অনলাইন দুষিত হয়ে গেছে – বলে চিৎকার করে কোন লাভ নেই, চিকিৎসা করান

অনলাইন দুষিত হয়ে গেছে – বলে চিৎকার করে কোন লাভ নেই। এই কথাটি বলছি শুধুমাত্র প্রাপ্তমনস্কদের জন্য। যারা বিষয়টি সামাজিক প্রেক্ষাপটে বুঝবেন না, বা সবকিছু শুধুমাত্র ধর্মদন্ড দিয়ে মাপবেন, তাদের এই লেখাটি পড়া দরকার নেই।

আসুন আলাপে –

মানুষ সাংস্কৃতিক জীব। তাকে পশু থেকে আলাদা হতে একটি সংস্কৃতির প্রয়োজন হয়। তার উপদান হতে পারে সমাজাচার, বিনোদন, ধর্মচার ইত্যাদি।

দরিদ্রতা মানুষকে বিনোদন বা সংস্কৃতির সুযোগ দেয় না। এমনকি নিয়মিত ধর্মপালনের সুযোগ ঠিকমতো দেয় না। ব্যক্তির নিজস্ব পরিচয় এবং সম্মান প্রাপ্তির ক্ষুধাকে মেরে ফেলে।
এজন ব্যক্তির যখন ঘাড় থেকে দারিদ্র্যতার বোঝা যখন নামাবার সুযোগ হয়, তখন ওই প্রবৃত্তিগুলো একে একে আবার জাগ্রত হয়।

বিগত ১৫ বছরে একটি বড় জনসংখ্যার ক্ষেত্রে এই ঘটনাটি ঘটেছে। বিগত ১৫ বছরের বিগত বছরগুলোর তুলনায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ আর্থিক নিরাপত্তার মধ্যে এসেছে।

ফলাফল হিসেবে দেখবেন-
– প্রায় প্রতিটি গ্রামে একাধিক মসজিদ বেড়েছে। পুরনো মসজিদ জাঁক জমক হয়েছে। মসজিদে যাওয়া লোকের সংখ্যা অন্তত ২ গুন হয়েছে।
– চায়ের দোকান অন্তত ৩ গুন বেড়েছে। প্রতিটি দোকানেই সেই অনুপাতে চা খাওয়া, আড্ডা দেবার লোক বেড়েছে।
– প্রায় প্রতিজনের হাতে পৌঁছে গেছে নিজস্ব বিনোদন গেজেট স্মার্ট ফোন।

আমরা মূলত তাদের আর্থিক উন্নয়নকে এড্রেস করেছি। কিন্তু এই উন্নয়নের ফলে সৃষ্ট অন্যান্য ক্ষুধাকে ঠিকমতো এড্রেস করিনি, ছেড়ে দিয়েছে অটো-পাইলটের হাতে।

মানুষ তার সেই নতুন ক্ষুধা মিটিয়েছে – ধর্ম, বিনোদন বা সংস্কৃতির খুব প্রাথমিক স্তর দিয়ে। এসব ক্ষেত্রে দেয়া যায় – এসবের মধ্য থেকে মানুষ প্রথমে প্রহন করে “প্রদর্শন যোগ্য” উপাদান গুলো। যেগুলো দ্রুত ইগো বুষ্ট দেয়, একটা পরিচিতি দেয়। কিছু নগদ লাভও হয়, পাশাপাশি কি অন্যায়ের ইনডেমিনিট পাওয়া যায়। যেমন – অন্যের ধর্মে ভুল ধরার মাধ্যমে, নিজেকে অধিক ধার্মিক ভাব নেয়া । কোন একটি শিল্প-সংস্কৃতি বিষয়ের যাচ্ছেতাই সমালেচনা করে, নিজেকে পরিশুদ্ধ সংস্কৃতিবান প্রমাণ করা। এভাবে খুব দ্রুত দলবদ্ধ হওয়া যায়, হৈচৈ করা যায়। এসব রাস্তার অনুসারীরা চর্চায় খুব একটা সময় দেয় না। সময়টা ব্যয় করেন আত্বপ্রচারে। তাই এরা সবসময় খুবই উচ্চকিত এবং গরম।

ধর্ম এবং সংস্কৃতি বা এরকম যেকোনো বিষয়ের অন্তঃসার নিয়ে, জীবনকে উন্নত করতে হলে, নিয়মিত চর্চা দরকার। প্রচুর মানুষিক শ্রম, সময়ের বিনিয়োগ দরকার। সেটা কজন করবে?

তার বদলে সাধারণ মানুষে সেসব করতে চায়, যেটাতে তার জন্য দুনিয়াবি ইনসেন্টিভ আছে। যেমন :
– মুসল্লি সেজে ঘুষ খেলে, লেবাসের কারণে একটা বেসিক প্রটেকশন পাওয়া যায়। কিন্তু একজন সত্যিকার অর্থে খোদা-ভীরু ধর্মপ্রাণ সৎ মানুষের ঘুষ না খাওয়ায় কোন দুনিয়াবি ইনসেন্টিভ নেই। এমনকি বাড়তি সম্মানও না।
– রাজনৈতিক-প্রশাসনিক পদ, একাডেমিক চেয়ার কোনটিতেই বসতে সংস্কৃতিবান হবার প্রয়োজন নেই, হলেও কোন ইনসেন্টিভ নেই।

এসব বিচার করে দেখবেন সত্যিকার ধার্মিক বা সত্যিকারের সাংস্কৃতিবান হলে খুব বেশি নগদ ইনসেন্টিভ নেই। তারচেয়ে এসব বিষয়ে প্রদর্শনসর্বস্ব হলে সুবিধাটা বেশি।

সমাজের যখন এই অবস্থা, তখন অনলাইন দুষিত হয়ে গেছে – বলে চিৎকার করে কোন লাভ নেই।
সমস্যাটা স্বীকার করে মোকাবেলার পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রদর্শনের বদলে সত্যিকার ধর্মপ্রাণ মানুষের সামাজিক ইনসেটিভ নিশ্চিত করতে হবে।
সংস্কৃতিবান হতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ইনসেন্টিভ নিশ্চিত করতে হবে।

না হলে এই অন্ধকার বাড়তেই থাকবে, কমবে না।

যেকোনো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে Change Management বা পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা একটি বড় অংশ।
আমাদের সেই জিনিসটি নিয়ে ভাবার সময় বয়ে যায়।