ইসলাম, বর্ণবাদ, কাস্ট-সিস্টেম, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ !

ইসলাম, বর্ণবাদ, কাস্ট-সিস্টেম, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ !

আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেকগুলো বড় অর্জনের একটি হল বাংলাদেশের মুসলিমদের মধ্যে বর্ণবাদ (কাস্ট সিস্টেমের) অবসান।
অবাক হচ্ছেন? আমাদের মুসলিমদের মধ্যে আবার কাস্ট সিস্টেম কি? উঁচু-নিচু জাত কি? এটা তো শুধুমাত্র হিন্দুদের সমস্যা।

না এটা শুধুমাত্র হিন্দুদের সমস্যা না। আমাদের মধ্যেও একই সমস্যা আছে।

আরবে কোরাইশ আর নন-কোরাইশ সমমর্যাদার নন। আরব আর নন-আরব সমমর্যাদার নন। আর ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে “আশরাফ” “আত্রাফ/আজলাফ” “আরজাল” ছাড়াও ১৫০+ কাস্ট আছে।
ভারতে সেটা কাস্ট হিসেবেই চলছে। পাকিস্তানে সেই প্র্যাকটিসটা আছে “রক্ত-বংশপরিচয়-জাতিগোষ্ঠী” দিয়ে। বিশ্বাস না হলে ভারত-পাকিস্তানের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে মিশে দেখুন। এখনও সমাজ-সামাজিকতা, পারিবারিক বিয়েতে সেটা স্পষ্ট।

ইসলাম, বর্ণবাদ, কাস্ট-সিস্টেম, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ !
আমাদের মুক্তি সংগ্রাম

[ ইসলাম, বর্ণবাদ, কাস্ট-সিস্টেম, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ ! ]

পাকিস্তান হবার পরে আমদের ইসলামিক রাষ্ট্রের প্রথম মোহভঙ্গ হয়েছিল বর্ণবাদের কারণেই। পাকিস্তান গঠন হবার পর থেকে যত দিন যাচ্ছিল, ততই তথাকথিত আশরাফ মুসলমানদের জন্য রিজার্ভ রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা, লাইসেন্স, পারমিট স্পষ্ট হচ্ছিল। “আশরাফ” মুহাজির হলেও তার গুরুত্ব আমাদের মতো “আত্রাফ” ভূমিপুত্রদের চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছিল। যে ধর্মের সমতা আর ন্যায্যতার লোভ দেখিয়ে পাকিস্তানে ডাকা হয়েছিল, সেই ধর্মের দোহাই দিয়েই হচ্ছিল বৈষম্য আর শোষণ।

ইসলামিক এস্টেট পাকিস্তান মানে দেখা গেল মূলত “আশরাফ” মুসলিমের দ্বারা “আত্রাফ” মুসলিমদের শোষণ। সেটা টিকিয়ে রাখতো মোল্লা আর আর্মি। এই ঘটনা বোঝার পর থেকেই বাঙ্গালি সেকুলার রাষ্ট্রবাদের দিকে গেছে, তারা বুঝতে পেরেছে রাষ্ট্রের সাথে ধর্মের সংযোগ থাকলে ধর্মের নামে শোষণ চলবেই। তাই আমাদের সেকুলার রাষ্ট্রবাদের মুল কারণ মুসলমানদের থেকে হিন্দুদের রক্ষা করা না, বরং তথাকথিত অভিজাত মুসলিমদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা।

In 1902 in the “Imperial Gazetteer of India”, the following was written:

“…a Sayyid will marry a Shaikh’s daughter but will not give his daughter in return; and marriages between upper circle of soi-distant [sic] foreigners and the main body of Indian Muhammedans [sic] is generally reprobated..

স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মূলত “আত্রাফ” বাঙ্গালি মুসলিমদের উত্থান হয়েছে। বাঙ্গালির মনোজগতে সেই পরিবর্তন সবচেয়ে ভালো বুঝেছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ। তারা সেই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে “আওয়ামী মুসলিম লীগ” থেকে “আওয়ামীলীগ” হয়েছে। সেই চেতনাকে ধারন করে আওয়ামীলীগ আত্রাফ মুসলিম বাঙ্গালির রাজনৈতিক ব্যনার হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে যেসব “আশরাফ” মুসলিম আমাদের সাথে ছিলেন, তারা তথাকথিত শ্রেনীমর্যদা ত্যাগ করেই এসেছিলেন। ছয় দফার সময় আসতে আসতে বাঙ্গালির মনোজগৎ থেকে বর্ণবাদ বিতাড়িত হয়ে গিয়েছিল (ফখা চৌধুরীর মতো কিছু অতি আশরাফ ছাড়া)। বাঙ্গালি আত্মপরিচয়ে গর্বিত হয়েছিল, কনফিডেন্স ফিরে পেয়েছিল।

স্বাধীনতা সংগ্রামের ফলেই আজ ভারত-বাংলাদেশে-পাকিস্তানের মধ্যে তথাকথিত ছোট জাত থেকে কনভার্টেড (আমরা প্রায় সবাই) মুসলিমগন বাংলাদেশেই সবচেয়ে ভালো আছে, সবচেয়ে বেশি সমতা ও ন্যায্যতার সুবিধা ভোগ করছে। ইসলামের মুল স্পিরিট যদি সমতা আর ন্যায্যতা হয়, তবে বাংলাদেশ এখন এই তিনটি রাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইসলামিক রাষ্ট্র।

সুতরাং হিন্দুদের কাস্ট সিস্টেম নিয়ে হাসাহাসির কিছু নাই। ওই ময়লা একসময় আমাদের গায়েও ছিল। সেই সাথে আসুন ভুলে না যাই যে সেখান থেকে আমাদের উত্তরণ হয়েছে কিভাবে, কোন পথে।

আর এই পথেই আমাদের বাংলাদেশের সংবিধানে এসেছে ধর্মনিরপেক্ষতা। যেসব কারণে আমরা স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছি, বা স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তারই প্রতিফলন হয়েছে আমাদের সংবিধানের মূলনীতিতে। আমরা দেখেছি ধর্মের নামে কিভাবে শোষণ করা হয়। কিভাবে পরকালের কথা বলে ইহকালে হিসেবে কম দেয়া হয়। তাই আমাদের পিতৃপুরুষরা চান নি ভবিষ্যতে তাদের উত্তরপুরুষ দের এই ভোগান্তি হোক। তাই তারা দেই দরজা বন্ধ করতে চেয়েছেন ধর্মনিরপেক্ষতা দিয়ে।

সুতরাং বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্ম হীনতা মোটেই নয়, বরং ” ধর্মের নামে কোন শোষণ আমরা সইবো না”। ধর্মনিরপেক্ষতাকে বসানো হয়েছে পাহারাদার হিসেবে যেন ভবিষ্যতে কোন বকধার্মিক এসে ধর্মকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ না করতে পারে।

এই ডকুমেন্টারিটিতে উঠে এসেছে ভারতে মুসলিম দের মধ্যে কাস্ট সিস্টেম এর বিভক্তি। ভারতে যারা তথাকথিত নিচু জাত, দেখুন তাদের বেদনা। এরা সবাই আমাদের মতো মানুষ। আমাদের মতোই তারা মহান আল্লাহ ও ইসলামে বিশ্বাস করে। ইসলাম যা শেখায় তাতে আমাদের সবার এক হবার কথা। কিন্তু হচ্ছে কি তাই? তথাকথিত আশরাফ আর আত্রাফদের মসজিদ আলাদা। এমনকি কবরস্থানও আলাদা। মসজিদে মেনে নিলেও বড়জোর কয়েক মিনিট।

https://youtu.be/8xB20BXh9MQ

 

আরও পড়ুন: