জনীও ভীষণ জনপ্রিয়।
কাফি ঠাটের অংশ হিসেবে এর সাথে ভীমপলশ্রীর মিল আছে। তবে বেশি মিল আছে ভৈরবীর সঙ্গে। বিশেষত কোমল ধৈবত (দা) ব্যবহার করতে ভৈরবীর কথা মনে পড়ে। বলা যায় কোমল গান্ধার(জ্ঞ), কোমল ধৈবত (দ),আর কোমল নিষাদের(ণি) বিভিন্ন ধরনের মিশ্রণ মানুষের মনে মায়া সৃষ্টি করে বলেই পিলু বা কাফির অন্যান্য রাগগুলি এত লোকপ্রিয়। এছাড়া পিলু ত্রিতালের মত কুলীন তালের বিপরীতে দাদরা, কাহারবার মত জনপ্রিয় সহজ তালেই বেশি বাজানো হয়। অন্যভাবে বলা যায় ধ্রুপদ খেয়ালের মত অভিজাতদের সাথে বেশি মেলামেশা না করে ঠুমরীর মত আধাশাস্ত্রীয়দের সাথে মেশাটাও একটা কারণ।
রাগ পিলুর ব্যাকরণ:
আরোহণ: স জ্ঞ র সগ মপ দপ মপ
অবরোহণ : র্স ণ ধ প মগ মপ জ্ঞ র স
পাকাড়: গ ম দ প জ্ঞঃ রঃ স ন্ স
বাঙালি গায়করা যখন গান সুর করেন, কয়েকটি রাগের প্রতি তাঁদের পক্ষপাত দেখা যায় । এর মধ্যে প্রথম তালিকায় থাকে, ভৈরবী, খমাজ, বেহাগ, পুরিয়া, ইমন, কানড়া, কাফি। পরের তালিকায় ধরা যেতে পারে ললিত, মালকোষ, তোড়ি, হামির, কেদার ইত্যাদি। এজন্য পিলুও এতে পড়ে। শুধু যে বাঙালি শ্রোতারাই এই সব সুরে স্বাচ্ছন্দ্য খোঁজে, তা নয়। যদিও এটা প্রায় সর্ব ভারতীয় ব্যাপার।
কণ্ঠসঙ্গীতে পিলুর শাস্ত্রীয় ও উপশাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে প্রাচীনতম রেকর্ড ১৯০৮ সালে গাওয়া অচ্ছনবাইয়ের । তারপর তালিকায় আছেঃ–সুরের গুরু আবদুল করিম, বড়ে গুলাম, ভীমসেন ছাড়া ইন্দুবালা, সিদ্ধেশ্বরী দেবী, রসুলন বাই, বেগম আখতার, রোশনারা বেগম, প্রভা আত্রে, গিরিজা দেবী, শিপ্রা বসু, অজয় চক্রবর্তী প্রমুখ।
কাজী নজরুল ইসলামের গানে পিলু:
নজরুলের অনেক গান রাগাশ্রয়ী। নির্দিষ্ট রাগের আশ্রয়ে যে গানগুলোতে সুর করা হয়েছে, সেগুলোর পুরো সুরে রাগের অবয়ব বজায় রাখার চেষ্টা থেকেছে; খুব বেশি রাগভ্রষ্ট হয়নি। তাই নজরুলের গানগুলো কান তৈরিতে বেশি উপযোগী বলে আমার কাছে মনে হয়।
- সুরে ও বাণীর মালা দিয়ে
- ও মন রমজানের ওই
- আমার গানের মালা
- রিমি ঝিম ওই নামিল দেয়া
- ভুলি কেমনে আজো যে মনে
- কালো ভ্রমর এলো গো আজ
- পরাণপ্রিয় কেন এলে অবেলায়
- মালা গাথা শেষ না হতে
- আমার আপনার চেয়ে আপন
নজরুল শুনলে মনে হবে পিলুর জন্মই বিরহের জন্য। এছাড়াও ———- পিয়া ভোলো অভিমান ( বেগম আখতার), আমার শ্যামপাখি মনফাঁদে (রামকুমার চট্টোপাধ্যায়) গান দুটিও পিলুতে। এমনকি গানের কথাতেও পিলুকে পাওয়া যায়। যেমন,নজরুলের “গাহিছে পিলুর সুরে।”‘
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গানে পিলু:
কবিগুরু তার অনেক কম্পোজিশনে প্রচলিত রাগের আশ্রয় নিলেও অনেক সময় রাগের কাঠামোতে তিনি আটকে থাকতে চাননি। তাঁর সুরের পথ রাগের বাইরে চলে গেছে প্রায়শই। আমার কাঁচা কান যা বলে, তাতে বিশুদ্ধ রাগাশ্রয়ী গান হিসেবে তাঁর গান অনেক ক্ষেত্রেই খুব ভালো উদাহরণ নয়।
- আমার পরাণ যাহা চায়
- সেদিন দুজনে দুলেছিনু
- আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে
- তোমায় গান শোনাব
- চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে
- দিবস রজনী আমি যেন
- ওগো নদী আপন বেগে
- ওই মালতীলতা দোলে
- অলি বার বার ফিরে আসে
- তোমার পুজার ছলে
- আমি হৃদয়েতে পথ কেটেছি
- ও আমার দেশের মাটি
আধুনিক গানে পিলু:
১. হোলি খেলিছে শ্যাম কুঞ্জ কাননে (সুর ও কথা: জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ)
২. সুরে ও বানীর মালা দিয়ে তুমি আমারে ছুঁইয়াছিলে (সুর ও কথা: জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ)
গজলে পিলু:
ভজনে পিলু:
১.
ঠুমরিতে পিলু:
১.
অন্যান্য:
১.
যন্দ্রে পিলু:
সেতার:
১. ইমদাদখানী ঘরানার শহীদ পারভেজ খানের সেতারে – পিলু।
সরদ:
১.মাইহার ঘরানার খলিফা ওস্তাদ আলী আকবর খানের সরদে- পিলু।
২. পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সরদে- পিলু।
খেয়াল:
১. রামপুর সহসওয়ান ঘরানার ওস্তাদ রশিদ খানের – পিলু
২. আমীর খান সাহেব এর- পিলু।
৩. পণ্ডিত কুমার গান্ধর্বের কেদার – পিলু।
৪. জয়পুর ঘরানার শিল্পী কিশোরী আমনকারের গলায় – পিলু।
৫. পণ্ডিত মুকুল শিবপুত্রের- পিলু।
৬. বিদুষী শোভা মুডগালের- পিলু।
টিউটোরিয়াল:
যেকোনো রাগের স্বরের চলাফেরা বোঝার জন্য ২/৫ টি স্বর-মালিকা বা সারগম-গীত শোনা দরকার। স্বর মল্লিকার পাশাপাশি দু একটি লক্ষণ গীত (বা ছোট খেয়াল) শুনলে সহজ হতে পারে। লক্ষণ গীত মূলত শেখানো হয় রাগের লক্ষণগুলো সহজে ধরতে। লক্ষণ গীত ছোট খেয়াল প্রায় একই কাজ করে। অনলাইনে অনেক গুলো আছে। একটু খোঁজাখুঁজি করলে পেয়ে যাবেন। স্যাম্পল হিসেবে নিচের দুটো লিংক দেয়া হল।
সম্পর্কিত রাগ:
আরও দেখুন:
Declaimer:
শিল্পীদের নাম উল্লেখের ক্ষেত্রে আগে জ্যৈষ্ঠ-কনিষ্ঠ বা অন্য কোন ধরনের ক্রম অনুসরণ করা হয়নি। শিল্পীদের সেরা রেকর্ডটি নয়, বরং ইউটিউবে যেটি খুঁজে পাওয়া গেছে সেই ট্রাকটি যুক্ত করা হল। লেখায় উল্লেখিত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যেসব সোর্স থেকে সংগৃহীত সেগুলোর রেফারেন্স ব্লগের বিভিন্ন যায়গায় দেয়া আছে। শোনার/পড়ার সোর্সের কারণে তথ্যের কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে। আর টাইপ করার ভুল হয়ত কিছু আছে। পাঠক এসব বিষয়ে উল্লেখে করে সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকবো।