প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের হাট পরিক্রমার লিফলেট
প্রিয় বন্ধু,
এই লিফলেটটি পড়ার জন্য ‘প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ’র পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
আপনারা জানেন, নতুন যুগের অন্যতম আধুনিক পেশা ‘ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং’ আগত সময়ের এক বিরাট সম্ভাবনা। এদেশের তরুণ/তরুণীরা তাদের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে একদিকে যেমন তাদের নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারবে।
গত কয়েক বছরে অনেক তরুণ/তরুণী ‘ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং’-এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা শুরু করেছেন। কিছু দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ, সংগঠন, সরকার ও গণমাধ্যম এই বিষয়ে উৎসাহ দিতে নানাবিধ কর্মসূচি নেবার কারণে দেশব্যাপী একটি গণসচেতনতা তৈরি হয়েছে।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, এই আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে কিছু টাউটচক্র বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মত কুষ্টিয়া জেলাতেও উদ্যমী তরুণ/তরুণীদের সামনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং /অনলাইনে বসে বসে আয় ইত্যাদির ফাঁদ পেতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এতে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি একদিকে যেমন ‘ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং’ ধারণাটি গ্রহণযোগ্যতা হারাবার মাধ্যমে বিরাট সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ/তরুণীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। সরকারি/বেসরকারি উদ্যোগে এ ধরনের টাউট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েও খুব বেশি লাভ হচ্ছে না, কারণ এরা অত্যন্ত গোপনে এই ধরনের প্রচারণা করে থাকে।
তাই গণসচেতনতার মাধ্যমেই শুধুমাত্র এ ধরনের টাউটচক্রের হাত থেকে আমাদের তরুণ/তরুণীদের রক্ষা করা সম্ভব । আর সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে তাদেরকে যে সফল ‘ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং’ পেশাজীবী তৈরি করা সম্ভব, তা প্রযুক্তিতে কুষ্টিয়ার গত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ পেয়েছি।
তাই উৎসাহী, যোগ্য ও কর্মঠ তরুণ/তরুণী, অভিভাবক, সামাজিক নেতাদের ‘ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং’ সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও দিকনির্দেশনা দিতে ‘প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ’ একটি কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছে। কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক পেশাসমূহের পরিচিতি, ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংকে পেশা হিসাবে নেবার জন্য দিকনির্দেশনার মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে অন্তত ২ জন ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং পেশাজীবী ও ১ জন উদ্যোক্তা তৈরি করা।
এই কর্মসূচির আওতায় আমাদের নিয়মিত ‘ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং’ কর্মশালার পাশাপাশি বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার ৫০টি গুরুত্বপূর্ণ হাট-বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘আধুনিক পেশাজীবী ও উদ্যোক্তা তৈরি’ শীর্ষক সেমিনার/কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানগুলোতে স্কুল/কলেজের শিক্ষার্থী, ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্র উদ্যোক্তা ও এলাকার শিক্ষিত তরুণেরা অংশগ্রহণ করবেন।
সেমিনার/কর্মশালায় বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সরকারের দক্ষ জনবল তৈরির সাথে সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তা ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। এ আয়োজনের মাধ্যমে তরুণেরা নিজেদেরকে প্রযুক্তিনির্ভর পেশাজীবী হিসাবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পাবে এবং প্রাথমিক প্রশিক্ষণগ্রহণের মাধ্যমে কাজ/আয় শুরু করতে পারবে।
তারা পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট সরকারি/বেসরকারি সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদেরকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবে। এ ধরনের আয়োজন নতুন পেশাগুলোর সামাজিক স্বীকৃতি তৈরিতেও অবদান রাখবে।
সম্ভব্য ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং পেশাজীবীদের প্রতি আমাদের আহ্বান: যারা ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং পেশাজীবী হিসেবে নিজেদেরকে তৈরি করতে চান, তারা খুব দক্ষ হবার আগ পর্যন্ত নিচে বর্ণিত বিষয়গুলো সবসময় মনে রাখবেন:
১) আপনার বিনিয়োগ হচ্ছে আপনার কম্পিউটার, ইন্টারনেট কানেকশন, দক্ষতা ও শ্রম। এ ছাড়া আর কোনো ধরনের বিনিয়োগ প্রয়োজন নেই। এগুলোর কোনোটিই ক্রয়/অর্জনের জন্য এজেন্ট প্রয়োজন নেই, তাই নিজেই এগুলোর সংস্থান করুন।
২) যেকোনো দক্ষতার প্রশিক্ষণ নেবার জন্য অর্থ ব্যয় করতে পারেন। তবে তা যেন প্রশিক্ষণ পর্যন্তই থাকে, কাজ দেবার/নেবার শর্ত যেন এর সাথে যুক্ত না থাকে। প্রশিক্ষণ নেবার আগে ভালো করে কারিকুলাম পড়ে নিন, প্রশিক্ষক সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিন। আপনি যতোটুকু খরচ করছেন সেই পরিমাণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করুন।
৩) নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেস (কর্মবাজার)-এ অ্যাকাউন্ট খোলার বা কাজ নেবার জন্য কোনো এজেন্ট লাগে না। তাই কোনো এজেন্ট বা কোম্পানির মাধ্যমে কাজ নেবার দরকার নাই। কাজ পাবার বা করার জন্য কোনো চেইন কমিশন, ইত্যাদিতে সম্পৃক্ত হবেন না।
৪) কারও সাথে হয়ে একসাথে কাজ করতে চাইলে ব্যক্তিগত পরিচয়ের মাধ্যমে করবেন। যেহেতু তা কোনো মার্কেট প্লেসের মাধ্যমে আসবে না, তাই টাকা পাবার বিষয়টি ব্যক্তিগত পরিচয়/গ্যারান্টির মাধ্যমে নিশ্চিত করবেন।
৫) আপনার দক্ষতা অনুযায়ী কাজ নিন এবং করুন। যে কাজ করতে পারবেন না, সেই ধরনের কাজ নিয়ে বিদেশের বাজারে দেশের নাম নষ্ট করবেন না।
৬) আপনি আপনার দক্ষতা ও কাজের আকার/প্রকারের উপরে ভিত্তি করে আয় করবেন। দক্ষতা উন্নয়নের সাথে সাথে কাজের মান বাড়তে থাকবে ও আয়ও বাড়তে থাকবে। এতে শর্টকাট কোনো রাস্তা নেই।
৭) আপনারা যারা প্রাথমিক প্রশিক্ষণে আগ্রহী তারা সবাই মিলে সমবায় ভিত্তিতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করবেন। প্রযুক্তিতে কুষ্টিয়া আপনাদের প্রয়োজন অনুযায়ী কারিগরি তথ্য ও প্রশিক্ষক সরবরাহ করতে কাজ করবে।
প্রযুক্তিতে কুষ্টিয়ার সাথে আপনার সম্পর্ক:
– এটি একটি স্বেচ্ছাসেবার সংগঠন। সংগঠনের প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যারা উপকৃত হন তারা তাদের অর্জিত জ্ঞান/ শিক্ষা অন্যদের মধ্যে বিতরণ করে নতুনদের উপকৃত করতে কাজ করেন।
– সংগঠন নতুন শিক্ষার্থীদের সমবায়ের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে উৎসাহিত করে এবং প্রশিক্ষক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে থাকে।
– এই সংগঠনের সাথে কোনো সংগঠকের/প্রশিক্ষকের/প্রশিক্ষণার্থীর কোনো ধরনের আর্থিক সম্পর্ক নেই।
– এই সংগঠন কোনো পিসি/ল্যাপটপ/ ইন্টারনেট কানেকশন কোম্পানি বা প্রশিক্ষণ কোম্পানির এজেন্ট নয়।
– এই সংগঠনের কোনো পণ্য বা বাণিজ্যিক প্রশিক্ষণ বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই।
– আমাদের অনুষ্ঠান/কর্মসূচিতে যে সকল বাণিজ্যিক/অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সহায়তা করেন, অনুষ্ঠানের ব্যানারে/লিফলেটে/ বা কোনো একটি অংশে
তাদের প্রচার করা হয়। তবে এই সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে সংগঠনের কোনো স্থায়ী সম্পর্ক নেই বা তাদের পণ্য/সেবার মান সম্পর্কে সংগঠন গ্যারান্টি দেয় না।
– যে কেউ যেকোনো সময় প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে আমাদের সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারবেন। তবে কোনো একটি বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা ও এই সংগঠনের কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহ থাকলে সংগঠক/প্রশিক্ষক/শিক্ষক হিসেবে আমাদের সাথে কাজ করতে পারবেন।
– প্রযুক্তিতে কুষ্টিয়া কিছু তথ্য, লিফলেট, বই মুদ্রণমূল্যে বিতরণ করে। অতিরিক্ত চাহিদা থাকায় অনেকসময় পর্যাপ্ত সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। তাই সেগুলো ফটোকপির মাধ্যমে সংগ্রহ উৎসাহিত করা হয়।
আপনি পেশাদার হিসাবে সফল হন, আপনার পেশাদারি জ্ঞান/দক্ষতার মাধ্যমে আরও কিছু পেশাদারি মানুষ গড়ে তুলুন। তবেই আমরা একটি স্বপ্নের কুষ্টিয়া এবং স্বপ্নের দেশ গড়ে তুলতে পারব। আপনাদের জীবন মঙ্গলময় হোক।