‘এই সংবিধান শহীদের রক্তে লিখিত, এ সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে।’ বাংলাদেশের সংবিধানের গুরুত্ব প্রসঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঠিক এভাবেই মন্তব্য করেছেন- ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর। সেদিন গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে খসড়া সংবিধান বিল আকারে উত্থাপন করা হয়। সেসময় গণপরিষদে সংবিধানের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু এসব কথা বলেন। এরপর ৪ নভেম্বর গণপরিষদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয় এবং কার্যকর হয় ১৬ ডিসেম্বর থেকে। ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর যখন সংবিধানে স্বাক্ষর করেন বঙ্গবন্ধু, তখন জাতীয় চার নীতি তথা রাষ্ট্রীয় চার মূল নীতির আলোকে দেশে একটি শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
![১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস 10 Jan 1972 Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahmans Homecoming 12 বাংলাদেশের সংবিধান: বাঙালির মুক্তি-সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার রূপরেখা 2 ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস [ 10 Jan, 1972 Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman's Homecoming Day ]](https://sufifaruq.com/wp-content/uploads/2022/01/১০-জানুয়ারি-বঙ্গবন্ধুর-স্বদেশ-প্রত্যাবর্তন-দিবস-10-Jan-1972-Bangabandhu-Sheikh-Mujibur-Rahmans-Homecoming-12-300x158.jpg)
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো এবং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটি উন্নত হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দ্রুত একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়নের প্রতি গুরুত্ব দেন বঙ্গবন্ধু। এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় অর্জনের পর, সংবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেন তিনি। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য জাতির পিতার সুদূরপ্রসারী একটি উদ্যোগ এটি। পাকিস্তান আমলে দুই যুগেও যা পারেনি জান্তারা, বঙ্গবন্ধু তা এক বছরের মধ্যে করে দেখিয়েছেন। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র এক বছরের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ শাসনতন্ত্র রচনার মাধ্যমে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক ও গতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আর সেই ভিত্তির ওপর ভর করেই আজ সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরণ করে, বঙ্গবন্ধুকন্যার দূরদর্শী নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ।
![১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস 10 Jan 1972 Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahmans Homecoming 10 বাংলাদেশের সংবিধান: বাঙালির মুক্তি-সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার রূপরেখা 3 ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস [ 10 Jan, 1972 Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman's Homecoming Day ]](https://sufifaruq.com/wp-content/uploads/2022/01/১০-জানুয়ারি-বঙ্গবন্ধুর-স্বদেশ-প্রত্যাবর্তন-দিবস-10-Jan-1972-Bangabandhu-Sheikh-Mujibur-Rahmans-Homecoming-10-300x169.jpg)
[ বাংলাদেশের সংবিধান: বাঙালির মুক্তি-সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার রূপরেখা ]

এই সংবিধান রচিত হয়েছে বাঙালি জাতির দীর্ঘকালের চাওয়া-পাওয়া এবং আশা-আকাঙ্খার ওপর ভিত্তি করে। সংবিধানের চার মূলনীতি, তথা: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা- শব্দগুলো স্বাধীনতার পর হুট করেই জুড়ে দেওয়া হয়নি এখানে। এগুলো আপামর বাঙালির হাজার বছরের আকাঙ্খার প্রতিফলন। এসব দাবির ওপর ভিত্তি করেই ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এই বাংলার ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে একচেটিয়াভাবে ২২৩ আসনে জয় লাভ করেছিল যুক্তফ্রন্ট, যার মধ্য শুধু আওয়ামী লীগই জিতেছিল ১৪৩ আসনে। এই নির্বাচনে মুসলিম লীগের ধর্ম-ব্যবসার মুখোশ উন্মোচিত হয় গণমানুষের সামনে, ফলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ২৩৭টি আসনের মধ্যে তারা মাত্র ৯টি আসন পেতে সমর্থ্য হয়।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে, নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় দেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে জনগণের চাওয়া-পাওয়ার অভিব্যক্তি পর্যবেক্ষণ করেছেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও সারা দেশ চষে বেড়ান তিনি, যাচাই করেন দেশের সবশ্রেণির মানুষের মনোভাব। ঠিক আগের মতোই শোষণমুক্ত জীবন, সম্প্রীতির সমাজ, সম্মান ও সুশাসন নিশ্চিতের জন্য নৌকা মার্কায় ঐক্যবদ্ধ রায় দেয় বাঙালি জাতি। একারণেই স্বাধীনতার পর গণমানুষের বহুল আকাঙ্খিত স্বপ্নময় জীবন বাস্তবায়নের জন্য, তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত চাহিদাবিধিগুলোকে নিপুণ দূরদর্শীতায় মাত্র চারটি শব্দে সাজিয়ে তোলেন বঙ্গবন্ধু। জনগণের আকাঙ্খাগুলোকেই রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বা রাষ্ট্রের স্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি। আমাদের পূর্ব-পুরুষদের একসাগর রক্ত ও শত বছরের ঘামের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই চার মূল নীতি।
কিন্তু ৭১-এর পরাজিত শক্তি ও উগ্রবাদী গোষ্ঠীরা বারবারই আঘাত হেনেছে আমাদের সংবিধানের ওপর। সংবিধানের ওপর আঘাত মানে পূর্ব-পুরুষদের ত্যাগের ওপর আঘাত। যাদের রক্তের স্রোতধারায় রচিত হয়েছে বাঙালি জাতির মুক্তির জয়গান, তাদের রক্তধারাকে অবমাননা করার জন্যই এই সংবিধানকে ভূলুণ্ঠিত করার চেষ্টা করে স্বাধীনতাবিরোধীরা। নতুন প্রজন্মের উচিত, উগ্রবাদীদের ফাঁদে পা না দিয়ে, এই সংবিধানের প্রতিটি শব্দের নিগূঢ় অর্থ অনুধাবন করা, হাজার বছরের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত নীতিগুলোকে বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে আসা। নতুনপ্রজন্ম যদি নিজ জাতির ইতিহাসের ধারা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে, তাহলেই নিশ্চিত হবে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিশ্বের বুকে বাস্তবায়িত হবে সম্প্রীতিময় উন্নত বাংলাদেশ।
