মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমি একজন বাবা। আমার একমাত্র সন্তান ছেলে। আমার পরিবারে আমরা ৪ বোন ও ২ ভাই। বর্তমান উত্তরাধিকার বণ্টনব্যবস্থা বহাল থাকলে ব্যক্তিগতভাবে আমার লাভই সবচেয়ে বেশি হবে।
তার পরেও আমি আপনার জমি বণ্টন আইন পরিবর্তনের প্রস্তাবকে মনেপ্রাণে সমর্থন করি। আপনি পরিবর্তন করুন। আমরা আপনার সাথে আছি।
আমি চাই—এ দেশের মেয়েরা বাবার সম্পত্তিতে ছেলেদের সমান অংশ পাবে। বাবার অর্জিত সম্পত্তি যদি ছেলে না থাকে, তবে সেই সম্পত্তি মেয়ে ও স্ত্রীদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ হবে।
ধর্মের নামে যারা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই:
“যে যুগে যা ন্যায্য, তাই শরিয়া।”
হজরত উমর ইবন খাত্তাব (রা.) নিজেই সময়ের চাহিদা অনুযায়ী শরিয়ায় নানা বাস্তবিক পরিবর্তন এনেছিলেন। অথচ আজ যারা ইসলামের নামে বিরোধিতা করছে, তারা যেন উমর (রা.)-এর থেকেও বেশি কোরআন বোঝে—এমন ভান করছে।
প্রকৃতপক্ষে, ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে ছাড় দেয়ার কোনো অর্থ নেই। কারণ—“ইসলাম মানে ইনসাফ।” যারা ইনসাফ মানে না, তারা ইসলামের প্রকৃত চেতনা ধারণ করে না। ধর্মকে যারা ব্যবসার হাতিয়ার বানায়নি, এমন আলেম-ওলামারা অবশ্যই আপনার এই উদ্যোগকে সমর্থন করবেন।
এই আইন শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সব ধর্মের মানুষের জন্য একটি ইউনিফর্ম আইন হওয়া উচিত।
আপনাকে কয়েকটি আন্তর্জাতিক উদাহরণ দেই:
বিশ্বের অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ইতোমধ্যেই নারীরা সম্পত্তিতে সমান অধিকার পাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ:
তিউনিসিয়া: ২০১৭ সালে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন যে, উত্তরাধিকারে নারী ও পুরুষ সমান ভাগ পাবে। যদিও বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক আছে, তবে আইনি কাঠামোয় সমতার নীতি প্রবর্তিত হয়েছে।
তুরস্ক: এখানে শরিয়াভিত্তিক উত্তরাধিকার প্রযোজ্য নয়। সিভিল কোড অনুযায়ী নারী-পুরুষ সমান ভাগ পায়।
মরক্কো: ২০০৪ সালের নতুন পারিবারিক আইন (Mudawana) নারীদের উত্তরাধিকারে শক্ত অবস্থান দিয়েছে। সংস্কার প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে সমান ভাগের দিকে এগোচ্ছে।
মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া: সিভিল আইনের কাঠামোয় নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই সমান অধিকার পাচ্ছেন, যদিও শরিয়াভিত্তিক অংশ এখনো বহাল আছে।
কসোভো, আলবেনিয়া ও বসনিয়া (মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইউরোপীয় দেশ): সিভিল আইন অনুযায়ী নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত।
এই উদাহরণগুলো প্রমাণ করে, ইসলামি সংস্কৃতির অংশ হয়েও অনেক দেশ সময়ের দাবি অনুযায়ী ন্যায্যতা ও সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
বাংলাদেশের নারীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, প্রশাসন—সব ক্ষেত্রে আজ অনেক এগিয়ে গেছেন আপনার নেতৃত্বে। এখন সময় এসেছে তাঁদের আইনগত উত্তরাধিকার অধিকার সমানভাবে নিশ্চিত করার।
এই আইনটি আপনার হাত দিয়েই কার্যকর হোক—এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।