বিদায় অন্নপূর্ণা দেবী

বিদায় অন্নপূর্ণা দেবী !

হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া একসময় ডান হাতে বাঁশি বাজাতেন। প্রতিষ্ঠিতও হয়েছিলেন সেভাবেই।
সেই ক্যারিয়ার ছেড়ে দিয়েছিলেন, বাঁশি বাজানোর হাত পালটেছিলেন, শুধুমাত্র অন্নপূর্ণা দেবীর (রওশন আরা বেগম) কাছে সঙ্গীত শিখবেন বলে।

দেবীর শর্ত ছিল- তাঁর কাছে শিখতে হলে, আগের সব শিক্ষা ভুলে যেতে হবে, একেবারে শুরু থেকে শিখতে হবে।
নাছোড়বান্দা চৌরাসিয়া শর্ত মেনে প্রতিজ্ঞা করলেন। বাকি জীবনে একবারও ডান হাতে বাঁশি বাজাননি।
গুরু শিষ্যের একাগ্রতা দেখে, দু’হাত ভরে দান করেছিলেন তাঁর সঙ্গীতকৃপা। শুধু সঙ্গীত নয়, খাবার-ব্যায়াম-প্রার্থনা-বিশ্রাম, সবই ঠিক করে দিতেন তিনি। বছরের পর বছর ধরে তিনি গড়ে তুলছিলেন আজকের হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়াকে।

চৌরাসিয়ার সেই শিক্ষাজীবন সম্ভবত ৪৬ বছর চলেছে। আজ অবসান হয়ে গেল।
অন্নপূর্ণা দেবী চলে গেলেন।

আজ তাঁর পরিচয়ে লেখা হচ্ছে- বাবা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান সাহেবের মেয়ে ও শিষ্য। কেউবা লিখছেন রবিশঙ্করের স্ত্রী।
কিন্তু আমার মনে হয় একজন শিক্ষাগুরুর সবচেয়ে বড় পরিচয় তাঁর শিক্ষার্থীরা। শিষ্যকে দেখলে গুরুর উচ্চতা বোঝা যায়।
বোঝা যায় তিনি অভিমানে জনসমক্ষে বাজানো, বা রেকর্ডিং যদি ছেড়ে না দিতেন, তাহলে আমরা তাঁর কাছ থেকে কেমন সুরবাহার শুনতাম? কি পেলাম না?

অন্নপূর্ণা দেবীর আত্মার শান্তি কামনা করি।
শিষ্যদের মধ্যে তাঁর সঙ্গীত বেঁচে থাক, মাইহার ঘরানার নাম বেঁচে থাক।

বিদায় অন্নপূর্ণা দেবী !