[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

খোকসা কালী পূজা, খোকসার দর্শনীয় স্থান

খোকসা কালী পূজা, খোকসার দর্শনীয় স্থান : কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার কালী পূজা এই এলাকার একটি অনন্য ঐতিহ্য। কালী পূজাটি অনুষ্ঠিত হয় গড়াই নদীর পাশে স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী কলী মন্দির কে কেন্দ্র করে। সেই উপলক্ষে আয়োজিত হয় এক বিশাল বড় মেলা। খোকসার এই কালী মন্দিরটি হিন্দু সম্প্রদায়ের সহ নানা ধর্ম ও বর্ণ মানুষের কাছে একটি ঐতিহ্যবাহী এবং ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রতি বছর এই পূজা ও মেলা উপলক্ষে প্রচুর সর্বস্তরের মানুষের সমাগম হয়। বিদেশ থেকেও মেলা উপলক্ষে আসেন পর্যটকবৃন্দ মাঘ মাসের অমাবস্যা থেকে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এই পূজা উপলক্ষে সাড়ে সাত ফুট লম্বা প্রতিমা তৈরি করা হয়।

খোকসা কালী পূজা, মন্দির ও মেলা:

খোকসা কালী পূজা, খোকসার দর্শনীয় স্থান, খোকসার ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় ভরপুর
খোকসা কালী পূজা [ খোকসার ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় ভরপুর ]

খোকসা কালী পূজা, বলি ও মেলার ইতিহাস:

খোকসার ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা কবে শুরু হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস নেই। তবে বর্তমান পূজারী শ্রী প্রবোধ কুমার ভট্টাচার্যের সপ্তদশ ঊর্ধ্বতন পুরুষ রামাদেব তর্কালংকার এ পূজার প্রথম পূজারী ছিলেন। এ থেকে অনুমান করা হয় খোকসার কালীপূজার বয়স প্রায় সাড়ে পাঁচ শ বছর।

আত্মপ্রচার বিমুখ তান্ত্রিক সাধু গড়াই নদীর তীরে খোকসা নামক এক জাতীয় গাছে বেষ্টিত জনমানব শূন্য জঙ্গালাকীর্ণ স্থানে এ কালীপূজা আরম্ভ করেন বলে লোক মুখে শোনা যায়। জনৈক জমিদার পুত্রকে সর্প দংশন করলে চিকিৎসার জন্য এই সাধকের কাছে নেওয়া হয়। রোগীকে কালীর পদতলে শুইয়ে দিয়ে সাধনার মাধ্যমে জমিদার পুত্রকে সুস্থ করে তোলেন সাধু।

খোকসার ঐতিহ্যবাহী কালী মন্দির / খোকসা কালীবাড়ি
খোকসা কালী পূজা হয় এই কালী মন্দির / খোকসা কালীবাড়িতে

এরপর জমিদার তান্ত্রিক সাধুর নির্দেশে সাড়ে সাত হাত দীর্ঘ কালী মূর্তি নির্মাণ করে মাঘি আমাবশ্যার তিথিতে এখানে প্রথম কালীপূজা আরম্ভ করেন। আর সেই থেকে খোকসার কালীপূজার সূত্রপাত।

মহিষ বলির শেষে পাংশার জমিদার ভৈরবনাথ ও শিলাইদহের জমিদার ঠাকুরের সম্মানে জোড়া পাঠা বলি দেওয়া হতো। কালীপূজা উপলক্ষ্যে আসা দর্শনার্থীদের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে দোকনীরা আসা শুরু করে। একসময় তা মেলা তে পরিণত হয়ে যায়। এরপর  মেলা প্রাঙ্গনে বিনোদনের জন্য যুক্ত হয় সার্কাস, নাগোর দোলার পাশা পাশি অন্যান্য গ্রামীণ বিনোদন।

 

খোকসার কালী মন্দির / খোকসা কালীবাড়ি :

বাৎসরিক কালী পূজা ছাড়াও খোকসার কালী মন্দির / খোকসা কালীবাড়ি সক্রিয় থাকে। মন্দিরটির চারদিকে বট এবং পাকুর গাছের চারপাশে প্রতিদিনের উপাসনা চলে।

কালী মন্দিরে নল ডাঙ্গার রাজা ইন্দুভূষণ দেব রায় গড়াই নদী থেকে প্রাপ্ত একটি কালো পাথরের টুকরো রয়েছে। এটি বৌদ্ধ আমলের একটি নিদর্শন বলে জানা যায়। এই পাথরের টুকরোটির গঠন অনেকখানি পোস্টের মতো। কালো পাথরের টুকরোটিতে সারা বছর পূজা দেয়া হয়। কালী মন্দিরে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ২৬ ইঞ্চি লম্বা এবং ৪ ফুট চওড়া পিতল দিয়ে তৈরি শিব ঠাকুর পূজা পাটের আসন।

খোকসার ঐতিহ্যবাহী কালী মন্দির / খোকসা কালীবাড়ি
খোকসা কালী পূজা হয় এই কালী মন্দির / খোকসা কালীবাড়িতে

একসময় নদী ভাঙ্গনের কারণে পূর্ববর্তী পূজা মন্দিরটি প্রমত্ত গড়াই নদীতে হারিয়ে গিয়েছিল। ১৩৪১ সালে পূজা মন্দিরটি বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করা হয়। বার্ষিক পূজা মন্দিরে প্রতিবছর মাঘ মাসের আমাবস্যা তিথিতে সাড়ে সাত হাত লম্বা কালী প্রতিমা তৈরি করা হয় এবং সাড়ে বার হাত লম্বা মাটির প্রতিমা মাটি ও খড় দিয়ে তৈরি করা হয়। মন্দিরে বার্ষিক পূজা ও মেলা এবং পূজা কমিটির কার্যালয়ে উপাসক এবং দর্শনার্থীদের জন্য অস্থায়ী বিশ্রামাগার রয়েছে। মন্দিরের সামনের রাস্তা এবং পশ্চিমে গড়াই নদীর ধারে মাঠ। এই মাঠটি মূলত মেলঙ্গান। প্রতি বছর একই তারিখে এই কালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

 

আরও পড়ুন: