উর্দু সিন্ড্রোম বনাম উর্দু ভাষার প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি

আমাকে যারা একটু দুর থেকে চেনেন, তাদের মধ্যে এক ধরণের শঙ্কা লক্ষ্য করছি।
আমি স্বাধীনতার পক্ষে লিখি, পাকিস্তান রাষ্ট্রকে দুচোখে দেখতে পারি না, ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে বলি কিন্তু উর্দুর প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করিনা !!! কেন?

ঝামেলা টা কোথায়?
বরং উর্দুকে দুঃখ করে বেচারা বালি, উর্দুর কোটেশন দেই।
কিয়েক্টাবস্থা !!!!

সেটা পরিষ্কার করে দেই।

 

আমাকে যারা একটু দুর থেকে চেনেন, তাদের মধ্যে এক ধরণের শঙ্কা লক্ষ্য করছি

 

আমার সমস্যাটা উর্দু সিন্ড্রোম, উর্দু ভাষা না।
আমার কোন সমস্যা নাই নাস্তালিক রুসমুলখাতে, হিন্দুস্থানের খাড়িবলিতে, গালিবের রেখতায় বা আজকের উর্দুতে। এমনকি দাবস্থানে লাখনাওয়ের রেখতিতেও কোন সমস্যা নাই।

বরং ফাটা-ছেড়া উর্দু জানি বলে – ৮ দিন ধরে নাদির শাহ এর নির্মম দিল্লি লুটপাটের পর, যখন দাবেস্তানে দিল্লী থেকে দাবেস্তানে লাখনাও এর দিকে কবির দল হিজরত করছিল, তাদের তখনকার উদাস দীর্ঘশ্বাস শুনতে পাই। প্রগ্রেসিভ রাইটার্স মুভমেন্টের লেখকদের দারুণ সব আইডিয়া জানতে পারি। তাদের লেখা থেকে – মুনুষ কে ভালোবাস, তুমি-আমি ছাড়াও মানুষের দুক্ষ-সুখ, বন্ধুত্ব, কথার গলাগলি, ধর্মনিরপেক্ষতার তাগাদা পাই। জানতে পারি উর্দু তৈরি হয়েছে একটা সেকুলার ফাউন্ডেশনের উপর, মৌলবাদীরা যার দখল নিয়েছে।

উর্দু সিন্ড্রোম মানে আমি বুঝি – সুপেরিয়োরিটি কমপ্লেক্স, অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি ঘৃণা, অর্ধ সত্য ইতিহাস নিয়ে গর্ব, এদেশে বসে মরু সংস্কৃতির স্বপ্ন, বাংলা সংস্কৃতির প্রতি ঘৃণা, সাম্প্রদায়িকতার চর্চা ইত্যাদি।

আমাদের মত সাধারণ মানুষের একটা বড় সমস্যা হল, আমরা এত বিস্তারিত ডেফিনেশন মনে রাখতে পারি না। এজন্য আমরা একটা শর্টকাট মার্কা বানাই। যেমন – মুজিব কোর্ট পরা মানেই আওয়ামীলীগার। সাফারি স্যুট পরা মানে বিএনপি। টুপি দাড়ি মানেই সাচ্চা মুসলমান।

দুর্ভাগ্যবশত উর্দু সিন্ড্রোমে ভোগা লোকজন তাদের ভাষা হিসেবে উর্দুকে গ্রহণ করেছে। এজন্য আমরা উর্দু ভাষাকে তাদের মার্কা বানিয়েয়ে নিয়েছি। আবার উর্দু সিনড্রোমে ভোগা বাঙালী পরিচয়ের বাংলাদেশে আটকে পড় পাকিস্তানিরা উর্দু জানেই না।

আর যেকোনো সময়, চট করে একটা বদলে, অন্যটা পরে ফেলা যায় বলে, টাউর্ট রা আজীবন এই মার্কাকেই প্রমোট করে। আমরা বেকুব জনগণ সেই ফাঁদে পা দেই।

সাহির লুধিয়ানভী বলেছিলেন – আমরা “ইমান” এর জটিলতা বুঝি না, এজন্যই প্রথমে তাকে “রুসুমাত” বা আচারে নামিয়ে আনি। তারপর সেই আচার দিয়েই “ইমান” এর কুরবানি দেই। এভাবেই আমাদের তামাদ্দুন (বা সভ্যতা) যুগে যুগে তাকাদ্দুস (বা পবিত্রতা বা সত্যকে) ধোঁকা দিয়েছে।

আসেন আসল শত্রুকে চিনি, শত্রুর মাস্ক কে না।

#ভাষা #উর্দু #Language #Urdu