কবিতা আর কবির ভক্ত রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু

কবিতা আর কবির ভক্ত রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু!
রাষ্ট্রপ্রধানদের কাউকে দেখতে যাওয়া সচরাচর আনুষ্ঠানিকতা-পূর্ণ হয়।
তিনি শয্যা পাশে দাড়িয়ে কুশলাদী জিজ্ঞেস করবেন, পীড়িতর আত্মীয় স্বজনদের সাথে দু-একটি কথা বলবেন, সাহায্য সহযোগিতার ঘোষণা দেবেন, ক্যামেরা ছবি তুলবে, এরপর চলে যাবেন।

কিন্তু এ ছবি ভিন্ন কথা বলে।
বঙ্গবন্ধু পারতেন রাষ্ট্রপ্রধানের আড়ম্বর পার করে, একজন কবিতার ভক্ত হিসেবে, কবির শয্যাপাশে সামনে নতজানু হয়ে বসতে। শুধু কর্তব্য বা দয়া নয়, অকৃত্রিম ভালবাসা দিয়ে সিক্ত করতে।

রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধুর- কবি এবং কবিতার প্রতি ভালবাসার অনেক গল্প আছে।
সেসময় কবি আল মাহমুদের অর্থকষ্ট চলছিল। বঙ্গবন্ধু তাকে একটি সরকারি দপ্তরে প্রকাশনা বিভাগের সহ-পরিচালক পদে নিয়োগ দেবার জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। যোগদান করতে গেলে বড়কর্তা কবির কাছে সার্টিফিকেট চায়। ম্যাট্রিক পাশ কবি আল মাহমুদ সার্টিফিকেট না দিতে পারায় বড় কর্তা তাকে যোগদান করতে করতে দেননি। এরপর বঙ্গবন্ধু বিষয়টি জানতে পেরে বড়কর্তাকে ডেকে প্রশ্ন করেন – এই কবির আবার সার্টিফিকেট কি রে? পারবে বড় সার্টিফিকেট ধারী ওর মতো দু লাইন লিখতে? তারপর কবিকে তৎক্ষণাৎ যোগদান করাতে বলেন। সারা জীবন সেই চাকরি করে আল মাহমুদ অবসর নিয়েছেন (দুর্ভাগ্যবশত শেষ বয়সে আল মাহমুদ অর্থলোভী হয়ে, জামাতের উপদেষ্টা হয়েছেন)।

কবিতা আর কবির ভক্ত

কবিতা আর কবির ভক্ত রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু

মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে থাকা সত্ত্বেও অভাব-অনটনে রিক্ত কবি ফারুখ আহমদকে অর্থ সাহায্য করতেন। যুদ্ধোত্তর দেশে শিল্পী কমল দাশগুপ্তকে রেডিওতে, পল্লী কবি জসীম উদ্দিনকে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। অসুস্থ কবি হুমায়ূন কবির, আবুল হাসান, মহাদেব সাহা এঁদেরকে সুচিকিৎসার জন্য বার্লিন-মস্কো-লন্ডন পাঠান।

১৯৫৭ সালে মাত্র ১৪ মাসের মন্ত্রিত্বের মধ্যেই পাশ করেন ‘বাংলা একাডেমী অ্যাক্ট ১৯৫৭’। চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা – বিল তারই উপস্থাপন করা। প্রত্যক্ষদর্শীরা আজও বলেন, তার নিজের আগ্রহে ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমীতে, দেশি বিদেশি সাহিত্যিকদের নিয়ে, যে সাহিত্য সম্মেলন হয়েছিল, এর পরে তেমন আর দেখা যায়নি।

 

১৯৭৩ সাল। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের শয্যা পাশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭৩ সাল। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের শয্যা পাশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

 

আর এজন্যই হয়ত তার অবর্তমানে তাকে নিয়ে লেখা হয় হাজার-লক্ষ কবিতা, গল্প। তার হত্যার প্রতিবাদে লেখক নির্বাসন নেন। প্রবাসে বসে কবি দাউদ হায়দার লেখেন :’তুমি আছো বলে অমোঘ পুরস্কার নিয়ে/ বেঁচে আছে কবি ও কবিতার দাউদ হায়দার।’ বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার জন্য রাষ্ট্রের সব ধরনের ষড়যন্ত্রের মাঝেও, কবিরা তাকে নিয়ে লিখে যান কবিতা-গান। সেই সামরিক শাসনের আমলে, আওয়ামীলীগ ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসার কোন সম্ভাবনা না দেখেও, তাকে নিয়ে গৌরবগাঁথা লেখা বন্ধ থাকেনি।

 

SufiFaruq.com Logo 252x68 3 কবিতা আর কবির ভক্ত রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment