উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশের আইন: এই সিরিজটির সূচনার কারণ পাবেন আমার অন্য একটি লেখাতে। এই লেখাটি শুরুর দিকের উদ্যোক্তাদের আইন বিষয়ে সাধারণ জ্ঞানের জন্য লিখতে হল। আমি আইন পেশাজীবী নই, তবে দীর্ঘদিন উদ্যোক্তা ও উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করতে গিয়ে আইন বিষয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে এসেছে। বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে কিছু কমন প্রশ্ন সবসময় আসে। সেকল প্রশ্নের উত্তর একবারে দেবার জন্য এই নোটটি লেখা।

উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশের আইন, নীতিমালা, প্রবিধানমালা ও নির্বাহী দপ্তর
যেকোনো দেশে ব্যবসা (লাভজনক বা অলাভজনক যাই হোক) উদ্যোগ গ্রহণ বা পরিচালনার জন্য ওই বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে ধারনা থাকা জরুরী। আইন না জানলে পদে পদে অকারণে হোঁচট খেতে হয়। তাতে অর্থ, সময় ও শক্তির অপচয় হয়। আইন জানা থাকলে একদিকে যেমন সেই বিড়ম্বনাগুলো এড়িয়ে যাওয়াই যায়, অন্যদিকে সেই আইনের মধ্যে সর্বাধিক সুবিধা নেয়া যায়।
উদ্যোক্তাকে আইন বিশেষজ্ঞ হবার প্রয়োজন নেই। তবে ব্যবসার সকল কার্যক্রম দেশের প্রচলিত কোন আইনের আওতায় পড়ে তা জানা থাকা দরকার। অন্তত ‘লিগাল এন্ড কমপ্লায়েন্স’ ডিপার্টমেন্ট এর জন্য লোক নিয়োগ এর জন্য এই এসব সম্পর্কে সাধারণ ধারণা থাকা জরুরী। নিজের লিগাল ডিপার্টমেন্ট না থাকলে লিগাল বিষয়গুলো পরিচালনার জন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে আউট-সোর্স করা যায়। সেই ধরনের প্রতিষ্ঠান নিয়োগ ও ঠিকমত সেবা গ্রহণের জন্যও সংশ্লিষ্ট আইন বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান জরুরী। উদ্যোক্তাদের আইন মুখস্থ করা দরকার নেই। তাকে জানতে হবে – তার কার্যক্রম কোন আইনের আওতায় পড়ে এবং ওই আইনের ভাল ব্যাখ্যা প্রয়োজনে কোথা থেকে পাওয়া যাবে।

নিশ্চিত সাফল্যের ৪টি পরামর্শ
তবে আমার পরামর্শ শুরুর দিকে নিজের লিগাল ডিপার্টমেন্ট না তৈরি করে কোন ভাল আইন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিষয়গুলো আউট-সোর্স করা ভাল। তাতে ভুল হবার সম্ভাবনা কম থাকে এবং ক্রমশ অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ হয়। তবে এমন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিষয়গুলো আউট-সোর্স করা উচিৎ যাদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করার সুযোগ থাকে। তারপর যখন কাজ বাড়তে থাকে এবং নিজের লিগ্যাল ডিপার্টমেন্ট চালানো ব্যয়সাধ্য হয় তখন নিজের লিগাল ডিপার্টমেন্ট তৈরি করলে সুবিধা হয়।
বাংলাদেশে মুনাফা অর্জন (অলাভজনক / অলাভজনক), মালিকানার ভিত্তি (একক মালিকানা/যৌথ মালিকানা) ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠান তৈরি ও পরিচালনার জন্য আলাদা আলাদা সাধারণ আইন রয়েছে। যেকোনো প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য প্রথমে ওই সকল আইনে নিবন্ধিত করে নিতে হয়। নিবন্ধন করার পরই সাধারণ কারবার শুরু করা যায়। তবে বিশেষ ধরনের কিছু ব্যবসা পরিচালনার জন্য ধরণ ভিত্তিক আইন রয়েছে যেগুলোর আওতায় নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। বিশেষকরে কিছু সংবেদনশীল ধরনের ব্যবসার পরিচালনার জন্য ওই ধরন ভিত্তিক এক বা একাধিক আইনে নিবন্ধন নেবার প্রয়োজন হয় (যেমন : পরিবেশ, জনস্বার্থ, আইন শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা বা স্বাস্থ্য বিষয়ক সরাসরি সম্পৃক্ততা বেশিরভাগ ব্যবসা)। এরপর আয় শুরু হতেই আসে ট্যাক্স আইনের আওতা।
এই লেখায় আমরা প্রতিটি আইনের মুল বা প্রয়োজনীয় আইন নিয়ে কথা বলব। বিভিন্ন সময়ে প্রতিটি আইনের ছোটখাটো পরিবর্তন হয়েছে যেগুলো আমরা এই আলোচনায় আনব না। আমাদের আইন মন্ত্রণালয় এর ওয়েব সাইটে সংরক্ষিত প্রতিটি আইনের মধ্যে আইনগুলোর মধ্যে সম্পর্ক ও আইনের শেষ সংশোধনীগুলো উল্লেখ করা আছে। এই লেখাটি পড়ার পরে প্রয়োজন অনুযায়ী ওগুলো দেখে নিতে পারেন।
এই লেখাতে যেই আইনগুলো নিয়ে পর্ব ভিত্তিক আলোচনা করবো সেগুলো হল:
- লাভজনক প্রতিষ্ঠান তৈরি ও পরিচালনার জন্য আইন
- অলাভজনক প্রতিষ্ঠান তৈরি ও পরিচালনার জন্য আইন
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার আইন, নীতিমালা, প্রবিধানমালা ইত্যাদি
- পণ্য ও সেবার মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আইন, নীতিমালা, প্রবিধানমালা, নির্দেশিকা ইত্যাদি
- মেধাস্বত্ব, কপিরাইট, ট্রেড মার্ক বিষয়ক নীতিমালা, প্রবিধানমালা, নির্দেশিকা ইত্যাদি
- শ্রম ও শ্রমিক বিষয়ক বাংলাদেশের আইন, নীতিমালা, প্রবিধানমালা, নির্দেশিকা ইত্যাদি
- বাংলাদেশের সব আইসিটি সম্পৃক্ত আইন, অর্ডিন্যান্স, নীতিমালা, প্রবিধানমালা, নির্দেশিকা ইত্যাদি
- শুল্ক ও কর বিষয়ক বাংলাদেশের আইন, নীতিমালা, প্রবিধানমালা, নির্দেশিকা ইত্যাদি
- ব্যাবসার বিষয়ভিত্তিক আইন:
- বাংলাদেশের আইন
আরও কিছু মনে আসলে পরে যোগ করবো: