চাকরী এবং ব্যবসা। পেশা জীবনকে দুইটা ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে দেখার পরে আমার অভিজ্ঞতা হল টিম প্লেয়িংয়ের কোন বিকল্প নেই।
তুমি অনেক মেধাবী, অনেক পরিশ্রমী কিন্তু তোমারও টিমের প্রয়োজন আছে। একা সফল হওয়ার অনেক গল্প আছে কিন্তু সেগুলো উদাহরণ নয়, ব্যতিক্রম।
ভারত বর্ষের দু’জন ‘গ্রেট’ শাসকদের মধ্যে একজন সম্রাট আকবর। তিনি নিরক্ষর ছিলেন। তার পরেও তাঁর এত বড় সাফল্যের কারণ ‘টিম’। ‘নবরত্ম’ নামের তার এক টিম ছিল। যে টিমে সে সময়ের ভারতবর্ষের সেরা স্কলাররা ছিল। তাঁদের সাথে সঠিক সমন্বয়ে সম্রাট আকবর পায় ইতিহাসের সেরা অবস্থান।
একজনের পক্ষে সব বিষয়ে দক্ষ হওয়াটা অনেকটা অসম্ভব। এই ঘটতিটা পূরণ করে টিম। টিম প্লেয়িংয়ে সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে তরুণরা। ক্যারিয়ারের শুরুতে যে কোন টিম ওয়ার্কে নিজে ‘একা’ কিছু করে দেখাতে গিয়ে টিম স্প্রিট নষ্ট করে ফেলে। অনেক অন্তর্মুখী তরুণই আবার অন্যের সঙ্গে নিজের নানা রকম পার্থক্য দেখে হতাশ হয়ে পড়ে। টিম প্লেয়িং কিন্তু খুব কঠিন কিছু নয়। ওয়ার্ক প্লেসে দেখা যায়, এমন অনেকের উপর নির্ভর করতে হয়, যাঁদের স্বভাব, চিন্তাশক্তি, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পূর্ণভাবে বিপরীত। এই ‘টিম প্লেয়িং’ কিন্তু নির্ভর করে অপরের উপর নিজের ব্যবহারের প্রভাব তুমি কতটা দক্ষতার সঙ্গে অনুমান করতে পারবেন তার উপর। একই সঙ্গে অন্যের ব্যবহার কীভাবে গ্রহণ করা উচিৎ, সে-সম্পর্কেও একটা আগাম ধারণা থাকা দরকার। টিম মেম্বরদের সঙ্গে আদান-প্রদানের অভিজ্ঞতা, নিজস্ব মতবাদ এবং ধ্যানধারণাই কিন্তু ব্যক্তি হিসাবে তোমাকে অন্যের থেকে আলাদা করে নিয়ন্ত্রকের আসনে বসিয়ে দেবে।
টিম প্লেয়িংটা বেস্ট হয় যদি টিম প্লেয়ারের সবকটি গুনাগুণ থাকে। এই গুনগুন ফলো করার জন্য কিন্তু এভারেস্টে উঠার মত কঠোর পরিশ্রম করতে হবে না। স্রেফ কিছু জিনিষ বায় বুক ফলো করতে হবে।
১. ভালো টিম প্লেয়ার হতে হলে প্রথমে, অপ্রয়োজনীয় শব্দের ব্যবহার ত্যাগ করে, স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলার চেষ্টা করে।
২. খুব আশাবাদী বা ওভার কনফিডেন্স হওয়া যাবে না। চরম আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতিকারক।
৩. নিজে কি করেছো, এটা অপ্রয়োজনীয় ভাবে জাহির করার প্রয়োজন নেয়। পরিণত মনের পরিচয় দিয়ে বুঝে শুনে সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়া উচিৎ।
৪. টিমে তোমার করণীয় সম্পর্কে আগাম ধারণ রাখা উচিৎ। যাতে অন্যরা বুঝতে পারেন তোমার কাজ ও দায়িত্ব সম্পর্কে তুমি আগ্রহী।
৫. কথা বার্তায় বিনয়ী ভাব থাকলেও বিনয় বজায় রেখেও নিজস্ব মনোভাবকে প্রতিষ্ঠা করতে পিছপা হবেন না।
৬. টিমের মধ্যে ‘কেমিস্ট্রি’ যত ভালো হবে, পারস্পারিক বোঝাপড়াটা তত ভালো হবে।
৭. যেকোনো টিমের মধ্যে অনেক ধরণের স্বভাবের মানুষ থাকে। যে যেমন তারা সাথে তেমন ভাবে মিশে নিজের দায়িত্বটা পালন করতে পারো টিমের বেস্ট প্লেয়ার হয়ে পড়বে।
টিম প্লের সব চেয়ে বড় সুবিধা হল, যেকোনো কাজই সহজে করা যায়। এজন্য টিম প্লেয়িংটা খুব ভালোভাবে এডপ্ট করতে পারলে ক্যারিয়ারের সেরাই হয়ে থাকবা শেষ পর্যন্ত।