[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

কৃষক বাঁচিয়েও মজুদ ব্যাবসার একটি মডেল (খসড়া)

কৃষক বাঁচিয়েও মজুদ ব্যাবসার একটি মডেল (খসড়া)। এই প্রকল্পটি আমি বাস্তবায়ন করতে পারলে এ পর্যন্ত সব নেয়া উদ্যোগের চেয়ে বেশি আনন্দ পাব। তবে আমি পারার আগে কেউ একজন চুরি করে বাস্তবায়ন করে ফেললে আনন্দ কম হবে না।

 

কৃষক বাঁচিয়েও মজুদ ব্যাবসার একটি মডেল (খসড়া)

 

কৃষক বাঁচিয়েও মজুদ ব্যাবসার একটি মডেল (খসড়া)

 

এই প্রকল্পের ভাবনা বাংলাদেশের বেশিরভাগ কৃষকের নিয়ে যাদের আয় শুধুমাত্র কৃষি নির্ভর। পৈতৃক সুত্রে আল্প কিছু জমি থাকায় গেরস্থ নাম হয়েছিল। তাই অন্যের কাজ করতে পারেন না চক্ষু লজ্জায়। গিন্নি বাড়িতে ব্লাউজটা উল্টো করে পরেন তাড়াতাড়ি ছিড়ে যাবার ভয়ে। কর্তা বেশিরভাগ দিনে বাজারে যাবার সময় ব্যাগ নিতে ভুলে যান। বা নিয়ে গেলেও কোন দোকানে বসে গল্প করে সন্ধা করে বাজারে ঢোকেন।

 

SufiFaruq.com Logo 252x68 2 কৃষক বাঁচিয়েও মজুদ ব্যাবসার একটি মডেল (খসড়া)

 

সেই সব কৃষক জমি থেকে ফসল ঘরে তোলার আগেই উৎপাদন ব্যায় ও টুকিটাকি খরচ মিলিয়ে মোটা অঙ্কের ঋন হয়ে যান । তার পর আসে হই চই করে ফসল তোলার দিন। মাঠ থেকেই ছোটটা লাল জামার প্রতিশ্রুতি নিয়ে নেয়। বাড়ি ফিরে খেতে বসে গিন্নি মিনমিন করে গত বারের প্রতিশ্রুতি গুলো মনে করিয়ে দেন।

কিন্তু ফসলের গন্ধের নেশায় বুক ফুলিয়ে বাজারে যেতেই দেখা হয়ে যায় পাওনাদারদের আরও খুশি মুখ গুলোর সাথে (কিট নাশক ও সারের দোকানদার, মুদি, সেঁচের কলের মালিক, ইত্যাদি) । কেউ তাগাদা না দিলেও কৃষকের ‌মুখটা শুকিয়ে যায়। কেউ কেউ হাতে ধরিয়ে দেয় হালখাতার লাল কার্ড (কেউ বছরে দুবার বা বেশিও করে)। লোকগুলো যেন বসে থাকে হা করে ওই সময়টির জন্য। সে সময় বাজার মুল্যে ফসল বেচে ওদের হালখাতাতে করতে ফসলের প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়ে যায়। হাতে এক পেকেট জিলেপি নিয়ে কৃষক বাড়ি ফেরেন আর বিড়বিড় করে বলেন “ওরাই বা আর কতদিন বসে থাকবে”। এটা ওটা করতে করতে বাঁকিটা শেষ। বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি পরের বতরে (ফসল তোলার সময়) দেখা হবে বলে ঘরের চাতালে উঠে পড়ে। শুরু হয় নতুন বাঁকির খাতা খোলা।

 

SufiFaruq.com Logo 252x68 1 কৃষক বাঁচিয়েও মজুদ ব্যাবসার একটি মডেল (খসড়া)

 

অথচ ঠিক এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই ফসলের দাম হয় ২গুন। এতে কৃষকের আফসোস ছাড়া কিচ্ছু এসে যায় না। কারন তখন কৃষকের ঘরে বেচার মত তেমন কিছুই নেই । নিজের খাওয়াটা কোনভাবে টেনে টুনে চলবে। শুধু মাঝেমধ্যে নিজে মনেই বলেন “আর যদি কয়েকটা দিন ধরে রাখতে পারতাম”।

তবে খুশি হয় মজুতদার আর মজুতদার মিল মালিকেরা । কারন মুল মুনাফা অর্জন করে এই মজুতদারেরা। মিল বড় হয়, নতুন জমি কেনা হয়, মটর বাইক হতে গাড়ী, বাড়তে থাকে। সারা বছর খেটে কৃষক আরও বড়লোক করেন মজুতদারদের। আর নিজে দরিদ্র থেকে দারিদ্রতর অবস্থায় চলে যান। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার কম উদ্যোগ নেয় নি। কিন্তু কৃষি ঋনের ফলাফল নিয়ে আমরা তো প্রায়ই দেখি পত্র পত্রিকাতে । ক্ষুদ্র ঋনের কথা তথৈবচ । অভাবের সংসারে এই ধরনের ব্যাবস্থা কতটা কার্যকর তা তো আমরা অনেকদিন দেখলাম। সামান্য কিছু কোন ভাবে জমলেও জামাতাকে ইলিশের স্বাদ দিতে গিয়ে আবার সাবেকি ।

এটার ভাবনা থেকেই বেশ কিছুদিন থেকে একটা মডেল ভাবছিলাম যেখানে কৃষককে যতটা সম্ভব ভাল বাজারমুল্য দেয়া যায়। তাবে কয়েকটি চিন্তা বারবার মাথায় আসছিল। ১. সরাসরি বিক্রির সুযোগ হাতে থাকলে, অভাবি সংসারে নিয়ন্ত্রন করা শক্ত। ২. চ্যারিটি কোন সমাধান নয় । ৩. এই সকল কৃষকের ঋন ব্যাবহারের ক্ষমতা ভুমিহীনদের চেয়েও খারাপ। ৪. সরকারী উদ্যোগের টাকা হলে সবার মধ্যেই একটা খাই খাই ভাব তৈরী হয় তাই এটা বেসরকারী উদ্যোগ হয়ত ভাল কাজ করবে। ৫. মডেলটি যুক্ত প্রতিটি পক্ষের জন্য মোটামুটি লাভজনক ও ঝুকিমুক্ত হতে হবে। এটা হয়ত শেয়ারবাজারের মত দ্রুত কামাবার মত নয়। তবে সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা থাকলে মোটামুটি ঝুকিমুক্ত ভাল ব্যাবসা হতে পারে।

মডেল:
· কৃষকের ফসল ওঠার সময় উদ্যোক্তা বাজার মুল্যে কৃষকের কাছ থেকে ফসল কিনে নিদ্রিষ্ট ফিস এর বিনিময়ে নিদ্রিষ্ট সময় পর্যন্ত (পরবর্তি ফসল ওঠার একমাস আগ পর্যন্ত হতে পারে) সংরক্ষন করবেন । সেই সাথে কৃষককে ফসলের প্রকারের বর্ননা সহ একটি ভাউচার দেবেন।

· নিদ্রিষ্ট সময়ের মধ্যে কৃষক সংরক্ষন ফিস জমা দিয়ে একই ধরনের ফসল ফেরত নিয়ে সেই মুহুর্তের বাজার দরে বিক্রি করতে পারবেন।

· কৃষক যদি কোন কারনে ফসল ফেরত না নেন তবে উদ্যোক্তা তা চুক্তির সময় শেষে বিক্রয়ের মাধ্যমে নিজের মুনাফা সহ টাকা উঠিয়ে নেবেন (যা হয়ত কখনও ঘটবে না)।

· এলাকার অন্য কেউ চাইলে উদ্যোক্তার কাছ থেকে কৃষকদের বিক্রয়কৃত ফসলের ভাউচার কেনার মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে পারবেন। সেইক্ষেত্রে উদ্যোক্তা ফিস এর মধ্য থেকে সংরক্ষন ও ব্যাবস্থাপনা ফিস বাদ দিয়ে বাদবাঁকি মুনাফা বিনিয়োগকারীকে ফসল বিক্রয়ের সাথে সাথে দিয়ে দেবেন।

ফিস নির্ধারণ:
· ফসলের দামের উপরে ব্যাংক খরচ ও সুদ + গুদাম ভাড়া + ব্যাবস্থাপনা খরচ + মুনাফা । যেমন ধানের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে মন প্রতি হতে পারে ((৫০০*১২%)/১২)+৩+৬+৪) । নম্বরগুলো প্রকল্পের আকার অনুযায়ী ঠিক করতে হবে।

কে কি দেবে /পাবে:

· কৃষক ফসল তোলার সময় দরকার মত বিক্রি করে জরুরী সব খরচ মেটাতে পারছে। তার পরও বিক্রি করা ফসলের উপর মুল্য বৃদ্ধির সুবিধা পাচ্ছেন। এই সুবিধার জন্য তার কোন বাড়তি বিনিয়োগ নেই। বিনিময়ে তাকে সামন্য কিছু ফিস দিতে হচ্ছে। সেই ফিস প্রদানের পর তার একটি ভাল মুনাফা থাকছে।

· বিনিয়োগকারী (ব্যাংক বা ব্যাক্তি) তার টাকার সুদ সময়মত পেয়ে যাচ্ছে । সেই সাথে পাচ্ছেন মুনাফার অংশ। সব মিলিয়ে খারাপ হবে না।

· উদ্যোক্তা গুদামের মালিক হিসাবে প্রতি বর্গফুটে প্রায় ৪ টাকা ভাড়া পাচ্ছেন (গ্রাম হিসাবে এই ভাড়াটা খারাপ না)। এরপর নিজে কাজ করলে ব্যাবস্থাপনা ফিস হতে নিজের সম্মানী পেয়ে যাবেন। আর মুনাফার অংশ তো থাকছেই।

উদ্যোক্তার প্রস্ততি:

· ভাল যোগাযোগ ব্যাবস্থা আছে এরকম জায়গায়/বাজারের সন্নিকটে নিজেস্ব একটি জমিতে একটি গুদাম নির্মান করবেন।

· গুদামটির বিমা করবেন এবং বিমার সকল শর্ত পালনের প্রস্ততি নেবেন (সিকিউরিটি, ইত্যাদি)।

· ফসল কেনার মত যথেষ্ট অর্থ সংগ্রহ করবেন।

· ফসল ক্রয় বিক্রয়ের ভাউচার ছাপাবেন / কম্পিউটার ও ক্রয় বিক্রয় ব্যাবস্থাপনা সফটওয়ার ও প্রিন্টারের ব্যাবস্থা করবেন।

· একটি ফসল লাগাবার সময় হতেই কৃষকদের সাথে কাজ করার জন্য একজন দায়িত্বশীল লোক / নিজে করতে পারলে তো কথাই নেই।

এই মডেলের প্রয়োগ:

· অপচনশিল খাদ্যদ্রবের জন্য এই মডেলটি আদর্শ হবে। কারন এর দাম কখনও কমার ইতিহাস নেই।

· তবে অন্য কৃষি দ্রব্যের জন্য করা যায় কারন বাজারে ওঠার দামের সমান দাম বছরের কোন সময়ই সচরাচর হয় না।

ঝুকিঁ:

· মজুতদাররা একসাথে হয়ে আপনাকে তাড়াতে চা্ইবে। গুদাম ডাকাতি হতে পারে। আগুন লাগিয়ে দিতে পারে।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment