আব্দুল জব্বার (১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮ – ৩০ আগস্ট ২০১৭) ছিলেন বাংলা গানের ইতিহাসে এক অনন্য নাম। তিনি শুধু গায়ক নন, ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের এক অনন্য সংগীতযোদ্ধা, যার কণ্ঠে উচ্চারিত গান বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে শক্তি ও প্রেরণা যুগিয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধ ও আব্দুল জব্বার
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে।
তাঁর কণ্ঠে “সালাম সালাম হাজার সালাম”, “জয় বাংলা বাংলার জয়” সহ অসংখ্য উদ্বুদ্ধকরণ গান মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়েছিল।
মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গিয়ে তিনি হারমোনিয়াম বাজিয়ে গণসঙ্গীত পরিবেশন করতেন, যা যোদ্ধাদের মনোবল বাড়িয়ে দিত।
তাঁর গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অসংখ্য তরুণ অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
এছাড়া তিনি ভারতীয় কিংবদন্তি গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি গান গেয়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের ত্রাণ তহবিলে প্রায় ১২ লাখ রুপি দান করেন—যা এক নজিরবিহীন ঘটনা।
কালজয়ী গান
তাঁর কণ্ঠে গাওয়া—
“তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়”
“সালাম সালাম হাজার সালাম”
“জয় বাংলা বাংলার জয়”
এই গানগুলো আজও মুক্তির প্রতীক হিসেবে বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে আছে। ২০০৬ সালে বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের ভোটে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় এই তিনটি গান স্থান পায়।
পুরস্কার ও সম্মাননা
আব্দুল জব্বারের অবদান শুধু মুক্তিযুদ্ধেই সীমাবদ্ধ নয়, তিনি সঙ্গীতের মাধ্যমে আজীবন বাঙালির আত্মপরিচয় ও স্বাধীনতার চেতনা ছড়িয়ে গেছেন। এজন্য তিনি পেয়েছেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা—
একুশে পদক (১৯৮০)
স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৬)
আব্দুল জব্বার শুধু একজন শিল্পী ছিলেন না; তিনি ছিলেন স্বাধীনতার কণ্ঠস্বর, মুক্তিকামী বাঙালির আবেগের প্রতীক। তাঁর গান আজও আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে।
সঙ্গীতে আগ্রহী হলে পড়তে পারেন:
- সুফি ফারুক ইবনে আবুবকরের “অসুরের সুরলোকযাত্রা সিরিজ” টি পড়তে পারেন।
 
মুক্তিযোদ্ধা গায়ক আব্দুল জব্বারের অমর গান:
