কোয়ালিটি কন্ট্রোলার । পেশা পরিচিতি | পেশা পরামর্শ সভা

কোয়ালিটি কন্ট্রোলার । পেশা পরিচিতি | পেশা পরামর্শ সভা : প্রয়োজনীয় যেসব পণ্য আমরা খুব নিরাপদ ভেবে গ্রহণ করি, সেসব পণ্যের মান সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা নেই বললেই চলে। আমরা শুধু পণ্যের ব্র্যান্ড বা লেবেলের ওপর বিশ্বাস করেই তা ব্যবহার করি। আমাদের এই বিশ্বাসটুকু শতভাগে উন্নীত করেন মান নিয়ন্ত্রক বা কোয়ালিটি কন্ট্রোলার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে উন্নত মানের পণ্যের প্রতি ভোক্তার আগ্রহ ও চাহিদা। সেই চাহিদার ওপর ভিত্তি করে কোয়ালিটি কন্ট্রোলার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার প্রচুর সুযোগ। বিস্তারিত জানাচ্ছেন- শামস্ বিশ্বাস

কোয়ালিটি কী?

কোয়ালিটি হলো একটি পণ্যের গ্রহণযোগ্য ও কাঙ্ক্ষিত মান এবং ত্রুটিমুক্ত অবস্থা, যা ক্রেতার চাহিদা পূরণ ও সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম। বায়ার ও ম্যানুফ্যাকচারার উভয়ের জন্যই কোয়ালিটি প্রয়োজন।
অন্যভাবে বলা যায়, পণ্যের বৈশিষ্ট্যগুলো ক্রেতার কাঙ্ক্ষিত চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়াকে গুণগত মান বলে।

কোয়ালিটি কন্ট্রোলের উপাদান :

১. কোয়ালিটি অব প্রডাক্ট
২. কোয়ালিটি অব প্রসেস

কোয়ালিটি অব প্রডাক্ট : কোয়ালিটি অব প্রডাক্ট বলতে বোঝায় – অ্যাপিয়ারেন্স, ফেব্রিক, ডিজাইন, মিজারমেন্ট, স্টিচিং, কিনলিনেস, প্রেজেন্টেশন, সেফটি, প্রাইজ, সহজ প্রাপ্যতা।
কোয়ালিটি অব প্রসেস : কোয়ালিটি অব প্রসেসের অন্তর্ভুক্ত উপাদান হচ্ছে –

  • ম্যান (Man)
  • মেশিন (Machine)
  • ম্যাটারিয়ালস (Materials)
  • মেথড (Method)
  • মানি (Money)

কোয়ালিটি কন্ট্রোলের প্রয়োজন কেন?

  • বায়ার বা কাস্টমারের সন্তুষ্টি অর্জন
  • কাঁচামালের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ
  • ডিফেক্টের হার কমানো ও উৎপাদন বাড়ানো
  • বায়ার ও কাস্টমারের মধ্যে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা
  • কোম্পানির সুনাম ও সুখ্যাতি অক্ষুণ্ণ রাখা
  • উৎপাদন খরচ কমানো এবং বেশি মুনাফা অর্জন
  • প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা।

নিম্নমানের কোয়ালিটির ফলে কী সমস্যা হতে পারে?

  • নিম্নমানের প্রডাক্ট কাস্টমারের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়
  • নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করা যায় না
  • ডিফেক্ট বেশি হলে উৎপাদন কমে যায়
  • নিম্নমানের প্রডাক্টের ত্রুটি সংশোধনের জন্য সময় ও অর্থের অপচয় ঘটে
  • উৎপাদন কম হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে শিপমেন্ট করা সম্ভব হয় না
  • ত্রুটিপূর্ণ ও নিম্ন মানসম্পন্ন প্রডাক্ট সাপ্লাইয়ের কারণে বায়ার জরিমানা ধার্য করে থাকে
  • নিম্নমানের প্রডাক্ট সরবরাহ করার ফলে কোম্পানির ওপর কাস্টমারের আস্থা থাকে না।

কোয়ালিটি কন্ট্রোল কী?

যে পদ্ধতিতে মান নির্ণয়, নিয়ন্ত্রণ, যাচাই, বাছাই করা হয় তাকে কোয়ালিটি কন্ট্রোল বলা হয়। কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগের কাজ হলো উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা। সাধারণত কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগে যেসব পজিশন থাকে সেগুলো হলো – কোয়ালিটি এসোরেন্স অর্থ মান নির্ণয়কারী, কোয়ালিটি কন্ট্রোল অর্থ নিয়ন্ত্রণকারী, কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর, কোয়ালিটি সুপারভাইজার ও কোয়ালিটি ইনচার্জ।

কোয়ালিটি কন্ট্রোলারের দায়িত্ব :

ইন্ডাস্ট্রিতে কোয়ালিটি কন্ট্রোলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পণ্যের নির্দিষ্ট মানগুলো সঠিকভাবে বুঝে নেয়। ওই অর্ডারের নির্দিষ্ট মানদ- (যেমন – পণ্যের ডিজাইন, আকার, কোয়ালিটি ও আনুষঙ্গিক জিনিস) মেটানোর জন্য তারা শ্রমিকের কাজ পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তারাই মূলত পণ্যের গুণগত মান বজায় রেখে ফ্যাক্টরি শ্রমিক দ্বারা পণ্য তৈরির কাজগুলো সম্পাদন করে থাকে।

আরও বিস্তারিতভাবে বললে বলা যায় যে, উৎপাদনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ কাজ করতে হয় একজন কোয়ালিটি কন্ট্রোলারকে। প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনকার্য থেকে শুরু করে ফিনিশিং পর্যন্ত যে দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তা হলো – প্রডাক্টের স্টার্ট থেকে ফিনিশিং পর্যন্ত সঠিক উৎপাদনকার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার প্রয়োগ। নমুনা অনুযায়ী উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। প্রডাক্টের কোনো ভুলত্রুটি থেকে গেল কিনা, তা বারবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। যদি কোনো ত্রুটি থাকে তা আবার দ্রুত ত্রুটিমুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা ও তার বাস্তবায়ন করা।

পণ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সঠিক ও নির্ভুল কোয়ালিটি ইন্সপেকশন রিপোর্ট তৈরি করে তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পেশ করা। কোয়ালিটি কন্ট্রোল সম্পর্কে বলা যায় যে, প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ভ্যালু নির্ভর করে একজন দায়িত্ব ও কর্তব্যসচেতন কোয়ালিটি কন্ট্রোলারের কাজের ওপর। কোয়ালিটি সুপারভাইজার ও কোয়ালিটি ইন্সপেক্টরের কাজ হলো– যে সেকশন ইন্সপেক্টর হয়, সেই সেকশনের ডিফেক্ট ক্যালসিফিকেশন জোগাড় করে বুঝে বুঝে মিলিয়ে তা মুখস্থ রাখতে হবে। রিপোর্টিং বসকে প্রতিদিন রিপোর্ট করতে হবে। কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইনচার্জ কোয়ালিটি কন্ট্রোল বা মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সার্বিক দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতা :

স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দিয়ে একজন ব্যক্তি কোয়ালিটি কন্ট্রোলার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারে। তবে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ওই পদের জন্য কিছু বিশেষ বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে। যেমন- রসায়নে স্নাতক, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ইত্যাদি। প্রাথমিক অবস্থায় একজন সদ্য স্নাতক/স্নাতকোত্তর ইন্টার্ন, ম্যানেজমেন্ট ট্র্রেনি অথবা জুনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট অব কোয়ালিটি কন্ট্রোলার হিসেবে ক্যারিয়ার সূচনা করে থাকে। কোয়ালিটি কন্ট্রোল সুপারভাইজার ও কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর হতে হলে কমপক্ষে এসএসসি পাস হতে হবে।

আয়-রোজগার :

ক্যারিয়ারের শুরুতে ম্যানেজমেন্ট ট্রেনি অথবা জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট অব কোয়ালিটি কন্ট্রোলারদের বেতন কাঠামো ১২-১৫ হাজার হয়ে থাকে এবং ছয়-সাত বছরের অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করতে পারে। এ পেশায় কাজ করতে হলে একজন কর্মীকে দৃঢ় ও দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুন: