হাজার বছরের সংস্কৃতি – নিয়ে কথা উঠলেই কিছু অযোক্তিক বিতর্ক করতে দেখা যায়। তাদের কথা হচ্ছে – হাজার বছর ধরেই আপনারা এমনে রান্না করতেন? এমনে খাইতেন? এমনে কুলি করতেন?
এসব বিতর্ক ফালতু। যারা এই প্রশ্ন করে তাদের সংস্কৃতি বিষয়টা পরিস্কার হওয়া দরকার আগে।
হাজার বছরের সংস্কৃতি মানে, হাজার বছর ধরে একই রকম থাকে, বিষয়টা এমন না।
জীবন্ত সংস্কৃতি মানে প্রতিনিয়ত বদলাতে থাকা। প্রবাহমান নদীর মত। থেমে যাওয়া মানেই মারা যাওয়া।
আমাদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত প্রায় ৬ হাজার বছরের। তার মানে কি ৬০০০ বছর ধরে একই রকম রাগ, সুর, তাল, গায়কী চলছে? একদম না। পুরানো বাদ দিলাম। ১২ শতকে লেখা প্রামাণ্য সঙ্গীত শাস্ত্র “সঙ্গীত রত্নাকর” এ উল্লেখিত রাগ গুলোর সাথে আজকের গাওয়া বাজানো রাগের মিল নেই বললেই চলে। ৭০/৮০ বছর পর পর গায়কি বদলেছে।
চর্যাপদ আমাদের প্রাচীনতম সাহিত্য। কিন্তু আজকের জানা বাংলা দিয়ে সেটা পড়া সম্ভব নয়। কারণ বদলে গেছে। বঙ্কিমের লেখা আমার ছেলে বুঝতে পারবে না। আমার নাতি হয়তো রবীন্দ্রনাথের লেখা ভাষায় রবীন্দ্রনাথ পড়ে বুঝবে না।
ফার্সির রুসমুলখাত দিয়েই উর্দু লেখা হতো। সেই প্রতাপশালী বর্ণমালা এখন সংখ্যালঘু। এই যুগের উর্দু কবিদের অনেকেই রোমানে লেখেন। উর্দুতে শব্দ জুড়ে নতুন শব্দ বানানোর রেয়াজ মৃতপ্রায়।
ভাষার প্রকাশভঙ্গী বদলায়, শব্দ বদলায়, এমনকি বর্ণও বদলায়। সবচেয়ে দীর্ঘ সময় অবিকৃত থাকে পদবিন্যাস (syntax); তাও বদলায়।
এখন আসি পরের প্রশ্নে।
সব যদি এভাবে বদলেই যায় তবে হাজার বছরে থাকে কি?
থাকে পরিচয়, থাকে বিবর্তনের অভিজ্ঞতা, তা থেকে সৃষ্ট প্রজ্ঞা, পরিশোধিত সর্বশেষ সংস্করণ। সেটাই সম্পদ।
সেই সম্পদ কি কাজে লাগে?
সেই সম্পদের ভিত্তির উপরে দাড়িয়ে উন্নততর ভবিষ্যৎ নির্মিত হয়। যেটা একটি শক্ত বিল্ডিং এর জন্য ফাউন্ডেশনের মতই জরুরী।
[ হাজার বছরের সংস্কৃতি মানে কী? | সহজ কথা ]
আরও পড়ুন: