বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জ থেকে শহরাঞ্চল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আনসার ও ভিডিপি (Village Defence Party) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত এই সশস্ত্র জনসমর্থিত বাহিনী দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা, সমাজ উন্নয়ন ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কাজেও নিয়োজিত।
আনসার ও ভিডিপি: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
আনসার বাহিনী ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, আর ভিডিপি ১৯৬০-এর দশকে আনসারের একটি শাখা হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এই দুই বাহিনী মিলিতভাবে দেশের নিরাপত্তা ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে। আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের সহায়ক বাহিনী হিসেবে কাজ করে।
আইনগত ভিত্তি
বাংলাদেশ সরকার ২০০৮ সালে “আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী আইন” (Ansar and Village Defence Party Act, 2008) কার্যকর করে, যা আনসার ও ভিডিপির কার্যক্রম, সদস্যদের অধিকার, দায়িত্ব এবং কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এই আইনের মাধ্যমে আনসার ও ভিডিপি বাহিনীকে একটি বৈধ সশস্ত্র জনসমর্থিত বাহিনী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
আইনের মূল বিষয়গুলো হলো:
- আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের নিয়োগ, কর্তব্য ও দায়িত্বসমূহ স্পষ্ট করা।
- তাদের নিরাপত্তা ও সুবিধাসহ অন্যান্য অধিকার নিশ্চিত করা।
- আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাদের কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতা নির্ধারণ।
- তাদের প্রশিক্ষণ, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দিকনির্দেশনা দেওয়া।
আনসার ও ভিডিপির প্রধান দায়িত্বসমূহ
১. আইনশৃঙ্খলা রক্ষা:
আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রণয়নকারী সংস্থার সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তারা জনপদে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে অপরাধ দমন এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে।
২. গ্রামীণ নিরাপত্তা ও সেবায় সহায়তা:
গ্রাম ও নগর এলাকায় জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, গরিব ও অসহায়দের সাহায্য করা এবং সমাজ উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখা তাদের অন্যতম দায়িত্ব।
৩. দুর্যোগ মোকাবেলা:
বন্যা, ঝড়, ভুমিধস বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন।
৪. সীমান্ত রক্ষা ও আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা:
কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় সীমান্ত রক্ষায় বা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কার্যক্রমে আনসার সদস্যরা নিয়োজিত থাকেন।
৫. সামাজিক ও স্বাস্থ্যসেবায় অবদান:
আনসার ও ভিডিপি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যেমন শিশু স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, শিক্ষাসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করে।
আনসার ও ভিডিপির সদস্যদের ক্ষমতা ও কর্তব্য
- আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সহায়তা প্রদান ও অপরাধ দমনে পুলিশের সহযোগিতা।
- সরকারি সম্পত্তি ও জনসাধারণের মালামাল রক্ষা।
- সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ ও থানা কর্তৃপক্ষকে তথ্য প্রদান।
- স্থানীয় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
- ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্তৃক প্রদত্ত বিশেষ নির্দেশ পালন।
আনসার ও ভিডিপি বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সমাজ উন্নয়নে অনন্য অবদান রেখে চলেছে। তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ, নিয়মিত তত্ত্বাবধান ও জনসম্পৃক্ততা বাড়ালে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের ভূমিকা আরও শক্তিশালী হবে। নাগরিকদেরও উচিত এই বাহিনীর কাজের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং তাদের কার্যক্রমে সহযোগিতা করা।