শুভ জন্মাষ্টমী [ Shuvo Janmashtami ] !
কৃষ্ণ করলে লীলা, আর আমরা করলে…. মাদের খুব প্রচলিত রসিকতার একটি।
সনাতন ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণকে দেখার কিংবা বিচার করার আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে, কিছুটা আমাদের সেমেটিক ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসের সিস্টেমের কারণে, কিছুটা ওয়েস্টার্ন পার্সপেকটিভ-ন্যারেটিভ থেকে। তার প্রসঙ্গ মানেই- রাধা, গোপী, রসলীলা এসব উদাহরণে। ঠাট্টা, ছেলেখেলা, এগজটিক, তবে তেমন সিরিয়াস কিছু নয়।
ইদানীং ভারতের কোন কোন আলেম শ্রীকৃষ্ণ আমাদের প্রাচীন যুগের কোন নবী কিনা তা নিয়েও আলোচনা করছেন শুনি। যাহোক আমার আজকের প্রসঙ্গ সেটা নয়।
আমারও শ্রীকৃষ্ণ নিয়ে ভাবনা এমনি ছিল। যখন মহাভারত দেখার, পড়ার বা সামান্য বোঝার সুযোগ হল, তখন এই বোধ নিয়ে লজ্জা পেয়েছি। শ্রীকৃষ্ণ এর চেয়ে হাজার গুণ বড় ক্যানভাস। তার পুরো ছবি বা মূল ভূমিকা নিয়ে আমাদের কথা হয় না, জানা হয় না।
আমি প্রথমে শ্রীকৃষ্ণকে দেখলাম প্রধানত একজন শিক্ষক বা মেন্টর হিসেবে। যিনি বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শেখার উপযুক্ত করেন। মাছ ধরতে উৎসাহ দেন, তবে ধরার উপায় হাত ধরে শেখান না। এমন একটা প্রসেসের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যান, যেখানে শিক্ষার্থী নিজের আলাদা একটি মাছ ধরার ফর্মুলা আবিষ্কার করবে।
বা শ্রীকৃষ্ণ একজন উদ্যোক্তা। যিনি ত্রেতা যুগের শুরুতে “পরশুরাম” হিসেবে শক্ত হতে, সুনির্দিষ্ট আদর্শের উপর ভিত্তি করে, সংসার প্রতিষ্ঠান গড়েছিলেন। এরপর ভরপুর সুখের সংসারে (বা প্রতিষ্ঠানের রমরমা সময়) “শ্রীরাম” হিসেবে দৃষ্টান্তমূলক নেতৃত্ব দেখিয়ে, প্রতিষ্ঠানের সফলতার যজ্ঞে নিজেকে “আহুতি” দিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন। এরপর “দ্বাপর” যুগে, যখন প্রতিষ্ঠানটি নিজভারে ক্ষয়িষ্ণু, দূষিত, দুর্নীতিগ্রস্ত, তখন তিনি “শ্রীকৃষ্ণ” হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠানটিকে আদর্শ এবং নিয়ম দিয়ে চলা বৃহৎ কর্পোরেশন হিসেবে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। মাল্টি স্টেক হোল্ডারের ইন্টারেস্ট দিয়ে চেক-ব্যাল্যান্স করার সিস্টেম তৈরি করতে চেয়েছিলেন। এছাড়া সেসবের বাইরে গেলে কর্পোরেশন ধ্বংস হয়ে যাবে, সেই শিক্ষাও দিতে চেয়েছিলেন। অনেকটা স্টক এক্সচেঞ্জে লিস্টেড করানোর মতো!
আমার কাছে তার শিক্ষার সবচেয়ে দারুণ বিষয়টি হল ” সাবজেক্টিভিটি বা সাবজেক্টিভ ট্রুথ” মেনে নিতে পারা। এভাবে তার কর্মের, শিক্ষার বহু পার্সপেকটিভ আছে। শিক্ষক হিসেবে তিনি অনেক দীর্ঘ। বামুন মাথা দিয়ে চট করে তাকে ঠাট্টা করা যায়, তাকে মাপা যায় না।
আমি প্রতিটি ধর্ম থেকে শিক্ষা নেই। যে ধর্মের যে কথাটি, মানুষের ভালোর জন্য, সেটি আমি শিক্ষণীয়, পালনীয় মনে করি।
আমার নবীগণ, রসুল (সা:) এর জীবনের পেটি ইস্যু নিয়ে তাকে মাপলে আমার মন খারাপ হয়। তেমনি অন্য কোন ধর্মের লোকের একই ধরনের শ্রদ্ধেয় মানুষকে অশ্রদ্ধা করলেও মন খারাপ হয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাই বোনদের জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা। শুভ জন্মাষ্টমী !
সলিম সহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বলি – অপেক্ষাকৃত সত্যকে পৃথিবীর বাস্তবতা হিসেবে স্বীকার, পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতাই একটি সুখি, সমৃদ্ধিশীল, মানবিক পৃথিবী নির্মাণ করতে পারবে। একে অন্যকে ছোট-বড় করে নয়।
আরও দেখতে পারেন :