সঙ্গীতের ঘরানা সূচি : যারা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আঙ্গীনায় ঘোরাফেরা করবেন, তাদের কানে ঘরানা শব্দটা মাঝে মধ্যেই আসবে। খুব ঝামেলা মনে হবে, কনফিউজড্ লাগবে। কিন্তু আমার মনে হয় সামান্য কিছু সময় ব্যায় করলেই ঘরানা সম্পর্কে একটা বেসিক ধারনা হবে।
ঘরানার (Gharana) আক্ষরিক অর্থ “ঘর। শিল্পের ক্ষেত্রে ঘরানা মানে “পরিবার”, “স্কুল”।
সঙ্গীতের ঘরানা
প্রথম জেনে আসি – সঙ্গীতের ঘরানা কী বা কিভাবে তৈরি হয়?
ঘরানা শুধু নামেই নয়, গানের চরিত্রেও আলাদা। সে কারনে একেক ঘরানার গানের রস একেক রকম। এবার দেখা যাক- সঙ্গীতে ঘরানার মধ্যে পার্থক্যে কোথায়?
জেনে নেই – ঘরানা সংস্কৃতি ও গুরু শিষ্য পরম্পরা সম্পর্কে।
গান ও বাজনায় মোটামুটি ৪ রকম ঘরানা আছে।
১. কন্ঠশিল্পি ঘরানা (Vocal Gharana)
২. বায়ু এবং তার বদ্য ঘরানা (Wind and string instruments)
৩. তাল বাদ্য ঘরানা (Percussion instruments)
৪. ঘানা ঘরানা।
কন্ঠশিল্পি ঘরানা (Vocal):
ঘরানাগুলো ভাগ হয়েছে মোটামুটি ৩ টি টেকনিক্যাল বিভাগে ১. খেয়াল ঘারানা (Khyal gharanas), ২. ধ্রুপদ ঘারানা (Dhrupad gharanas), ৩. ঠুমরি ঘারানা (Thumri gharanas)।
খেয়ালে নামকরা ঘরানাগুলো হলো: গোয়ালিয়র, আগ্রা, কিরানা, পাতিয়ালা/পাটিয়ালা, জয়পুর-আত্রাউলি, ভিন্ডি বাজার, রামপুর-সহসওয়ান, ইন্দোর, দিল্লি, যোধপুর/মেওয়াতি, শ্যাম চৌরাসিয়া।
বায়ু বাদ্য ঘরানা (Wind Instruments):
বায়ু প্রয়োগ করে বাজানোর যন্ত্রগুলোর শাস্ত্রীয় নাম “শুষির (Sushir)”। এর মধ্যে পড়েছে বাঁশি, শানাই, পুঙ্গি, বীণ, আলগজ, হারমোনিয়াম, শাঁখ, নাদেশ্বরাম ইত্যাদি।
তার বাদ্যের (String instruments) আবার শাস্ত্রীয় বিভাজন দুই রকম।
তাত (Tat) আর বীতাত (Vitat)। তাত মানে যেগুলো টোকা দিয়ে বাজায়। যেমন- সেতার (Sitar), সরোদ (Sarod), সুরবাহার (Surbahar), রুদ্র বীণা (Rudra veena) ইত্যাদি।
আর “বীতাত” মানে যেগুলো ছড় টেনে বাজায়। যেমন- সারেঙ্গী (Sarangi), Saringda, বেহালা (Violin), এস্রাজ (Esraj), দিলরুবা (Dilriba), Chikara, Mayuri Vina and Pena.
যে ঘরানা যে যন্ত্র বাজনায় বেশি এগিয়েছে তারা সেই বাদ্যের বিশেষায়িত ঘরানা বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। এই তালিকায় রয়েছে – ইমদাদখানী/ইটাওয়াহ ঘরানা (সেতার/সুরবাহার), মাইহার ঘরানা (সারদ, বাঁশি), বিষ্ণুপুর ঘরানা (সেতার), সুফিয়ানা ঘরানা (কাশ্মিরের সেতার)।
তাল বাদ্য (Percussion instruments):
বা ঘাতবাদ্য শাস্ত্র সিদ্ধান্তে ২ ভাবে ভাগ করেছে ।
ঘন, ঘান বা ঘানা বাদ্য (non- membranous percussion)। ধাতু, কাঠ বা মাটি দিয়ে তৈরি বাজনার যন্ত্র। যেমন- মঞ্জীরা-মন্দিরা, ঘাটাম, মুর্ছাঙ্গ, খঞ্জনি, ঘুঙরু, করতাল, চিমটা ঝাঁঝর, মন্দিরা, কাস্তা তরঙ্গ, জল তরঙ্গ।
আনদ্ধ বা অবনদ্ধ (membranous percussion) মুলত চর্মাচ্ছদিত ঘাতবাদ্য। যেমন- তবলা, দফ, মৃদঙ্গ, পাখোয়াজ, খোল ঢাক, ঢোল, ডমরু, মাদল, ভেরী, কাড়া, নাকাড়া, দুন্দুভি, দামামা, ডিমডিম, টমটম।
ঘরানা বাদ্য যন্ত্র নির্ভর। তালবাদ্যে যেসব নাম করা ঘরানা আছে তা হল- – দিল্লি ঘরানা, আগ্রা ঘরানা ইত্যাদি।
আরও জানতে:
১. Hindustani Classical by Quarter Pie Interactive
২. উইকি আর্টিকেল ১, আর্টিকেল ২, আর্টিকেল ৩
[ সঙ্গীতের ঘরানা ]
আরও পড়ুন: