গ্রাম পুলিশের দায়িত্ব

গ্রাম পুলিশ ও দফাদাররা বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে আসছেন। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ তাদের অধীনে গ্রাম পুলিশ ও দফাদার নিয়োগ করে গ্রামীণ জনপদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে। তাদের দায়িত্ব এবং ক্ষমতা দেশের বিভিন্ন আইন ও সরকারি বিধান দ্বারা সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত।

 

গ্রাম পুলিশের প্রধান দায়িত্বসমূহ

১. জনসাধারণ মালামালের নিরাপত্তা রক্ষা
গ্রাম পুলিশের অন্যতম প্রধান কাজ হলো ইউনিয়নের গ্রামীণ জনসাধারণ ও তাদের মালামালের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এ দায়িত্ব পালনে তারা নিয়মিত পাহারা দেয় এবং অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করে।

২. গ্রাম ইউনিয়নের প্রহরা প্রদান
গ্রাম পুলিশ ও দফাদাররা গ্রামে শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তদারকি করেন এবং প্রহরা দিয়ে অপরাধ দমন কার্যক্রমে সহায়তা করেন।

৩. পুলিশের সহযোগী হিসেবে কাজ
গ্রাম পুলিশ থানা পুলিশকে তথ্য সরবরাহ ও অপরাধ দমনে সহায়তা প্রদান করে। তারা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে নিয়মিত রিপোর্ট দেন।

৪. সংঘাত বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ
যে কোনো পরিস্থিতি যেখানে ইউনিয়নের শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে, গ্রাম পুলিশ তা দ্রুত থানাকে জানায় এবং ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করে।

৫. সরকারি সম্পত্তির সুরক্ষা মহামারি সতর্কতা
সরকারি সম্পত্তি যেমন রেললাইন, টেলিফোন, টিউবওয়েল ইত্যাদির সুরক্ষায় তারা দায়িত্ব পালন করে। পাশাপাশি মহামারী, বাধা, সেচ প্রকল্পের ক্ষতি বা অন্য কোনো জরুরি অবস্থা লক্ষ্য করলে তা ইউনিয়ন পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হয়।

 

গ্রাম পুলিশের গ্রেফতার ক্ষমতা

গ্রাম পুলিশ ও দফাদাররা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ব্যতীতও কিছু ক্ষেত্রে গ্রেফতার করতে পারেন। এই ক্ষমতার আইনি ভিত্তি রয়েছে নিম্নরূপ:

  • বাংলাদেশ পুলিশের (গ্রাম পুলিশ) বিধিমালা, ১৯৭৬ এর আওতায় গ্রাম পুলিশ ও দফাদারদের দায়িত্ব এবং ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে।
  • ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড, ১৯৮২ (বাংলাদেশ) – এর ধারা অনুযায়ী বিশেষ পরিস্থিতিতে ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
  • তারা নিম্নলিখিত ব্যাক্তিদের গ্রেফতার করতে পারেন:
    • যাদের বিরুদ্ধে আদালতে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
    • যাদের দখলে বেআইনিভাবে বাড়ি ভাঙার উপকরণ রয়েছে।
    • যাদের বিরুদ্ধে সরকার বা আদালতের আদেশ রয়েছে।
    • যাদের দখলে চুরি করা মালামাল রয়েছে বা অপরাধ সংগঠিত দ্রব্য রয়েছে।
    • যারা আইনগত নজরদারী থেকে পালিয়ে যায় বা পালানোর চেষ্টা করে।
    • যারা সামরিক বাহিনী থেকে অবৈধভাবে পালিয়েছে।
    • যারা সরকারি কর্মকর্তার অফিসিয়াল কাজকর্মে বাধা প্রদান করে।

 

আইনগত ভিত্তিসমূহ

আইন বিধিমালাবিষয়বস্তু
বাংলাদেশ পুলিশের (গ্রাম পুলিশ) বিধিমালা, ১৯৭৬গ্রাম পুলিশের নিয়োগ, দায়িত্ব, কর্তৃত্ব ও প্রশাসনিক কাঠামো নির্ধারণ করে।
ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড, ১৯৮২গ্রেফতারের নিয়ম, সাজার বিধান, পুলিশি তদন্ত ও কার্যক্রমের আইনি কাঠামো নির্ধারণ করে।
বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ আইন, ২০০৯ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে গ্রাম পুলিশের নিয়োগ এবং তাদের কাজের সীমা নির্ধারণ করে।
অপরাধ দমন আইনবিশেষ অপরাধ দমন সংক্রান্ত বিধান এবং গ্রাম পুলিশের সহযোগিতার কাঠামো নির্ধারণ করে।

 

গ্রাম পুলিশ ও দফাদাররা বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অপরিহার্য হাতিয়ার। তাদের কার্যক্রমকে আইনি ভিত্তি সমর্থন করে এবং এ কারণে তারা জনসাধারণের অধিকার রক্ষা ও নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়। তাই তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ, সম্মান ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।