কুরআন বুঝতে সহি ক্বিরাআতের দক্ষতা জরুরী?

কুরআন বুঝতে সহি ক্বিরাআতের দক্ষতা জরুরী? এই প্রশ্ন এ যুগে মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

ইসলাম চর্চা, প্রচার, প্রসার যাদের পেশার সাথে যুক্ত নয় (অর্থাৎ একজন সাধারণ মুসলিম) যখন কুরান বুঝতে চায়, তখন এই প্রশ্নটি তীব্র ভাবে আসে। প্রশ্নটা তোলেন মূলত ধর্মীয় পেশাজীবীরা (ধর্মজীবীরা) , প্রতিধ্বনি তোলেন তাদের সমর্থকেরা।

ধর্মীয় পেশাজীবীদের দাবী –

১. কুরআনের একটি মাত্র ক্বিরাআতের বা আবৃত্তির মানদণ্ড রসুলুল্লাহ (সা:) এর সময় থেকে চালু আছে। সেই উচ্চারণ ও আবৃত্তি না করলে কুরান পড়া যাবে না। সেভাবে না পড়লে তো বোঝার প্রশ্নই আসে না। সেই ক্বিরাআত তারাই শুধুমাত্র জানেন এবং তারাই সেটা করেন।

২. কুরআন বুঝতে হলে সরাসরি কুরআনের আরবি থেকেই বুঝতে হবে। অনুবাদ থেকে কুরআন বোঝা সম্ভব নয়। ধর্মজীবীরা কুরানের আরবি ক্বিরাআত থেকেই কুরআনের অর্থ বের করে বোঝেন, আমাদের বোঝান । তাই আমরা যারা অনুবাদ পড়ি, তাদের কুরান বোঝার কোন সম্ভাবনা নেই।

শেষ পর্যন্ত ঘুরে ফিরে দাবী – তোমরা নিজে কুরান বুঝবা না। আমরা যেভাবে বোঝাবো সেটাই মেনে নিতে হবে।

 

মূল কথা – কুরআন বুঝতে সহি ক্বিরাআতের দক্ষতা একটি পূর্ব শর্ত!

সাধারণ মুসলিমের যেহেতু পেশাদারী, পারিবারিক নানাবিধ ব্যস্ততা থাকে।  তাদের পক্ষে এই যুগে কুরআনের শুদ্ধ ক্বিরাআতের দক্ষতা অর্জন বা ধরে রাখার জন্য নিয়মিত চর্চা করে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। আবার কুরআন বোঝা মহান আল্লাহ ফরজ করেছেন। কুরআন বোঝার পাশাপাশি, তাফাক্কুর, তাদাব্বুর করতে বলেছেন। তাই বেচারা বাধ্য হয়েই অনুবাদ থেকে কুরআন বোঝার চেষ্টা করেন। কিন্তু ধর্মীয় পেশাজীবীরা তার এই ইলম কে এক বাক্যে না করে দেন। যুক্তি দেখান – সে যেহেতু শুদ্ধ ক্বিরাআতে কুরআন পড়তে পারে না, তাই তার জানা-বোঝা সম্পূর্ণ বাতিল। এটা নিয়ে সাধারণ মুসলিমরা কটাক্ষ বা ঠাট্টা মশকরারও শিকার হন।

এরকম কয়েকটি ঘটনা আমাকে এই বিষয়ে অনুসন্ধান করতে বাধ্য করেছে। আশা করি আমার অনুসন্ধান আপনাদের কাজে লাগবে।

আসেন দেখি, ধর্মীয় পেশাজীবীদের ওই যুক্তির কতটুকু ভিত্তি আছে।

 

কুরআন বুঝতে সহি ক্বিরাআতের দক্ষতা জরুরী?

 

একক উচ্চারণ ও আবৃত্তির বাস্তবতা :

প্রশ্ন হচ্ছে – কুরআন কি একই একই সংস্করণে-উচ্চারণে-আবৃত্তিতে নাজিল হয়েছে এবং আমরা আজও সেভাবেই পড়ছি?

যারা কুরআন সম্পর্কে জানেন, তারা জানবেন – কুরআন ৭ আহরুফ এ নাজিল হয়েছে। আহরুফ এর অর্থ নিয়ে স্কলারদের কিছু মতভেদ আছে। আহরুফ কে ইংরেজিতে editions, styles, dialectical variation বা ways বলা হয়েছে। তবে মুল কথা হল, হাদিস স্পষ্টতই প্রমাণ করে, আহরুফগুলো শুনতে ভিন্ন ছিল (মুসনাদ আহমেদ এর হাদিস ১৭১৯৯, Al-Suyuti এর গ্রেডিং এ সহি। Sahih al-Bukhari 2419, In-book reference : Book 44, Hadith 9, USC-MSA web (English) reference : Vol. 3, Book 41, Hadith 601)। ইসলামিক রেওয়ায়ত থেকে যে ধারণা পাওয়া যায় তাতে মনে হয়, ভিন্ন ভিন্ন গোত্রের ভাষার ভিন্নতার কারণে কারণে সেটা করা হয়েছিল।

সাত আহরুফের বিষয়টি প্রমাণ করে, আমরা বা মুসলিমরা শুরুতেই অন্তত ৭ রকম করে কুরআন পড়েছি। এখনে শুরুতেই একক সংস্করণ ও উচ্চারণের বিষয়টি আর টেকে না।

এরপর কুরআন এর প্রচার, প্রচার, সংরক্ষণের ইতিহাস যদি আমরা দেখি, তবে দেখবো – ৭ টি আহরুফের মধ্যে হজরত আবুবকর (রা:) “কুরায়েশ ডায়লেক্টের” একটি মুসহাফ বা মাসহাফ বা পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছিলেন যেটাকে “মুসহাফে সিদ্দিকী” বলা হতো। তবে সেটি পরবর্তীতে খুব ব্যবহার হয়েছে বলে জানা যায়নি। তাই মুসহাফে সিদ্দিকী কেমন ছিল, তা আজ কোন আলেমই বলতে পারবেন না।

এখনকার কথা দুরে থাক “মুসহাফে সিদ্দিকী”  তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান বিন আফ্ফান (রা:) এর আমলে সঠিকভাবে অনুসরণ হয়নি। সেসময়  সাহাবীগণ (রা:) এর মধ্যে কুরআন পাঠের সঠিক নিয়ম নিয়ে বিভ্রান্তির কারণে, নতুন করে আরেকটি সঠিক মুসহাফ বা পাণ্ডুলিপি তৈরির প্রয়োজন পড়ে (কারণ হিসেবে ধরে নেয়া যায় “একক মুসহাফ” বা মুসহাফে সিদ্দিকীর অনুপস্থিতি।)। এজন্য খলিফা ওহি লেখকদের কমিটি করে দেন। এই পাণ্ডুলিপিকে আমরা “উসমানী মুসহাফ” বলি। বাকি সব মুসহাফ পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। তারপর সেই পাণ্ডুলিপি বিভিন্ন প্রদেশে কপি করে দেয়া হয়।

এরপরেও হিজরি ৩ শতকে আবারে দেখা যায় সেই প্রামাণ্য “উসমানী মুসহাফ” আর নেই। মুসলিম স্কলাররা লক্ষ্য করেন বিভিন্ন ক্বিরাতের পার্থক্য হতে হতে, কোন কোন এলাকার লোক কুরআনের মূল অর্থ থেকে সরে যাচ্ছে। এই নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত হওয়ায় তারা শঙ্কিত হয়ে বিষটিতে মনোযোগ দেন। এরপর প্রাথমিক ভাবে ৭ রকম ক্বিরআতের ৭ জন ক্বারিকে প্রামাণ্য হিসেবে নির্বাচন করেন (এখানে খেয়াল করুন ১টি মুসহাফ থেকে কিছু পরিবর্তন ৭ টি সংস্করণ হয়ে গেল)। যদিও মানদণ্ড ধরা হয় উসমানী মুসহাফ এর সাথে সিলসিলাগত সম্পর্ক, ব্যাকরণগত প্রামান্যতা ও গুরু-শিষ্যর প্রমান্য ধারাবাহিকতা। কিন্তু “উসমানী মুসহাফ” যেহেতু হুবহু পাওয়া যায়নি, তাই ৭ টি সংস্করণ মেনে নিতে হয়েছে। পরবর্তীতে এই তালিকায় আরও ৩ জন ক্বারি যুক্ত করা হয়। সব মিলিয়ে ১০ টি সংস্করণ। তার মানে – পার্থক্য সামান্য হলেও, আমরা ১০ রকম ভাবে তখন কুরআন পড়ছি।

৭ম শতাব্দীতে এই ১০ জন ভিন্ন ক্বিরাত বা সংস্করণের ক্বারিরা, প্রতিজনই প্রামাণ্য হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষা দিয়েছেন। এদের একজন ক্বারি আসিম ইবনে আবি আল-নাজুদ। যার ছাত্র “আবু আমর হাফস ইবনে সুলায়মান ইবনে আল-মুগিরা ইবনে আবি দাউদ আল-আসাদি আল-কুফি” বা “হাফস”। রসুলুল্লাহ সা: এর ৫ম প্রজন্মের শিক্ষার্থী এই ইমাম হাফস, যার ক্বীরাত থেকে করা মুসহাফ এখন আমরা সহ মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ায় লোকজন পড়ছি।

উক্ত ১০ জন ক্বারির মধ্যে বেশিরভাগ ক্বারির ক্বীরআত আর প্রচলিত নেই। এর মধ্যে ৩ জন ক্বারির শিক্ষার্থীদের ক্বীরআত থেকে যেসব মুসহাফ হয়েছে সেগুলো লিবিয়া, তিউনিসিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া, মৌরিতানিয়া, পশ্চিম আফ্রিকা, সুদান, মধ্য আফ্রিকা, পূর্ব আফ্রিকা, ইয়েমেন এলাকায় প্রচলিত আছে।
আহরুফ, ক্বীরআত বা সংস্করণে – কী ধরণের পার্থক্য ছিল, তার প্রমাণ আমরা এখনো পাই “হাফস” আর “ওয়ারর্স” কুরআন পাশাপাশি রাখলে। একই কথা ভিন্ন রকম স্টাইলে বলা হয়েছে। কিছু ক্রিয়ার কালগত, লিঙ্গগত, বচনগত সহ ব্যাকরণগত কিছু পার্থক্য স্পষ্ট।

১০ টি ভিন্ন ক্বিরআত যখন মুসলিম স্কলাররা গ্রহণ করেছেন, তখনই প্রমাণ হয়, ক্বীরআত নয়, কুরআনের বার্তাটাই প্রধান বিষয়। উচ্চারণ বা আবৃত্তি যাই হোক, কুরআনের মুল বার্তাটা প্রচার করাটাই সবচেয়ে জরুরী।

তাই এখানে যে একক ও অভিন্ন ক্বিরআতের যে দাবী করা হয়, সেটা অজ্ঞান প্রসূত।

 

ক্বিরআত বনাম লিখিত পাণ্ডুলিপির নির্ভরযোগ্যতা:

এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে প্রথম যুগে সংরক্ষিত ও প্রচার হয়েছে মূলত আবৃত্তির মাধ্যমে। তাই উচ্চারণের উপরে মূল নির্ভরতা ছিল। কিন্তু দেখা গেছে ডায়লেক্টিকাল পার্থক্যর মাধ্যমে ক্রমশ মুল মেসেজ থেকে লোকে সরে যায়। আবৃত্তি বা ক্বিরআতের উপরে ভরসা করার কারণে বিতর্কের জন্ম হয়। সেটা সমাধান করার জন্য বারবার লিখিত পাণ্ডুলিপির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এখানে লক্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে, প্রতিবার প্রামান্যতার জন্য লেখা হয়েছে এবং লেখাকেই প্রামাণ্য হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। হিজরি ৩ শতকে এসে যখন ক্বীরআতগুলো লিখিত বা মুসহাফ করার ব্যবস্থা হয়েছে, সেই লেখা সংরক্ষণ করা হয়েছে, বারবার প্রমাণ্যতার জন্য সেখানেই ফিরে যাওয়া হয়েছে।লিখিত হয়েছিল বলেই, তখন থেকে কিন্তু আর কোন বিতর্কের কারণে নতুন ক্বীরআতের সৃষ্টি হয়নি।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে লিখিত সংস্করণ ক্বীরআতের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য।

 

কুরআন বুঝতে সহি ক্বিরাআতের দক্ষতা জরুরী?

 

 

আজকের দিনে ক্বীরআত নির্ভরতা:

কাগজ সহজলভ্য হবার সাথে সাথে লোকের লেখা কুরানের উপর নির্ভরতা বেড়েছে, কমেছে আবৃত্তি বা ক্বীরআতের উপরে নির্ভরতা। আর আবৃত্তির উপরে নির্ভরতা কমলে উচ্চারণের উপর নির্ভরতা কমবেই। এজন্যই গত শতকে আমরা অনেক বড় বড় ইসলামিক আলেম ও গবেষক পেয়েছি, যাদের কাভার টু কাভার কুরআন মুখস্থ ছিল না।

বর্তমান বিশ্বে শিক্ষিত স্কলারগণ লিখিত টেক্সট ধরে প্রচার, প্রসার ও গবেষণা কাজ করছেন। তাই আজকের দিনে নামাজে পাঠ এবং প্রতিযোগিতা ছাড়া, ইসলামের প্রচার-প্রসারে ক্বীরআতের আর কোন ব্যবহার নেই বললেই চলে।

সেই বিবেচনায় আজ কুরআন বুঝতে, লিখিত টেক্সট সবচেয়ে প্রামাণ্য, ক্বীরআত নয়।

 

কুরআনের আরবি দিয়ে কুরআন বোঝার প্রক্রিয়া:

১ম থাপ:

কুরআন ক্লাসিক্যাল আরবিতে রচিত। আজকের দিনের প্রচলিত আরবিতে নয়। অর্থাৎ অক্ষর, বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন বা বিরামচিহ্ন এক হলেও, এবং তা আজকের আরবি জ্ঞান দিয়ে পাঠযোগ্য হলেও, অর্থ বোঝা প্রায় অসম্ভব।

এসব কারণে আরবি ভাষাভাষীদেরও কুরানের আরবি দিয়ে কুরান কে বুঝতে হলে, ক্লাসিক্যাল আরবি আলাদা করে শিখতে হবে। ক্লাসিকাল আরবি ব্যাকরণের পাশাপাশি ও ক্লাসিক্যাল আরবির পুরো লেক্সিকন বা অভিধান নখদর্পণে আনতে হবে।

এছাড়া কুরআনে আরবি ভাষার বাইরে অন্তত ১৩ টি ভাষার শব্দ রয়েছে। সেগুলোর সঠিক অর্থ উদ্ধার করতে ওই ভাষাগুলো জানা দরকার। আর তা না হলে ঘুরে ফিরে আবার অনুবাদ করা অভিধানই ভরসা।

এগুলো জানার পাশাপাশি যেই ভাষায় তিনি অনুবাদ করবেন, সেই ভাষাটির উপরে অনুবাদকের একই রকম দক্ষতা থাকা জরুরী।

তবে উপরে যে যোগ্যতার ফরমায়েশ দিলাম, তা শুধুমাত্র কুরআনের শব্দ ও বাক্য বোঝার জন্যই দরকার। প্রতিটি আয়াতের শুধুমাত্র আক্ষরিক অনুবাদ।

 

২য় ধাপ:

তবে সেই সব চ্যালেঞ্জ করা ধর্মীয় পেশাজীবীরা, আক্ষরিক অনুবাদে কুরআন বোঝাকে কি মানবেন? এভাবে কুরান বুঝাকে কি তারা যথেষ্ট বোঝা বলে স্বীকার করবেন? তারা কখনোই মানবেন না। তারা কুরানের আয়াত কে বোঝার জন্য Context বা প্রাসঙ্গিকতা টানবেন। সেটি টানলেই প্রথমে চলে আসবে সিরাত। সিরাতের ক্ষেত্রে ইবনে হিশাম এবং ইবনে আব্বাস তো পড়তেই হবে।

সিরাতকে ঠিকমতো Contextualize করতে হলে, হাদিস দরকার। সেজন্য সিরাত এর পাশাপাশি অন্তত দুটি হাদিসের সংগ্রহশালা (বুখারি ও মুসলিম) পড়তে হবে। যদিও অনেকেই মনে করেন কিতাবুস সিত্তাহ পুরোটাই পড়া দরকার। ৩০ হাজার + হাদিস, রিপিট হলেও প্রতিটি হাদিস সনদ ও মতন সহ পড়তে হবে।

হাদিসগুলো বোঝার জন্য হাদিস-শাস্ত্রের পারিভাষিক জ্ঞানের বইগুলো পড়া লাগবে। এছাড়া প্রতিটি হাদিস গ্রন্থ ভালোভাবে বুঝতে প্রতিটি গ্রন্থের অন্তত দুটি করে ব্যাখ্যাকারী গ্রন্থ পড়া দরকার ( যেমন বুখারির জন্য ফাতহুল বারী বা উমদাতুল ক্বারি)।

আপনারা নিশ্চয় জানেন হাদিস গ্রন্থগুলো এবং তার ব্যাখ্যাকারী গ্রন্থগুলোর আকার-প্রকার কত বড়, পড়ে হজম করতে কত বছর দরকার !

 

৩য় ধাপ:

মনে রাখা দরকার, উপরে উল্লেখিত সব কেতাব যে সময় ধরে রচিত হয়েছে, সেই সময়ে আরবি ভাষা পরিবর্তনের বড় তিনটি যুগ অতিক্রম করেছে। ১০ম খৃষ্টীয় শতককে যদি আমরা সেই যুগের সর্বশেষ ধরি, তবে সেই সময়ে প্রতিশব্দ এবং সমার্থক শব্দের পার্থক্য সহ অন্তত ৬ টি আলাদা আরবি অভিধান চলমান ছিল। সুতরাং এই তিনটি যুগের আরবি, পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে গভীর জ্ঞান দরকার।

এখন আপনি নিজে চিন্তা করে বিচার করুন –

যারা কুরআনের আরবি দিয়ে কুরআন বোঝার দাবী করেন, তারা কি আদৌ এর ১০% প্রস্তুতির মধ্যে দিয়ে গেছেন? তাদের দাবীর সাথে বাস্তবতার কি আদৌ কোন সম্পর্ক আছে?

তাই অত্যন্ত বিনীত ভাবে বলতে চাই, যারা আমাদের আশেপাশে সেই দাবী করেন, তারাও প্রচলিত অনুবাদ পড়েই কুরআনের মানে শিখেছেন। কিন্তু আরবি আবৃত্তির পাশাপাশি তারা যখন সেই অনুবাদ থেকে শেখা অর্থ বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে মনে হয় তারা আরবি থেকেই অর্থ করছে। আর তারা সেই ভুল বোঝার সুবিধা নিয়ে দাবীটি চালিয়ে যান।

 

SufiFaruq.com Logo 252x68 3 কুরআন বুঝতে সহি ক্বিরাআতের দক্ষতা জরুরী?

 

এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন তাদের দাবীর বাস্তবতা আসলে কী?
আরও ভালো বুঝতে পারবেন কুরআনের গ্রহণযোগ্য অনুবাদকারীদের যোগ্যতা সম্পর্কে জেনে।

 

কুরআনের গ্রহণযোগ্য অনুবাদকারীদের যোগ্যতা:

এবার আসুন একজন গ্রহণযোগ্য অনুবাদক সম্পর্কে জেনে নেই। মির্জা আবুল ফজল কুরানের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন। তিনি বংশানুক্রমিক ভাবে হাফেজ ছিলেন। পিএইচডি ছিলেন ১৮ শতকের। আরবি, ইংরেজি এবং সংস্কৃত ভাষার একই রকম পণ্ডিত ছিলেন। ক্লাসিকাল আরবির পাশাপাশি সিরিয়াক, এরামিক জানতেন। কুরানের ডায়লেক্টিকাল পার্থক্য সম্পর্কে অবগত ছিলেন, আলজেরিয়া মরক্কোতে যে ধরনের পার্থক্য পাওয়া যায় তা জানতেন। ভাষা-গত বিবর্তনের বিষয়গুলো জানতেন। বাংলা আর উর্দু যে তিনি জানতেন তা বলাই বাহুল্য। অনুবাদ বহু লোক করেছেন। তবে যাদের অনুবাদ গ্রহণযোগ্য হয়েছে, তাদের বেশিরভাগের যোগ্যতা এই স্তরেরই।

 

যোগ্যতার বাটখারায় মেপে সিদ্ধান্ত নিন:

এবার মির্জা আবুল ফজল এর যোগ্যতার পাশাপাশি আপনার পাশের “আরবি থেকে কুরান বোঝা” চ্যালেঞ্জ করা আলেমদের যোগ্যতা রাখুন। পার্থক্যটা আপনার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে।

আপনি খুব সহজে বুঝতে পারবেন, কার অনুবাদ পড়া উচিৎ, আর কার নিজের অনুবাদ শোনাও উচিৎ নয়।

 

তাহলে কোথা থেকে কুরান বুঝবো?

উপরে তথ্যগুলো বারবার পড়ুন। সিদ্ধান্ত আপনার নিজেকে নিতে হবে।

তবে আমার মতে কুরআন বোঝার ভালো উপায় হচ্ছে নিজে যে ভাষায় সবচেয়ে বেশি দক্ষ, সেই ভাষার সেরা অনুবাদটি পড়া। সম্ভব হলে একাধিক পড়া।তাতে আপনি সবচেয়ে শিক্ষিত ও গ্রহণযোগ্য আলেমদের চোখ দিয়ে কুরআন কে দেখতে পাবেন।

 

বিশেষ অনুরোধ:

আমি যেসব তথ্য দিয়েছি তার সবই অনলাইনে উন্মুক্ত তথ্য। লেখাটা সংক্ষিপ্ত করার জন্য সেসব পুনরায় উল্লেখ করছি না। অনলাইনে এসব সম্পর্কে বহু আর্টিকেল আছে, কেউ চাইলে পড়ে নিতে পারবেন। তবে কারও কোন বিষয়ে সন্দেহ হলে বা তথ্য খুঁজে না পেলে কমেন্ট করে জানান, আমি রেফারেন্স যোগ করে দেবো।

সর্বশেষে বলতে চাই আমার জানামতে আমি তথ্য দিলাম, তবে সর্ব বিষয়ে মহান আল্লাহই প্রকৃত বাস্তবতা জানেন। তাই আমার অজানাতে কোন ভুলের জন্য তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

 

আরও দেখুন: