আমাদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঠাট বিষয়টা পশ্চিমা সঙ্গীতের “স্কেল” এর সাথে তুলনা করা যায়। প্রতিটি রাগই কোন না কোন স্কেলে পড়েছে। মানে আরোহ বা অবরোহ কালে নির্দিষ্ট কিছু সুর প্রয়োগ করে, বা কিছু সুর বাদ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

এরকম একটি স্কেলে অনেকগুলো রাগ থাকতে পারে। একই স্কেলে যে রাগগুলো রয়েছে, তাদের গ্রুপকে বলে ঠাট। সহজ কথায় বলা যায় – ঠাট মানে বেসিক স্কেলের ভাগ বা গ্রুপ।
ঠাট মূলত একটি কারিগরি ধারনার বিষয়। হিন্দুস্থানি ক্লাসিকাল সঙ্গীতে সকল রাগকে বেসিক ১০ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তাই ঠাটের পার্থক্যে শ্রোতার খুব বেশি যায় আসে না। তবে জেনে রাখার জন্য নিচের টেবিলে ঠাট এবং স্বরের বিন্যাস দেয়া হল:
১) বিলাবল : সব স্বর শুদ্ধ – সা রা গা মা পা ধা না র্সা ।
২) কল্যান : তীব্র বা কড়ি মধ্যম – সা রা গা হ্মা পা ধা না র্সা ।
৩) খাম্বাজ বা খামাজ : কোমল নিষাদ – সা রে গা মা পা ধা ণা র্সা ।
৪) কাফি : কোমল গান্ধার ও কোমল নিষাদ – সা রা জ্ঞা মা পা ধা ণা র্সা ।
৫) আশাবরী : কোমল গান্ধার, কোমল ধৈবত ও কোমল নিষাদ – সা রে জ্ঞা মা পা দা ণা র্সা ।
৬) ভৈরব : কোমল ঋষভ ও কোমল ধৈবত – সা ঋা গা মা পা দা না র্সা ।
৭) মারোয়া: কোমল ঋষভ ও তীব্র বা কড়ি মধ্যম – স ঋা গ হ্মা প ধ ন র্স ।
৮) পূর্বী বা পূরবী: কোমল ঋষভ, তীব্র বা কড়ি মধ্যম ও কোমল ধৈবত – সা ঋা গা হ্মা পা দা না র্সা ।
৯) তোড়ি বা টোড়ি : কোমল ঋষভ, কোমল গান্ধার, তীব্র বা কড়ি মধ্যম ও কোমল ধৈবত – সা ঋা জ্ঞা হ্মা পা দা না র্সা ।
১০) ভৈরবী: কোমল ঋষভ, কোমল গান্ধার, কোমল ধৈবত ও কোমল নিষাদ= সা ঋা জ্ঞা মা পা দা ণা র্সা ।
* এই ঠাটগুলোর বাইরে পড়েছে, এরকম কিছু রাগ আছে। আহির-ললিত, ভাবানী-কেদার এর মতো রাগুলো আবার মিশ্র ঠাটে পড়েছে। আবার কিছু রাগ আছে, যেগুলো অতিতে স্বরব্যাবহারের ভিন্নতার কারনে একটি ঠাটে পড়তো, আজ পড়ে অন্য ঠাটে।
বলার সময় অনেকেই বলেন – অমুক ঠাট থেকে অমুক রাগের জন্ম। আবার এও বলা হয় – অমুক ঠাটের জনক অমুক রাগ। তাই ডিম-মুরগি সিচুয়েশন হয়ে যায়। প্রসঙ্গতই প্রশ্ন আসে – ঠাট আগে, নাকি রাগ? আবার – রাগ থেকে সৃষ্টি ঠাট, নাকি ঠাট থেকে রাগের জন্ম?
আসলে রাগের জন্ম – বিভিন্ন কালে, বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ভাবে। বহু যুগ ধরে চলে আসছে। এদেরকে সহজে গ্রুপ করার জন্য ঠাট এর ধারনার জন্ম। এটা সাম্প্রতিক আবিষ্কার।
এবার ঠাটগুলো নিয়ে আর কিছু আলোচনা এবং জনক রাগগুলোর সাথে পরিচয়:
১) বিলাবল:
এই ঠাটের সব স্বর শুদ্ধ, কোন বিকৃত স্বর নেই। ঠাটের জনক রাগের নাম বিলাবল। স র গ ম্ প ধ ন র্স । কেউ কেউ বলেন হযরত বেলাল (র:) যেই সুরে আযান দিতেন সেই সুরের প্রতিফলন আছে বিলাবলে। তার নামের উপরে ভিত্তি করে বিলাবল রাগের নামকরণ।
ঠাট-বিলাবল এর সার্গাম-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
ঠাট-বিলাবল এর লক্ষণ-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
এনসিইআরটির এই ভিডিওটিতে বিলাবল রাগের পরিচিতি পাওয়া যাবে।
২) কল্যান:
ম(কড়ি) = সা রে গা (করি)মা পা ধা নি । স র গ ম প ধ ন র্স ।
ঠাট-কল্যাণ এর সারগম-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
ঠাট-কল্যাণ এর লক্ষণ-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
এনসিইআরটির এই ভিডিওটিতে কল্যান রাগের পরিচিতি :
৩) “খাম্বাজ” বা “খামাজ”:
নি(কোমল)= সা রে গা মা পা ধা (কোমল) নি। স র গ ম্ প ধ ন্ র্স ।
ঠাট-খাম্বাজ এর সারগম-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
ঠাট-খাম্বাজ এর লক্ষণ-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
এনসিইআরটির এই ভিডিওটিতে খাম্বাজ রাগের পরিচিতি:
৪) কাফি:
গা ও নি (কোমল)= সা রে গা (কোমল)মা পা ধা নি(কোমল)। স র গ্ ম্ প ধ ন্ র্স ।
ঠাট-কাফি এর সারগম-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
ঠাট-কাফি এর লক্ষণ-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
এনসিইআরটির এই ভিডিওটিতে কাফি রাগের পরিচিতি :
৫) আশাবরী:
গা ধা নি(কোমল)= সা রে (কোমল)গা মা পা (কোমল)ধা (কোমল) নি । স র গ্ ম্ প দ্ ন্ র্স ।
ঠাট-আশাবরী এর সারগম-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
ঠাট-আশাবরী এর লক্ষণ-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
এনসিইআরটির এই ভিডিওটিতে আশাবরী রাগের পরিচিতি :
৬) ভৈরব:
রে ও ধা(কোমল)= সা (কোমল)রে গা মা পা (কোমল) ধা নি । স র্ গ ম্ প দ্ ন র্স ।
ঠাট-ভৈরব এর সারগম-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
ঠাট-ভৈরব এর লক্ষণ-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
এনসিইআরটির এই ভিডিওটিতে ভৈরব রাগের পরিচিতি :
৭) মারোয়া:
রে কোমল) ও মা (করি)= সা (কোমল)রে গা (করি)মা পা ধা নি । স র্ গ ম প ধ ন র্স ।
ঠাট-মারোয়া এর সারগম-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
ঠাট-মারোয়া এর লক্ষণ-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
এনসিইআরটির এই ভিডিওটিতে মারোয়া রাগের পরিচিতি :
৮) পূর্বী বা পূরবী:
রে/ধা(কোমল) ও মা(করি)= সা (কোমল)রে গা (করি)মা পা (কোমল)ধা নি । স র্ গ ম প দ্ ন র্স ।
ঠাট-পূরবী এর সারগম-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
ঠাট-পূরবী এর লক্ষণ-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
এনসিইআরটির এই ভিডিওটিতে পূরবী রাগের পরিচিতি :
৯) তোড়ি বা টোড়ি:
রে গা ধা (কোমল) ও (কড়ির)মা = মা (কোমল) রে (কোমল) গা (কড়ির)মা পা (কোমল) ধা নি । স র্ গ্ ম প দ্ ন র্স ।
ঠাট-টোড়ি এর সারগম-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
ঠাট-টোরি-র লক্ষণ-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
এনসিইআরটির এই ভিডিওটিতে টোড়ি রাগের পরিচিতি :
১০) ভৈরবী:
রা গা ধা ও নি (কোমল)= সা (কোমল)রে (কোমল)গা মা পা (কোমল)ধা (কোমল) নি । স র্ গ্ ম্ প দ্ ধ ন র্স ।
ঠাট-ভৈরবী এর সারগম-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
ঠাট-ভৈরবী এর লক্ষণ-গীত:
রচনা : আলম পিয়া
কম্পোজিশন ও কণ্ঠ: জে. আই. মিতুল
এনসিইআরটির এই ভিডিওটিতে ভৈরবী রাগের পরিচিতি :
এই সিরিজে ঠাট ভিত্তিক রাগের গ্রুপ তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে।
[ ঠাট, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঠাট ]
ঠাট ছাড়াও সিরিজের বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল সূচি:
Declaimer:
শিল্পীদের নাম উল্লেখের ক্ষেত্রে আগে জ্যৈষ্ঠ-কনিষ্ঠ বা অন্য কোন ধরনের ক্রম অনুসরণ করা হয়নি। শিল্পীদের সেরা রেকর্ডটি নয়, বরং ইউটিউবে যেটি খুঁজে পাওয়া গেছে সেই ট্রাকটি যুক্ত করা হল। লেখায় উল্লেখিত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যেসব সোর্স থেকে সংগৃহীত সেগুলোর রেফারেন্স ব্লগের বিভিন্ন যায়গায় দেয়া আছে। শোনার/পড়ার সোর্সের কারণে তথ্যের কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে। আর টাইপ করার ভুল হয়ত কিছু আছে। পাঠক এসব বিষয়ে উল্লেখে করে সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
*** এই আর্টিকেলটির উন্নয়ন কাজ চলমান ……। আবারো আসার আমন্ত্রণ রইলো।
2 thoughts on “ঠাট | হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঠাট”