রাগের সময় ভিত্তিক বিভাগ রয়েছে। ইদানীং অনেকেই তেমন এই শাস্ত্র মানেন না। তবে অভ্যাসগত কারণে ওই সময়টিতে ওই রাগ শুনতেই স্বস্তি লাগে। রাগের সময় মানে এই না যে ওই নির্দিষ্ট সময় ব্যতিত অন্য সময় সেই রাগ গাওয়া বা শুনা যাবে না । এই সময়ের মানে রাগ এই নির্দিষ্ট সময়কে নির্দেশ করে রচিত বা এই সময় শুনতে ভালো লাগে ।
রাগের সময় ভিত্তিক বিভাগ [ Samay / Time based raga group ]
পন্ডিত জশরাজ এর মতে:
ভারতের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী পন্ডিত জশরাজ এর মতে ছয়টি মৌলিক রাগ ও তার পরিবেশনের সময় হলো-
- রাগ ভৈরব : ভোরের রাগ সঙ্গীত । ঠাট : ভৈরব । পরিবেশনের সময় : প্রাতঃকাল ।
- রাগ দীপক : সান্ধ্যকালীন রাগ সঙ্গীত ।
- রাগ শ্রী : সান্ধ্যকালীন রাগ সঙ্গীত ।
- রাগ মেঘ : বৃষ্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এই রাগ সঙ্গীতের মাধ্যমে । প্রবল তাপদাহের সময় পরিবেশিত হয় ।
- রাগ মালকোষ : মধ্যরাতের পরপর এই রাগ সঙ্গীত গাওয়া হয় । ঠাট : ভৈরবী । পরিবেশনের সময় : রাত্রি তৃতীয় প্রহর
- রাগ হিন্দোল : দিনের প্রথমাংশে পরিবেশিত হয় এই রাগ সঙ্গীত ।
অনিল কুমার সাহারর মতে:
অনিল কুমার সাহার সঙ্গীত প্রবেশক এর মতে:
- বিলাবল : সময় : দিনের প্রথম প্রহর ।
- বেহাগ : সময় : রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর ।
- দূর্গা : সময় : রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর ।
- রাগেশ্রী : সময় : রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর ।
- কলাবতী : সময় : রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর ।
- খাম্বাজ : সময় : রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর ।
- কাফী : সময় : মধ্যরাত ।
- বৃন্দাবনী সারং : সময় : বিকাল ।
- বাগেশ্রী : সময় : মধ্যরাত ।
- আশাবরী : সময় : প্রাতঃকাল ।
- জৌনপুরি : সময় : দিনের প্রথম প্রহর ।
- দরবারি কানাড়া : মধ্যরাত্রি ।
- বিভাষ : প্রাতঃকাল ।
- রামকেলি : প্রাতঃকাল ।
- ভৈরবী : যেকোনো সময় গাওয়া যায় । তবে রাত বারোটা হতে দিনের বারোটা পর্যন্ত বিশেষত গাওয়া হয় ।
- বিলাসখানি : দিনের প্রথম প্রহর ।
- ইমন : রাত্রি প্রথম প্রহর ।
- কেদার : রাত্রি প্রথম প্রহর ।
- ভূপালী : রাত্রি প্রথম প্রহর ।
- মারোয়া : দিনের শেষ প্রহর ।
- সোহিনী : রাত্রি শেষ প্রহর ।
- পূরবী :দিনের শেষ প্রহর (সায়ং কালীন সন্ধি প্রকাশ রাগ)
- বসন্ত : ঋতুকালীন রাগ । তাই বসন্তে যেকোনো সময় গাওয়া হয় । অন্য সময় রাত্রি শেষ প্রহরে গাওয়া যায় ।
- টৌড়ি : দিবা দ্বিতীয় প্রহর ।
- মুলতানী : দিবা শেষ প্রহর ।
- গুর্জরী : দিবা দ্বিতীয় প্রহর ।
শুভেন্দু পুরকায়স্থ কুয়ারায় লিখেছেন:
প্রাচীন নারদ সংহিতায়, সপ্তস্বরের উল্লেখ আছে যথা, ষড়জ(সা), ঋষভ(রে), গান্ধার (গা), মধ্যম (মা), পঞ্চম(পা), ধৈবত (ধা), নিষাদ (নি)। এই “নারদ সংহিতায়” বর্ণনা আছে, ছয় রাগ এবং ছত্তিস রাগিণীর। রাগ এর চলন এবং তার অভিব্যক্তির উপর নির্ভর করেই, পুরুষ অর্থে “রাগ” এবং তাদের “স্ত্রী” হিসাবে রাগিনীকে চিহ্নিত করা হয়। সেসময়ে ছয়টি রাগ যেমন এর নামকরণ করা হয়, “ভৈরব”, “মালকোষ” “হিন্দোল” “দীপক” “শ্রী” ও “মেঘ”। এই প্রত্যেকটি রাগের “স্ত্রী” রূপে আবির্ভূতা হন রাগিনীরা। যেমন রাগ “ভৈরব” এর স্ত্রী “ভৈরবী”, “গুণকেলী” “রামকেলী” “সিন্ধুড়া” “গুজ্জরী” ইত্যাদি।
সে সময় থেকেই দিনের ও রাতের সময় তথা প্রকৃতির আবেদনের সাথে মিলিয়ে স্থির করা হয় রাগ ও রাগিনী গাওয়ার সময়। যেমন,সকালে, “ভৈরবী” , দুপুরের আগে, “সারং”(বৃন্দাবনী সারং), দুপুরে “পিলু”, বিকেলে “মুলতানী”, সন্ধ্যায় “পূরবী”, রাত্রিকালে “বেহাগ”।
পরবর্তী কালে এই রাগ,রাগিণীর ধারনা নিয়ে গবেষণা হয় এবং এর ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে, মোটামোটি একটি সিদ্ধান্তে আসা হয় যে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে মূলত: দশটি রাগ “ঠাট রাগ” অর্থাত্ এই রাগগুলিকে সুত্র রাগ হিসাবে মানা হবে এবং এই দশটি রাগের ভিত্তিতে অন্যান্য রাগগুলি গাওয়া হবে।“রাগিনী” শব্দটি ধীরে ধীরে অবলুপ্তির পথে চলে যায়। এই সিদ্ধান্তের যিনি পথিকৃত, তিনি “লখনৌ” এর “পন্ডিত বিষ্ণু নারায়ণ ভাতখন্ডে”। তাঁর দেখানো পথেই চলছে আজকের দিনের শাস্ত্রীয় সংগীতের রাগ রাগিনী। এই দশটি ঠাট রাগ থেকেই অন্যান্য রাগের সৃষ্টি।
এই দশটি ঠাট রাগ হচ্ছে, “বিলাবল” “কল্যাণ” “খাম্বাজ” “কাফী” “ভৈরব” “ভৈরবী” “আশাবরী” “টোড়ী” “পূরবী” “মারোয়া”। এই দশটি ঠাট রাগ থেকে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন রাগ। যেমন “কল্যাণ” ঠাট থেকে সৃষ্টি হয়েছে রাগ, “ইমন”, “ইমন কল্যাণ” “শ্যাম কল্যাণ”, “কেদার” আরো অনেক রাগ। “কাফী” ঠাট থেকে সৃষ্টি হয়েছে রাগ “জয়জয়ন্তী”, “বাগে শ্রী” “রাগেশ্রী” এসব।
ভোর বা সকাল বেলার রাগ, ভৈরবী, আশাবরী, জৌনপুরী, টোড়ী, যোগিয়া, রামকেলী, ভৈরব, আহির ভৈরব, নট ভৈরব, বিলাবল, ললিত, আলাহিয়া বিলাবল, বিভাস এসব।
সকালবেলার পরে, দুপুরের দিকটায় যেমন, বৃন্দাবনী সারং, শুদ্ধ সারং, পিলু এসব।
বিকেলের দিকটায় ভীমপলশ্রী,
বিকেল শেষ হয়ে সন্ধ্যা আসছে এই সময়টায় মারোয়া, শ্রী, পূর্বী, এসব।
সন্ধ্যে বেলা ইমন, ভূপালী, পূরিয়া কল্যাণ, হামির, শুদ্ধকল্যাণ, ইমন কল্যাণ, এসব।
রাতের দিকে, জয়জয়ন্তী, কাফী, মালকোষ, কেদার, তিলককামোদ, দেশ, কাফী, যোগ, মেঘ, দরবারী কানাড়া, কৌশিকানাড়া, চন্দ্রকোষ, বেহাগ, মারুবেহাগ, দুর্গা, গোরখ কল্যাণ, মধুমন্তী বা মধুমন্তী, শিবরঞ্জনী, হংসধ্বনি, বাহার, আভোগী কানাড়া, বসন্ত, হংসধ্বনি, ঝিনঝোটি, নন্দকোষ, বাগেশ্রী, রাগেশ্রী, কলাবতী এসব।
দিনের চাইতে রাতের দিকে পরিবেশন করার রাগের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি, ফলে শাস্ত্রীয় সংগীতের অনুষ্ঠান গুলি রাতের দিকে বেশী হয়, সারারাত্রিব্যাপী ও হয়।
রাগ পরিবেশনের এই সময়ের নির্দিষ্ট শৃংখলা, শিক্ষার্থী বা সঙ্গীতশিল্পীর জন্য অনুকরণযোগ্য হলেও, যেকোনো রাগকেই পূর্ণমহিমায় প্রস্ফুটিত করে তোলার ক্ষমতা যে শিল্পী রাখেন, তিনি অনেকসময়ই, সময়ের এই “পাবন্দী” তে ধরা দেন না। আর এটাই হয়তো চিরসত্য। যার জন্যই আমরা শুনি, মোগল সম্রাট “আকবর” এর নবরত্ন সভার এক রত্ন “মিয়া তানসেন”, “মল্লার” রাগ গেয়ে, আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরান, বা ”দীপক” রাগ গেয়ে আগুন জ্বালান।
রাগের সময় চক্র আর্টিকেলটি অসম্পুর্ন। এই আর্টিকেলটিতে এখনো কাজ করতে পারিনি। মাফ করবেন, খুব দ্রুতই করা হবে। পুনরায় ভিজিট করুন।
সিরিজের বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল সূচি: