জল-পানি-নুন-লবণ বিতর্ক অত্যন্ত মূর্খ, সাম্প্রদায়িক, নীচ বিতর্ক।
ভাষা প্রেম, ধর্ম প্রেম দেখানের অত্যন্ত সস্তা উপায়।
বাস্তবতা হচ্ছে এর ভাষা প্রেমীও না, ধর্ম প্রেমীও না।
আপনি দেখবেন এই টাইপ বিতর্ক করা হিন্দুত্ববাদী (হিন্দু না) তেমন আহামরি কোন বাংলা সাহিত্য সৃষ্টি করেন নি।
একই বিতর্ক করা ইসলামিস্টও আহামরি কোন বাংলা সাহিত্য সৃষ্টি করেন নি। উর্দু, ফার্সি বা আরবি সাহিত্যও করেনি। আমার দেখা অনুযায়ী সেইসব তুররম খাঁ তেমন কিছু পড়েনও না।

জল-পানি-নুন-লবণ বিতর্ক
এরা বেশিরভাগই সস্তা হিটখোর। তোমন কিছু জানাশোনা নাই, লেখাপড়া নাই। হাতে গোনা দুএকজন জ্ঞানপাপি পাবেন এদের দলে, যারা সামান্য কিছুর জণ্য আপোষ করেছে।
আচ্ছা বলেন – তমুদ্দিন মজলিস বাংলা ভাষার জন্য যতটুকু অবদান রেখেছে, নৃসিংহপ্রসাদ বা তারা কজন তার সিকি অবদান রেখেছেন?
এদিকে তমুদ্দিন শব্দটি কিন্তু আরবি। পরে উর্দুতে নেয়া হয়েছে। এরকম শত সহশ্র উদাহরণ আছে।
নানা ভাষার নানা শব্দ এবং অভিব্যক্তি নিয়েই আজকের বাংলা ভাষা।
দেখবেন ফার্সি শব্দ বাদ দিলে এখনকার জুডিশিয়ারি অচল। বিদেশি শব্দ বাদ দিলে আজকের বাঙালির শব্দভাণ্ডার “telegraph vocabulary” হয়ে যাবে।
যেকোন সমৃদ্ধ ভাষা পেঁয়াজের মতো। ছিলকাই আসলে পেঁয়াজ।
ছিলকা ছড়িয়ে আসল পেঁয়াজ খুঁজতে গেলে তেমন কিছু পাবেন না।
“আপক্কধান্যভারনম্র” শব্দটি রবীন্দ্রনাথের আগে কে ব্যবহার করেছেন? রবীন্দ্রনাথের মনে হয়েছে এভাবে বললে তার অনুভবের সবচেয়ে ভালো প্রকাশ হয়। তিনি নগদে শব্দটি বানিয়ে নিয়েছেন।

ভাষা তখনি জীবিত, যখন সে নিয়মিত শব্দ গ্রহণ করে এবং জনজীবন থেকে নিয়ে নতুন শব্দ তৈরি করে।
ভাষা যতই উন্নত হোক, অতিশুদ্ধাচারী হলে থেমে যায়। আর থেমে গেলে মরে যায়। উৎকৃষ্ট উদাহরণ সংস্কৃত নিজেই।
আমার মতে “শব্দ” জিনিসটা ভাষার – খাল, চামড়া, ছিলকা মাত্র। বড়জোর কিছু অংশের মাংস। কিন্তু ভাষার আত্মা না, কঙ্কালও না।
syntax ভাষার কঙ্কাল এবং বড় অংশের মাংস। আর ভাষার চরিত্র সেই ভাষার আত্মা। এই দুটোর খোলনলচে বদলে না ফেললে ভাষার বড় ক্ষতি হয় না।
খাল চামড়া বদলায়। পুষ্টি দিয়ে, যত্নআত্তি করলে সুন্দর হয়। অযত্নে নষ্ট হয়।
আমাদের দরকার ভাষার বাগানে যত্ন করার মালী। ভাষার শরীরের যত্ন নেবার জিম ইন্সট্রাকটর। চামড়া সুন্দর করার বিউটিশিয়ান।
অতিশুদ্ধাচারীর পোশাকের ফুলচোর না।

আমরা বৃদ্ধিজিবী তেমন চাই, যারা নানা ভাষা-সংস্কৃতির উপাদান খুঁজে খুঁজে নিয়ে এসে আমাদের বাংলা ভাষা-সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করবেন। আমরা চাই মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, সলীল এর মতো বিশ্বভিখারি।
কবীর সুমন যদি ফরাসি এক্সপ্রেশন “বঁজো ত্রিস্তেত” কে ভিক্ষে করে, আমাদের জন্য “সুপ্রভাত বিষণ্ণতা” না বানাতেন, কোনদিন জানতে পারতাম না বিষন্নতাকে এভাবেও সম্মোধন করা যায়!
মজরুহ সুলতানপুরীর “গাম কি আন্ধি” না শুনলে বুঝতাম না বিষন্নতারও কালবৈশাখী হয়!
#ভাষা #বাংলা #Bangla #banglalanguage
আরও দেখুন:
