রেখাবের রূপ – গানটি ছিল কবীর সুমনের “বসে আঁকো” এলবামে।
গানটা অনেকেই খুব ভালোবাসেন। কিন্তু কিছু শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রূপক ব্যবহারের কারণে অর্থ গুছিয়ে উঠতে কষ্ট হয়।
তাদের জন্য বিষয়টা সহজ করা যাক।
রেখাবের রূপ
এই পুরো গানটি জুড়ে “কোমল রেখাব” কে উদযাপন করা হয়েছে।
“কোমল রেখাব” মানে “কোমল রিশব” বা “কোমল রে”। হারমোনিয়ামে “সা” আর শুদ্ধ “রে” এর মাঝে যেই স্বরটা থাকে।
সকালের সাথে এই সুরটার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। ওই সময়ের সব রাগে এই সুরটার প্রাধান্য আছে। এই সুরটার বিভিন্ন রূপ বিভিন্ন ভাবে উদযাপন করা হয়।
ব্রহ্ম মুহুর্তের কিছুটা আগে/পরে, প্রকৃতির অবস্থা যেমন থাকে, তাতে এই স্বরের বিশেষ প্রভাব থাকে।
এই স্বরটি তখন প্রাণীর অনুভূতিগুলো সতেজ করে আত্ম-সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করে। একই ভাবে প্রকৃতির সাথে সংযোগ স্থাপন সহজ করে। তাই ব্রহ্ম মুহূর্ত থেকে সকাল দশটার কাছাকাছি সময় পর্যন্ত রাগ গুলোতে এই “কোমল রেখাব” এর প্রাধান্য চলে।
কোমল রেখাব একটি সুর হলেও এর আলাদা আলাদা চেহারা আছে ( সাধারণ, অতি কোমল, দৃঢ়, দীর্ঘ, আন্দোলিত ইত্যাদি)। রাগাঙ্গ বা রাগের চলন ভেদে (কোন সুর থেকে আসছে-যাচ্ছে, কিভাবে আসছে-যাচ্ছে) চেহারা বদল হয়। তাই একটি রাগ গাইবার বাজাবার সময়, ওই রাগটির সঠিক রূপের “কোমল রেখাব” লাগাতে পারলে, গায়ক/বাদকের নিজেরই বিশেষ আনন্দ হয়। আবার এমনও দিন আসে, যখন একেবারে নিখুঁত ভাবে লেগে যায়, তখন পরমানন্দ হয়।
“রেখাবের রূপ” গানটিতে মূলত “যোগিয়া” রাগটি নিয়ে কথা হয়েছে। রাগটি উদাস ভাবের রাগ।
এই গানটিতে পণ্ডিত ভীমসেন যোশী, সকাল ৬ টার আশেপাশে, গান ধরেছেন যোগিয়া রাগে। যখন তিনি কোমল রেখাবে পৌঁছালেন বা কোমল রেখাব লাগালেন, তখন যোগিয়ার রেখাবটি তার কণ্ঠে দারুণভাবে লেগে গেল। সেই “উদাস রূপসী” তাকে নিয়ে চলল স্মৃতির গহনে। বয়ে যেতে যেতে হঠাৎ তার শিল্পী স্বত্বা একজন বালিকার বেশে ধরা পড়লো নজরুলের চোখে।
এখানে নজরুলের “কাবেরী নদী জলে কে গো” গানটির উল্লেখ করার আরেকটি কারণও হতে পারে সেই কোমল রিশব। রাগটির নাম নজরুল দিয়েছিলেন “কার্ণাটক সামন্ত”। এই রাগের গায়কী সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। তবে রাগটি শুনলে পুরো রাগজুড়ে পাবেন যোগিয়া আর গুণকেলীর সুগন্ধ।
সব মিলিয়ে গানটি সকালের কোমল রেখাবের একটি দারুণ উদযাপন।
আরও দেখুন: