দৃঢ় হোক সম্প্রীতির বন্ধন

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবতাবাদী ভাই-বোনেরা দয়া করে একটু থামেন। নিজের বুদ্ধি-বিবেকের সাথে সাথে নিজের পড়া-শোনাটা কাজে লাগান। একটু মাথা খাটান।

আপনাদের লাইক সিকনেসের জন্য নষ্ট হতে যাচ্ছে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এই ছবি। শুধু মাত্র আপনার ইমোশানের জ্বলায় নির্যাতনের শিকার হতে পারে এ দেশের সংখ্যালঘু বৌদ্ধরা।

ফেসবুক যখন ব্যবহার করেন, ‘গুগল’ নামটা নিশ্চয় অচেনা নয়। রোহিঙ্গা নির্যাতনের যে ছবিগুলো শেয়ার করছেন দয়া করে গুগলের ইমেজ সার্চে যাচাই করে নিন। ইংরেজি জ্ঞান থাকলে সার্চ করে জেনে নিন বার্মায় (মায়ানমার) কোন সাম্প্রদায়িক সংঘাত চলছে কি না।

সাম্প্রতিক সময়ে সমুদ্রে ভাসমান রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি বেদনাদায়ক সংবাদে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর সাথে সাথে প্রকাশ পায় থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার জঙ্গলে গণকবর। কেবল এই পাচারকারীদের পরিচয় একে একে প্রকাশ শুরু হয়েছে অমনি জামাত-শিবিরের বিভিন্ন পেজ থেকে ফটোশপে বিকৃত করা ‘রোহিঙ্গা নির্যাতনের ছবি’ পোস্ট করা শুরু করে। আর এদেশ সুশীল-দরদি ব্রো-সিসরা যাচাই-বাছাই না করে শোয়ার দিতে থাকে। এই ইস্যু কেন আড়াল করে ‘রোহিঙ্গা নির্যাতনের গল্প’ শোনাচ্ছে জামাত-শিবিররা? এমন তো নয় কি, এরাই এ দেশ থেকে এই ধরণের মানব পাচারের সাথে জড়িত?

দেশ বিভাগের আগে রোহিঙ্গা নেতারা তৎকালীন পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে দেখা করে মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে পাকিস্তানে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু জিন্নাহ সাহেব তাদের সে দাবী উপেক্ষা করেন। মুসলিম হওয়ার পরেও তাদের কেন ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানে নেওয়া হয়নি, তারা কারণ কি জানেন? এর কারণ হল, আরাকান এবং পূর্ব বাংলা মিলে জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠত যে পশ্চিম পাকিস্তান সেখানে গৌণ হয়ে যেত। তাতে পশ্চিম পাকিস্তানে ‘উড়ে গিয়ে জুড়ে বসা’ এলিট উর্দুভাষী নেতাদের হাতে শাসন ক্ষমতা রাখা ভীষণ কঠিন হয়ে যেত।

প্রিয় দরদি ভাই-বোনেরা, আপনারা নিশ্চয় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা কিংবা যুদ্ধাপরাধী দল জামাত-শিবির না। এ দেশে দলে দলে রোহিঙ্গা আসলে লক্ষ-লক্ষ পিস ইয়াবা আসবে, যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাত-শিবিরের বিভিন্ন এনজিও-তে পেট্রোল ডলারের ফান্ড আসবে। ইয়াবা আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংস করবে, জামাত-শিবির ঐ টাকায় পেট্রোল বোমা মারবে এটা নিশ্চয় আপনি চায়বেন না। তাহলে ওদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছেন কেন?

একটা বিষয় খেয়াল করে দেখুন, এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে যে সব পাচারকারী, তাদের এজেন্ট, গডফাদারের নাম এসেছে তাদের প্রায় সকলেই রোহিঙ্গা বা অন্য মুসলমান। এমনকি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার যে সব জঙ্গলে এই হতভাগ্যদের গণকবর আবিষ্কৃত হচ্ছে তার প্রায় সবটাই মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল। শুনলে জানলে অবাক হবেন, এদেশ এবং ভারতে থেকে বার্মায় গিয়ে বেশ কিছু বাঙালি বৌদ্ধ বাস করে যাদের বাংলাদেশ এবং ভারতে ‘বড়ুয়া’, আর বার্মায় ‘মার্মাগ্রী’ বলা হয়। ধর্মে এক হলেও শুধুমাত্র জাতিগত কারণে এই বড়ুয়া/মার্মাগ্রীদেরও সেখানে নাগরিকত্ব দেয়া হচ্ছে না। তারা সেখানে না পাচ্ছে সরকারী সাহায্য, না পাচ্ছে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। তাদের দুঃখ-দুর্দশার সংবাদ কেউ রাখে না, দেয় না কেও ফেসবুকে ফটোশপ করা পোস্ট। ডাক দেয় না চীন-জাপান সরকারের পতনের ডাক।

এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে কেন আমাদের দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি আমরা নষ্ট করবো? কেন সামাজিক নেটওয়ার্কে আমাদের এ দেশের নাগরিক বৌদ্ধদের হুমকি-ধমকি দিয়ে বিদ্বেষ ছড়াবো?

আসুন একটু সচেতন হই, মিথ্যা ফটোশপ ছবি নয়, আসল ছবি ব্যবহার করি। রক্ষা করি মানবতা।

Leave a Comment