ঘুরে এলাম “ফরগোটেন রুটস্‌” অভিযাত্রীদের নিয়ে -সুফি ফারুক (ব্লগ সংস্করণ)

ঘুরে এলাম “ফরগোটেন রুটস্‌” অভিযাত্রীদের নিয়ে
ঘুরে এলাম “ফরগোটেন রুটস্‌” অভিযাত্রীদের নিয়ে

সাম্প্রতিক শেষ হয়েছে রিয়েলিটি শো “ফরগোটেন রুটস্‌” এর শুটিং। মার্চ মাসের ২ তারিখ রাত ৮ টা থেকে এটিএন বাংলায় প্রচার শুরু হবে। শুটিং হয়েছে লন্ডন ও সিলেটের লালাখালে। অনুষ্ঠানটির সাথে হোস্ট (এক্ষেত্রে গাইড) হিসেবে আমার সম্পৃক্ত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। আয়োজনটি ছিল একেবারে অন্যরকম। গতানুগতিক কোন রিয়েলিটি শো এর মত একেবারেই নয়। তাই ‘বিহায়িন্ড দা সিন’ বা পর্দার পেছনের ঘটনাগুলোও ছিল মজাদার। ফেরার পরে সবার সাথে শেয়ার করার জন্য লিখে ফেলতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু সময় সুযোগের অভাবে দেরি হয়ে গেল। অনুষ্ঠানটি যেহেতু এখনও প্রচার শেষ হয়নি তাই অভিযাত্রীদের করা মজার ঘটনাগুলো পর্ব ভিত্তিক পরে কখনো লিখব। এবারের লেখাটি থাকছে আয়োজন, শুটিং ও কলাকুশলীদের নিয়ে।

মাঝে মধ্যেই ঢাকার বাইরে যাওয়া হয় তবে কখনো বেশিদিন একসাথে থাকা হয়ে ওঠে না। কিন্তু বন্ধুবর পরিচালক প্রদীপ ভট্টাচার্যের কাছ থেকে একটি অন্যরকম আয়োজনের আমন্ত্রণ পেয়ে সাতপাঁচ না ভেবেই ৩ সপ্তাহের জন্য ঢাকার বাইরে থাকতে রাজি হয়ে গেলাম। জানলাম ইউকে ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পিলার প্রোডাকশন ও ডেলটা বে নামে প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রযোজনায় তিনি একটি রিয়েলিটি তৈরি করতে যাচ্ছেন যার নাম ‘ফরগোটেন রুটস্’।

অনুষ্ঠানটির সূত্র ধরে পরিচিত হই মুল পরিকল্পক লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশি দিলারা খানের সাথে। তার কাছ থেকে জানলাম – প্রবাসী বাংলাদেশীদের ৩য় বা ৪র্থ প্রজন্মের তরুণ তরুণী মূলত যাদের বিদেশে জন্ম ও বেড়ে উঠেছে, সঙ্গত কারণেই তাঁদের বাংলাদেশের জীবন, জীবিকা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা নেই। এদের কেউ কেউ কালে ভদ্রে দু-এক বার বাংলাদেশে এলেও এদেশটি তাদের কাছে বিদেশ দেখার মতই। তিনি এরকম কিছু ছেলে-মেয়েকে একটি সন্ধানী দলের অভিযাত্রী হিসেবে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে চান। তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের গ্রামীণ জীবনের চ্যালেঞ্জ, ভ্রমণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ধারণা দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের আদি সংস্কৃতিগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে। এদের এই পথচলার আনন্দ, বেদনা ও অভিজ্ঞতাকে সকল প্রবাসী ও বাংলাদেশীদের সাথে ভাগ করে নিতে, পুরো আয়োজনটি একটি রিয়েলিটি শো হিসেবে দেশ-বিদেশের টিভি চ্যানেলে প্রচারের ব্যবস্থা করছেন। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের স্থায়ী প্রবাসী সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো হতে অডিশনের মাধ্যমে বেশকিছু অভিযাত্রী নির্বাচন করা হয়েছে।

আয়োজকদের পরিকল্পনা অনুযায়ী – নির্বাচিত অভিযাত্রীদের জন্য বাংলাদেশর মুক্তি-সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় দিবস গুলোকে সামনে রেখে ১৬ দিনের ১৯৭১ নম্বরের ২১ টি চ্যালেঞ্জ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মিলিয়ে ২৬ পর্বের একটি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা করা হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী এই প্রতিযোগিতায় সেরা প্রতিযোগী ১০,০০০ (দশ হাজার) পাউন্ড পুরস্কার পাবেন।

পরিচালক আমাকে গাইড বা হোস্ট হিসেবে চ্যালেঞ্জগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব দিলেন। আমার পাশাপাশি আরেকজন গাইড নাদিয়া আলি লন্ডন থেকে আসবেন। অনুষ্ঠানের প্রযোজক মইনুল হোসেন মুকুল এর সাথে কথা বলে লন্ডনে শুটিং এর বিস্তারিত জানলাম। আমার এই দ্রুত রাজি হয়ে যাবার পিছনে অন্যতম কারণ ছিল নতুন প্রজন্মের প্রবাসীদের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরবার সুযোগ। আমার কাজ উপস্থাপনা হলেও নিজের আগ্রহেই রিসার্চ টিমের সদস্য হয়ে চ্যালেঞ্জ সহ অনুষ্ঠানের কনটেন্ট পরিকল্পনাতে কাজ করেছি। একটি বিষয় কষ্ট হচ্ছিল যে অনিচ্ছাসত্ত্বে অনুষ্ঠানের এর প্রয়োজনে আমাকে এমন একটি রোল করতে হবে যেখানে অভিযাত্রীরা শো শেষ হবার আগে পর্যন্ত আমার উপর বিরক্ত থাকবে।

যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিযাত্রীরা এসে পৌঁছে ২৫শে ডিসেম্বর। বিকেলে ছিল ফরগোটেন রুটস্ এর সংবাদ সম্মেলন। ওদের সাথে আনুষ্ঠানিক পরিচয় হবার আগে পর্যন্ত দুর থেকে পর্যবেক্ষণ করাই ছিল আমার কাজ। সে কারণেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আমাকে অনুপস্থিত থাকাতে হল।

এরপর হোটেলে ফিরে রাতের দীর্ঘ আড্ডায় অভিযাত্রীরা ছিল আনন্দে ভরপুর। ২৫ তারিখ সকাল ১০ টায় পুরো ইউনিট হোটেল থেকে সিলেটের জয়িন্তা উপজেলার লালা-খালের উদ্দেশে রওনা দেবার কথা। এডভান্স টিম আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছে আমাদের আবাসন, খাবার, শুটিং স্পট ইত্যাদি তৈরি করতে। তাদের কাছে আবহাওয়ার অবস্থা শুনে আমরা সবাই প্রচুর শিতের কাপড় নিয়ে নিয়েছি (যদিও তার বেশীরভাগই বাক্সবন্দি অবস্থাতেই ফিরে এসেছে)।

সকালে অভিযাত্রীদের ঘুম থেকে ডেকে তোলা হল। ঘুম জড়ানো চেখে সবাই পরিবার ও বন্ধুদের ফোনে/ফেসবুকে তাদের অভিজ্ঞতা জানাতে ব্যস্ত হয়ে গেল। বোঝা গেল সব কিছুতেই তারা খুব মজা পাচ্ছে এবং সাধ্যমত উপভোগ করছে। তখনো কেউ অনুধাবন করতে পারেনি তাদের সামনে আসলে কি অপেক্ষা করছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযাত্রীদের কাছে নিজের পরিচয় না দিয়ে ওদের পর্যবেক্ষণ করতে থাকলাম।

অভিযাত্রীদের গান বাজনা আর হৈচৈ-এর মধ্য দিয়ে শুরু হল আমাদের লালা-খালের উদ্দেশ্যে যাত্রা। প্রতিটি গাড়ির ওয়াকি টকি থেকে ভেসে আসছে তাদের আবেগ মিশ্রিত উল্লাস। যা জানান দিচ্ছে তাদের শিহরণের। যারা কোন বাংলা গানের দু চার লাইন জানে, তারা বারবার সেই গান গুলোর সেটুকুই গাইতে চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে চা নাস্তার জন্য রাস্তায় কয়েকবার যাত্রা বিরতি হয়েছে। বিভিন্ন স্পটে বসানো ক্যামেরা গুলোতে চলার পথের শুটিং চলেছে।

লালাখাল এর নীরবতা ভেঙ্গে আমরা যখন স্থানীয় একটি স্কুলের সাথে নির্মিত বেস ক্যাম্পে পৌঁছলাম তখন মধ্যরাতের হাতছানি। অভিযাত্রীগণ বরণের মধ্য দিয়ে গ্রাম্য জীবনে প্রবেশ করলো। শুরু হল গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের জীবন যুদ্ধের অভিজ্ঞতার। এটা এক কথায় যত সহজে বলে ফেললাম তাদের জন্য অভিজ্ঞতা টুকু যে একেবারেই সেরকম ছিল না, সেটা শো দেখলে বোঝা যাবে।

পরদিন ভোর হতেই শান্ত, নির্জন, ছিমছাম লালাখাল গ্রামটি যেন হঠাৎ অন্য এক রূপ নিলো। অভিযাত্রীদের পাশাপাশি ডিরেক্টোরিয়াল, আর্ট, ক্রিয়েটিভ, কস্টিউম, ইভেন্ট, ডিওপি, প্রোডাকশন টিমগুলো সহ প্রায় দুই শতাধিক লোকের ব্যস্ত পদচারণ। কাপের পর কাপ, চলছে চায়ের মহড়া। লাইট – ক্যামেরা – ক্রেন মুভমেন্ট আর শুটিং দেখতে আসা জনস্রোত, রোলিং – একশন – কাট শব্দগুলো মিলিয়ে লালাখাল ও তার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সারি নদী হয়ে উঠল উৎসব মুখর।

অভিযাত্রীদের বাছাই ছিলো চমৎকার। এই পর্বটি দিলারা খানের নেতৃত্ব দারুন ভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলতে হবে। কারন প্রতিটি ছেলে-মেয়ে একজন অন্যদের চেয়ে আলাদা। রুটিন মাফিক চ্যালেজ্ঞ গুলোর পাশাপাশি অভিযাত্রীদের নতুন নতুন বিষয়ের সাথে পরিচিত হবার অভিব্যক্তি ছিল দেখার মত। আবাসন, খাওয়া, বিনোদন, প্রতিবেশী ইত্যাদি সবই ছিল ওদের নতুন নতুন কাছে আবিষ্কার। সেটাকে আরও ভিন্ন মাত্রা দিয়েছিলো ওদের ভাষা। সবারই বাংলা তথৈবচ। বাংলা বলতে ওরা বেশিরভাগ যা বলে তাও সিলেটের স্থানীয় ভাষা। ১৬ বছরের তসলিমাকে আমার বাংলা বোঝানোটাই ছিল আমার জন্য এক বিরাট চ্যালেজ্ঞ। বেশিরভাগ কথা ইংরেজিতে পুনরায় বলতে হতো। সেই কারণে অনুষ্ঠানটি পুরোপুরি বাংলাতে পরিচালনা করার পূর্ব সিদ্ধান্ত থাকলেও তা আলোচনা সাপেক্ষে পরিবর্তন করে ইংরেজি বাংলা মিশিয়ে পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এক একটি দিন আমাদেরকে রোমাঞ্চিত করেছে সম্পূর্ণ নতুন রূপে। এ যেন নতুন এক জগত যা আমাদের শিহরণে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। আমাদের এ ভিনদেশী ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যেমন আমরা চিনেছি, তেমনই চেষ্টা করা হয়েছে তাদের আদি স্বত্বাকে তাদের সামনে তুলে ধরার। মাতৃভাষা, বাংলার গৌরব, ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে তাদের সামনে মেলে ধরার পাশাপাশি চেষ্টা করা হয়েছে দেশ ও জাতি হিসেবে আমাদের সমৃদ্ধি ও সংস্কৃতির গভীরতাকে উপলব্ধি করানোর।

বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা আর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে চলতে থাকল আমাদের “ফরগোটেন রুটস্‌” রিয়েলিটি শো-এর শুটিং। দিনের বেলা বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ আর রাতের বেলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কয়েকদিন রোদে পুড়ে আমাদের প্রত্যেকের চেহারা দেখার মত হয়েছিলো।

এবারে আসি টিমের গল্পে। ২১ দিনের কাজে অনেক সৃতি তৈরি হয়েছে, যেটাই আসল সম্পদ। তার কিছু অংশের কথা না বললেই নয়। এসবের কিছু অংশ হয়ত আমাদের “বিহায়িন্ড দা সিন” পর্বে আসবে (যদি মুশফিক তার কাজ ঠিকমতো করে থাকে 🙂 )।

ডিরেক্টোরিয়াল টিমের নেতৃত্ব দেন অনুষ্ঠানের পরিচালক প্রদীপ ভট্টাচার্য। দাদার ধৈর্য দেখে প্রতিদিন অবাক হতাম। তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন ফারহানা শারমিন সূচি, নুর হোসেন হিরা, কাজী আরেফিন শশী, ইমরান কবির লিখন ও মৌসুমি লাইজু। দিনের শুরুতে সবাইকে সচল করে নিতে হিরা ভাইয়ের তারস্বরে চিৎকার মনে পড়ে। মনে পড়ে প্রতিদিন শত ইন্টার্ভিউ রেকর্ড করার পরও শশীর সদা হাস্য মুখ, নাড়ি ছিঁড়ে দেবার মত রসিকতা। মনে পড়ে সদ্যব্যস্ত লিখনের ফ্লোরে মাইক হাতে চিৎকার ‘ফ্লোর সাইলেন্ট, সাইলেন্স প্লিজ’। শর্ট শেষে দেখা হতেই কাছে এসে হাসিমুখ দাঁড়িয়ে বলা “ভাই একখান বিড়ি দিবা? মনে পড়ে একই ক্যাসেটে রি শুট হয়ে যাবার উত্তেজনায় মৌসুমির দৌড়াদৌড়ি। এর সাথে ছিল আমাদের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর জাহিদ মাহমুদ এর হঠাৎ আবির্ভাব ও হঠাৎ তিরোধান। লোকটিকে দেখে অনেক প্রশ্ন জাগে, উত্তর জিজ্ঞাসা করলে উত্তর পাওয়া যায়না কিন্তু প্রশ্ন আরও বেড়ে যায়।

আমাদের আর্টি টিমটিকে ভূতের দল মনে হতো। কখন জাগে, কখন ঘুমায়, কখন ভাঙ্গে, কখন বানায়– সে এক অবাক কান্ড! এর মাঝেও তারা আবার রাতে লালাখালের ধারে গান গায়, শিষ বাজায় !!! একসাথে রাঁধার আর চুল বাঁধার তো একটা সীমা থাকে !!!! ধন্যবাদ মঈনুল হাসান রুবেল, অঞ্জন সরকার জিমি, মারুফ হাসান, রয়েল, নিজাম উদ্দিন ভাই সহ ক্রিয়েটিভ টিমের সবাইকে – অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্যে। একটু রাগ আছে, জোর করে আড্ডার দাওয়াত নিতে হয়েছিলো বলে। ধন্যবাদ কস্টিউমের প্রধান দোলা কে। মনে পড়ে তার বিশেষ ভাবে ‘জোস’ বলা ।

কামরুল সেলিম ভাই এর নেতৃত্ব দিয়েছেন ডিওপি টিমের। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ১৪ ঘন্টা কাজ করার পরেও হাসিমুখ, আশাতিত। তার পরে আমার অতিরিক্ত হাঁটাহাঁটি সহ্য করে কাজ করার জন্য সকল ক্যামেরাম্যান ভাইদেরকে জন্য ধন্যবাদ।

আমার বিশেষ ভীতি ছিলো বিহায়িন্ড দা সিন এর মুশফিকের ক্যামেরা, কারন ওই ক্যামেরা লাইট নেভার পরেও অন থাকতো। হঠাৎ কোথা থেকে উদয় হতো মুশফিক কাজ শেষে অভিব্যাক্তি রেকর্ড করার জন্য। স্টিল ফটোর দায়িত্ব ছিলো ভক্তের উপর। সারাক্ষন গামছায় ক্যামেরা মুড়ে এখানে সেখানে ঘুরতে দেখা যেত।

শুটিং এ মাঝেমধ্যে হঠাৎ মনে হতো আমার পান্জাবির কোনা ধরে কেউ একজন টানছে। তাকিয়ে এদিতে ওদিকে কাউকে না দেখে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখতাম দিলারা আপার ৫ বছরের মেয়ে আরভা। বয়তে আমার ছেলে আর্শান এর কাছাকাছি হওয়ায় ওর আর আমার বিশেষ বন্ধুত্ব হয়ে যায়। বেশিরভাগ সময় সে পরীর মত সাদা কাপড় পরে সেটে আসত এবং সুটিং এর পুরো সময়টাই ও আমাদের সাথে ছিলো। আমার সাথে তাকে কেউ পরিচয় করায়নি। আমি নিজে তার সাথে পরিচয় হবার পরে তার ৭ জন বন্ধু সহ বাড়িতে মছের যে একুইরিয়াম কেনা হবে তার গল্পও শুনে ফেললাম। আরভা কে আমি সবসময় আরভা পরি ডাকতাম। শুনলাম লন্ডন ফিরে পরির চুল কাটা হয়েছে, মনটা খারাপ হয়ে গেল।

আমার কো হোস্ট ছিলেন নাদিয়া আলি-র কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। একজন তরুণী ব্যারিস্টার এবং আমার চেয়ে অনেক ভাল ও অভিজ্ঞ উপস্থাপিকা। আমি সারা দিনে যতখানি রুড় ব্যবহার দিয়ে অভিযাত্রীদের অতিষ্ঠ করে তুলতাম, সন্ধাবেলা নাদিয়া তারচেয়েও বেশি মমতা দিয়ে ওদেরকে পরবর্তি দিনের চ্যালেন্জ এর জন্য প্রস্তত করতো। নাদিয়ার আমার প্রতিদিনের ওই কাজটি না করলে অভিযাত্রীদের দিয়ে সব কঠিন চ্যালেন্জ করানো প্রায় অসম্ভব হতো। নাদিয়ার সাথে এসেছিলেন তার স্বামী ব্যারিস্টার রিজওয়ান খান, লন্ডনের জনপ্রিয় উপস্থাপক। তার সাথে আড্ডায় তার ঢাকা এয়ারপোর্টের ঘটনা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর সে গল্প অনেকের সাথে শেয়ার করেছি।

আমার রাজনীতিতে বিশেষ আগ্রহ আছে। তাই লন্ডন থেকে যারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে কাউন্সেলর আব্দাল ভাইয়ের সাথে কথা বলে অন্যরকম মজা পেয়েছি। তার কাছ থেকে আমাদের লন্ডনের বাঙ্গালীদের জীবন/জিবীকা ও রাজনীতি সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপুর্ন তথ্য জানলাম। তার প্রকল্প ‘British Bangladeshi Power 100’ সহ অন্যান্য প্রল্পের জন্য শুভকামনা রইলো।

আমাদের মিস্টার ম্যানেজার – মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। ডেল্টা বে’র পক্ষ থেকে আমাদের সকল ঝামেলা পোহাবার জন্য সর্বক্ষন উপস্থিত। যত রাগই হোক, তার উপরে রাগ করে থাকা যায় না। তার মুখের শুধু কথার শুধু ফুলই না, পুরো বাগান ফোটে (ভাই এটাকে প্রশংসা হিসেবে নেবেন)। রাজিব ভাই এর নিজের গলায় গাওয়া ‘পাহাড়িয়া সাপের কেলা’ গানটি মাঝে মধ্যেই মনে হয়। তার গান ছিলো আমাদের বিশেষ বিনোদন। আমাদের অভিযাত্রীদের বিশেষ প্রিয়মুখ বাপ্পিকে জনপ্রিয়তার করনে অন্তরিন থাকার ঘটনাগুলো স্ক্রীনে আসলে আরও ভাল হতো।

অনেক যন্ত্রনা দিয়েছি গাড়ির পুলের তারেক ভাইকে। বেচারাকে এত লোকের গাড়ির প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে মরণদশা হয়েছিলো। তারপরও আমাকে দিনে/রাতে, সময়ে/অসময়ে ৪০ কিলোমিটার দুরে রিসোর্ট এ পৌছে দেবার বন্দোবস্তো করার জন্য ধন্যবাদ।

সব মিলিয়ে শো টি সফলতা আর সার্থকতার বিচারের ভারটুকু ভার থাকবে দর্শকের উপর। শুধু এটুকুই বলব ‘যারা নিজদেশে এসেছিলেন অভিযাত্রীর বেশে, তারা ফিরে গেছে এ দেশকে হৃদয়ে ধারণ করে, এখন পূর্বপুরুষের গড়ে তোলা নতুন ঠিকানা আর ভাল লাগে না, বারবার ফিরে আসতে চায় শেকড়ের টানে এই অপুরুপ বাংলায়।’

আসছে মার্চ মাসের ২ তারিখ রাত ৮ টা থেকে এটিএন বাংলায় প্রচারিত হবে ভিন্ন স্বাদের এই অনুষ্ঠান। সবাইকে দেখার আমন্ত্রণ রইলো।

 

এডিট- এসএস

Leave a Comment