আজ সৌদি আরবে মেয়েদের মাহরাম ছাড়া হজ করার অনুমতি বিষয়ে খবরগুলো অনেকেই আমাকে ফরওয়ার্ড করেছেন মত চেয়েছেন।
এবার শুধুমাত্র সৌদি আরবের মেয়েদের জন্য দেয়া হয়েছে। হয়ত অচিরেই অন্য দেশের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এটিকে অনেকেই একটি বড় ঘটনা হিসেবে দেখছেন।
সবার মত জানতে লিখেছিলাম লিখেছিলাম:
পুরুষ অভিভাবক (মাহরাম) ছাড়াই হজে নারীদের অনুমতি দিলো সৌদি আরব।
এর বিপক্ষে বহু বছর বয়ে বেড়ানো সহি দলিল, ফাতওয়া গুলোর এখন কি হবে?
অনেকেই অনেক রকম লিখেছেন।
সৌদি আরবে মেয়েদের মাহরাম ছাড়া হজ করার অনুমতি প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য কমেন্ট হলো:
“Sohanuzzaman Mohan” wrote:
That’s a great decision. Islam needs radical reformation and it’s good to see it’s initiating from its birthplace.
Shahan Ahmed” wrote:
Dharam Sankat mein!
“Sujan Sondipon” wrote:
এইটা ভাই যুগের দাবি। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই আমরা পরির্বতন হতে দেখেছি । ছোট বেলায় শুনতাম টিভি দেখা হারাম। সময়ের সাথে সাথে দেখছি, হুজুররা টিভিতে অনুষ্ঠান করে। এখন আর কেউ হারাম বলে না । কালের পরির্বতনে হারাম হয়ে গেছে আরাম ।
“Sabbir Ahmed” wrote :
Zillur Rahman – যাক একজন কে পাওয়া গেলো যিনি আল্লহর বিধান নিজে জানেন!
ভাই আমাদের একটু জানান। বিধান কি বলে? মাহরাম লাগবে কি না?
“Shahinur Rahman” wrote :
ওটা জায়েজ করার ফাঁকফোকর খোঁজা হচ্ছে!
“Subir Bhaumik” wrote :
All religions , mine and yours, instituonalise patriarchy
“Sabbir Ahmed” wrote :
Zillur Rahman – যাক একজন কে পাওয়া গেলো যিনি আল্লহর বিধান নিজে জানেন! ভাই আমাদের একটু জানান। বিধান কি বলে? মাহরাম লাগবে কি না?
“Rafiqul Islam” wrote :
আমাদের দেশে এমনটা হলে তো তথাকথিত হুজুরদের ঘুম হারাম হয়ে যেত।
“Sabbir Ahmed” wrote :
মাসালা বদলায়ে যাবে। ব্যাপার না। সকালের ওয়াজ রাতে বদলালেই লোকে মেনে নেয় আর এসব তো বহু দিনের বিষয়। হুজুরের চামড়ার মুখ আর মুর্খ জনগণের গোল্ডফিশ মেমরি। সহি দলিল জয়িফ হয়ে কোল্ড স্টোরেজ যাবে আবার সুবিধাজনক টাইমে বের করার জন্য।
“ইমরুল কায়েস খান” wrote :
এটা তো ইসলামের বিধান, সৌদি আরবের না! তাহলে কি সৌদিআরব ইসলামের বিধান ও পরিবর্তন করতে পারে???
“Sabbir Ahmed” wrote :
Sufi Faruq
ইদানিং দেখি আপনার স্ট্যাটাসে প্রচুর ইসলাম বিশেষজ্ঞ এসে, ফট করে কমেন্ট করে আমাকে তাক লাগিয়ে দেয়। যেমন ধরেন ঃ
— আপনার ইসলামিক জ্ঞ্যানের ঘাটতি আছে।
— কুরআন হাদিস জেনে কথা বলুন।
দেখে মুগ্ধ হয়ে তার কাছ থেকে বিষয়টি জানতে চাই। একটু কথা বলেই দেখি সে আসলে জানার ভান করছিলো। বা কোন হুজুরের কাছে শুনে জ্ঞান প্রদর্শনে এসেছে।
এরপর চেপে ধরে দলিল চাইলে কমেন্ট মুছে কেটে পড়ে।
এই একটা জেনারেশন নতুন হুজুররা বানাইছে। এরা নিজে দুই লাইন কোনদিন পড়ে নি। কিন্তু ইসলামি বিষয়ে মত দিতে পাগল। দারুণ পুন্য কামাইয়ের অনুভব নিয়ে অনলাইনে বিষ্টা ছিটিয়ে গন্ধ করে বেড়ায়।
এরা আমাদেরই ছোট ভাই বোনেরা। ভাবলেই খারাপ লাগে।
“Shakil Raihan Mon” wrote :
আর আমাদের এমপিরা নারী টিএনও দিয়ে গার্ড অব অনার দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছে…
বেশিরভাগ কমেন্টকারীদের সাথে ফারদার কমেন্ট করে যেটি বুঝলাম বেশিরভাগের এই বিষয়টিতে স্পষ্ট ধারণা নেই এবং তারা কেউই এই বিষয়ে সরাসরি কমেন্ট করতে চান না। তবে সবাই কমেন্ট করে জানাতে চান যে তিনি কনসার্ন। কোরান হাদিসে যা আছে তাই হোক টাইপ একটা মতামত।
তবে অন্য আলাপ যা হয়, এটার একটা পর্যায়ে সেই কোরআন হাদিস আর বিষয়ে এসে থামে।
“Sarware Akhtar” wrote:
ভাইয়া, যদ্দুর জানি এটা ধর্ম মতে সহীহ নয়। যদি জানায় ভুল থাকে তবে সে রেফারেন্সগুলো পেলে উপকৃত হতাম। Akhteruzzaman Emon could you help me?
সেখানে আমি লিখেছিলাম – Sarware Akhtar ধর্মমতে বলাটা একটু ভেগ। আমাদের আর একটু প্রিসাইজ হওয়া দরকার। কারণ কেউ কোরানের কথা পর্যন্ত ধর্ম ধরবে আবার কেউ মামুনুল হুজুর আজমাইন পর্যন্ত ধরবে।
এর পরে বেশ কিছু আলাপ হলো। তবে শেষে এসে যে উত্তর দিয়েছি তা হলো:
কোরান নিয়ে তো কোন সমস্যাই নেই। কিন্তু হাদিস এর সাথে এই “সহি” শব্দটা নিয়ে যত বিবাদ। একজনের কাছে যেটি সহি, সেটি অন্যজনের কাছে নয়। আর বোনাস বিবাদ হচ্ছে লিটারাল প্রয়োগ ও কন্টেক্টচুয়াল প্রয়োগ নিয়ে।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে কুরান-হাদিস লিটারালি ট্রান্সলেট করার যুগ শেষ হয়েছে বহুকাল আগে। কিন্তু বিভিন্ন স্বার্থে সেটার সিলমিলা জারি রাখা সম্ভব হয়নি। দুটি উদাহরণ দেই।
১. খেলাফয়ে রাশেদার সময় ল্যান্ড সেটেলমেন্ট ইস্যুতে “মাল-এ-ফ্যায়” এবং “মাল-এ-গনিমত” এর বিতর্কের সময়, কোরআনের লিটারাল টান্সলেশনের বদলে কোরানিক প্রিন্সিপ্যালকে ( সমতা ও ন্যায্যতা ) গুরুত্ব দেয়ার উদাহরণ সৃষ্টি করা হয়েছিল। সেসময় জায়গীরদারি প্রার্থীরা, কোরআনের আয়াত দেখিয়ে, জায়গীরদারি দাবী করেছিলেন। সেটা দেয়া হয়নি।
খলিফা সহ দূরদর্শী কয়েকজন সাহাবী এর বিরোধিতা করেন। তারা বলেন, কুরানে লেখা থাকলেও, কুরআনেরই মুল প্রিন্সিপ্যাল অনুযায়ী, জায়গির দেয়া অন্যায় হবে, এর বদলে জমি সবার মালিকানায় ভাগ করতে হবে। পৃথিবীর প্রথম ল্যান্ড রিফর্ম কমিশন বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। আবার কুরানের সেই আয়াত দেখিয়ে কিন্তু পাকিস্তানে জায়গীরদারি হালাল করিয়ে, জায়গীর দেয়া হয়েছে।
২. কুরআনে স্পষ্ট বলা আছে হেটে এবং পশুর পিঠে চড়ে হজ করতে হবে। নিজের অসুবিধার কথা বিবেচনায় কেউ সেটা করেন না। তার মানে লিটারাল ট্রান্সলেশন মানেন না। আবার সেই একই লোক কিন্তু অন্য বিষয়ে ( তার যাতে নিজের লাভ বা নিজের বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হবে) লিটারাল ট্রান্সলেশন নিয়ে বিবাদ করবেন।
সমস্যা হয়েছে আমরা তো বেশিরভাগই কোরআনের মুল কথাটা মানি না। সেটি হচ্ছে পড়া, চিন্তা ও উপলব্ধি করা। তারপর সে যতটুকু উপলব্ধি করবে, ততটুকু তার জন্য শরিয়া। তাই আমার শরিয়া আর তোমার শরিয়া হয় এক নাও হতে পারে। আমার শরিয়া অনুযায়ী বিচার হবে, তোমার বিচার তোমার শরিয়া অনুযায়ী। কিন্তু আমরা সেটা করবো না। আমরা অন্য একজনের কাছ থেকে শুনে নেবো কোনটা হারাম-হালাল। এরপর তা নিয়ে বাহাসে নেমে পড়বো। বাহাস গড়িয়ে গালি দেবো। তারপর হাতাহাতি। তার পরেও আগালে খুন। “পড়০ তোমার প্রভুর নামে” আজ হয়ে গেছে “শোনো তোমার প্রভুর নামে”।
এবার আমি কিভাবে দেখি সেটা বলি।
যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, সেটা যদি কোরানিক টেক্সট, সেটার কন্টেক্সটুয়াল প্রয়োগ এবং এই সময় বিবেচনা করা হয়, তবে আমার কাছে এটি প্রায় নন-ইস্যু বা ট্রিভিয়াল ইস্যু। অন্য কারো কাছে কিন্তু সেটা এমন নাও হতে পারে। তার কাছে হয়তো ইস্যুটা জান দেয়া।
এবার তুমি কিভাবে দেখতে পারো ?
এখন তুমি নিজের বুদ্ধি দিয়ে বিচার করো, এখানে মুল স্পিরিট টা কি? মাহরম নামে একটা রেয়াজ নাকি একজন মহিলার নিরাপত্তা?
তারপর ভাবো, এই যুগে একজন সামর্থ্য-বান মহিলা, নিজ উদ্যোগে ভিসা টিকেট করে, একা ট্রাভেল করে, হজ পালন করে, সব রকম সম্ভ্রম নিয়ে ফিরে আসতে পারবে কি না?
আমি তোমাকে টেক্সটের ভিন্ন কনটেক্সট শোনাতে পারি, একটা পার্সপেকটিভ দিতে পারি।
সিদ্ধান্ত কিন্তু তোমার, আমার আমার না।
সৌদি আরবে মেয়েদের মাহরাম ছাড়া হজ করার অনুমতি প্রসঙ্গে পোস্টের লিংক : https://www.facebook.com/sufi.faruq/posts/10158494382536589
আরও পড়ুন:
ধর্মনিরপেক্ষতা, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, সেক্যুলারিজম – কি, কেন, কিভাবে?