নতুন উদ্যোক্তাদের উপর নেতিবাচক সামাজিক চাপ (সিরিজ : উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশ)

উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি দেখেছি তা হচ্ছে সামাজিক চাপ। আমরা কোন শিক্ষার্থীকেই ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হবার শিক্ষা দিয়ে বড় করি না, করতে চাইও না।

 

SufiFaruq.com Logo 252x68 2 নতুন উদ্যোক্তাদের উপর নেতিবাচক সামাজিক চাপ (সিরিজ : উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশ)

নতুন উদ্যোক্তাদের উপর নেতিবাচক সামাজিক চাপ

 

নিজের মেয়ে, বোনের বিয়ের সময় বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত এখনো চাকরিজীবীকেই অগ্রাধিকার তো দেয়ই, বরং সাধারণ ব্যবসায়ী পরিবারের মানুষ হয়েও চায় যে ছেলে একটা ভাল চাকরি করুক। কারণ তাদের স্বপ্ন নেই । নীতিমালার ফ্যার ও দুর্নীতির কারণে ব্যবসায়ের অভিজ্ঞতা সুখকর না।

আমার একটি প্রতিষ্ঠানে একবার একজন উদ্যোক্তাকে বক্তব্য দেবার জন্য ডেকেছিলাম । খবরের কাগজ দেখে একজন নেতা বলেছিলেন ‘বড়লোক বড়লোক চাচাতো ভাই, আমাদের ডাকলে তো আর আমরা মাল দিতে পারব না’ ।

সাধারণ ভাবে, ব্যবসায়ী বা শিল্পপতিদের মডেল হিসাবে দাঁড় করাবার স্টাইল টা আমরা এখনও শিখে উঠতে পারি নাই । আর বড় শিল্পপতিদের আমরা খুব ভাল বাসলেও নিজের নির্লোভ ও নিরপেক্ষ (!!!) ইমেজ বজায় রাখতে তাদেরকে নিয়ে বাইরে মাখামাখি করি না। সন্ধ্যার আড্ডায় যদিও তাদের সামনে তাদের অনেক স্তব করি।

‘আমাদের সমষ্টিক চিন্তা হল সৎভাবে ব্যবসা করা যায় না’ । আমাদের দেশের সামরিক শাসনের সময় দেখে মানুষের মনে এ কথাটি পোক্ত হয়েছে।

উদ্যোক্তার কাছে তার উদ্যোগ নিজের সন্তানের মত। সেটাকে তেল কাজল দিয়ে নাইয়ে-ধুইয়ে বড় করতে অনেক সময় – শ্রম দিতে হয়। সকল সিদ্ধান্ত একা নিতে হয়। কাজগুলোও একই সামলাতে হয়। উদ্যোগ বিফল হলে তো গেলই। সফল হয়ে হাত পা বড় হয় আর কাজ বাড়ে। সফলতার প্রধান শর্ত হিসেবে আসে নিয়মিত প্রবৃদ্ধি। ক্রমশ আরও বড় হতে থাকা। ব্যবসার আকারে, আয়ে, মুনাফায়, সুনামে, নিয়ন্ত্রণে, দক্ষতায়, আরও অনেক কিছুতে। তখন চারদিকে বাড়বাড়ন্তও কারবার প্রতিষ্ঠাতার একার পক্ষে সামাল দেয়া অসম্ভব হয়ে দাড়ায়। প্রবৃদ্ধির জিনিষটা নিষ্ঠুরভাবে আরও সময় চায়, নেতৃত্বে চায়। সেটা চাহিদামত না দিতে পারলেই বিপদ।

এযুগে দশানন হওয়া সম্ভব না। উদ্যোক্তা নাছোড় বান্দা হলে আর কিছুদূর আগায় বটে। তাতে নিজের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক জীবনে প্রভাব পড়ে। তার আত্মিক উন্নয়ন ও অন্যান্য উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক পর্যায়ে উদ্যোক্তাকে হার মানতেই হয়। অথবা বলি দিতে হয় ব্যবসার প্রবৃদ্ধিকে।

প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে ব্যবস্থাপনা কৌশলে পরিবর্তন আনতে হয়। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার আকার ও ক্ষমতা বাড়াতে হয়। একজন ব্যবস্থাপক এর বদলে একটি ব্যবস্থাপনা টিম তৈরি করতে হয়। তাদের মাধ্যমে দায়িত্ব এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হয়। এসবের মুল উদ্দেশ্য – বিভিন্ন পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ানো, সেই সিদ্ধান্ত সঠিক হবার সম্ভাবনা বাড়ানো। বরে-শাঁপ যেন না হয় – সে কারণে প্রতিটি পর্যায়ে জবাবদিহিতার আওতা বাড়ানো। এই মডেলটিকে কর্মী পরিচালিত ব্যবসা বা Management Run Business বলে।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment